ত্রিপুরার সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগঃ আবেদন চলবে ১১ই মার্চ পর্যন্ত!
সরকারি সাধারণ ডিগ্রি কলেজের জন্য ১৩ জন অধ্যক্ষ নিয়োগ করতে চলেছে ত্রিপুরার উচ্চশিক্ষা দপ্তর। ত্রিপুরা লোকসেবা কমিশনের (TPSC) মাধ্যমে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে। অনলাইন আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১১ই মার্চ।
বর্তমানে ত্রিপুরা রাজ্যের ২৫টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজের মধ্যে ১৬টি কলেজে স্থায়ী অধ্যক্ষ নেই। দীর্ঘদিন ধরে এই সংকট চলতে থাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ত্রিপুরা উচ্চশিক্ষা দপ্তরের ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ হয়ে বহু অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর রাজ্য ছেড়ে বহিঃরাজ্যের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অধ্যাপক পদে যোগ দিচ্ছেন। কারণ, রাজ্যের কোনো সাধারণ ডিগ্রি কলেজে অধ্যাপক (প্রফেসর) পদ নেই, যদিও শতাধিক অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ইতোমধ্যেই প্রফেসর পদে পদোন্নতির জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছেন। অধ্যাপক না থাকায় গবেষণার সুযোগও সীমিত, ফলে পিএইচডি কোর্স কার্যত বন্ধ।
জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP) ২০২০ কার্যকর করার ঘোষণা দেওয়া হলেও, রাজ্যের কলেজগুলোর পরিকাঠামো ভগ্নসার দশা। UGC-এর সেমিস্টার নিয়ম অনুযায়ী কলেজগুলিতে বছরে ১৮০ দিন ক্লাস করানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। সঠিক অনুপাতে প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস নেওয়া হচ্ছে না। জেলার বিভিন্ন কলেজে বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবরেটরি কার্যত বন্ধ। কলা ও বাণিজ্য বিভাগের ক্ষেত্রেও সেমিস্টারে ৯১ দিনও পূর্ণাঙ্গ ক্লাস হচ্ছে না।
উচ্চশিক্ষা দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে রাজ্যে প্রায় ১,৭৮১ জন ইউজিসি স্বীকৃত অধ্যাপক প্রয়োজন। তবে ২০১৮ সালে পূর্বতন সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ১৮২টি অধ্যাপক পদের নিয়োগ বাতিল করা হয় এবং এরপর প্রায় দুই বছর কোনো নিয়োগ হয়নি। বিগত সাত বছরে মাত্র ৮১ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর নিয়োগ করা হয়েছে এবং সম্প্রতি ২২টি পদে ককবরক ভাষার শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে।নেট, স্লেট এবং পিএইচডি উত্তীর্ণ যুবক-যুবতীদের অভিযোগ, প্রায় ১,৫০০ জন উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণী চাকরির জন্য রাজপথে ঘুরছেন, তাদের জন্য কোনো নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়নি, ফলে অনেকের চাকরির বয়সসীমা অতিক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে।
২০২৩ সালের জুন মাসে আগরতলার টাউন হলে রাজ্যের কলেজগুলিতে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ (NEP 2020) প্রবর্তনের ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু পরিপূর্ণ সিলেবাস, পর্যাপ্ত শিক্ষক এবং শ্রেণিকক্ষের ঘাটতির কারণে শিক্ষাব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। এর ফলস্বরূপ প্রথম সেমিস্টারে প্রায় ৯,০০০ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। রাজ্যের বৃহত্তম কলেজগুলির মধ্যে আগরতলার রামঠাকুর কলেজ, বিবিএম কলেজ এবং উইমেন্স কলেজে এখনো নিয়মিত অধ্যক্ষ নেই। প্রায় ১৫,০০০ ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নরত থাকলেও কলেজ প্রশাসনিকভাবে অচল। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষদের প্রতিটি ছোটখাটো কাজের জন্য উচ্চশিক্ষা দপ্তরের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা ক্রমশ সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। শিক্ষার মানোন্নয়ন ও প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ এবং পরিকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন খুব শীঘ্রই। রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার এই বেহাল দশা আদৌ কাটবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে।