ত্রিপুরার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ঝলক, দিল্লির প্রজাতন্ত্র দিবসে!
২০২৫ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসে নয়াদিল্লির কর্তব্য পথে প্রদর্শিত কুচকাওয়াজে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবকটি রাজ্যের মধ্যে শুধুমাত্র ত্রিপুরাই স্থান পেল। দিল্লির কর্তব্যপথে আজ এক মনোমুগ্ধকর উদযাপনের সাক্ষী হলো সমগ্র দেশ। ভারতের ৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবসের এই মহাযজ্ঞে দেশবাসী প্রত্যক্ষ করল ভারতের সামরিক শক্তি, ঐক্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের এক অপূর্ব মিশ্রণ।
প্রতি বছরের মতোই এ বছরও এই বিশেষ দিনটি স্মরণ করা হলো ভারতীয় সংবিধানের কার্যকর হওয়ার ঐতিহাসিক মুহূর্তের সম্মানে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিশরের রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসি। তাঁর উপস্থিতি এই উদযাপনকে আন্তর্জাতিক গুরুত্ব দিয়েছে। ত্রিপুরার অনন্য আকর্ষণ ছিল, রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক চতুর্দশ দেবতা বাড়ি মন্দিরের আদরে তৈরি ট্যাবলু। ভারতের প্রতিটি রাজ্যের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিনিধিত্বের মধ্য দিয়ে যে বৈচিত্র্য প্রদর্শিত হয়, সেখানে ত্রিপুরার ট্যাবলো এক বিশেষ উজ্জ্বলতা এনেছিল। ত্রিপুরার ট্যাবলোতে রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, বাঁশ ও বেতশিল্প, এবং এখানকার জীবন্ত সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়। মূল ট্যাবলোটি “স্বনির্ভর ত্রিপুরা: হস্তশিল্পের মাধ্যমে আর্থিক উন্নয়ন” থিমে সাজানো হয়েছিল। এতে রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী বাঁশের সামগ্রী, শাল ও চাদরের উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং পরিবেশবান্ধব শিল্পের উপর জোর দেওয়া হয়। ট্যাবলোতে আরও প্রদর্শিত হয় ত্রিপুরার গারো এবং রিয়াং উপজাতির ঐতিহ্যবাহী নৃত্য। রঙিন পোশাক এবং মনোমুগ্ধকর নৃত্যশৈলী দর্শকদের মুগ্ধ করে। ত্রিপুরার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এই অনন্য প্রদর্শন আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় স্তরে প্রশংসিত হয়। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রজাতন্ত্র দিবসের মঞ্চে আমাদের রাজ্যের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরার সুযোগ পেয়ে আমরা অত্যন্ত গর্বিত। এই ট্যাবলো শুধু আমাদের শিল্প ও সংস্কৃতির প্রচার নয়, ত্রিপুরার নতুন সম্ভাবনার এক উজ্জ্বল বার্তা বহন করে।” প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের মূল আকর্ষণ ছিল ভারতীয় সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজ। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট কর্তব্যপথে তাদের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করে। এবারের কুচকাওয়াজে নতুন প্রজন্মের অস্ত্র এবং প্রযুক্তির প্রদর্শনী বিশেষ নজর কাড়ে। প্রথমবারের মতো, ভারতীয় বিমানবাহিনীর মহিলা পাইলটরা যুদ্ধবিমান পরিচালনার কৌশল প্রদর্শন করেন। এই নজিরবিহীন পদক্ষেপ নারীদের ক্ষমতায়নের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। এবারের প্রজাতন্ত্র দিবসে জাতীয় ঐক্যের প্রতিচ্ছবি ছিল দৃশ্যমান। দেশের বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তাদের নিজ নিজ ট্যাবলোতে বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরেছে। পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, গুজরাট, এবং কেরালার ট্যাবলোর পাশাপাশি ত্রিপুরার প্রদর্শনী সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এই উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, “আমাদের সংবিধান কেবল একটি আইনি দলিল নয়, এটি আমাদের দেশের ঐক্য, গণতন্ত্র এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতীক। আমরা একসঙ্গে কাজ করে আমাদের ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করতে পারি।”
প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনকে কেন্দ্র করে দিল্লি শহরজুড়ে নেওয়া হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কর্তব্যপথ এবং সংলগ্ন এলাকাগুলিতে মোতায়েন করা হয়েছিল প্রচুর নিরাপত্তা কর্মী।জনসাধারণের মধ্যে ছিল উৎসাহের চরম উদ্দীপনা। বহু মানুষ ভোরবেলা থেকেই কর্তব্যপথে জড়ো হন। ২০২৫ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের উদযাপন ভারতীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং জাতীয় ঐক্যের একটি অনন্য মঞ্চ হিসেবে উদযাপিত হলো। ত্রিপুরার ট্যাবলো এই অনুষ্ঠানের অন্যতম বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠে। এই দিনটি শুধু অতীতকে স্মরণ করার জন্য নয়, বরং ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এক নতুন উদ্দীপনা জোগাল।