আরো বেশি ক্ষমতা ভোগ করার জন্য প্রদ্যুৎ কিশোরের নতুন হুমকি!
ক্ষমতায় থেকে মানুষকে সাহায্য করতে না পারলে ক্ষমতায় থাকার কি প্রয়োজন? তিপরা মথার সুপ্রিমো প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মা ফের মন্ত্রিসভা থেকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিলেন। যদিও এই ধরনের হুমকি তিনি আগেও দিয়েছেন, তবে এবার তার বক্তব্যে স্পষ্টতই রাজনৈতিক দূরবীসন্ধি রয়েছে। তিনি বলেন, “ক্ষমতা ভোগের জন্য নয়, জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য রাজনীতি করছি।”
তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। অনেকেই মনে করছেন, নিজের স্বার্থসিদ্ধি না হলেই প্রদ্যুৎ কিশোর এ ধরনের হুমকি দেন। কেউ কেউ বলছেন, এটি তিপ্রাসাদের প্রতি নতুন করে মগজ ধোলাইয়ের কৌশল মাত্র।
সামাজিক মাধ্যমে বুধবার এক বার্তায় প্রদ্যুৎ কিশোর দলের নেতাদের সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়ার, পানীয় জলের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার এবং জনসংযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানান। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তিনি বুঝতে পারছেন, তিপরা মথার মাটি ক্রমেই সরে যাচ্ছে, কারণ দলের অনেক নেতা ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, “ক্ষমতায় থেকে মানুষকে সাহায্য করতে না পারলে সে ক্ষমতার কোনো প্রয়োজন নেই।” পাশাপাশি, “সরকারের শরিক হয়ে যদি জনগণের উপকারে আসতে না পারি, তাহলে সে সরকারে থাকারও কোনো মানে নেই।” এই মন্তব্যকে রাজনৈতিক মহল তার প্রচ্ছন্ন হুমকি হিসেবেই দেখছে।
প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লির কুচকাওয়াজে ত্রিপুরার ট্যাবলুতে রাজ্যের সংস্কৃতি তুলে ধরা হলেও তা যথাযথ হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রদ্যুৎ কিশোর। তিনি বলেন, “তিপ্রাসা সংস্কৃতির সঙ্গে অন্য সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটিয়ে ত্রিপুরার প্রকৃত ঐতিহ্যকে দুর্বল করা হয়েছে।” প্রদ্যুৎ অভিযোগ করেন, “৪০ বছর বামেরা তিপ্রাসাদের জন্য কিছু করেনি, আর বিজেপি এখন এডিসির ক্ষমতা খর্ব করছে।” তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা এডিসিকে সরাসরি অর্থ দেওয়ার দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন, যা তিপ্রাসাদের প্রতি বিমাতা-সুলভ আচরণ। তিনি আরও বলেন, “করোনার অজুহাতে ভিলেজ কাউন্সিল নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এখন তো মহামারি নেই। তাহলে কেন ভোট হচ্ছে না?”
রাজনৈতিক অভিজ্ঞদের মতে, এডিসির নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে, ধীরে ধীরে বিজেপি বিরোধিতার সুর চরাচ্ছেন ক্ষমতালোভী প্রদ্যুৎ কিশোর।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তিপরা মথার নেতাদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রা এবং ক্ষমতালোভী আচরণ সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছে। পাহাড়ের জনগণ বুঝতে পারছেন, তিপরা মথা ক্ষমতার লোভে রাজনীতি করছে, ফলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কমছে। গত বিধানসভায় গোপন রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে তিপরা মথা ভালো ফল করেছিল, কিন্তু এখন তাদের জনপ্রিয়তা কমছে। তাই প্রদ্যুৎ ফের নতুন কোন দূরবীসন্ধি পাকাচ্ছেন।
রাজনৈতিক মহলের মতে, এটি জনগণের অধিকার রক্ষার লড়াই নাকি শুধুমাত্র তার রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা। এডিসি নির্বাচনকে সামনে রেখে তিপরা মথার অবস্থান কী হবে, প্রদ্যুৎ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেন, তা এখন দেখার বিষয়।