দিল্লিতে সংগঠনের অভাবে বিপর্যস্ত বামেরা!
দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে বামপন্থী দলগুলোর ভরাডুবি এবার নজিরবিহীন। ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, বাম দলগুলোর সম্মিলিত প্রাপ্ত ভোট নোটা (NOTA – None of The Above)-র অর্ধেকেরও কম।সিপিআই(এম)-এর শীর্ষ নেতা প্রকাশ করাতের দলসহ অন্যান্য বাম দলগুলোর ভোট এতটাই কম যে, দিল্লির রাজনৈতিক মানচিত্রে কার্যত অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে তারা।
এবার দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে সিপিআই(এম), সিপিআই এবং সিপিআই(এম-এল) মিলিয়ে মোট ছ’টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল বামেরা। কিন্তু ফলাফল বলছে, প্রতিটি আসনেই তাঁদের প্রাপ্ত ভোট অত্যন্ত নগণ্য।নির্বাচনী হিসেব অনুযায়ী, বাম দলগুলোর সম্মিলিত মোট ভোট সংখ্যা মাত্র ২,১৫৮। অথচ, শুধুমাত্র নোটা ভোটই পড়েছে ৫,৬২৭, যা বামেদের মোট ভোটের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
ভোট শতাংশের বিচারে দেখা যাচ্ছে; সিপিআই(এম) পেয়েছে ০.০১% ভোট, সিপিআই(এম-এল) পেয়েছে ০.০১% ভোট, সিপিআই ০.০২% ভোট পেয়েছে তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি, অন্যদিকে নোটা ভোটের পরিমাণ ০.৫৭%, যা বামেদের সম্মিলিত ভোট শতাংশের অনেক বেশি। শুধু বাম দলই নয়, জাতীয় স্তরের আরেকটি দল জনতা দল ইউনাইটেড JD(U)-ও নোটার চেয়ে কম ভোট পেয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দিল্লিতে বামেদের সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং জনভিত্তির অভাবের কারণেই এই বিপর্যয় নেমে এসেছে। কয়েক দশক আগেও দিল্লিতে শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে বামপন্থীদের শক্তিশালী ভিত্তি ছিল। কিন্তু বর্তমানে, রাজধানীর রাজনীতিতে তাঁদের কার্যত কোনও অস্তিত্ব নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, বামেদের প্রধান সমস্যা হলো তারা দিল্লির জনমানসে আর কোনও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারছে না। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে এবং ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় ক্ষমতা হারানোর পর থেকেই বাম শিবির ক্রমশ দুর্বল হয়েছে। এর মধ্যে দিল্লিতে বিজেপি বিরোধী শক্তি হিসেবে কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টির (AAP) উত্থান বামেদের অস্তিত্ব আরও সংকুচিত করে দিয়েছে।
দিল্লির সাম্প্রতিক নির্বাচনী ফলাফল স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, রাজধানীর রাজনীতিতে বাম দলগুলোর জন্য জায়গা ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, যদি সংগঠনিকভাবে বাম দলগুলো শক্তিশালী না হয় এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে না পারে, তবে আগামী দিনে দিল্লিতে তাদের অস্তিত্ব আরও সংকটে পড়বে।