বাজার

বাজারে জাল ঔষধের রমরমা!

মানুষ ঔষধের নামে বিষ কিনছে বাজার থেকে!

ভেজাল ঔষধ বিক্রি হচ্ছে বাজারে এমনই রিপোর্ট কেন্দ্রীয় সংস্থার তরফে! সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ঔষধ এখন অপরিহার্য। সুগার, প্রেশার, শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগের চিকিৎসাতে নির্ভরযোগ্য ঔষধের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু সাম্প্রতিককালে বাজারে নিম্নমানের ও জাল ঔষধের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে এবার রাজ্যেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে চলেছে প্রশাসন।

জাল ঔষধ চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে সোমবার স্বাস্থ্য দপ্তরের ডেপুটি ড্রাগস কন্ট্রোলার অফিসের উদ্যোগে ‘স্যাম্পলিং অফ ড্রাগস, ইনভেস্টিগেশন টেকনিক অ্যান্ড লঞ্চিং অফ প্রোসেকিউশন’ শীর্ষক এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। গুখা বস্তির প্রজ্ঞা ভবনে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালার উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা অধ্যাপক ডাক্তার সঞ্জীব কুমার দেববর্মা।

কর্মশালায় উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা জানান, রাজ্যের বাজারে নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধের রমরমা ঠেকাতে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ড্রাগের নমুনা পরীক্ষার পর কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন হরিয়ানার প্রাক্তন ড্রাগ কন্ট্রোলার এন কে আহুজা এবং প্রাক্তন ডেপুটি ড্রাগ কন্ট্রোলার রাজিন্দর কুমার হারনা। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জাল ঔষধ সনাক্তকরণের উপায় নিয়েও আলোচনা করা হয়।

রাজ্যে জাল ঔষধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যেই একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত বছর কিছু ঔষধের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে নিম্নমানের ঔষধ ধরা পড়ায় ১৫৪টি ঔষধের দোকানের লাইসেন্স বাতিল করা হয় এবং ৩৭২টি দোকানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের এক অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে উঠে এসেছে ভয়াবহ তথ্য। সরকারি ব্যবস্থায় কেনা ঔষধের ১০ শতাংশই নিম্নমানের, যেখানে বাজারের নমুনা পরীক্ষায় এই হার ৩ শতাংশ। সুগার, প্রেসার এমনকি ক্যান্সারের ঔষধেও ভেজালের সন্ধান মিলেছে।

জাল ঔষধের এই চক্রকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে কিছু অসাধু চিকিৎসক ও ঔষধ কোম্পানির যোগসাজশ। অভিযোগ উঠেছে, কিছু ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভরা মোটা টাকা ঘুষ দিয়ে চিকিৎসকদের দিয়ে জাল ঔষধ প্রেসক্রাইব করাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, ঔষধ বিক্রেতাদেরও টাকা দিয়ে নকল ঔষধ বিক্রির ফাঁদে ফেলা হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ না জেনেই এসব ভেজাল ঔষধ কিনছেন, যা তাঁদের স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছে।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে পরীক্ষা করে ১১১টি নমুনায় ভেজাল ঔষধ ধরা পড়েছে। কলকাতাতেও অভিযান চালিয়েছে সিডিএসসিও এবং ড্রাগস কন্ট্রোল ডিরেক্টরেট। বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার নিম্নমানের ঔষধ।সরকারি রিপোর্ট বলছে, ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে মোট ২ লক্ষ ২৩ হাজার ঔষধের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, ৫৯৩টি ঔষধ ভেজাল এবং ৯ হাজার ২৬৬টি ঔষধ নিম্নমানের, যা ‘নট অব স্ট্যান্ডার্ড কোয়ালিটি’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

সরকারের এই তথ্য থেকেই স্পষ্ট, ভেজাল ঔষধের সমস্যা ক্রমশ ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। প্রশাসন এখনই কড়া পদক্ষেপ না নিলে, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য চরম সংকটে পড়বে। তাই কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথভাবে এই জাল ঔষধ চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনগণেরও উচিত ঔষধ কেনার আগে সতর্ক থাকা এবং সন্দেহজনক কিছু দেখলে প্রশাসনকে অবহিত করা।