প্রযুক্তির

প্রযুক্তির সাথে মানিয়ে নিতে নারাজ সিপিআই(এম)!

সিপিআইএম AI প্রযুক্তির ব্যবহারেও পুরনো অবস্থানে!

প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে নারাজ সিপিআই(এম)। ১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে কম্পিউটার বিপ্লবের বিরোধিতা করার পর এবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-এর বিরুদ্ধে সরব হলেন তারা। সম্প্রতি কলকাতায় অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে গৃহীত রাজনৈতিক খসড়া প্রস্তাবে AI-কে ‘কম্পিউটার-নির্ভর শোষণ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে, যা তাদের আগের কম্পিউটারবিরোধী অবস্থানেরই পুনরাবৃত্তি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

কম্পিউটার বিপ্লবের বিরুদ্ধে ছিল সিপিআই(এম)!

১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে সিপিআই(এম) কম্পিউটার প্রযুক্তির প্রসারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল। তাদের যুক্তি ছিল, কম্পিউটার আসার ফলে লাখ লাখ মানুষের চাকরি চলে যাবে, যা বেকারত্বের হার বাড়াবে। সেই সময় তারা দাবি করেছিল, কম্পিউটার শ্রমিকশ্রেণির ওপর শোষণ বাড়াবে এবং পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রমাণিত হয়েছে, কম্পিউটার বিপ্লব শুধু কর্মসংস্থান বাড়ায়নি, বরং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করেছে এবং নতুন নতুন চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করেছে।

এখন আবার AI-এর বিরুদ্ধে সিপিআই(এম)!

ঠিক একই যুক্তি এবার সিপিআই(এম) AI-এর ক্ষেত্রেও ব্যবহার করছে। দলের রাজনৈতিক খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, AI স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক হোয়াইট-কলার (সাদা-কলার) চাকরি কেড়ে নিচ্ছে, যা একসময় মানুষের দক্ষতার একচেটিয়া দখলে ছিল। সিপিআই(এম)-এর দাবি, AI-এর কারণে কর্মসংস্থানের অভাব তৈরি হচ্ছে, যা সমাজে বৈষম্য বাড়াবে এবং আর্থিক অসাম্যকে তীব্র করবে।

গোপনীয়তার ওপর হুমকি?

সিপিআই(এম) শুধু কর্মসংস্থান হারানোর আশঙ্কাই প্রকাশ করেনি, বরং AI-কে গণতন্ত্র ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার জন্যও হুমকি বলে অভিহিত করেছে। দলের দাবি, বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলি AI ব্যবহার করে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করছে, যা মানুষের গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করছে। এছাড়া AI-চালিত অস্ত্র এবং ড্রোন যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা মানবজাতির জন্য আরও বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করছে। কম্পিউটার বিপ্লবের সময়ও একই ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল সিপিআই(এম), কিন্তু পরে দেখা গেছে, কম্পিউটার নতুন নতুন পেশার জন্ম দিয়েছে, এবং তাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

একই ভুল আবার?

প্রযুক্তির

বিশ্লেষকদের মতে, সিপিআই(এম)-এর বর্তমান AI-বিরোধী অবস্থান অনেকটাই ১৯৮০ ও ৯০-এর দশকের কম্পিউটার বিরোধিতার মতোই। তখন তারা বলেছিল, কম্পিউটার চাকরি নষ্ট করবে, কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা গেছে, কম্পিউটার বিপ্লব নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করেছে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়িয়েছে। বর্তমান বাস্তবতা হল, সিপিআই(এম)-এর প্রতিটি পার্টি অফিসেই এখন কম্পিউটার ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন উঠছে, পূর্বে সিপিআই(এম) যে কম্পিউটারের বিরোধিতা করেছিল, সেটা যে ভুল ছিল, তারা কি এখন সেটা স্বীকার করবে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সিপিআই(এম) তাদের পূর্ববর্তী ভুলগুলিকে শোধরাতে নারাজ এবং প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে অক্ষম।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?

বিশ্ব ইতিহাস বলে, যে জাতি প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি, তারা সময়ের স্রোতে বিলীন হয়েছে। সিপিআই(এম) কি সেই একই পথে হাঁটছে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সিপিআই(এম)-এর এই প্রযুক্তি-ভীতি এবং নতুনত্বের প্রতি বিরূপ মনোভাব তাদের ক্রমাগত রাজনৈতিক ইতিহাসের পাতায় ঠেলে দিচ্ছে।

প্রযুক্তির সঙ্গে চলার প্রয়োজনীয়তা!

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তির বিরোধিতা করে উন্নয়ন রোধ করা সম্ভব নয়। বরং এই প্রযুক্তিগুলি যাতে সাধারণ মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়, সেই দিকেই রাজনৈতিক দলগুলির নজর দেওয়া উচিত। অভিজ্ঞদের মতে, AI কিছু পুরনো চাকরি বদলে দেবে, কিন্তু এটি নতুন ধরনের কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করবে। বর্তমান যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি, ব্যয় হ্রাস এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে AI ব্যবহার অপরিহার্য। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে এবং উন্নত ভবিষ্যৎ গড়তে AI প্রযুক্তির জ্ঞান ও দক্ষতা থাকা জরুরি। তাই, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে AI প্রযুক্তিকে আয়ত্ত করা আজকের প্রয়োজন।

AI-এর ইতিবাচক দিক

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, AI শুধু কর্মসংস্থানই তৈরি করবে না, বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI আধুনিক যুগের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির অন্যতম প্রধান উদাহরণ। এর ইতিবাচক দিকগুলির মধ্যে অন্যতম হলো স্বাস্থ্য খাতে নির্ভুল রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা প্রদান, যা মানুষের জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিক্ষাক্ষেত্রে AI ব্যবহার করে ব্যক্তিগতকৃত শিক্ষা প্রদান সম্ভব হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়াচ্ছে। ব্যবসায়িক খাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে লাভজনকতা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া, দৈনন্দিন জীবনে দ্রুত ও নির্ভুল তথ্য বিশ্লেষণ, স্বয়ংক্রিয় সেবা প্রদান এবং ব্যক্তিগতকৃত অভিজ্ঞতা তৈরিতে AI অপরিসীম ভূমিকা পালন করছে।

শেষ কথা!

এক সময় কম্পিউটারের বিরুদ্ধে সরব থাকা সিপিআই(এম) আজ AI-এর বিরোধিতা করছে। কিন্তু বাস্তবতা হল, প্রযুক্তির পরিবর্তন ঠেকানো যায় না। বরং প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং সেই সঙ্গে কর্মসংস্থান সুরক্ষার দিকে নজর দেওয়াই শ্রেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সিপিআই(এম)-এর উচিত তাদের পুরনো অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসে প্রযুক্তির উন্নয়নকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করা, নচেৎ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি অবশ্যম্ভাবী। প্রযুক্তির পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সিপিআই(এম)-এর এই অবস্থান কি তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে আরও সংকটে ফেলবে, নাকি তারা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে পারবে? এই প্রশ্নের উত্তর দেবে ভবিষ্যৎ সময়ই।

STN