কংগ্রেস

কংগ্রেস–CPIM আবার বিপরীত মেরুতে??

CPIM-র ২৪তম রাজ্য সম্মেলনে কংগ্রেসের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদের ইঙ্গিত!!

ত্রিপুরার রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন মোড় নিতে চলেছে CPIM-র রাজনীতি। কংগ্রেসের সাথে প্রকাশ্যে সম্পর্ক রাখা হবে নাকি লোকচক্ষুর অন্তরালে টেকনিক্যাল সম্পর্ক বজায় রাখা হবে, তা নিয়ে এবার চূড়ান্ত আলোচনা হবে CPIM-র ২৪তম রাজ্য সম্মেলনে। বুধবার প্রকাশ্য সমাবেশে দলের সর্বভারতীয় নেতা প্রকাশ কারাট থেকে শুরু করে রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পলিটব্যুরোর সদস্য মানিক সরকার সকলের বক্তব্যেই ডাবল ইঞ্জিন সরকারের সমালোচনা ছিল সুস্পষ্ট। তবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার তার বক্তব্যে স্পষ্ট করে দেন যে, আগামী দিনে কংগ্রেসের সাথে প্রকাশ্যে আর কোনো ধরনের রাজনৈতিক সমঝোতা রাখছে না CPIM।

বুধবার টাউন হলে শুরু হয়েছে সিপিআইএমের ২৪তম রাজ্য সম্মেলন। রক্ত পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলনের সূচনা হয়। প্রথম দিনেই ওরিয়েন্ট চৌমুহনী সংলগ্ন এলাকায় দলের প্রকাশ্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রকাশ কারাট, মানিক সরকার, জিতেন্দ্র চৌধুরী সহ অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্ব। সমাবেশ থেকে রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সরব হন নেতারা। তারা অভিযোগ করেন, বিজেপির ডাবল ইঞ্জিন সরকার রাজ্যের সাধারণ মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজ্যে কাজ নেই, খাদ্য সংকট বেড়েছে, কর্মসংস্থানের অভাবে যুব সমাজ বেকারত্বের জালে জড়িয়ে পড়েছে। বহু তরুণ-তরুণী রাজ্য ছেড়ে অন্যত্র কাজের সন্ধানে পাড়ি জমাচ্ছে।

দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের ধারাবাহিকতায় এবারও রাজ্য সম্মেলনে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু কংগ্রেসের সাথে রাজনৈতিক সম্পর্ক। মানিক সরকার তার ভাষণে কংগ্রেসের ৩০ বছরের শাসনকালের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি মনে করিয়ে দেন, কংগ্রেস-জোট সরকারের আমলেও জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সেই সময়ও কেন্দ্রে ও রাজ্যে ডাবল ইঞ্জিন সরকার ছিল, কিন্তু উন্নয়ন হয়নি কিছুই। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ডাবল ইঞ্জিনের সরকার থাকলেই যে উন্নয়ন হবে, তা নয়। ইঞ্জিন খারাপ হলে ট্রেন যেমন চলে না, তেমনি এই সরকারও চলতে পারছে না। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকার ব্যর্থ।” মানিক সরকার দলের কর্মীদের ঘর ছেড়ে রাস্তায় নামার ডাক দিয়েছেন। তিনি বলেন, “মানুষকে বোঝাতে হবে যে বিজেপির শাসনে তারা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত। ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। গণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের ভুল নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।”

সমাবেশকে কেন্দ্র করে আগরতলা শহর কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। যানজটের কারণে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। যদিও CPIM-র দাবি, তারা উমাকান্ত মাঠ অথবা আস্তাবল মাঠে সমাবেশ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু প্রশাসন তা করার অনুমতি দেয়নি। CPIM নেতারা স্পষ্ট করেছেন যে, রাজ্যের বামপন্থী আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারা বলেছেন, আগামী দিনে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের জন্য গণ আন্দোলন সংগঠিত করতে হবে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে সিপিআইএম তার রাজনৈতিক অবস্থান একপ্রকার স্পষ্ট করে দিল যে কংগ্রেসের সাথে সমঝোতার দিন শেষ।এবার নতুন কৌশলে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে বামেরা।