ভারতীয় সেনার অপারেশনে বিধ্বস্ত পাকিস্তানি সন্ত্রাসীরা!
পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ বার্তা দিল ভারত। কাশ্মীরের পহেলগাঁওে হিন্দুদের উপর বর্বর জঙ্গি হামলার পর ভারতীয় বায়ুসেনা সুনির্দিষ্ট বিমান অভিযান ‘অপারেশন সিন্দুর’ সংগঠিত করেছে। অভিযানে, পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তত নয়টি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করছে ভারত সরকার। এই অভিযানে ভারতীয় বাহিনী রাফাল যুদ্ধবিমান ও স্ক্যাল্প ও হ্যামার মিসাইল ব্যবহার করে লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট হামলা চালিয়েছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা সূত্র জানিয়েছে, নিহত সকলেই জঙ্গি, কোনো সাধারণ মানুষের মৃত্যু ঘটেনি। এই অভিযানে লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মোহাম্মদ ও হিজবুল মুজাহিদিন-এর মতো সংগঠনগুলোর নেতৃত্বকেন্দ্র, অস্ত্রাগার ও যোগাযোগ ঘাঁটিগুলি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
২২ এপ্রিল, ২০২৫। কাশ্মীরের পহেলগাঁওে হিন্দুদের উপর রুদ্ধশ্বাস জঙ্গি হামলা চালানো হয়। নিহত হন ২৬ জন নিরীহ ভ্রমণকারী। এই ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF)। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি স্পষ্ট করে জানায়, এই হামলার পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণ হয়েছে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে। এই বর্বরতার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে কেবিনেট কমিটি দ্রুত প্রতিক্রিয়া নেয় এবং গোপনে পরিকল্পিত হয় ‘অপারেশন সিন্দুর’। সূত্র বলছে, এই আক্রমণে কমপক্ষে ৯০ জন সক্রিয় জঙ্গি মারা গেছে। প্রতিটি ঘাঁটি সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং হামলার সময় রাত হওয়ায় বেসামরিক ক্ষতির সম্ভাবনাও একেবারে ন্যূনতম ছিল। এই হামলার ধ্বংস হওয়া ৯টি সন্ত্রাসী ঘাঁটি হল –
১. মুজাফফরাবাদ (পিওকে): লস্কর-ই-তৈয়বার গোপন সদর দফতর
২. কোটলি (পিওকে): জইশ-ই-মোহাম্মদের প্রশিক্ষণ শিবির
৩. ভিম্বার (পিওকে): হিজবুল মুজাহিদিনের অস্ত্র গুদাম
৪. বাহাওয়ালপুর (পাকিস্তান): জইশ নেতৃত্বের বাসস্থান
৫. মুরিদকে (পাকিস্তান): লস্কর-এর শীর্ষ প্রশিক্ষণ ঘাঁটি
৬. তেহরা কালান: জঙ্গিদের প্রযুক্তি ও রসদ সরবরাহ কেন্দ্র
৭. সিয়ালকোট: কাশ্মীর হামলার মাস্টারমাইন্ডদের ঘাঁটি
৮. আহমেদপুর ইস্ট: বিস্ফোরক গুদাম
৯. চাকোটি (পিওকে): রেডিও কমান্ড ও আন্তঃসীমান্ত যোগাযোগ কেন্দ্র।
‘অপারেশন সিন্দুর’-এ ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই সফল অভিযানের পর প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডঃ মানিক সাহা। তিনি বলেন: “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বহুবার বলেছেন—সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই হবে আপসহীন। তিনি বলেছিলেন, কাউকে ছাড়া হবে না। আজকের এই অপারেশন তারই বাস্তব প্রতিফলন। আমরা ত্রিপুরাবাসীরা ভারতের সেনাবাহিনীর পাশে আছি। যারা আমাদের শান্তি নষ্ট করতে চায়, তাদের জন্য একটাই বার্তা—ভারত মাথা নত করবে না।” তিনি আরও বলেন, “ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী রাজ্য হলেও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিকাশের পথে এগোচ্ছি। কিন্তু সীমান্তের ওপারে থাকা সন্ত্রাসের উৎসগুলোকে ধ্বংস করতেই হবে।”
পাকিস্তান সরকার এই হামলাকে “আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করলেও, তাদের কোনো নিরপেক্ষ প্রমাণ নেই। বরং নিজেদের ভূখণ্ডে সক্রিয় সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোর অস্তিত্ব এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার পরেও তাদের চলাফেরা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে ইসলামাবাদ। ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর আওতায় ভারতীয় বায়ুসেনার সুনির্দিষ্ট বিমান হামলায় জইশ-ই-মোহাম্মদের পাকিস্তানের বাহাওলপুরে অবস্থিত মূল সদর দফতর সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। BBC-উর্দু নিশ্চিত করেছে, এই সন্ত্রাসী সংগঠনটির প্রধান মাসুদ আজহারের পরিবারের অন্তত ১৪ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছে তার ভাই, দুই ভাইপো, ভাগ্নে ও ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা রক্ষীরা। একটি গোপন সূত্র প্রকাশিত অডিও রেকর্ডিংয়ে শোনা যায় মাসুদ আজহার কান্নারত অবস্থায় বলছে: “আল্লাহ, তুমি আমাকে তুলে নাও… আমি সব হারিয়ে ফেলেছি। ভারত আমার হৃদয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আজ আমার পরিবার শেষ হয়ে গেল।”
ভারতীয় সেনা গোয়েন্দাদের মতে, এই আঘাত জইশ-ই-মোহাম্মদের মনোবলে এক বিশাল ধাক্কা। মাসুদ আজহার বর্তমানে চরম নিরাপত্তায় পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের একটি অজ্ঞাত নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন বলে খবর। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানালেও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা ভারতের পদক্ষেপকে ‘সুনির্দিষ্ট প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর কলামে বিশ্লেষক রবার্ট রিড লিখেছেন, “ভারত যে শুধু কথায় নয়, কাজে বিশ্বাস করে—অপারেশন সিন্দুর তার প্রমাণ।”
ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, “যদি পাকিস্তান জঙ্গিদের মদত দেওয়া বন্ধ না করে, তাহলে ভবিষ্যতে ভারতের জবাব হবে আরও কঠিন। শান্তির পথ একটাই—সন্ত্রাসবাদের উৎস নির্মূল করা।” ভারতের এই অভিযান শুধু প্রতিশোধ নয়, এটি ছিল প্রতিরক্ষা এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কৌশলগত পদক্ষেপ। এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে, ভারতের উপর আঘাত এলে জবাব সীমান্ত পেরিয়ে যাবে। ত্রিপুরার মতো সীমান্তবর্তী রাজ্য থেকেও যখন সমর্থনের সুর উঠে আসে, তখন পুরো দেশ একত্রে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এক শক্ত মুষ্টিতে রূপ নেয়। সন্ত্রাসের মূলোচ্ছেদে ভারত এখন শুধু প্রস্তুত নয়—প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরণের সুনির্দিষ্ট আক্রমণ শুধু সন্ত্রাসী সংগঠনের পরিকাঠামো নয়, তাদের মানসিক ভিত্তিকেও চূর্ণ করে দেবে।