কেন্দ্রের নির্দেশে রাজ্যে শুরু বিজেপির জনসংযোগ অভিযান!
বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রের কড়া নির্দেশে রাজ্যে শুরু হয়েছে দলীয় জনসংযোগ কর্মসূচি এবং “গ্রাম চলো অভিযান”। সোমবার থেকে শুরু হয়েছে এই কর্মসূচি, যা আগামী কয়েক দিন জুড়ে চলবে। রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সাংসদ, মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা এই কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।
সোমবার বামুটিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত গান্ধীগ্রামে গ্রাম চলো অভিযানে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহা। তিনি সেখানে গ্রামসভায় অংশগ্রহণ করেন, স্থানীয় মানুষের সাথে মতবিনিময় করেন এবং স্বচ্ছ ভারত অভিযান ও একটি অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অন্যদিকে, প্রতাপগড় বিধানসভা কেন্দ্রে জনসংযোগ কর্মসূচিতে অংশ নেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি ও আগরতলার সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য।
এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা, তাদের সমস্যা শুনে তার সমাধানের চেষ্টা করা এবং সংগঠনের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সংযোগকে আরও মজবুত করা। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে স্পষ্ট বার্তা—এই জনসংযোগ কার্যক্রমকে ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যেতে হবে। তবে, বিরোধীদের অভিযোগ—ভোটের মুখে পড়লেই বিজেপি জনসংযোগের কথা মনে রাখে, কিন্তু সারা বছর মানুষের পাশে থাকে না। বিশেষ করে ২০১৮ সালে দলের মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করা পৃষ্ঠা প্রমুখদের অনেকেই আজ উপেক্ষিত। একসময়ে যাঁদের কাঁধে ভর করে দল ক্ষমতায় এসেছিল, সেই পৃষ্ঠা প্রমুখদের অনেকেই আজ অভিমানে দল ছেড়েছেন বা নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। সাত বছরে শাসনকালে তাঁদের খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি কেউ।
এছাড়াও, তৃণমূল স্তরের মণ্ডল কমিটিগুলির বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন দলেরই এক শ্রেণীর নেতৃত্ব। তাদের অভিযোগ, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রকল্প থেকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নামে অনেক মণ্ডল নেতা সরাসরি কমিশন নিচ্ছেন। তবু আজ পর্যন্ত দলের তরফে এদের বিরুদ্ধে কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে, সাত বছরের শাসনে দলবিরোধী হাওয়া ক্রমশ জোরালো হচ্ছে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় ফেরা এবং পরবর্তী সময়ে দুটি লোকসভা আসন ধরে রাখার সাফল্য দলের আত্মবিশ্বাস বাড়ালেও, সংগঠনের ভিত যে দুর্বল হয়ে পড়েছে তা মেনে নিচ্ছেন অনেকেই।
নিন্দুকদের কথায়, “যে সংগঠন একদিন গড়েছিলেন পৃষ্ঠা প্রমুখরা, সেই সংগঠন আজ তলানিতে। বিজেপি যেন এখন এক তাসের ঘর, যেকোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে।” এই প্রেক্ষিতেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জোর দিচ্ছে ‘জনসংযোগ’ নামক রাজনৈতিক অস্ত্রে। গৃহে গৃহে গিয়ে জনমত সংগ্রহ, সমস্যার বাস্তব চিত্র জানা ও তার সমাধানে মনোনিবেশ করাকেই পাখির চোখ করছে দল।
এখন দেখার বিষয়, প্রতিষ্ঠা দিবস ঘিরে শুরু হওয়া এই জনসংযোগ কর্মসূচি সত্যিই তৃণমূল স্তরে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে পারে কিনা, নাকি আবারও ভোটের পর সব শান্ত হয়ে পড়বে—যেমনটা অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা। এদিকে দলের অন্দরে এখন কার্যত ব্যস্ততার চূড়ান্ত পর্যায়। জনসংযোগ কর্মসূচিকে সফল করতে প্রতিটি মণ্ডলে পরিকল্পনা মোতাবেক রূপরেখা তৈরি হচ্ছে। বিজেপির সংগঠনিক শক্তি কতটা পুনর্জীবিত হয়, তা স্পষ্ট হবে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই।