দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ২৭ বছর পর ক্ষমতায় ফিরল BJP!
দিল্লির রাজনৈতিক মানচিত্রে বড় পরিবর্তন এনে ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিশাল জয় লাভ করেছে। দীর্ঘ ২৭ বছর পর দিল্লির ক্ষমতায় ফিরে এসেছে BJP, যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দলের জন্য ঐতিহাসিক অর্জন। ৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভায় বিজেপি পেয়েছে ৪৮টি আসন, যা সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়েও অনেক বেশি। বিপরীতে, আম আদমি পার্টি (AAP) ২২টি আসন নিয়ে প্রধান বিরোধী দলে পরিণত হয়েছে। কংগ্রেস একেবারেই সুবিধা করতে পারেনি এবং শূন্য আসনে থেকে আরও একবার রাজ্যের রাজনীতিতে তাদের অস্তিত্ব সংকট স্পষ্ট হয়েছে।
বিজেপির এই ঐতিহাসিক জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, “দিল্লির জনগণ উন্নয়ন, স্বচ্ছ প্রশাসন এবং জাতীয়তাবাদকে সমর্থন করেছে। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, দিল্লির প্রত্যেক নাগরিকের জন্য আমরা কাজ করব।” বিজেপির দিল্লি শাখার প্রধান মনোজ তিওয়ারি বলেন, “এটা শুধু এক রাজনৈতিক দলের জয় নয়, বরং দিল্লির জনগণের আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন। আমরা এবার দিল্লিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই।” অপরদিকে, আম আদমি পার্টির নেতা এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল পরাজয় স্বীকার করে বলেন, “আমরা জনগণের রায়ে শ্রদ্ধা জানাই। বিজেপিকে অভিনন্দন জানাই। তবে আমরা জনগণের স্বার্থে আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব।”
২০২৫ সালের দিল্লি নির্বাচনে ভোটদানের হার ছিল ৬০% এর বেশি, যা প্রায় ১.৫ কোটি ভোটারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। এবারের নির্বাচনে মূল ইস্যু ছিল উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, জল সংকট, নারী নিরাপত্তা এবং কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সংঘাত। বিশ্লেষকদের মতে, BJP-র পক্ষে একাধিক বিষয় কাজ করেছে—
- নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা: জাতীয় রাজনীতিতে মোদির শক্তিশালী অবস্থান দিল্লির ভোটারদের প্রভাবিত করেছে।
- কেজরিওয়ালের সরকারবিরোধী হাওয়া: দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার পর এএপি সরকারের বিরুদ্ধে জনঅসন্তোষ বাড়ছিল।
- কেন্দ্রের সাথে সংঘাত: দিল্লি সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বন্দ্ব অনেক ভোটারকে বিজেপির দিকে ঠেলে দিয়েছে।
- হিন্দুত্ব ও জাতীয়তাবাদ: বিজেপির প্রচারকৌশলে জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মীয় সংবেদনশীলতা একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ফলাফল শুধু দিল্লির জন্য নয়, বরং ২০২৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের দিকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করছে। মোদির নেতৃত্বে BJP ফের জাতীয় রাজনীতিতে তাদের আধিপত্য আরও সুদৃঢ় করতে চাইবে। বিজেপি এখন সরকার গঠনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কারা দায়িত্ব নেবেন, সে বিষয়ে আলোচনা চলছে। সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থীদের মধ্যে মনোজ তিওয়ারি, বিজেন্দ্র গুপ্ত এবং গৌতম গম্ভীরের নাম উঠে আসছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই বিজেপি আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার গঠনের দাবি জানাবে এবং নতুন মুখ্যমন্ত্রী শপথ নেবেন। দিল্লির জনগণ এখন তাকিয়ে আছে নতুন সরকারের দিকেই—তারা দেখতে চায়, বিজেপি তাদের প্রতিশ্রুত উন্নয়ন ও পরিবর্তন কতটা বাস্তবে রূপ দিতে পারে।