পর্যটন শিল্পকে ঢেলে সাজাতে দিল্লির দরবারে সুশান্ত!
ত্রিপুরার পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বড়সড় উদ্যোগ নিচ্ছে রাজ্য সরকার। পর্যটন ও পরিবহন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী সম্প্রতি দিল্লি সফরে গিয়ে কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রীসহ একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। আলোচনার মূল বিষয় ছিল রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর পরিকাঠামো উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, এবং ত্রিপুরাকে পর্যটন মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করা।
পর্যটনের ভবিষ্যৎঃ
ত্রিপুরার পর্যটন শিল্প এতদিন অবহেলিত ছিল। পূর্ববর্তী সরকার পর্যটনকে রাজস্ব বৃদ্ধির একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে ভাবেনি। অথচ, ত্রিপুরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর, যার মধ্যে রয়েছে নারিকেল কুঞ্জ, ডুম্বুর লেক, নীরমহল, ঊনকোটি, দেবতামুড়া, জাম্পুই পাহাড়ের মতো অনন্য স্থান। বর্তমান সরকার পর্যটনকে শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে। পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এই খাতকে শক্তিশালী করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতের সঙ্গে বৈঠকে তিনি রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর উন্নয়নের জন্য আরও ১৫০ কোটি টাকা অনুদানের দাবি জানান। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এই দাবিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে অনুদান মঞ্জুর করেছেন।
প্রসাদ প্রকল্পঃ
ত্রিপুরার অন্যতম প্রধান ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্র মাতাবাড়ি। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রসাদ প্রকল্পের আওতায় এই স্থানকে নবরূপে সাজানো হয়েছে। শীঘ্রই এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। নতুন পরিকাঠামো তৈরি হওয়ায় ভক্ত ও পর্যটকদের জন্য আরও সুবিধা বাড়বে। রাজ্য সরকার আশা করছে, মাতাবাড়ির উন্নয়নের ফলে তীর্থযাত্রীর সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে এবং রাজ্যের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
পরিকল্পনাঃ
নারিকেল কুঞ্জ ও ডুম্বুর লেককে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যটকদের জন্য রিসর্ট, বোটিং, ওয়াটার স্পোর্টস, ক্যাম্পিং-এর সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ঊনকোটি, যেখানে শিলাচিত্র ও মূর্তি খোদাই করা রয়েছে, এক অপূর্ব ঐতিহাসিক নিদর্শন। কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় এই স্থানকে বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদায় উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পর্যটন শিল্প শুধুমাত্র রাজস্ব বৃদ্ধি করবে না, এটি রাজ্যের তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করবে। হোটেল, রিসর্ট, পরিবহন, রেস্তোরাঁ, গাইড, হস্তশিল্প ও স্থানীয় শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে হাজারো মানুষের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ তৈরি হবে।
অবকাঠামোঃ
পর্যটন বিকাশের জন্য রেল ও বিমান যোগাযোগ উন্নত করা জরুরি। দিল্লিতে সুশান্ত চৌধুরী কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রামমোহন নাইডুর সঙ্গে বৈঠকে আগরতলা বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিকীকরণ, বিমান ভাড়া নিয়ন্ত্রণ, এবং নতুন বিমান পরিষেবা চালুর দাবি জানান। কৈলাসহর বিমানবন্দর পুনরায় চালু করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত এই বিমানবন্দর চালু হলে উত্তর ত্রিপুরায় পর্যটনের বিকাশ ঘটবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, শীঘ্রই তিনি কৈলাসহর বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসবেন।
দেশের জন্য মডেলঃ
পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীর এই উদ্যোগে ত্রিপুরার পর্যটন শিল্প নতুন দিগন্তের পথে এগোচ্ছে। নতুন পরিকল্পনা ও পরিকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলো দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হবে। রাজ্যের পর্যটন শিল্প আগামী দিনে গোটা দেশের জন্য মডেল হয়ে উঠতে পারে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।