ADC-র গঙ্গানগরে বিল্ডিং উদ্বোধন না করেই ফিরে গেলেন অতিথিরা!
এক অভূতপূর্ব এবং কলঙ্কজনক ঘটনার সাক্ষী থাকল ADC-র গঙ্গানগর। ADC (আটোনোমাস ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল)-র তত্ত্বাবধানে নির্মিত নতুন প্রাণী চিকিৎসালয়ের উদ্বোধন করতে এসে বড়সড় অস্বস্তির মুখে পড়তে হলো অতিথিদের। বিল্ডিংয়ের দেওয়ালে ফাটল দেখা দেওয়ায় উদ্বোধন না করেই ফিরে যেতে বাধ্য হন অতিথি ও কর্মকর্তারা।
ADC-র গঙ্গানগরের প্রাণী চিকিৎসালয়টি নির্মাণ করা হয়েছিল পশুপালকদের জন্য উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এডিসি-র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বহু গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। ব্যান্ড, ফুলের তোড়া, সুসজ্জিত মঞ্চ—সবকিছুই ছিল এক বর্ণময় অনুষ্ঠানের আয়োজনের ইঙ্গিত। কিন্তু উদ্বোধনের কিছুক্ষণ আগেই বিল্ডিং পরিদর্শন করতে গিয়ে আতঙ্ক ছড়ায়। দেখা যায়, সদ্য নির্মিত সেই ভবনের একাধিক দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। এমনকি ছাদের কিছু অংশেও ফাটল লক্ষ্য করা যায়, যা ভবনের স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয়।
অতিথিরা ভবনের এমন অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী, এই ধরনের ফাটল বিল্ডিং ধসের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলে, যা প্রাণহানির কারণ হতে পারে। অতিথি ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, উদ্বোধন না করেই অনুষ্ঠান বাতিল করা হবে। উপস্থিত সকলকে দ্রুত সুরক্ষিত স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।
ঘটনার পরই স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাদের দাবি, নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলেই নতুন বিল্ডিংয়ে এমন ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবন কীভাবে উদ্বোধনের আগেই এমন অবস্থায় পৌঁছালো? স্থানীয়দের দাবি, এডিসি-র কিছু অসাধু আধিকারিক এবং ঠিকাদারের যোগসাজশে এই দুর্নীতি হয়েছে।
ADC-র এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, “এই ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং লজ্জার। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি এবং ইতিমধ্যেই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সিমেন্ট এবং রড ব্যবহার করা হয়েছে, যা ভবনের স্থায়িত্বকে ক্ষুণ্ন করেছে। এই ঘটনায় কাজের স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জনগণের করের টাকায় নির্মিত ভবনে এমন নিম্নমানের কাজ মেনে নেওয়া যায় না বলে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অতিথি এবং স্থানীয় প্রতিনিধিরা এখন অপেক্ষায় আছেন তদন্তের রিপোর্টের এবং দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির।
উদ্বোধন বাতিল হওয়ায় এলাকাবাসী এবং পশুপালকরা হতাশ। তারা দীর্ঘদিন ধরে উন্নত প্রাণী চিকিৎসালয়ের আশায় ছিলেন, কিন্তু এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনায় হতাশা ছড়িয়েছে। অতিথিরা ভবিষ্যতে বিল্ডিংটির সংস্কার এবং সুরক্ষার নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত উদ্বোধনের তারিখ স্থগিত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। এই ঘটনায় গঙ্গানগরবাসীর মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তারা জানতে চাইছে, তদন্ত শেষে কি সত্যিই দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে? নাকি এই ঘটনাও হারিয়ে যাবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মধ্যে!