জিবি হাসপাতালের পরিষেবার মান!
জিবি হাসপাতালের পরিষেবা উন্নত করার চেষ্টা করছেন ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা। বিভিন্ন কর্মসূচিতে গিয়ে তিনি প্রায়শই জিবি হাসপাতালের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে এই হাসপাতালের পরিষেবা আরো উন্নত করার পাশাপাশি পরিকাঠামো ব্যবস্থার উন্নয়নেরও আশ্বাস দিচ্ছেন। এটাও ঠিক এখন জিবি হাসপাতালে অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা হয়।
এদিকে জিবি হাসাপাতালের মুকুটে যুক্ত করা হয়েছে কিডনি প্রতিস্থাপন ইউনিট। সম্প্রতি দুজনের কিডনি প্রতিস্থাপন ও হয়েছে। শীঘ্রই আরো একটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন চিকিৎসকরা। অপেক্ষমান তালিকায় আছেন বেশ কয়েকজন কিডনি আক্রান্ত রোগী। কিন্তু এর অবস্থা একেবারেই ঢাল তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দারের মত। কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য “বায়োপসি” করার মেশিন নেই কিডনি প্রতিস্থাপক ইউনিটের কাছে। রোগীকে কমপক্ষে ২ লক্ষ টাকা খরচ করে বাইরে থেকে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে আনতে হয়। কিডনি রোগীদের চিকিৎসার জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় প্রক্রিয়া “ফিস্টুলা” তৈরি করতে হয় তাদের দেহে; কিন্তু জিবি হাসপাতালের স্বনামধন্য এবং বহু চর্চিত কার্ডিওলজি বিভাগের এতোটুকু সময় নেই, যে তারা ওই মুমূর্ষু রোগীদের সেবায় তাদের জন্য একটি “ফিস্টুলা” তৈরি করে দেবে। এ নিয়ে প্লাস্টিক সার্জারি এবং কার্ডিওলজি বিভাগের বিভিন্ন তালবাহানায় বন্ধ হয়ে আছে এই প্রক্রিয়া। কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য নাম কে ওয়াস্তে অন্য রাজ্যের ব্যবস্থাপনা দিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার চললেও, বাস্তবে মাকাল ফল বলেই ব্যাখ্যা করছেন রোগীর আত্মীয় পরিজনরা।
আগামীদিনে লিভার প্রতিস্থাপন সহ আরো জটিল রোগের চিকিৎসা হবে, এমনটাই বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বাস্তব চিত্র ঠিক তার উল্টো। জিবি হাসপাতালে রাতে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে পাওয়া যায় না। ইন্টার্ন ডাক্তাররা রাতের বেলায় হয়ে উঠেন সুপার স্পেশালিস্ট ডাক্তার এবং রাতেও তারাই সবেধন নীলমনি। হাসপাতালে কোনো রোগীর অবস্থার অবনতি হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের যে পাওয়া যাবে সেই অবস্থা নেই। পরদিন হয়তো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসে ইন্টার্নিদের সঙ্গে নিয়ে ওয়ার্ড ঘুরে যাবে; তাও সকাল ১০টার পর। এরমধ্যে হয়তো রোগীর অবস্থা আরো অবনতি হয়েছে। হয়তোবা রোগী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে হেরে গেছেন। সম্প্রতি রাজ্য বিধানসভা অধিবেশনে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এদিকে রাজ্য সরকারের নির্দেশ রয়েছে, উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজ্যের বাইরে কাউকে রেফার করা যাবে না। তাই জিবি হাসপাতালে কোনো রোগী যন্ত্রণায় কাতড়াতে থাকলেও কিংবা ঠিকভাবে চিকিৎসা পরিষেবা না পেলেও তাকে অন্যত্র রেফার করতে রাজি নয় ডাক্তারবাবুরা। দেখা গেছে, জেলা কিংবা মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা থাকা সত্বেও ইচ্ছে করে রোগীদের জিবিতে রেফার করে দেওয়া হয়; অথচ যে রোগের চিকিৎসার জন্যে রোগীকে জিবিতে পাঠানো হলো সেই রোগের চিকিৎসা হয়তো সম্ভব হতো ঐ জেলা হাসপাতালেই। এতে করে জিবি হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। রোগীদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না; এই শীতেও মেঝেতে কাতড়াতে হচ্ছে রোগীদের। জিবি হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করছেন রোগীর পরিবার পরিজনরা; ঠিকভাবে পরিষেবা পাচ্ছেন না তারা। একদিকে ডাক্তারবাবুদের দেখা নেই অন্যদিকে একাংশ স্বাস্থ্যকর্মীদের দুর্ব্যবহার; ফলে কোন কোন ক্ষেত্রে অসহায় হয়ে পড়ছেন রোগীরা। জিবিতে রোগী কল্যাণ সমিতি রয়েছে, এই সমিতির উদ্দেশ্য হলো রোগীদের কল্যাণে কাজ করা। কিন্তু গত প্রায় একবছরে রোগীদের কি কল্যাণ হয়েছে তা নিজেও বলতে পারবেন না রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান মীনা সরকার।