ত্রিপুরা বিজেপির নতুন সভাপতি নির্বাচন ঘিরে টানটান উত্তেজনা!!
আগামী দিনে ত্রিপুরা প্রদেশ বিজেপির নতুন সভাপতি কে হবেন, তা নিয়ে জোর জল্পনা চলছে দলের অভ্যন্তরে ও রাজনৈতিক মহলে। বর্তমান সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকেই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নতুন সভাপতির নাম চূড়ান্ত করতে দফায় দফায় বৈঠক চলছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোন নির্দিষ্ট নাম ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। ফলে রাজ্যের বিজেপি শিবিরে দেখা দিয়েছে চরম অস্থিরতা এবং তা নিয়ে দলীয় কর্মীদের মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট ভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
সূত্রের খবর, প্রদেশ বিজেপির সভাপতি পদের জন্য দুটি প্রধান নাম উঠে এসেছে। প্রথমজন হলেন রাজ্যের বর্তমান মন্ত্রী টিঙ্কু রায় এবং দ্বিতীয়জন হলেন বিধায়ক ভগবান দাস। উভয়েরই দলীয় অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং তারা সংগঠনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত। তবে, এখানেই শেষ নয়। বর্তমান সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য্যও পুনরায় সভাপতি হওয়ার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে বিকল্প কোনো নাম প্রস্তাব করেননি, বরং নিজের অবস্থান ধরে রাখতে নানা কৌশল অবলম্বন করে চলেছেন।
একটি বিশেষ সূত্র জানিয়েছে, বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব ত্রিপুরা প্রদেশ কমিটির সভাপতি নির্বাচনে একটি বড় চমক দেখাতে পারে। আলোচনায় থাকা দুই নামের বাইরে তৃতীয় কেউ এই পদ পেতে পারেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, যার নাম এখনো প্রকাশ্যেই আসেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এক্ষেত্রে সংঘ পরিবারের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। সংঘ পরিবারের মতাদর্শ ও রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা হতে পারে দলের শীর্ষ মহলের।
এই পরিস্থিতিতে আগামী ৩রা এপ্রিল ত্রিপুরা সফরে আসতে পারেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সদস্য জুয়েল ওরাম। তিনি বিজেপির সাংগঠনিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার দায়িত্বে রয়েছেন তাই তার এই সফরকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, তিনি রাজ্য সফর শেষে দিল্লি ফিরে গেলেই প্রদেশ সভাপতি পদের নতুন নাম ঘোষণা করা হতে পারে।
নতুন সভাপতি নির্বাচনকে ঘিরে রাজ্য বিজেপির ভেতরে একাধিক গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। একদিকে কংগ্রেস থেকে আসা নেতাদের একটি অংশ আলাদা অবস্থানে রয়েছে, অন্যদিকে দীর্ঘদিনের পুরানো বিজেপি নেতারা সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চাইছেন। তবে সংঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ নেতারাও নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চাইছেন। এই কোন্দল এখন আর দলের ভেতরে সীমাবদ্ধ নেই, সাধারণ মানুষের মধ্যে তা নিয়ে চলছে প্রকাশ্যে আলোচনা।
এই দলীয় অস্থিরতার ফলে বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামো বেশ কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা বিরোধী দলগুলোর জন্য স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কংগ্রেস ও সিপিআইএম ইতিমধ্যেই নিজেদের শক্তি পুনর্গঠনের কাজে লেগে পড়েছে। যদি বিজেপি দ্রুত সভাপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করতে পারে, তাহলে আগামী দিনে এই দ্বন্দ্বের খেসারত দিতে হতে পারে শাসক দলকে। ত্রিপুরা বিজেপির নতুন সভাপতি নির্বাচন শুধু দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, বরং এটি রাজ্যের ভবিষ্যৎ ও রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এখন দেখার বিষয়, সর্বভারতীয় নেতৃত্ব কাকে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয় এবং তিনি কিভাবে বিজেপির বর্তমান শক্তিকে অক্ষুন্ন রেখে সংঘ পরিবারের সাংগঠনিক শ্রীবৃদ্ধি করে।