বাজেট ২০২৫-২৬ ঘোষণা

বাজেট ২০২৫-২৬ ঘোষণা আগামী মাসে!

বাজেটে নতুন কি চমক রয়েছে দেখার জন্য অপেক্ষায় রাজ্যবাসী!

আগামী মাসেই রাজ্য বিধানসভায় পেশ করা হবে রাজ্যের বাজেট, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। তিনি বলেন, রাজ্যে কর ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে বর্তমান সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কর ফাঁকি রোধ ও জনগণকে আরও সচেতন করতে সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে। কারণ, রাজ্যের রাজস্ব আয়ের উপরই নির্ভর করে বাজেটের কাঠামো। তাই রাজ্যের নিজস্ব রাজস্ব বৃদ্ধিতে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।

শনিবার আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে জিএসটি সচেতনতা অভিযানে অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছরে রাজ্যের বাজেটের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৭,৮০০ কোটি টাকা, যার মধ্যে রাজস্ব খাতে আয় ছিল ৩,৭০০ কোটি টাকা। পূর্ববর্তী সরকার যে ১৩,০০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল, সেটাও বর্তমান সরকারকে পরিশোধ করতে হচ্ছে। রাজস্ব খাতের এই সীমিত আয়ের মধ্যে বেতন, ঋণ পরিশোধ ও পেনশন বাবদ খরচের পর হাতে থাকে মাত্র ১০,০০০ কোটি টাকা।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যের নিজস্ব আয় মাত্র ৩,৭০০ কোটি টাকা, যার ২৫% এডিসি-কে এবং ১০% শহর ও স্থানীয় সংস্থাগুলিকে দিতে হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদান থেকে গত বছর ৩৯% এডিসি-কে প্রদান করা হয়েছে। রাজ্যের রাজস্ব খাত বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজেটের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত গঠনের লক্ষ্যে রাজ্যগুলির উন্নতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দেশজুড়ে চালু হয় জিএসটি, যা ভারতের কর ব্যবস্থায় বিপ্লব এনেছে। এতে স্বচ্ছতা এসেছে এবং ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। জিএসটি কার্যকর করার ফলে অতীতের মতো বিভিন্ন স্থানে আলাদা আলাদা কর দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ২০১৭-১৮ থেকে ২০২৩-২৪ পর্যন্ত জিএসটি সংগ্রহের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫১০.৭০ কোটি টাকা, আর আইজিএসটি ক্ষেত্রে তা ১,০০০ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সেস থেকে ২৭.৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিল, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে ৩৭৪.৫২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

ত্রিপুরা ইলেকট্রিসিটি ডিউটি চালুর ফলে রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। ওয়ার্কস কন্ট্রাক্ট, ইট ভাট্টা, রাবার এবং রিয়েল এস্টেট খাতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কর ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে জিএসটি এনালাইসিস এন্ড ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক (GAIIN) এবং এআইও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে কর ফাঁকির প্রবণতা বন্ধ করা যায়। পাশাপাশি ট্যাক্স ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মাধ্যমে ভুয়া রেজিস্ট্রেশন ও অন্যান্য অনিয়ম রোধে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

রাজ্যে কর ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদ তৈরি করা হয়েছে, যেমন— এসিস্ট্যান্ট কমিশনার অফ ট্যাক্সেস, স্ট্যাটিসটিকাল অফিসার ও প্রোগ্রামার। এতে রাজস্ব খাতে নজরদারি আরও বাড়ানো সম্ভব হবে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, জিএসটি চালুর ফলে কর ব্যবস্থা আরও সহজ হয়েছে এবং কোভিড-পরবর্তী সময়ে প্রশাসনিক কার্যকর উদ্যোগের ফলে রাজস্ব আদায়ে উন্নতি হয়েছে। ত্রিপুরা রোড ডেভেলপমেন্ট সেস ৫৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজ্যে ই-আবগারি পোর্টাল চালুর ফলে কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এসেছে এবং রিয়েল টাইম ট্র্যাকিং সহজ হয়েছে।

বর্তমান সরকার কর ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পাশাপাশি এটি সহজতর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে কর নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে আরও বেশি ব্যবসাকে জিএসটির আওতায় আনা হবে এবং ডিজিটাল সচেতনতা বৃদ্ধি করে কর ফাঁকি রোধ করা হবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী প্রণজিত সিংহ রায়, রাজ্য সরকারের মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, অর্থ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়, আয়কর দপ্তরের চিফ কমিশনার বিবেক এইচ বি সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকরা।