ত্রিপুরার বহুল আলোচিত চিটফান্ডগুলি হাইলাকান্দি কেন্দ্রিক!
ত্রিপুরার বহুল আলোচিত চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই (CBI) তিনজন পলাতক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে। জানা গেছে, অভিযুক্তদের মধ্যে মিন্নাতুল্লাহ বারভূইয়াকে হায়দ্রাবাদে, কামরুল ইসলাম বারভূইয়াকে আসামের হোজাইতে এবং ইমদাদুল্লাহ বারভূইয়াকে তামিলনাড়ুর ভেলোর থেকে আটক করা হয়েছে। তিনজনই আসামের হাইলাকান্দি জেলার বাসিন্দা এবং চিটফান্ড সংস্থা কামা প্রজেক্টস অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের পরিচালক বলে জানা গেছে। এই প্রতারণার মামলায় দীর্ঘদিন ধরে তারা পলাতক ছিলেন।
সূত্রের খবর, ত্রিপুরা সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে সিবিআই, ত্রিপুরার পশ্চিম আগরতলা, কুমারঘাট এবং তেলিয়ামুড়া থানায় ২০১২-২০১৪ সালের মধ্যে দায়ের করা পৃথক তিনটি মামলা পুনঃনিবন্ধন করে। এই মামলাগুলি সিবিআইকে হস্তান্তর করে ত্রিপুরা পুলিশ। চিটফান্ড সংস্থা কামা ইন্ডিয়া প্রজেক্টস অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড অবৈধভাবে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করে এবং সেবি (SEBI), আরবিআই (RBI) কিংবা অন্য কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন ছাড়াই এই অর্থ লেনদেন চালিয়ে যায়। পরবর্তীতে এই সংস্থার পরিচালকরাই সম্পূর্ণ অর্থ আত্মসাৎ করে নেয়।
তদন্তের সময় প্রমাণিত হয় যে, অভিযুক্ত মিন্নাতুল্লাহ, কামরুল ইসলাম ও ইমদাদুল্লাহ—তিনজনই প্রতারণার মূল হোতা এবং তারা দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন। আগরতলার বিশেষ সিবিআই আদালত তাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল। অবশেষে, হায়দ্রাবাদ, আসামের হোজাই ও তামিলনাড়ুর ভেলোরে কৌশলী অভিযান চালিয়ে সিবিআই তাদের গ্রেপ্তার করে।
এদিকে, সিবিআই ৩ ফেব্রুয়ারি আরও এক অভিযুক্ত বিকাশ দাসকে মহারাষ্ট্রের ভিওয়ান্ডি থেকে গ্রেপ্তার করেছিল। জানাগেছে সেও আসামের হাইলাকান্দিরই বাসিন্দা এবং ত্রিপুরা চিটফান্ড কেলেঙ্কারি মামলার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত। ২০১৩ সাল থেকে সে পলাতক ছিলেন, এবং ২০২৪ সালের ১৬ আগস্ট তার বিরুদ্ধে স্থায়ী পরোয়ানা জারি হয়। সিবিআই তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ২০,০০০ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল এবং অবশেষে অভিযান চালিয়ে তাকে পাকড়াও করে সংস্থাটি।
ত্রিপুরায় চিটফান্ড কেলেঙ্কারি মূলত বামফ্রন্ট সরকারের শাসনামলে ঘটে। তখন একাধিক অবৈধ চিটফান্ড সংস্থা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করে প্রতারণা চালায়। ত্রিপুরার অসংখ্য সাধারণ মানুষ তাদের কষ্টার্জিত সঞ্চয় খুইয়েছে, কিন্তু আজও সেই অর্থ তারা ফেরত পায়নি। গত বছর ত্রিপুরা হাইকোর্ট চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে প্রতারিত গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য একটি বিশেষ পরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছিল। সেই সূত্রে সিবিআই কেলেঙ্কারির নায়কদের আইনের জালে তুলতে সক্রিয় অভিযান চালাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে এই চিটফান্ড সংস্থাগুলি রাজনৈতিক আশ্রয়ে পরিচালিত হচ্ছিল। ফলে মূল অভিযুক্তদের অনেকেই এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। সিবিআই যদি কঠোর হয়, তাহলে এই চক্রের মূল হোতাদেরও আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। রাজ্যবাসী এখন চাইছে, প্রতারকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হোক এবং আমানতকারীরা তাদের হারানো অর্থ ফেরত পাক। এখন দেখার বিষয়, সিবিআইয়ের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয়।