পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের শেষ বাজেট ২০২৫-২৬!
আগামী ২১ মার্চ থেকে শুরু হতে চলেছে ত্রিপুরা বিধানসভার বাজেট অধিবেশন, যা চলবে কমপক্ষে পাঁচ দিন। এই অধিবেশনের প্রথম দিনেই ২০২৫-২৬ অর্থবছরের আর্থিক পরিকল্পনা প্রস্তাব পেশ করবেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়। এটি হবে তাঁর তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ আর্থিক পরিকল্পনা প্রস্তাব, এবং পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের মেয়াদকালের শেষ বাজেট। ফলে, এই আর্থিক পরিকল্পনা প্রস্তাব ঘিরে রাজ্যবাসীর প্রত্যাশা অনেকটাই বেড়ে গেছে।
বাজেট ইঙ্গিত!
বাজেট অধিবেশন শুরুর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী জানান, এবারের আর্থিক পরিকল্পনা প্রস্তাব হবে সম্পূর্ণ জনমুখী। তিনি বলেন, বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজ্যের রাজস্ব আদায় ও জনসেবার ভারসাম্য বজায় রেখে বাজেটের আকার ক্রমশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরেও সেই ধারা বজায় রাখা হবে এবং গত বছরের তুলনায় আর্থিক পরিকল্পনা প্রস্তাবের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে।
গুরুত্বঃ
অর্থমন্ত্রী স্পষ্ট করেছেন যে, এবারের আর্থিক পরিকল্পনা প্রস্তাবে কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা। তাই, মূলধনী ব্যয় বৃদ্ধির ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে, যা আগের প্রস্তাবেও গুরুত্ব পেয়েছিল এবং এবারের প্রস্তাবেও তা অব্যাহত থাকবে।
প্রতিফলনঃ
অর্থমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার একটি জনমুখী বাজেট পেশ করেছে, যেখানে মধ্যবিত্ত শ্রেণির করছাড়ের বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের ক্ষেত্রে কর ছাড়ের সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা কমাবে। কেন্দ্রীয় আর্থিক পরিকল্পনা প্রস্তাবের এই দৃষ্টান্তকে অনুসরণ করেই ত্রিপুরার প্রস্তাবেও সাধারণ মানুষের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
রাজস্বঃ
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, বিজেপি সরকারের শাসনকালে ত্রিপুরার সম্পদ এবং রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে জাতীয় গড় অনুসারে কর আদায়ের নিরিখে ত্রিপুরা তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এটি রাজ্যের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নতির প্রতিফলন বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী।
বিনিয়োগঃ
অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, এবারের আর্থিক পরিকল্পনা প্রস্তাবে শিল্প বিনিয়োগকে আকর্ষণীয় করার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা থাকবে। নতুন শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে যাতে সুবিধা হয়, তার জন্য প্রস্তাবে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প (MSME) খাতকে উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ তহবিলের ব্যবস্থাও থাকতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন।
কর্মসংস্থানঃ
রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান চাহিদা হলো কর্মসংস্থান বৃদ্ধি। এই আর্থিক পরিকল্পনা প্রস্তাবে চাকরিপ্রার্থীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা, তা নিয়ে আগ্রহ রয়েছে। নির্বাচনের আগে বিজেপির দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকার কতটা জনমুখী বাজেট পেশ করতে পারে, সেটাই দেখার বিষয়।
সম্ভাবনাঃ
যেহেতু এটি পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের মেয়াদকালের শেষ বাজেট, তাই বিশেষ কিছু বড় ঘোষণা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, আর্থিক পরিকল্পনা প্রস্তাবে কী কী নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় এবং তা কতটা কার্যকর হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। উল্লেখযোগ্য বিজেপির ঘোষণা অনুযায়ী কর্মচারীদের পে কমিশনের ব্যাপারে মুখ খোলেন নি অর্থমন্ত্রী। এখন বাজেট অধিবেশন শুরুর অপেক্ষায় রাজ্যবাসী এবং আর্থিক পরিকল্পনা প্রস্তাবের প্রতিটি দিক গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে তবেই বোঝা যাবে, এই প্রস্তাব কতটা জনমুখী এবং রাজ্যের উন্নয়নে কতটা কার্যকরী হতে চলেছে।