সন্ত্রাসীদের পেছনে শুধু একটিই ধর্ম

সন্ত্রাসীদের পেছনে শুধু একটিই ধর্ম!

বিশ্ব সন্ত্রাসের ইতিহাসে শুধু নির্দিষ্ট একটি ধর্মের নামই ঘুরে ঘুরে আসে কেন?

জম্মু ও কাশ্মীরের পর্যটনস্থল পহেলগাঁওে ফের রক্তাক্ত হল ভারতের মাটি। পাকিস্তানে অস্ত্র প্রশিক্ষিত দুই স্থানীয় সহ ছয় সশস্ত্র জঙ্গির গুলিতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২৮ জন নিরীহ হিন্দু পর্যটকের। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে জানা যায়, জঙ্গিরা পর্যটকদের ধর্ম জানতে চায় এবং যাঁরা হিন্দু হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন, তাঁদের ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়। মুসলিম পর্যটকদের কোন ধরনের হয়রানি বা ক্ষতি করেনি জঙ্গিরা।

এই বর্বরোচিত জঙ্গি হামলার পর তথ্য উঠে আসছে, হামলার মূল পরিকল্পনাকারীরা পাকিস্তানেরই মদতপুষ্ট। ভারতীয় গোপন সংস্থা জানিয়েছে, দুই জঙ্গি কাশ্মীরের হলেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও আইএসআই-এর প্রত্যক্ষ সহায়তায় তারা পাকিস্তানের অস্ত্র প্রশিক্ষণ পেয়েছে এবং সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশে করেছে। পাকিস্তান সরকারের তরফে হামলার দায় অস্বীকার করা হলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিশ্চিত যে পাকিস্তানই এই হামলার মদদদাতা।

এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে—এই কোন ‘শান্তির ধর্ম’? বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বড় বড় প্রায় সব জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে মুসলিম চরমপন্থীদের যোগসূত্র আছে। ৯/১১-র আমেরিকার হামলা হোক, ২৬/১১-র মুম্বাই হামলা কিংবা বুরকিনা ফাসোর বিস্ফোরণ—প্রতিটি ঘটনার মূল চরিত্র ইসলামি চরমপন্থী সংগঠন। একাধিক বিশ্লেষক বলছেন, “এই ঘটনাগুলির পেছনে কেবল বিচ্ছিন্ন কিছু সন্ত্রাসী নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট চিন্তাধারার ধারাবাহিক ইতিহাস রয়েছে—যেখানে ধর্মের নামে অপর ধর্মাবলম্বীদের হত্যা বৈধ বলে মনে করা হয়।” মুঘল আমলের ইতিহাসেও তার ছাপ স্পষ্ট। অযোধ্যা থেকে কাশ্মীর, কোচবিহার থেকে কাবুল—হিন্দু মন্দির ভাঙা ও হত্যা ছিল ইসলামি সাম্রাজ্যবাদের অন্যতম কৌশল।

প্রশ্ন উঠছে—”যদি ইসলাম শান্তির ধর্মই হয়, তবে কেন সন্ত্রাসবাদের ইতিহাসে বারবার মুসলিম পরিচয় উঠে আসে?” মক্কা থেকে মোগল, আল কায়েদা থেকে হিজবুল, তালিবান থেকে জইশ—সব ক্ষেত্রেই ইসলামি ভাবধারার জঙ্গিরা হিংসার পথ বেছে নিয়েছে। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া—সব দেশে একই চিত্র। এক প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “শান্তির নামে মানুষ মারার যে ধর্মীয় যুক্তি দেওয়া হয়, তা সন্ত্রাসবাদের সূক্ষ্ম মৌলিক রূপ।” ইতিহাস বলে, অমুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ ও হত্যার অধিকার মুসলিম সাম্রাজ্যবাদ বারবার প্রচার করেছে। এটাই আজকের জঙ্গিবাদের মূল প্রেরণা।

এই হামলার পরে প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া ছিল গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স, আমেরিকা ভারতের পাশে থাকার বার্তা দিলেও বাংলাদেশ সরকার সম্পূর্ণ নীরব রয়েছে। কোনও শোকবার্তা, নিন্দা বা সমবেদনা পর্যন্ত প্রকাশ করেনি ঢাকার তরফে। বিশ্লেষকদের মতে, এই নীরবতা নিছক কূটনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা নয়, বরং অত্যন্ত ইঙ্গিতবাহী। কিছু সূত্র বলছে, বাংলাদেশের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ইসলামি সন্ত্রাসবাদীদেরি প্রতিনিধি তাই এই ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের প্রতি নরম মনোভাবাপন্ন। চীন সফরকালে বাংলাদেশের বেআইনি ও জোরপূর্বক ক্ষমতায় আসীন বর্তমান সরকারের প্রতিনিধি সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে “সিলিগুড়ি করিডোর দখল করে উত্তর-পূর্ব ভারত বিচ্ছিন্ন করার সম্ভাবনা” নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং চীনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এই অংশের দায়িত্বভার গ্রহণ করতে। এই অভিযোগ সত্য হলে তা বাংলাদেশের সরাসরি ভারত-বিরোধী ষড়যন্ত্রের দিকে ইঙ্গিত করে।

দেশজুড়ে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, ত্রিপুরা থেকে গুজরাত—সব প্রান্তেই মানুষ একবাক্যে বলছে: এবার সময় এসেছে পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার। ত্রিপুরা সহ গোটা দেশের হিন্দু সংগঠনগুলি প্রতিবাদে ফেটে পড়ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, মোমবাতি মিছিলের ঢল নেমেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বর্তমান পরিস্থিতির মূল্যায়ন এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে চলছে দফায় দফায় বৈঠক। প্রতিরক্ষামন্ত্রী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও সেনা কর্তারা একমত যে এবার পাকিস্তানকে উপযুক্ত জবাব দিতে হবেই। কাশ্মীর সহ সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ভারতের জনগণ ক্ষোভে ফুঁসছে এবং দাবি উঠছে পাকিস্তান ও তার সেনাবাহিনীকে উপযুক্ত জবাব দেওয়ার। ভারতীয় সেনা ও সরকারের প্রতি সারা দেশের আবেদন, এই হামলার বদলা নিতেই হবে।

সরকারের এক উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে জানানো হয়েছে, “ভারত অবশ্যই জবাব দেবে। তবে; কবে, কোথায় এবং কীভাবে, তা পাকিস্তান ভাবতেও পারবে না। কিন্তু পাকিস্তান এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য চরম মূল্য চোকাবে।” বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (POK) পুনর্দখলের দাবিও এখন জোরালো হচ্ছে। ভারতের জনগণের ধৈর্য সীমা ছাড়িয়েছে। সময় এসেছে সন্ত্রাসবাদের রক্তক্ষয়ী রাজনীতির বিরুদ্ধে ভারতকে আবার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

পাকিস্তানের এই বর্বর হামলা শুধু ২৮ জন নিরীহ পর্যটকের জীবন কেড়ে নেয়নি, গোটা দেশকে ক্ষোভে, শোকে এবং জেদে উজ্জীবিত করেছে। এই ঘটনা আবার প্রমাণ করল—”সন্ত্রাসবাদের শিকড় যেখানেই থাকুক, মুখে ধর্মের কথা বলে যারা অন্য ধর্মাবলম্বীদের হত্যা করে, তারা শান্তির দূত হতে পারে না, তারা শুধুমাত্র সন্ত্রাসের প্রতীক।” কূটনৈতিক দের মতে ভারত এবার শুধু অপেক্ষা করছে সঠিক সময়ের। আর পাকিস্তান? তারা ভাবতেও পারবে না কখন, কোথা থেকে, কীভাবে আসবে ভারতের জবাব—কিন্তু জবাব আসবে এই ব্যাপারে তারাও নিশ্চিত।About Us