রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চাইলেন রাজ্যের মন্ত্রী!
বাংলাদেশ থেকে ক্রমবর্ধমান অবৈধ অনুপ্রবেশে উদ্বেগ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহের হস্তক্ষেপ চাইলেন তিপ্রা মথা দলের রামচন্দ্রঘাট কেন্দ্রের বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা। তিনি কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে একটি বিস্তারিত স্মারকলিপি পাঠিয়ে রোহিঙ্গা মুসলিম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আগত বাংলাদেশিদের অবৈধপ্রবেশ ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
স্মারকলিপিতে বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা অভিযোগ করেছেন, ত্রিপুরা-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমরা দলে দলে ভারতে প্রবেশ করছে। তিনি বলেন, “ত্রিপুরা এখন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের করিডোরে পরিণত হয়েছে।” এই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা রেলপথ ও জাতীয় সড়ক ব্যবহার করে অন্যান্য রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। সম্প্রতি রাজ্যের চুড়াইবাড়ি সীমান্তে পুলিশ ২৩ জন বিদেশিকে আটক করে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই রোহিঙ্গা মুসলিম, যারা মূলত মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিকও রয়েছে। এই অনুপ্রবেশের পেছনে বাংলাদেশ ও ভারতের দালালচক্র সক্রিয় রয়েছে বলে দাবি করেছেন বিধায়ক দেববর্মা। তিনি স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তম শরণার্থী শিবির থেকেই রোহিঙ্গারা দালালদের মাধ্যমে ভারতে প্রবেশ করছে। ত্রিপুরা হয়ে তারা দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে, যা দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক।
শুধু রোহিঙ্গা নয়, বিধায়কের অভিযোগ, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আসা বহু বাংলাদেশি ত্রিপুরার বিভিন্ন উপজেলায় বসতি স্থাপন করেছে। ছাওমনু, গন্ডাছড়া, করবুক ও শিলাছড়ির মতো এলাকাগুলোতে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। তিনি অভিযোগ করেন, “এই অভিবাসীরা অবৈধভাবে আধার কার্ড, রেশন কার্ড সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সংগ্রহ করে নাগরিক সুবিধা ভোগ করছে।” এমনকি কেউ কেউ বনভূমিতে জমির পাট্টাও পেয়ে গেছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এইসব অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে অনেকে পেট্রোল পাম্প চালাচ্ছে, গ্যাস এজেন্সির মালিক, আবার কেউ সরকারি ন্যায্যমূল্যের দোকানও পরিচালনা করছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ গাড়ি বা বড় ব্যবসারও মালিক।সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হিসেবে বিধায়ক দেববর্মা দাবি করেছেন, এইসব অনুপ্রবেশকারীদের কেউ কেউ জমির দালালি ও মাফিয়া কার্যকলাপের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি তাদের মধ্যে উগ্রবাদী সংগঠনের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণও রয়েছে বলে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন তিনি।
বিধায়কের বক্তব্য অনুযায়ী, এভাবে চলতে থাকলে ত্রিপুরা রাজ্যের পাশাপাশি গোটা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা চরম হুমকির মুখে পড়বে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দ্রুত একটি উচ্চ পর্যায়ের বিশেষ কমিটি গঠনের দাবি জানান, যারা বিদেশি নাগরিকদের সনাক্ত করে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করবে। স্মারকলিপিতে বিধায়ক দেববর্মা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, “এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। আমাদের ভূমি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি ধ্বংসের মুখে পড়বে।”
এখন দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা ও ত্রিপুরাকে এই ভয়াবহ অনুপ্রবেশ থেকে মুক্ত করতে কেন্দ্রীয় সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে রাজ্যের মানুষ। ত্রিপুরার মতো সীমান্তবর্তী রাজ্যে বিদেশি অনুপ্রবেশ নতুন কোনো ঘটনা নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের কার্যকলাপ ও উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে, তা সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্তরে এই বিষয়টি যথাযথ ভাবে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।