বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে সহকারী হাইকমিশন অফিসের সামনে বিক্ষোভ। সোমবার সনাতনীদের কর্মসূচিতে শামিল রাজ্যের বেশ কয়েকজন শাসক শিবিরের নেতা নেত্রী। জমায়েত থেকেই ওপারের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুসকে হুঁশিয়ারিও দিলেন তারা। সীমান্তে বাণিজ্য বন্ধ সহ বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার ডাক দিলেন সনাতনী নেতারা। সনাতনী হিন্দু সংগঠনের ডাকে এদিন অরাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে এই বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। সেখান থেকে হিন্দুদের জোট বাঁধার ডাক দেওয়া হয় । এর পর হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিয়ে ভিসা অফিস তথা সহকারি হাইকমিশন অফিসের দিকে রওয়ানা হন সনাতনীরা। সকাল থেকেই এই চত্বরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন প্রচুর মানুষ।
বাংলাদেশের সনাতনি ধর্মগুরু চিন্ময় প্রভুর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে এবং সে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের নিন্দা জানিয়ে গত কদিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ, প্রতিবাদ চলছে। কোথাও মশাল মিছিল, কোথাও বাংলাদেশের তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ডঃ ইউনুসের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। কিন্তু কোথাও প্রতিবাদকে ঘিরে কোন হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে নি৷ কিন্তু সোমবার ভিসা অফিস আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে৷ কেউ কেউ এর পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মনে করছেন। ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করছে। আবার এইসব ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের সংখ্যালঘু এলাকাতে আতঙ্ক কায়েম করার চেষ্টা করছে বলে খবর। সোমবার ভিসা অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় উদ্বিগ্ন বিদেশ মন্ত্রক। রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট চাইলো কেন্দ্র।
পরিবহনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীও সাংবাদিক সম্মেলনে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হন নি৷ বিষয়টি স্পর্শকাতর বলে এড়িয়ে গেছেন৷ কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রক থেকে সোমবার সন্ধ্যায় বিবৃতি জারি করেছে৷ বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন অফিসে ভাঙচুরের ঘটনাটি গভীরভাবে দুঃখজনক। কূটনৈতিক এবং কনস্যুলার সম্পত্তি কোনো অবস্থাতেই লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়। নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং দেশে তাদের ডেপুটি/সহকারী হাইকমিশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
সোমবার বাংলাদেশ ভিসা অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখায় সনাতনীরা৷ হিন্দু সংঘ সমিতির তরফ থেকে আগরতলা বাংলাদেশ সহকারি হাই কমিশনার অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তারা৷ প্রথম দিকে শান্তিপুর্নভাবে চলছিল প্রতিবাদ কর্মসূচি। যদিও কর্মসূতির কারণে আজ শহরবাসীদের নাকাল হতে হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে সার্কিট হাউস হয়ে শহরে প্রবেশ করার রাস্তা ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেদিকে যাওয়া যায় সেদিকেই ট্রাফিক জামে নাকাল হয়েছেন সাধারণ মানুষ। ভিআইপি রাস্তা দখল করে এভাবে দীর্ঘ সময় ধরে কর্মসূচি চললেও পুলিশ কর্মীরা ছিলেন নিরব দর্শক। রোগী নিয়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্স চালকদের পর্যন্ত নাকাল হতে হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে চলা এই আন্দোলন হঠাৎ করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসা বেশ কিছু উৎসাহী সনাতনী হঠাৎ করে ক্ষিপ্ত হয়ে ছুটে যায় ভিসা অফিসের দিকে। বাংলাদেশ সরকারি হাইকমিশন অফিস আক্রান্ত হয়। শহরের মানুষের বক্তব্য তা কোনভাবেই কাম্য ছিল না।
বিক্ষোভ থেকে হঠাৎ করে একদল অতি উৎসাহী মানুষ দল বেঁধে বাংলাদেশ ভিসা অফিসে গিয়ে হামলা চালায়। ভিসা অফিসে সে দেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। অথচ এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ব্যাপক সংখ্যায় পুলিশকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। কঠোর নিরাপত্তার চাদরে মুড়ি ফেলা হয়েছিল গোটা এলাকা। অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে তার দিকে পুলিশের নজরদারি ছিল কিন্তু তারপরেও কি করে ভিসা অফিসে গিয়ে একদল উৎসাহী মানুষ আক্রমণ করল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও পরবর্তী সময়ে ভিসা অফিসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো পুলিশের সামনে কি করে উন্মত্ত জনতা ভাঙচুর করার সাহস পেলো৷ কেন পুলিশ বা টিএসআর জওয়ানরা তাদের গতি রোধ করলো না৷ ভিসা অফিসের সামনের বারান্দায় ফুলের বাগান নষ্ট করে ফেলে উন্মত্ত জনতা। ফুলের টব ভেঙে ফেলে। ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেছিল কিছু উৎসাহী জনতা। পরে অবশ্য নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।