পর্যটনের নতুন দিগন্ত গোমতী নদী

পর্যটনের নতুন দিগন্ত গোমতী নদী!

গোমতী নদীকে কেন্দ্র করে জলপথে পর্যটনের নতুন উদ্যোগ!

গত সাত বছরে রাজ্যের সম্ভাবনাময় পর্যটনের ব্যাপক অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে। ত্রিপুরায় দ্বিতীয়বারের মতো বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে নেওয়া হচ্ছে একের পর এক নতুন পদক্ষেপ। রাজ্য সরকার পর্যটনকে শিল্পে পরিণত করার পাশাপাশি পর্যটন থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে এবার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে জলপথ ব্যবস্থার ওপর।পর্যটন দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীর নেতৃত্বে ইতিমধ্যেই রাজ্যের একসময় অবহেলিত ও অপ্রচলিত পর্যটন কেন্দ্রগুলোর উন্নয়নে শুরু হয়েছে নতুন করে পরিকল্পনা ও ভাবনা। এরই অঙ্গ হিসেবে এবার গোমতী নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হচ্ছে জলপথ পর্যটন ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে পর্যটকরা নদীপথে রাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী জানান, গোমতী নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য ইতিমধ্যে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। মূলত মহারানী এলাকা থেকে শুরু করে সীপাহিজলা জেলার সোনামুড়া পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ড্রেজিং প্রকল্পে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১৯.৫ কোটি টাকা। এই কাজ আগামী এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ড্রেজিং শেষ হওয়ার পর গোমতী নদীতে মহারানী থেকে ছবিমুড়া পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য চালু করা হবে বোট ও জেটি পরিষেবা। পর্যটকরা যাতে আরামদায়কভাবে নদীপথে ভ্রমণ করে ছবিমুড়ার অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন, তার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে পর্যটন নিগম।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গোমতী নদীর এই রুটটি ২০২০ সালেই ইন্দো-বাংলাদেশ প্রোটোকল রুট হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রকল্প সম্পন্ন হলে, ছোট বাণিজ্যিক জাহাজের মাধ্যমে ত্রিপুরা থেকে সরাসরি বাংলাদেশের দাউদকান্দি ও ভারতের কলকাতার মধ্যে নৌপথে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে। এর ফলে রাজ্যের পণ্য পরিবহন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ আরও মজবুত হবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে কিছুটা অবনতি ঘটায় আপাতত বাণিজ্যিক জাহাজ পরিষেবা স্থগিত রাখা হয়েছে। তার পরিবর্তে পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে প্রথম ধাপে বোট ও জেটি পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।

পর্যটন দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গোমতী নদীর এই নতুন জলপথে পর্যটন রুট চালু হলে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের আগমন বাড়বে এবং রাজ্যের অর্থনীতি ও পর্যটন শিল্প এক নতুন দিশা পাবে। রাজ্য সরকার আশা করছে, এই উদ্যোগ ত্রিপুরাকে দেশের অন্যতম জলপথ পর্যটন গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। এভাবেই একদিকে যেমন পর্যটনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে, তেমনি রাজ্য সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কর্মপদ্ধতির মাধ্যমে ত্রিপুরার দীর্ঘদিনের সম্ভাবনাময় জলপথ ব্যবস্থাও ফিরে পাচ্ছে তার প্রাপ্য মর্যাদা।

গোমতী নদীর বুকে ভেসে বেড়ানো বোটে বসে পাহাড়, জঙ্গল আর নীল আকাশের মাঝে প্রকৃতিকে একেবারে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ ত্রিপুরার পর্যটকদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা হয়ে উঠবে তা বলাই বাহুল্য। রাজ্যের পর্যটনের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চলেছে এই প্রকল্প এবং পর্যটনের নতুন ঠিকানা হয়ে উঠছে গোমতী নদী—এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।About Us