বাজেটের আগে ভারতীয় শেয়ার বাজারে বড় পতন!
ভারতীয় শেয়ার বাজারে সাম্প্রতিক সময়ে টানা পতন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। বাজেট ঘোষণার প্রাক্কালে বাজারের এই নিম্নমুখী ধারা অনেকের জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সঙ্গে, ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মান সর্বকালের সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে, যা অর্থনৈতিক অস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
গত কয়েক মাস ধরে, ভারতীয় শেয়ার বাজারে ধারাবাহিকভাবে পতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নিফটি এবং সেনসেক্স উভয়ই লাল চিহ্নে অবস্থান করছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্কের কারণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারের এই বেয়ারিশ প্রবণতা বাজেট ঘোষণার আগ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। SBI সিকিউরিটিজের ডেপুটি ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং টেকনিক্যাল অ্যান্ড ডেরিভেটিভস রিসার্চ বিভাগের প্রধান সুদীপ শাহ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন, “সামগ্রিকভাবে এই মুহূর্তে দেশের শেয়ার বাজার খুব একটা ইতিবাচক অবস্থানে নেই। নিফটি টানা তিন সপ্তাহ রেড জোনে সপ্তাহ শেষ করেছে। বাজারে স্পষ্টভাবেই বেয়ারিশ প্রবণতার চাপ লক্ষ্যণীয় হচ্ছে। সবকিছুই বাজারে নিম্নমুখী গতি অব্যাহত থাকার ইঙ্গিত করছে।” বাজারের এই নিম্নমুখী ধারা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা হ্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই তাদের বিনিয়োগ পুনর্বিবেচনা করছেন এবং সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে বিক্রির দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, এই সময়ে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকা উচিত এবং বাজারের গতিবিধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
শেয়ার বাজারের পতনের পাশাপাশি, ভারতীয় রুপির মান ডলারের বিপরীতে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। ডিসেম্বর ২০২৪ সালে, রুপির মান প্রতি ডলারে ৮৫.২৪২৫ রুপিতে পৌঁছেছে, যা ইতিহাসের সর্বনিম্ন। এ নিয়ে টানা সাতটি লেনদেনে রুপির দাম কমেছে। রুপির এই পতনের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। বাণিজ্য ঘাটতির পাশাপাশি, পুঁজি দেশের বাইরে চলে যাওয়া, শেয়ারবাজারে দুর্বল প্রবণতা, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিক্রি, মার্কিন বন্ডের রিটার্ন, এইচএমপিভি ভাইরাসের আতঙ্ক এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে রুপির মানে এই নিম্নগামিতা দেখা যাচ্ছে। বাজারের এই অস্থিরতা এবং রুপির মানের পতন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। অনেকেই বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বিশেষ করে, যারা স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগে ছিলেন, তারা এই পতনের ফলে উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তবে, কিছু বিনিয়োগকারী এই পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, বাজারের এই নিম্নমুখী ধারা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের জন্য একটি উপযুক্ত সময় হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, এই সময়ে বিনিয়োগকারীদের তাদের পোর্টফোলিও পুনর্বিবেচনা করা উচিত এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের দিকে নজর দেওয়া উচিত।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় বাজেট ঘোষণা করা হবে। প্রতিবছর বাজেটের আগে সাধারণত শেয়ার বাজারে একটি বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়। তবে, এই বছর বাজারের বর্তমান অবস্থার কারণে, বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছেন না। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজেটের আগে অবশ্যই শেয়ার বাজারে একটি বৃদ্ধির পর্যায় দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই মুহূর্তে বাজার অস্থির অবস্থায় রয়েছে তবে বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাজেটের আগে একটি ধাক্কাই বাজারে প্রত্যাবর্তন নিয়ে আসতে পারে। বাজারের এই অস্থিরতা এবং রুপির মানের পতন বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, বিনিয়োগকারীদের এই সময়ে অতিরিক্ত ঝুঁকি নেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত এবং তাদের বিনিয়োগ কৌশল পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
ভারতীয় শেয়ার বাজার এবং রুপির মানের বর্তমান পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং সময়। বাজেট ঘোষণার আগে বাজারের এই অস্থিরতা এবং রুপির মানের পতন অর্থনীতির উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। বিনিয়োগকারীদের এই সময়ে সতর্ক থাকা এবং সুপরিকল্পিত বিনিয়োগ কৌশল গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।