ত্রিপুরা-মিজোরাম সীমান্তের দামছড়া এখন ড্রাগস্ এর নতুন করিডোর!
মণিপুরে চলমান হিংসাত্মক কার্যকলাপ এবং রাষ্ট্রপতি শাসনের ফলে রাজ্যের নেশা কারবারিরা তাদের পাচারের রুট বদল করেছে। নতুন করে ড্রাগস্ পাচারের মূল করিডোর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ত্রিপুরা-মিজোরাম সীমান্তবর্তী দামছড়াকে। শুধু ত্রিপুরা নয়, এখন এই রুট ব্যবহার করে বাংলাদেশের পাচারকারীরাও ড্রাগস্ এবং ইয়াবার মতো সর্বনাশা নেশাসামগ্রী পাচার করছে।
কিছুদিন আগেও শুধুমাত্র ত্রিপুরার জন্য এই রুট ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের পাচারকারীরাও দামছড়াকে নিরাপদ করিডোর হিসাবে বেছে নিয়েছে। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই নেশা সামগ্রী আমদানির খবর উত্তর জেলার পুলিশ প্রশাসন এবং স্থানীয় রাজনীতিকদের জানা সত্ত্বেও, অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে এই করিডোর দিয়ে রাজ্যে ড্রাগস্ ছড়িয়ে পড়ছে এবং রাজ্যের যুবসমাজ সর্বনাশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
এক সময় রাজ্যের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় ড্রাগস্ এর প্রভাব সীমাবদ্ধ থাকলেও ২০১৮ সালে সরকার পরিবর্তনের পর গ্রাম, পাহাড়, শহর এবং শহরতলীতেও ড্রাগসের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে যে, এখন মহিলারাও ড্রাগসে আসক্ত হচ্ছে এবং বিভিন্ন রকম নেশা সামগ্রী ব্যবসাতেও যুক্ত হচ্ছে।
নতুন নতুন নেশামুক্তি কেন্দ্র খোলার পরও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না ড্রাগস্ এর আগ্রাসন। এমনকি নেশামুক্তি কেন্দ্রের ভেতরেই ড্রাগস্ বিক্রি হওয়ার অভিযোগ উঠেছে এবং পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে বেশ কয়েকটি ঘটনা। ডাবল ইঞ্জিন সরকারের মূল প্রতিশ্রুতি ছিল ‘নেশামুক্ত ত্রিপুরা’ উপহার দেওয়া। তবে বাস্তবে নেশার প্রভাব দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ড্রাগসের ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে এইডস্ আক্রান্তের সংখ্যাও। রাজধানী আগরতলা থেকে শুরু করে গন্ডাছড়া এবং ছাওমনুর মতো দুর্গম এলাকাগুলোতেও এখন এইডস্ রোগী সনাক্ত হচ্ছে, যা গোটা রাজ্যের জন্য অশনি সংকেত।
এই সর্বনাশের মূল আতুড় ঘর মায়ানমার এবং থাইল্যান্ড, যেখান থেকে মিজোরাম হয়ে দামছড়ার দশরথ সেতু দিয়ে ড্রাগস্ প্রবেশ করছে ত্রিপুরায়। কখনো কখনো চট্টগ্রামের পাহাড়ি পথও পাচারকারীরা ব্যবহার করছে। একসময় কক্সবাজার হয়ে বাংলাদেশে ড্রাগস্ ও ইয়াবা আমদানি হলেও তদানীন্তন হাসিনা সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে সেই রুট বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পাচারকারীরা নতুন করিডোর হিসেবে মিজোরাম-ত্রিপুরা সীমান্তের দামছড়াকে বেছে নিয়েছে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা পুলিশের নজরে এলেও মূল কারবারিদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসন শুধুমাত্র ছোটখাটো পাচারকারীদের গ্রেপ্তার করেই দায় সারছে। মূল মাস্টারমাইন্ডরা থেকে যাচ্ছে পর্দার আড়ালেই।
অজ্ঞাত কারণে রাজ্য সরকারও এই ড্রাগস্ নেটওয়ার্ক ভাঙতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে না, যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। তাই প্রশ্ন উঠছে, আদৌ ত্রিপুরা নেশামুক্ত হবে কিনা! বিশেষজ্ঞদের মতে, সীমান্ত এলাকায় পুলিশের নজরদারি বাড়ানো, স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলির সমন্বয় জোরদার করা এবং কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এই পাচারের নেটওয়ার্ক বন্ধ করা সম্ভব। অন্যথায়, যুবসমাজ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে এবং রাজ্যের সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিপর্যস্ত হবে। ত্রিপুরা সরকার কি এবার কঠোর পদক্ষেপ নেবে? নাকি চুনোপুঁটিদের ধরে বড় কারবারিদের আড়ালেই রেখে দেবে? রাজ্যের ভবিষ্যৎ এখন সেই উত্তর পাওয়ার অপেক্ষায়।