লেডি মাফিয়ার নেতৃত্বে চলছে রেল পথে মাদক সাম্রাজ্য!
রেলপথকে ব্যবহার করে ত্রিপুরায় গড়ে উঠেছে একটি সুসংগঠিত এবং বিপজ্জনক মাদক পাচার চক্র। এই চক্রের শীর্ষে রয়েছেন এক প্রভাবশালী লেডি মাফিয়া, যিনি “নমোঃ কোম্পানির প্রোডাক্ট” নামে পরিচিত। জানা গেছে, আগরতলা রেল স্টেশন কেন্দ্র করে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে এই চক্রের জাল। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের কার্গো কামরাকে ব্যবহার করেই রমরমা চলছে কোটি টাকার গাঁজা পাচার, আর কলকাতার বড়বাজার থেকে আসছে নিষিদ্ধ কফ সিরাপ ‘ফেন্সি’।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পাচারকারীরা যেন “ইজারা” পেয়েই বসেছে মাদক কারবারের। বিনা লগ্নিতে তারা ঘরে বসে পাচ্ছে কমিশনের মোটা অঙ্ক। রাজনৈতিক আশীর্বাদে প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি এবং কর্মকর্তাদের মদতে পাচারকারীরা বারবার কৌশল পাল্টে নিরাপদে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ব্যবসা। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ট্রেনের কার্গো ব্যবস্থার ভার এখন বিহারের একটি সংস্থার হাতে। এই সংস্থা নিয়মিত গাঁজার প্যাকেট রেলের মালখানায় মজুত করে এবং পরে তা পার্সেল কামরায় তুলে দেয়। কলকাতার বড়বাজার থেকে আসা কফ সিরাপ ‘ফেন্সি’ আবার সীমান্তবর্তী এলাকা বিশালগড় হয়ে পাচার হচ্ছে বাংলাদেশে।
আগরতলা, ধর্মনগর, বদরপুর, শিলচর সহ একাধিক রেল স্টেশনে সক্রিয় রয়েছে এই মাদক চক্রের লিঙ্কম্যানরা। শুধু রেল কর্মীরা নয়, আরপিএফ জওয়ানদের একাংশও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। কমিশনের বিনিময়ে তারা চোখ বুজে মাদক বোঝাই পার্সেল ঢুকতে সাহায্য করছেন বলে অভিযোগ। বিশালগড় হয়ে বাংলাদেশে পাঠানোর দায়িত্বে রয়েছেন একজন রাষ্ট্রবাদী নেত্রীর ভাই। পাশাপাশি অন্তত চারজন মণ্ডল সভাপতিও এই কারবার থেকে নিয়মিত কমিশন পাচ্ছেন বলে খবর।
এই গোটা চক্রের মূল মাথা ‘লেডি মাফিয়া’ কুট্টি, যার ভাই বর্তমানে নারকোটিক্স আইনে জেলে। ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে এখন কুট্টিই গোটা ব্যবসা সামলাচ্ছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে পাঠানো গাঁজার চালান মাঝপথে নামিয়ে দেওয়া হয় অসম সীমান্তের নির্জন কোনো স্টেশনে। সেখান থেকে স্করপিও, ভলবো বাসে পাচার হয় বিহারে। জানা গেছে, বিহারী গাঁজাব্যবসায়ীরা ত্রিপুরার গাঁজার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, ফলে তারা এখন রাজ্যে গাঁজা চাষেও লগ্নি করছে। আগরতলা রেল স্টেশনের পরিত্যক্ত কোয়ার্টারগুলিকে পরিণত করা হয়েছে নেশার গুদামে। গভীর রাতে সেখানে চলে মাদকের আসর। সিদ্ধিআশ্রম, ওএনজিসি, বাধারঘাট এলাকার কিশোর-তরুণরা রাতভর এই এলাকায় নেশায় মত্ত থাকে। শুধু আগরতলা নয়, রাজ্যের অন্যান্য স্টেশনেও মাদকচক্রের প্রভাব গভীর।
রেল যাত্রীদের অভিযোগ, সন্ধ্যার পর স্টেশন এলাকাগুলোতে কোনও পুলিশি নজরদারি নেই। ফলে পাচারকারীরা প্রকাশ্যেই তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, রেল পুলিশের একটি অংশ এবং স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় এই বিপজ্জনক চক্র দিনের পর দিন অক্ষত রয়েছে। রাজ্যে বাড়ছে মাদকসেবী কিশোর ও তরুণের সংখ্যা। বিভিন্ন ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য — ফেন্সি, ট্যাবলেট, ব্রাউন সুগার, হেরোইন — প্রতিনিয়ত প্রবেশ করছে রেলপথে। ফলে ধ্বংসের মুখে পড়ছে রাজ্যের যুবসমাজ।
সাধারণ মানুষ এবং যাত্রীদের প্রশ্ন — কেন এই চক্র এখনও অক্ষত? প্রশাসন কি চোখ বন্ধ করে রেখেছে? মাদক পাচার রুখতে কবে কঠোর পদক্ষেপ নেবে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার? এই মাদক চক্র নিয়ন্ত্রণ কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নয়, সমাজের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব। এই মাফিয়া চক্রের শিকড় যত গভীরে গিয়ে থাকুক না কেন, রেলপথকে নিরাপদ ও যুবসমাজকে রক্ষা করতে হলে এখনই সকলে একজোটে প্রতিরোধ করে তুলতে হবে বলে সচেতন মহলের অভিমত।