আয়করে রেকর্ড পরিমাণ ছাড়, স্বস্তিতে করদাতারাঃ কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৫
আয়করে ছাড়ের মাধ্যমে মধ্যবিত্তকে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ করে দিলেন নির্মলা সীতারমন। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন আজ সংসদে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করলেন। এবারের বাজেটে সবচেয়ে বড় ঘোষণা মধ্যবিত্ত ও চাকরিজীবীদের জন্য। নতুন আয়করের নিয়ম অনুযায়ী ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করলে কোনও আয়কর দিতে হবে না। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার বেতনভোগীদের জন্য ১২.৭৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত রাখা হয়েছে। এতে স্বভাবতই খুশি মধ্যবিত্তরা।
নতুন কর কাঠামোয় আয়ের ভিত্তিতে করহার নির্ধারণ করা হয়েছে:
» শূন্য থেকে চার লক্ষ টাকা বার্ষিক আয়ের ক্ষেত্রে কোনও কর নেই
» বছরে চার থেকে আট লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে ৫ শতাংশ কর। বছরে আট লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ কর থাকবে
» বছরে ১২-১৪ লক্ষ টাকা আয়ে ১৫ শতাংশ
» বছরে ১৬-২০ লক্ষ টাকা আয়ে ২০ শতাংশ
» বছরে ২০-২৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ২৫ শতাংশ
» বছরে ২৪ লক্ষ টাকার বেশি হলে ৩০ শতাংশ
অর্থাৎ, ১২ লক্ষ টাকার নিচে যাঁদের আয়, তাঁদের আয়করে বছরে প্রায় ৮০ হাজার টাকা সাশ্রয় হবে। এছাড়া, ১৮ লক্ষ টাকা আয়ে ৭০ হাজার টাকা এবং ২৫ লক্ষ টাকার আয়ে প্রায় ১.১৫ লক্ষ টাকা সাশ্রয় হবে। অর্থনীতিবিদদের মতে, মানুষের হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে বাজারে চাহিদা বাড়াতেই মোদি সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রবীণ নাগরিকদের জন্য করছাড়
৬০ বছরের বেশি বয়সী প্রবীণ নাগরিকদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে প্রবীণদের করের বোঝা আরও কমবে।
স্বাস্থ্য খাতে বড় ঘোষণা, জীবনদায়ী ওষুধে শুল্কমুক্তি
ক্যানসার সহ দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ৩৬টি জীবনদায়ী ওষুধের উপর শুল্ক তুলে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ৬টি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের উপর ৫% শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর ফলে গুরুতর রোগের চিকিৎসা আরও সস্তা হবে।
ঋণ গ্রহীতাদের জন্য সুখবর
সরকার কৃষকদের জন্য আরও ঋণের সুযোগ করে দিয়েছে; কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের ঋণসীমা ৩ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত মহিলারা ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পাবেন। জল জীবন মিশন প্রকল্প ২০২৮ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ১ লক্ষ আবাসন নির্মাণের জন্য ১৫,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ।
শিক্ষা খাতে বিশাল বিনিয়োগ
সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে আরও উন্নতির লক্ষ্যে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ৭৫,০০০ নতুন আসন সংযোজনের ঘোষণা করেছে। আগামী বছর আরও ১০,০০০ আসন বৃদ্ধি করা হবে।
মহিলাদের জন্য বিশেষ প্রকল্প
৮ কোটি মহিলা ও ১ কোটি সদ্য মা হওয়া মহিলাদের জন্য বিশেষ পুষ্টি প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে। ৭০% মহিলা যাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পান, সে বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া
মধ্যবিত্তদের জন্য আয়করে ছাড়ের খবরে খুশির হাওয়া বইছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি এক জনমুখী বাজেট, যা সাধারণ মানুষের হাতে আরও বেশি অর্থ তুলে দেবে এবং বাজারে চাহিদা বাড়াবে। প্রসঙ্গত বাজারে চাহিদা বাড়লে দ্রব্যমূল্যও বাড়বে। তবে, বিরোধীরা বলছেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য এই বাজেটে বিশেষ কিছু রাখা হয়নি, যা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
২০২৫ সালের বাজেটে করছাড়, কৃষকদের সুবিধা, স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ এবং মহিলাদের ক্ষমতায়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছে এটি এক জনমুখী এবং স্বস্তির বাজেট বলেই মনে করা হচ্ছে।