জৈব পদ্ধতিতে কালো চালের চাষ কৃষকদের জন্য আশার আলো!
ত্রিপুরার জুমিয়া কৃষকদের উৎপাদিত বিশেষ সুগন্ধিযুক্ত জৈব কালো চাল বা অর্গানিক ব্ল্যাক রাইস সরকারিভাবে প্রথমবারের মতো বহিঃরাজ্যে রপ্তানি করা হয়েছে। উত্তর ত্রিপুরার কাঞ্চনপুর মহকুমায় উৎপাদিত ১৩০০ কেজি অর্গানিক ব্ল্যাক রাইস দিল্লির ন্যাশনাল কো-অপারেটিভ লিমিটেডের কাছে প্রতি কেজি ১৬০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছে। মহকুমা কৃষি আধিকারিক জানান, এই প্রথম রাজ্যের কৃষকদের উৎপাদিত এই চাল সরকারি ব্যবস্থাপনায় বহিঃরাজ্যে রপ্তানি করা হলো, যা কৃষি ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
কালো চাল, যা বেগুনি চাল নামেও পরিচিত, এটি ধানের একটি বিশেষ প্রজাতি যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে,–
✔ এই চালে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে
✔ প্রোটিন, আয়রন, ফাইবার, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন ও ফলিক অ্যাসিডে সমৃদ্ধ
✔ বাদামি চালের তুলনায় বেশি পুষ্টিগুণসম্পন্ন
বিশ্বব্যাপী এই চালের ব্যাপক চাহিদা থাকায় রাজ্যের কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন। বর্তমানে রাজ্যের বড় বড় শপিংমলগুলোতে এই চাল ৩০০-৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এর আগে উত্তর জেলার যুবরাজনগর কৃষি মহকুমার নিজস্ব উদ্যোগে ১৫০০ কেজি কালো চাল বহিঃরাজ্যে রপ্তানি করা হয়েছিল। এই বিশেষ ধানের চাষে কৃষকরা অত্যন্ত উৎসাহিত। এবছর রাজ্যের কৃষকরা প্রায় ৫৫০০ কেজি কালো চাল উৎপাদন করেছেন, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। কৃষকরা জানাচ্ছেন, এই চালের ভালো বাজার দর পাওয়ায় আগামী বছর আরও বেশি পরিমাণে এই ধানের চাষ করা হবে। কৃষকদের মতে, সাধারণ ধানের তুলনায় কালো চাল প্রায় চারগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে, ফলে কৃষি খাতে এই উদ্যোগ একটি বিপ্লব আনতে চলেছে।
সারা রাজ্যে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে জৈব কৃষি চাষ করা হচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আরও সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে জৈব পদ্ধতিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। মিশন ফর অর্গানিক ভ্যালু চেইন ডেভেলপমেন্ট অফ নর্থ ইস্টার্ন রিজনের মিশন অধিকর্তা রাজীব দেব্বর্মা জানান, রাজ্যের কৃষকদের জৈব কৃষিতে উৎসাহিত করতে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। বর্তমানে ৪০টি ফার্মার প্রোডিউসার কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত জৈব পণ্য সরাসরি বাজারজাত করতে রাজ্যে ৮টি জৈব আউটলেট খোলার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সব মিলিয়ে, ত্রিপুরায় জৈব কৃষির প্রসার এবং কালো চালের বহিঃরাজ্যে রপ্তানির সাফল্য কৃষকদের নতুন সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।