ত্রিপুরা সরকারের সঙ্গে ৮৭ জন উদ্যোগপতির ৩,৭০০ কোটি টাকার মৌ স্বাক্ষর!
শিল্পোন্নয়নের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিল ত্রিপুরা সরকার। রাজ্যে বিনিয়োগের লক্ষ্যে ৮৭ জন উদ্যোগপতি রাজ্য সরকারের সঙ্গে মোট ৩,৭০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। শনিবার আগরতলার এক বেসরকারি হোটেলে আয়োজিত ‘ডেস্টিনেশন ত্রিপুরা‘ বিজনেস কনক্লেভে এই ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত কয়েক বছর ধরে দেশ-বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য রাজ্য সরকার ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং সেই উদ্যোগ এখন সফল। তিনি বলেন, “মানুষ চায় যেখানেই বিনিয়োগ করবেন, সেখানে যেন শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। আমরা রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলার পরিবেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি। আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে ত্রিপুরা তৃতীয় স্থানে রয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা এখানে আসতে আগ্রহী হচ্ছেন।”
ত্রিপুরায় বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে রাজ্য সরকার বিভিন্ন ধরনের আর্থিক প্রণোদনা ও নীতি-সহায়তা দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, বিনিয়োগকারীদের জন্য বিদ্যুৎ খাতে সাবসিডি, মূলধনী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রণোদনা, এবং বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে বিশেষ নীতি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
শিল্পোন্নয়নের জন্য ‘ডেস্টিনেশন ত্রিপুরা’ বিজনেস কনক্লেভ রাজ্য সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন এবং ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি গ্রহণ করেছেন। ত্রিপুরা, যা উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম সম্ভাবনাময় রাজ্য, বাংলাদেশ-সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণের উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি করছে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই রাজ্যের অর্থনীতি মূলত কৃষি ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। এখানে প্রচুর প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রাজ্যে ইতিমধ্যে ‘লক্ষ্য ২০৪৭’ নামে একটি উন্নয়ন ভিশন চালু হয়েছে। রাজ্যের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৭৭,৭২৩ টাকা, যা ২০১২ সালের তুলনায় দ্বিগুণ। জিএসডিপি বৃদ্ধির হার ৮.৯%, যা উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘হীরা মডেল’ অনুসারে রাজ্যের সড়ক, বিমান ও রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশাল পরিবর্তন এসেছে। আগরতলার মহারাজা বীর বিক্রম (এমবিবি) বিমানবন্দর উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম সুন্দর ও ব্যস্ততম বিমানবন্দরে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি, সাব্রুমে মৈত্রী সেতু চালু হলে এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করবে। ইতিমধ্যে সেখানে স্পেশাল ইকোনমিক জোন (SEZ) গড়ে তোলা হয়েছে এবং বিনিয়োগকারীরা এতে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
ত্রিপুরায় শিল্প স্থাপনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষত—
✅ রাবার শিল্প
✅ বাঁশ ও আগর কাঠের শিল্প
✅ প্রাকৃতিক গ্যাস ভিত্তিক শিল্প
✅ কৃষিভিত্তিক শিল্প ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ
✅ পর্যটন ও হস্তশিল্প
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সান্তনা চাকমা, টিআইডিসি চেয়ারম্যান নবাদল বণিক, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, ডিজি ইন্টেলিজেন্স অনুরাগ, শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, এবং আসামের শিল্প দপ্তরের সচিব ইন্দিরা কলিতা-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। ত্রিপুরার অর্থনৈতিক ও শিল্পোন্নয়নের পথে এই নতুন বিনিয়োগ রাজ্যের ভবিষ্যৎকে আরও সমৃদ্ধ করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।