পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ি থেকে উদ্ধার সরকারি সিমেন্ট!
রাজ্যের পঞ্চায়েত স্তরে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন কিছু নয়। তবে এবার সেই দুর্নীতির আঁচ এসে পড়েছে জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মার নির্বাচনী ক্ষেত্র কৃষ্ণপুরে। চাঞ্চল্যকর ঘটনা, মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের এক প্রভাবশালী বিজেপি নেতা নির্মল সরকারের বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয়েছে ২৮ বস্তা সরকারি সিমেন্ট! অভিযোগ উঠেছে, সরকারি প্রকল্পের কাজে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ এই সিমেন্ট তিনি নিজের স্বার্থে ব্যবহার করার জন্য বাড়িতে মজুত রেখেছিলেন।
সূত্রের খবর, মধ্য কৃষ্ণপুর পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামী তথা বিজেপির খোয়াই জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল সরকারের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে ২৮ বস্তা সরকারি সিমেন্ট। স্থানীয় বাসিন্দারা এবং বিজেপির একাংশই এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হন এবং ব্লকের আধিকারিকদের খবর দেন। পরে ব্লকের কর্মীরা এসে নির্মল সরকারের বাড়ি থেকে সিমেন্ট উদ্ধার করেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকার একটি সরকারি ড্রেন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ ছিল এই সিমেন্ট। কিন্তু অভিযোগ, ড্রেনের কাজ সম্পন্ন না করেই নির্মল সরকার ঐ সিমেন্ট নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। এ নিয়ে বিজেপির স্থানীয় কর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
এই ঘটনার পর বিজেপির স্থানীয় একাংশ নেতারা সরাসরি নির্মল সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তাঁদের বক্তব্য, নির্মল সরকার দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি নির্মাণসামগ্রী লুটপাট করছেন। সরকারি ইট, রড ও সিমেন্ট ব্যবহার করে নিজের বাড়ি তৈরি করারও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, জমি দখলের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন তিনি।
তবে এত বড় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরও নির্মল সরকারের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। কেন এখনও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো না, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিজেপির কর্মীদের একাংশও এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের বক্তব্য, যাঁর বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাঁকে কীভাবে খোয়াই জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব দেওয়া হলো? কাদের অনুমোদনে তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হলেন?
এই ঘটনার পর বিরোধী দলগুলিও সরব হয়েছে। সিপিআইএম এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, বিজেপির আমলে পঞ্চায়েত স্তর থেকে শুরু করে রাজ্য স্তর পর্যন্ত দুর্নীতি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বিরোধীদের বক্তব্য, ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ার কারণেই নির্মল সরকারের বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
এখন প্রশ্ন একটাই—নির্মল সরকারের বাড়ি থেকে সরকারি সিমেন্ট উদ্ধারের পরও কেন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো না? প্রশাসনের নীরবতা কি তাঁকে আড়াল করার প্রচেষ্টা? বিজেপির একাংশও যখন দুর্নীতির অভিযোগ তুলছে, তখন কি দল এই বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেবে? না কি সবকিছু ধামাচাপা পড়ে যাবে? এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন ও দল কী সিদ্ধান্ত নেয়। কৃষ্ণপুরের সাধারণ মানুষের একটাই দাবি—যেই দুর্নীতি করুক না কেন, তার বিরুদ্ধে অবিলম্বে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক।