ত্রিপুরায় ১০২ অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা ভেন্টিলেটারে, আর তত্ত্বাবধায়ক NHM কোমাচ্ছন্ন!
ত্রিপুরায় ১০২ অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবায় চরম দুর্নীতি এবং কর্মীদের প্রতি অন্যায় আচরণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের (NHM) অধীনে পরিচালিত এই জরুরি পরিষেবা সাধারণ মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, কর্মীদের অভিযোগ অনুসারে পরিষেবার মান অবনতি হয়েছে এবং প্রশাসনিক গাফিলতির কারণে পরিষেবা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
২০২০ সালে NHM-র অধীনে CAMP নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১০২ অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা পরিচালনার জন্য চুক্তি হয়। তবে চুক্তি লঙ্ঘন করে CAMP প্রতিষ্ঠানটি JBLঅ্যাসোসিয়েটস নামক একটি সাব-কন্ট্রাক্টরকে দায়িত্ব প্রদান করে। অভিযোগকারীদের মতে, এই সাব-কন্ট্রাক্টর প্রতিষ্ঠানের অধীনে পরিষেবা শুরুর পর থেকেই কর্মীদের শোষণ, হয়রানি এবং তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে। কর্মীদের প্রধান অভিযোগগুলির মধ্যে রয়েছে নিয়োগপত্র , বেতন স্লিপ, পরিচয়পত্র এবং অভিজ্ঞতার সনদ না দেওয়া। এছাড়া চুক্তিতে উল্লেখিত বেতন কাঠামো ও বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি পূরণ না করা। কর্মীদের বেতন থেকে পিএফ (প্রভিডেন্ট ফান্ড) এবং ইএসআইসি (এমপ্লয়িজ স্টেট ইনস্যুরেন্স কর্পোরেশন) এর জন্য অর্থ কেটে নেওয়া হলেও তা নির্ধারিত অ্যাকাউন্টে জমা পড়েনি, ফলে কর্মীরা ভবিষ্যৎ সুরক্ষা এবং চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, কাজের জায়গায় তাদের মৌখিক অপমান এবং হুমকির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কিছু কর্মীকে অকারণে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া, কোনো অ্যাম্বুলেন্স যান্ত্রিক ত্রুটি বা দুর্ঘটনার কারণে পরিষেবা দিতে না পারলে কর্মীদেরই দায়ী করে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতি কর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। ত্রিপুরার ১০২ অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা বর্তমানে ৯৮টি অ্যাম্বুলেন্সের ওপর নির্ভরশীল। তবে, অভিযোগ উঠেছে যে গাড়িগুলির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় অনেক অ্যাম্বুলেন্স অচল অবস্থায় পড়ে আছে। মাসে গড়ে ২০-২৫টি অ্যাম্বুলেন্স যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পরিষেবা থেকে বাদ পড়ছে। এর ফলে বাকি অ্যাম্বুলেন্সগুলির ওপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, সরকারের তরফ থেকে এই পরিষেবার রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা তদারকির ক্ষেত্রে চরম অবহেলা দেখা যাচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্স অচল অবস্থায় পড়ে থাকায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ সময়মতো জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন না। এতে রোগী এবং তাদের পরিবার চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। কর্মীরা একাধিক চিঠির মাধ্যমে সরকারের কাছে তাদের অভিযোগ জানিয়েছেন। তাদের প্রধান দাবি হলো বকেয়া বেতন এবং পিএফ ও ইএসআইসির টাকা সুদসহ ফেরত দেওয়া। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করা। ক্যাম্প এবং জেবিএল অ্যাসোসিয়েটসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়া। পরিষেবার মানোন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। ১০২ অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা ত্রিপুরার জরুরি চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে কর্মীদের অভিযোগ এবং পরিষেবার ব্যাঘাতের কারণে সাধারণ মানুষের ওপর এর প্রভাব পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সময়মতো অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ার কারণে রোগীরা হাসপাতালে পৌঁছাতে পারছেন না। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
যদিও কর্মীরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং সমস্যার দ্রুত সমাধানের দাবি তুলেছেন, তবে এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। কর্মীরা আশা করছেন, মুখ্যমন্ত্রী এবং NHM কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন। ত্রিপুরার মতো একটি রাজ্যে, যেখানে ১০২ অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা সাধারণ মানুষের জরুরি চিকিৎসার জন্য অপরিহার্য, সেখানে দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার অভিযোগ অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত তদন্ত করে সমস্যার সমাধান এবং পরিষেবা পুনরুদ্ধার করা জরুরি। তা না হলে, এই পরিস্থিতি রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।