ত্রিপুরা বাজেট 2025-26

ত্রিপুরা বাজেট 2025-26!!

২০২৫-২৬ অর্থবছরের ত্রিপুরা রাজ্যের বাজেট সারাংশ!!

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৩২,৪২৩.৪৪ কোটি টাকার বাজেট শুক্রবার পেশ করেছেন ত্রিপুরার অর্থমন্ত্রী প্রনজিত সিংহ রায়। এই বাজেট ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় ১৬.৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এবারের বাজেটে মূলধনী ব্যয় ৭,৯০৩.২৬ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ১৯.১৪ শতাংশ বেশি। বাজেট ঘাটতি নির্ধারিত হয়েছে ৪২৯.৫৬ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, এবারের বাজেট অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির উপর জোর দিচ্ছে এবং নারীর ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, বাজেটে কোনো নতুন করের প্রস্তাব করা হয়নি। সমস্ত শ্রেণির মানুষের কথা মাথায় রেখে বাজেট তৈরি করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যঃ

২০২৫-২৬ অর্থবছরে কৃষি ও সংশ্লিষ্ট খাতের জন্য ১,৮৮৫.৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা ২০২৪-২৫ সালের বাজেটের তুলনায় ৯.৪৯% বেশি। শিক্ষা খাতে ৬,১৬৬.১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১১.৯৪% বেশি। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ১,৯৪৮.৬৯ কোটি টাকা, যা ২০২৪-২৫ সালের তুলনায় ১২.৮৯% বেশি।

নতুন প্রকল্পঃ

  • ‘মুখ্যমন্ত্রী শস্য শ্যামলা যোজনা’: উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসলের প্রচারের জন্য এই নতুন প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এর জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
  • ‘বিজ্ঞান বিষয় ও ইংরেজি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’: প্রতিটি সাব-ডিভিশনে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ১০০ জন শিক্ষার্থীর জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সদর মহকুমায় বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি থাকায় সেখানে তিনটি কেন্দ্র স্থাপিত হবে। এর জন্য ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
  • নতুন ডিগ্রি কলেজ: আমবাসা, কাকড়াবন ও করবুকে নতুন ডিগ্রি কলেজ স্থাপন করা হবে বলে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন।
  • ‘ত্রিপুরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা কেন্দ্র’: প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য মানসম্মত প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্দেশ্যে রাজ্যের তিনটি স্থানে এই কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এর জন্য ১.৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
  • ওয়াকফ সম্পত্তির উন্নয়ন ও সংখ্যালঘু উন্নয়ন: ওয়াকফ সম্পত্তির উন্নয়নে ১.২০ কোটি টাকা, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রামগুলির উন্নয়নে ৫ কোটি টাকা এবং সংখ্যালঘু ব্লকগুলির আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
  • সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য স্টাইপেন্ড: সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের স্টাইপেন্ড প্রদানের জন্য ৯.৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

নারী ও সমাজ কল্যাণঃ

  • ‘মুখ্যমন্ত্রী কন্যা বিবাহ যোজনা’: অন্ত্যোদয় পরিবারের একজন কন্যা সন্তানের বিয়ের জন্য রাজ্য সরকার ৫০,০০০ টাকা ব্যয় করবে। মহকুমা পর্যায়ে গণবিবাহ অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রকল্পের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
  • ‘মুখ্যমন্ত্রী বালিকা সমৃদ্ধি যোজনা’: অন্ত্যোদয় পরিবারের নবজাতক কন্যা সন্তানের জন্য ৫০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করা হবে, যা মেয়েটির ১৮ বছর বয়সের পর নগদ করতে পারবে। এই প্রকল্পের জন্য ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
  • ‘মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্প’: মানসিক প্রতিবন্ধীদের মাসিক ৫,০০০ টাকা পেনশন দেওয়া হবে। যাঁরা ইতিমধ্যেই প্রতিবন্ধী পেনশন হিসেবে ২,০০০ টাকা পাচ্ছেন, তাঁরা প্রতি মাসে অতিরিক্ত ৩,০০০ টাকা পাবেন। এই প্রকল্পের জন্য ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
  • ‘মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী শিশুদের বিনোদন কেন্দ্র’: মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য একটি বিশেষ বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এর জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পঃ

  • ‘ভারত মাতা ক্যান্টিন কাম নাইট শেল্টার’: রাজ্যের অন্যান্য স্থান থেকে আগরতলায় আসা মানুষদের জন্য রাতে থাকার ও ভর্তুকিযুক্ত খাবারের ব্যবস্থা করতে ‘ভারত মাতা ক্যান্টিন কাম নাইট শেল্টার’ স্থাপন করা হবে। এর জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
  • ‘আরএম পরিবারের জীবিকা উন্নয়ন প্রকল্প’: দরিদ্র আরএম পরিবারের জীবিকা উন্নীত করার জন্য নতুন প্রকল্প চালু করা হবে। এর জন্য প্রাথমিকভাবে ১.৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
  • ‘কম্পিউটার-ভিত্তিক পরীক্ষার কেন্দ্র’: হাপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা গ্রাউন্ডে একটি কম্পিউটার-ভিত্তিক পরীক্ষার কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, যাতে পরীক্ষার্থীদের অনলাইন পরীক্ষার জন্য রাজ্যের বাইরে যেতে না হয়। এর জন্য ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী প্রনজিত সিংহ রায় বলেছেন, এই বাজেট রাজ্যের সার্বিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, নারী ও সংখ্যালঘু উন্নয়নসহ প্রতিটি খাতে এই বাজেট নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে তিনি আশাবাদী।About Us