BJP জোট সরকারের ভিত নড়বড়ে

তিপ্রা মথার সুপ্রিমোর বক্তব্যে অস্বস্তিতে BJP!

রাজ্যের জোট সরকারের শরিক দল তিপ্রা মথার একাংশ নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে চাপে পড়েছে BJP। বিশেষ করে, তিপ্রা মথার সুপ্রিমো প্রদ্যোত বিক্রম দেববর্মা এবং দলের বিধায়ক ও এমডিসিদের (MDC) প্রকাশ্যে সরকারের বিরুদ্ধে করা মন্তব্যে ক্রমশ জটিল হচ্ছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি। তিপ্রা মথার অভিযোগ, BJP নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরও জনজাতিদের প্রতি অবহেলা করছে। এমনকি, বামফ্রন্টের ২৫ বছরের শাসনকালেও যা ঘটেনি, তার থেকেও বেশি বঞ্চনার শিকার হচ্ছে ত্রিপুরার জনজাতি সম্প্রদায়। সরকারি পরিষেবা থেকে শুরু করে পানীয় জল, রাস্তা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে চরম অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন দলের নেতারা।

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিপ্রা মথার এমডিসি ধীরেন্দ্র দেববর্মা দাবি করেন, “বর্তমান সরকার জনজাতি উন্নয়নের জন্য কোনো সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না। পানীয় জল থেকে শুরু করে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব ক্ষেত্রেই জনজাতিরা চরম বঞ্চনার শিকার। রিয়াং জনজাতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ কিছু প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, কিন্তু সেই অর্থও সঠিকভাবে ব্যয় করা হচ্ছে না।” তিনি আরও বলেন, “উনকোটি ও ধলাই জেলার সীমান্তবর্তী কংসরাম রিয়াং পাড়ার উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রের তরফে বিশেষ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছিল। রাজকান্দি বাজার থেকে কংসরাম পাড়া পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের জন্য প্রকল্পের অনুমোদন মিললেও বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেই। এইভাবে যদি অবহেলা চলতে থাকে, তাহলে তিপ্রা মথাকে বিকল্প ভাবতে হবে।”

শুধু ধীরেন্দ্র দেববর্মাই নন, তিপ্রা মথা পরিচালিত এডিসির (ADC) শিক্ষা দপ্তরের নির্বাহী সদস্য রবীন্দ্র দেববর্মাও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, “এডিসি থেকে প্রায় ৩৫১ জন সরকারি কর্মচারী অবসর নিয়েছেন, কিন্তু অর্থের অভাবে তাদের পেনশন ও বকেয়া পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি, এমন কর্মচারীও রয়েছেন যারা দুই বছর আগে অবসর নিয়েছেন, কিন্তু এখনও পর্যন্ত পেনশন পাননি। রাজ্য সরকারের অর্থ দপ্তরে একাধিকবার লিখিত অনুরোধ জানানো হলেও কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।”

সম্প্রতি ধলাই জেলার নেপালটিলা এলাকায় অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় তিপ্রা মথার সুপ্রিমো প্রদ্যোত বিক্রম দেববর্মা তীব্র ভাষায় রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেন। তিনি শুধু বিরোধী দল কংগ্রেস ও বামেদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাননি, বরং শরিক BJPকেও একহাত নেন। ককবরক ভাষাকে রোমান হরফে চালু করার দাবিতে চলমান ছাত্র আন্দোলনে তিপ্রা মথার ভূমিকা প্রসঙ্গেও তিনি কথা বলেন, যা BJP নেতৃত্বের মধ্যে নতুন করে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, তিপ্রা মথার এমন অবস্থান BJPর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। শরিক হয়েও দলটি যদি সরকারবিরোধী অবস্থানে যায়, তাহলে জোট সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।
বিশ্লেষকদের মতে, তিপ্রা মথার ক্রমাগত আক্রমণাত্মক অবস্থান ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, দলটি ভবিষ্যতে নতুন কৌশল নিতে পারে। যদি পরিস্থিতি এমনই চলতে থাকে, তাহলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তিপ্রা মথার অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। এই টানাপোড়েনের পরিণতি কী হবে, তা সময়ই বলবে। তবে আপাতত তিপ্রা মথার বক্তব্যে রাজ্যের BJP নেতৃত্ব যে প্রবল অস্বস্তিতে, তা স্পষ্ট।About Us

ক্রীড়াক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগ

ক্রীড়াক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে বাজারঘাট স্টেডিয়ামকে আধুনিকরণ করা হচ্ছে!

ক্রীড়াক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগ
ক্রীড়াক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগ

ক্রীড়াক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলতে উদ্যোগী হয়েছে ত্রিপুরা সরকার। রাজ্যের প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদদের জন্য আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার আগরতলার বাধারঘাটে দশরথ দেব স্পোর্টস কমপ্লেক্সে তিনটি অত্যাধুনিক ক্রীড়া স্থাপনার উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। উদ্বোধন করা হয় দেবভক্তি জমাতিয়া সিন্থেটিক অ্যাথলেটিক টার্ফ, স্বদেশপ্রিয় নন্দী সিন্থেটিক হকি গ্রাউন্ড এবং প্রতুল ভট্টাচার্য সিন্থেটিক টার্ফ ফুটবল গ্রাউন্ড। প্রয়াত তিন বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের স্মৃতিকে সম্মান জানিয়ে এই নামকরণ করা হয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা শৃঙ্খলাপরায়ণ এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠেন। তাদের অবদান রাজ্যের ক্রীড়াক্ষেত্রে অনস্বীকার্য। প্রয়াত দেবভক্তি জমাতিয়া, স্বদেশপ্রিয় নন্দী এবং প্রতুল ভট্টাচার্যের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই ক্রীড়া ক্ষেত্রগুলোর নামকরণ করা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “ত্রিপুরার ক্রীড়া ইতিহাসকে সংরক্ষণের জন্য সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে আমবাসায় নির্মিত ২০০ শয্যার যুব হোস্টেলের নামকরণ করা হয়েছে মধুসূদন সাহার নামে।”

মুখ্যমন্ত্রী প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদদের জন্য উন্নত সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, “সঠিক পরিকাঠামো ও সুযোগ পেলে রাজ্যের খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেদের প্রতিভা তুলে ধরতে সক্ষম হবেন। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলেন পদ্মশ্রী অলিম্পিয়ান জিমন্যাস্ট দীপা কর্মকার।” তিনি আরও বলেন, “যুব সমাজকে মাদকাসক্তির ছোবল থেকে রক্ষা করতে খেলাধুলার বিকল্প নেই। সুস্থ মন ও দেহ গঠনে ক্রীড়ার ভূমিকা অপরিসীম।” রাজ্যের ক্রীড়াক্ষেত্রকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সরকার একাধিক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আগরতলার ভোলাগিরিতে উন্নত ক্রীড়া পরিকাঠামো গড়ে তোলার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, রাজ্যের বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের অবদান স্মরণীয় রাখতে বিভিন্ন ক্রীড়া স্থাপনার নামকরণ তাঁদের নামে করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের মন্ত্রী টিংকু রায় বলেন, “রাজ্যের ক্রীড়া পরিকাঠামোকে বিশ্বমানের করে তুলতে সরকার নিরলস পরিশ্রম করছে। নতুন অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি পুরোনো পরিকাঠামোগুলিকে আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে।” উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক মীনা রাণী সরকার, ত্রিপুরা স্পোর্টস কাউন্সিলের পদাধিকারী সুকান্ত ঘোষ, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়, অধিকর্তা এস বি নাথ, পদ্মশ্রী অলিম্পিয়ান জিমন্যাস্ট দীপা কর্মকার সহ দপ্তরের অন্যান্য আধিকারিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। অনুষ্ঠানে রাজ্যের প্রয়াত ক্রীড়াবিদদের পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা জানান মুখ্যমন্ত্রী।

এই উদ্যোগের ফলে রাজ্যের ক্রীড়াপ্রেমী যুবসমাজ আধুনিক পরিকাঠামোর সুবিধা পাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উন্নত ক্রীড়া পরিকাঠামো রাজ্যের খেলোয়াড়দের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও বেশি সুযোগ এনে দেবে। ক্রীড়াক্ষেত্রে এই অগ্রগতি ভবিষ্যতে ত্রিপুরাকে দেশের অন্যতম ক্রীড়া কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।About Us

আগরতলা শহরে নতুন আরবান স্বাস্থ্য কেন্দ্র

রাজধানী আগরতলার প্রাণকেন্দ্রে আধুনিক স্বাস্থ্যসেবাযুক্ত নতুন ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর!

জনগণের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে অগ্রাধিকার দিয়ে রাজ্যের বর্তমান সরকার একাধিক উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এরই ধারাবাহিকতায়, রাজধানীর জ্যাকসন গেইট সংলগ্ন এলাকায় একটি আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা সম্বলিত ৫০ শয্যার নতুন আরবান স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।

নতুন এই হাসপাতালটির নির্মাণ সম্পন্ন হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও আগরতলা শহরে আগত অন্যান্য ব্যক্তিরাও স্বাস্থ্য পরিষেবার সুবিধা পাবেন। ফলে আইজিএম ও জিবি হাসপাতালের ওপর রোগীর চাপ কমবে। হাসপাতালটিতে থাকছে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ওপিডি, মাইনর অপারেশন থিয়েটার, লিফট সহ অন্যান্য অত্যাধুনিক সুবিধা। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে হাসপাতালের যাবতীয় নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে এবং এটি আগরতলা পুর নিগমের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, মুম্বাইয়ের নায়ার মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজের মতো পুর কর্পোরেশনের পরিচালনায় হাসপাতাল গড়ার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। সেই ভাবনা থেকেই আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার ও স্বাস্থ্য সচিব কিরণ গিত্যের সাথে আলোচনা করে হাসপাতালটির জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের শ্রম দপ্তরের অফিসটি নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হওয়ায় এই স্থানে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সুবিধার্থে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এই নতুন হাসপাতালটিতে।

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে একাধিক উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। জিবি হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতি ও রোটারি ক্লাবের ব্যবস্থাপনায় মাত্র ১০ টাকায় দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এছাড়াও বাজেটে একটি শেল্টার হাউজ নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, যা রোগীদের পরিবারের জন্য বিশেষ সহায়ক হবে।

এই শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র ও বিধায়ক দীপক মজুমদার, স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, আগরতলা স্মার্ট সিটি মিশনের আধিকারিক ড. শৈলেশ কুমার যাদব সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। নতুন এই হাসপাতালটি রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হতে চলেছে, যা আগরতলা শহরের জনগণের জন্য এক বড় উপহার।About Us