মাদুরাইয়ে শুরু হচ্ছে CPIM-এর ২৪তম পার্টি কংগ্রেস

মাদুরাই পার্টি কংগ্রেসে বিজয়ন ও মানিকের জন্য ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা!

তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে ২ এপ্রিল থেকে ৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সিপিআই(এম)-এর ২৪তম পার্টি কংগ্রেস। এই গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ৮০০-র বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন। ত্রিপুরা থেকে ৪৮ জন প্রতিনিধি এই কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। রবিবার থেকেই বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি মাদুরাইয়ে পৌঁছে গেছেন, বাকিরা সোমবার সকালে রওনা দিয়েছেন। ত্রিপুরার প্রতিনিধিদলের মধ্যে রয়েছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকার। পার্টি কংগ্রেসে রাজ্যের প্রতিনিধিদের ৩১ মার্চের মধ্যে উপস্থিত হতে বলা হয়েছিল। প্রতিনিধি তালিকায় ৪০ জন প্রতিনিধি, দুজন পর্যবেক্ষক এবং দলের ছয়জন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী জানান, কেরালার কান্নুরে অনুষ্ঠিত ২৩তম পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত দলীয় কৌশল এবারের কংগ্রেসে বিস্তারিত আলোচিত হবে।

সিপিআই(এম)-এর বর্তমান বয়স নীতি অনুযায়ী, মাদুরাই পার্টি কংগ্রেসে পলিটব্যুরো থেকে বিদায় নেওয়ার কথা প্রকাশ কারাত, বৃন্দা কারাত, পিনারাই বিজয়ন, মানিক সরকার, সুভাষিণী আলি, সূর্য্যকান্ত মিশ্র এবং জি রামকৃষ্ণনের। এছাড়াও, প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির মৃত্যুতে তাঁর পদও ফাঁকা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সিপিআই(এম)-এর শীর্ষ নেতৃত্বে বড়সড় পরিবর্তন আসতে চলেছে। তবে, বিশেষত কেরলের মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন এবং ত্রিপুরার প্রবীণ নেতা মানিক সরকারের জন্য ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা চলছে।

কেরলের পিনারাই বিজয়ন বর্তমান সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন, অন্যদিকে ত্রিপুরায় মানিক সরকারের বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি। এই বাস্তবতা মাথায় রেখে, দলীয় শৃঙ্খলার মধ্যে থেকেও তাঁদের জন্য বয়স নীতিতে কিছুটা শিথিলতা দেওয়ার পক্ষেই অনেকে মত দিচ্ছেন। ইতিমধ্যেই কেরলে বিজয়ন এবং ত্রিপুরায় মানিক সরকারকে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রেখে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সিপিআই(এম), এমনটাই রাজনৈতিক মহলের ধারণা।

ত্রিপুরার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এবারের পার্টি কংগ্রেসে বিশেষ আলোচনা হতে পারে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছে, ত্রিপুরা রাজ্যে সংগঠন মজবুত করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। বিজেপির সাম্প্রদায়িক ও বিভাজনের রাজনীতি এবং তিপ্রামথার জাত্যাভিমান ত্রিপুরার রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলছে। ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে তিপ্রামথার সঙ্গে বিজেপির গোপন সমঝোতা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, দুর্নীতি, এবং যুব সমাজকে নেশায় ডুবিয়ে দেওয়ার মতো বিষয়গুলিকে সামনে রেখে সিপিআই(এম) রাজ্যের রাজনৈতিক পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করছে বলে খবর। দলের রাজ্য সম্মেলন ও জেলা সম্মেলনে এসব বিষয় আলোচনা হয়েছে। বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী ইতিমধ্যেই সংগঠনকে আরও সক্রিয় ও মজবুত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ত্রিপুরার নির্বাচনী ইতিহাস বলছে, ত্রিপুরার রাজনীতিতে জনজাতি ভোটের বড় ভূমিকা রয়েছে। এক সময় সিপিআই(এম) জনজাতি এলাকায় একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করেছিল। তবে, বর্তমানে মথার উত্থান এবং রাজ পরিবারের প্রতি জনজাতিদের আনুগত্য নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে। দল এই পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য কী পদক্ষেপ নেবে, তা এবারের পার্টি কংগ্রেসে আলোচনার মূল বিষয়গুলির একটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পার্টি কংগ্রেস থেকে সিপিআই(এম)-এর নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। তবে, কে হবেন পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক তা নিয়ে দলীয় মহলে চর্চা চরমে। এই পার্টি কংগ্রেস শেষে নেতৃত্ব নির্বাচনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে। মাদুরাই পার্টি কংগ্রেস শুধু নেতৃত্ব পরিবর্তনের জন্য নয়, বরং দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সিপিআই(এম)-এর ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।About Us