ত্রিপুরা

ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাংকে ভুয়া নথি দিয়েও ঋণ পাওয়া যায়!

ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন!

ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে রাজ্যের স্থানীয় অর্থনীতিকে প্রভাবিত করার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি চক্র। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সেই চক্রটি কাগজপত্র তদারকি না করেই লোন দিয়ে দিচ্ছে অনেককে। যার ফলে ব্যাংকের মাধ্যমে পরোক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাজ্যের অর্থনীতি। ব্যাংকের যেসব কর্মচারী এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেও অনাগ্রহ দেখাচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক। ফলে এই অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত তারা পার হয়ে যাচ্ছে।এরকম ভাবেই কাগজপত্র জালিয়াতের মাধ্যমে লোন দেওয়ার আরো একটি ঘটনা প্রকাশ্যে এলো।

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য বলার পরে ছয় মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত ব্যাংক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে নি। ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকেই সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ ওঠে যে, রাজ্যের মৎস্য বিভাগের একজন কর্মী ভুয়া নথি জমা দিয়ে ১৫ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত ঋণ গ্রহণ করেছেন। অভিযুক্ত কর্মী হলেন সঙ্গীতা আইচ দত্ত (স্বামী শ্যামল দত্ত), মৎস্য দপ্তরের বেতনভুক্ত কর্মী হিসেবে তিনি এই ঋণ পেয়েছিলেন। ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ঋণ পাওয়ার সময় তার পক্ষ থেকে জমা দেওয়া কেওয়াইসি, ডিডিও সার্টিফিকেট ও বেতনের স্টেটমেন্ট জাল ছিল। ঋণ গ্রহণের পরই বিষয়টি তদন্তে উঠে আসে, যে নথিগুলি জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছিল। গত ১৪ মে ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাংকের জয়নগর ব্রাঞ্চ এই বিষয়টি জানায় মৎস দপ্তরকে। বিষয়টি বিবেচনা করে দুইমাস পরে অর্থাৎ ১৩ জুলাই মৎস্য দপ্তরের অধিকর্তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য বলে। ব্যস এটুকুই অগ্রগতি। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত সঙ্গীতা আইচ দত্তের বিরুদ্ধে মামলা করা তো দূরের কথা, এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগও নেওয়া হয়নি পরে খবর। জাল নথি ব্যবহার করে ঋণ গ্রহণের পরেও বহাল তবিয়তে আছেন সঙ্গীতা দেবী। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গত জুলাই মাসে মামলা করার জন্য বলা হলেও, কেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টিতে উদাসীনতা দেখাচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর আধিকারিকভাবে পাওয়ার না গেলেও, ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসার ভয়ে মামলা থেকে নিজেদের দূরে রাখছে ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাংক। কারণ ওই মহিলা যেমন জাল নথি ব্যবহার করে ঋণ গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে, তেমনি সেই নথিগুলি খতিয়ে দেখার দায়িত্বও এড়াতে পারেনা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। স্বাভাবিক কারণে সেই মহিলার ঋণগ্রহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষের যোগ সাজসের সন্দেহ উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এটি একটি মাত্র ঘটনা নয়, এরকম আরো বহু অভিযোগ রয়েছে এই ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার বিরুদ্ধে, যেখানে একটি অসাধুচক্র টু-পাইস কমানোর লোভে বাঁকা পথে অনেককে ঋণ মঞ্জুর করে দেয়। সেই চক্রটিকে আড়াল রাখার জন্যই মামলা থেকে ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাংক নিজেদের দূরে রাখছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ। কারণ মামলা শুরু হলে, এইরকম আরো বহু ঘটনা সামনে উঠে আসতে পারে, যেখানে ব্যাংকের বহু কর্মচারী তদন্তের আওতায় চলে আসার আশঙ্কা রয়েছে। শুধু ঋণ মঞ্জুর করাই নয়, ঋণ খেলাপি সহ বহু ক্ষেত্রেই আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠে আসতে পারে তদন্ত শুরু হলে। আর এক্ষেত্রে মৎস দপ্তরও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না, সেটাও অনেকের বোধগম্য নয়।