এডিসি প্রশাসনের বিরুদ্ধে আর্থিক লুটপাটের অভিযোগ পেনশনারদের!
ত্রিপুরা ট্রাইব্যাল এরিয়া অটোনোমাস ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল (ADC)–এর অধীনে অবসর নেওয়া শতাধিক কর্মচারীর জীবন এখন এক অভাব-অনটনের দোলাচলে। কারণ, এক বছর আট মাস পেরিয়ে গেলেও তারা আজও পেনশনের এক টাকাও হাতে পাননি। দীর্ঘদিনের এই বঞ্চনা আর দুঃসহ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে অবশেষে গর্জে উঠলেন তারা। সোমবার খুমলুঙে এডিসির সদর দফতরে মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকের (CEO) অফিস ঘেরাও করেন ক্ষুব্ধ অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা। শুধু ঘেরাও নয়, তারা প্রকাশ্যে প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও তোলেন।
অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের বক্তব্য, রাজ্য সরকার পেনশনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ অনেক আগেই এডিসি প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আজও সেই অর্থ তাদের হাতে পৌঁছায়নি। কেউ পেনশন পাননি, কেউ আবার বকেয়া পাওনা নিয়ে বছরের পর বছর অপেক্ষা করছেন। এডিসি প্রশাসনের এই নিষ্ক্রিয়তা এবং আর্থিক অনিয়মের বিরুদ্ধে সরব হয়ে একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী জানান, “আমরা এখন এমন চরম সংকটে আছি যে বিষ কিনে আত্মহত্যা করার সামর্থ্য পর্যন্ত নেই। পেটের দায়ে সন্তানদের পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। অসুস্থ হলে চিকিৎসার টাকা নেই। এটা কী স্বাধীন ভারতে একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর পরিণতি হওয়া উচিত?”
জানা গেছে, বর্তমানে তিপ্রা মথা পরিচালিত এডিসি প্রশাসনে এমন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর সংখ্যা ২০০-রও বেশি। প্রতি মাসেই কেউ না কেউ অবসর নিচ্ছেন, ফলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। তবুও, তাদের পেনশন চালু হয়নি। অন্যদিকে, ক্ষোভ প্রকাশ করে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন—”যদি বরাদ্দ অর্থ আগে থেকেই এডিসির হাতে থাকে, তাহলে পেনশন চালু হচ্ছে না কেন? কোথায় গেলো সেই অর্থ?” এই প্রশ্নের কোনও সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি এডিসির মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক থেকে শুরু করে নির্বাহী সদস্যরা কেউই। বরং বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে বলে অভিযোগ।
এই পরিস্থিতিতে আরও একটি গুরুতর অভিযোগ সামনে এসেছে। কর্মচারীদের অভিযোগ, যখন তারা বকেয়া পেনশনের জন্য হাহাকার করছেন, তখন তিপ্রা মথার জনপ্রতিনিধি ও নেতারা ব্যস্ত দিল্লি ভ্রমণে এবং প্রমোদ তামাশায়। একাংশ নেতা কোটি টাকায় জমি কিনছেন আগরতলায়, ঘুরছেন বিলাসবহুল গাড়িতে। অথচ সেই প্রশাসনের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা ভাঙা কুঁড়েঘরে বসে দিন গুনছেন প্রাপ্য টাকা পাওয়ার আশায়।সাবেক পূর্ত দপ্তরের টেন্ডার দুর্নীতি ও স্মোক হাউস কেলেঙ্কারির পরে এডিসিতে এই পেনশন লুটপাট আরও এক গভীর দুর্নীতির ছায়া ফেলছে। এবং তা যে শুধু আর্থিক নয়, বরং একটি মানবিক সঙ্কটের রূপ নিয়েছে—তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, এই সব অভিযোগ ওঠার পরেও ADC-এর মুখ্য কর্তা প্রণব কিশোর দেববর্মা এমনকি বুবাগ্রাও সম্পূর্ণ নীরব। তার মুখে কোনও প্রতিক্রিয়া নেই। এই অবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি দ্রুত পেনশন চালু না করা হয় এবং বকেয়া অর্থ মিটিয়ে দেওয়া না হয়, তাহলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন। প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হবেন, এমনকি আইনি লড়াইতেও যেতে তারা প্রস্তুত।অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের এই আর্তনাদ এখন তিপ্রা মথা পরিচালিত প্রশাসনের কাছে শুধু রাজনৈতিক চাপ নয়, মানবিক দায়বদ্ধতারও চরম পরীক্ষা। এডিসি প্রশাসন কি তাদের পেনশন ফিরিয়ে দিয়ে অন্তত একটা ন্যূনতম মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে পারবে? সেই উত্তর ভবিষ্যতের হাতেই।