জনসংযোগে বিজেপির শীর্ষ নেতারা

কেন্দ্রের নির্দেশে রাজ্যে শুরু বিজেপির জনসংযোগ অভিযান!

বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রের কড়া নির্দেশে রাজ্যে শুরু হয়েছে দলীয় জনসংযোগ কর্মসূচি এবং “গ্রাম চলো অভিযান”। সোমবার থেকে শুরু হয়েছে এই কর্মসূচি, যা আগামী কয়েক দিন জুড়ে চলবে। রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সাংসদ, মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা এই কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।

সোমবার বামুটিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত গান্ধীগ্রামে গ্রাম চলো অভিযানে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহা। তিনি সেখানে গ্রামসভায় অংশগ্রহণ করেন, স্থানীয় মানুষের সাথে মতবিনিময় করেন এবং স্বচ্ছ ভারত অভিযান ও একটি অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অন্যদিকে, প্রতাপগড় বিধানসভা কেন্দ্রে জনসংযোগ কর্মসূচিতে অংশ নেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি ও আগরতলার সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য।

এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা, তাদের সমস্যা শুনে তার সমাধানের চেষ্টা করা এবং সংগঠনের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সংযোগকে আরও মজবুত করা। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে স্পষ্ট বার্তা—এই জনসংযোগ কার্যক্রমকে ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যেতে হবে। তবে, বিরোধীদের অভিযোগ—ভোটের মুখে পড়লেই বিজেপি জনসংযোগের কথা মনে রাখে, কিন্তু সারা বছর মানুষের পাশে থাকে না। বিশেষ করে ২০১৮ সালে দলের মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করা পৃষ্ঠা প্রমুখদের অনেকেই আজ উপেক্ষিত। একসময়ে যাঁদের কাঁধে ভর করে দল ক্ষমতায় এসেছিল, সেই পৃষ্ঠা প্রমুখদের অনেকেই আজ অভিমানে দল ছেড়েছেন বা নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। সাত বছরে শাসনকালে তাঁদের খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি কেউ।

এছাড়াও, তৃণমূল স্তরের মণ্ডল কমিটিগুলির বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন দলেরই এক শ্রেণীর নেতৃত্ব। তাদের অভিযোগ, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রকল্প থেকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নামে অনেক মণ্ডল নেতা সরাসরি কমিশন নিচ্ছেন। তবু আজ পর্যন্ত দলের তরফে এদের বিরুদ্ধে কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে, সাত বছরের শাসনে দলবিরোধী হাওয়া ক্রমশ জোরালো হচ্ছে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় ফেরা এবং পরবর্তী সময়ে দুটি লোকসভা আসন ধরে রাখার সাফল্য দলের আত্মবিশ্বাস বাড়ালেও, সংগঠনের ভিত যে দুর্বল হয়ে পড়েছে তা মেনে নিচ্ছেন অনেকেই।

নিন্দুকদের কথায়, “যে সংগঠন একদিন গড়েছিলেন পৃষ্ঠা প্রমুখরা, সেই সংগঠন আজ তলানিতে। বিজেপি যেন এখন এক তাসের ঘর, যেকোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে।” এই প্রেক্ষিতেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জোর দিচ্ছে ‘জনসংযোগ’ নামক রাজনৈতিক অস্ত্রে। গৃহে গৃহে গিয়ে জনমত সংগ্রহ, সমস্যার বাস্তব চিত্র জানা ও তার সমাধানে মনোনিবেশ করাকেই পাখির চোখ করছে দল।

এখন দেখার বিষয়, প্রতিষ্ঠা দিবস ঘিরে শুরু হওয়া এই জনসংযোগ কর্মসূচি সত্যিই তৃণমূল স্তরে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে পারে কিনা, নাকি আবারও ভোটের পর সব শান্ত হয়ে পড়বে—যেমনটা অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা। এদিকে দলের অন্দরে এখন কার্যত ব্যস্ততার চূড়ান্ত পর্যায়। জনসংযোগ কর্মসূচিকে সফল করতে প্রতিটি মণ্ডলে পরিকল্পনা মোতাবেক রূপরেখা তৈরি হচ্ছে। বিজেপির সংগঠনিক শক্তি কতটা পুনর্জীবিত হয়, তা স্পষ্ট হবে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই।About Us

সংশোধনাগারগুলিতে পরিকাঠামোগত সংকট

সংশোধনাগারগুলিতে অমানবিক পরিস্থিতি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রবল!

ত্রিপুরা রাজ্যের সংশোধনাগারগুলি এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে, কোনো সংশোধনাগারে অনুমোদিত সংখ্যার চেয়ে বেশি বন্দী রাখা যাবে না। তবুও বাস্তব পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। রাজ্যের ১৪টি সংশোধনাগারের মধ্যে ১টি (সাব্রুম) বন্ধ, বাকি ১৩টি সংশোধনাগারে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি বন্দী থাকছেন। পরিকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, কর্মী সংকট এবং নজরদারির অভাবে কারাগারগুলিতে তৈরি হয়েছে ভয়ঙ্কর অব্যবস্থা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিস্থিতি।

বিশালগড়ের প্রভুরামপুরে অবস্থিত কেন্দ্রীয় মহিলা সংশোধনাগারে ২৫ জন বন্দীর থাকার অনুমোদন রয়েছে। অথচ সেখানে এখন রাখা হচ্ছে ১১৩ জন মহিলা বন্দীকে। জায়গার অভাবে গাদাগাদি করে দিন কাটাচ্ছেন বন্দীরা। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, বন্দীদের সঙ্গে থাকা প্রায় ৩০ জন শিশুও এই পরিবেশে দুর্দশা সহ্য করছে, যদিও তারা কোনো অপরাধে জড়িত নয়। ত্রিপুরার অন্যান্য জেল ও সাবজেলগুলিতেও একই ধরনের অবস্থা:

  • খোয়াই সাবজেল: ধারণক্ষমতা ১২১ জন, বর্তমানে ১২২ জন বন্দী।
  • সোনামুড়া সাবজেল: ধারণক্ষমতা ১২৫ জন, বর্তমানে ১৭০ জন বন্দী।
  • বিলোনিয়া সাবজেল: ধারণক্ষমতা ৮৫ জন, রাখা হয়েছে ৯০ জন।
  • কৈলাসহর, কমলপুর, উদয়পুর সহ আরও বেশ কিছু জেলেও অনুমোদনের চেয়ে বেশি বন্দী রাখা হচ্ছে বলে খবর।

বেশিরভাগ জেলখানাই মান্ধাতার আমলের পুরনো ভবন। বহু জায়গায় প্লাস্টার খসে পড়ছে, দেয়ালে ফাটল, বাথরুম-জল ব্যবস্থা অকেজো। একমাত্র সাবরুমের জেলখানাটি সংস্কার করা হয়েছে, বাকি কোথাও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। এই পরিকাঠামো বন্দীদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে পুরনো জেল ভবন থেকে বিচারাধীন বন্দীদের পালানোর ঘটনা ঘটেছে। যদিও বিধানসভায় জানানো হয়েছে, জেল প্রাঙ্গনের ভিতর থেকে পালানোর কোনও রেকর্ড নেই, কিন্তু আদালতে আনা-নেওয়ার সময় বন্দী পালিয়েছে, যা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড়সড় ব্যর্থতা।

ত্রিপুরার ১৩টি সক্রিয় সংশোধনাগারে মাত্র ৩০১ জন কর্মী, যার মধ্যে পুরুষ ওয়ার্ডেন ২৮৭ জন এবং মহিলা ওয়ার্ডেন মাত্র ১৪ জন। এই সামান্য সংখ্যক মহিলা কর্মী দিয়ে গোটা রাজ্যে বন্দিনীদের নিরাপত্তা, চিকিৎসা, মনোভাব উন্নয়ন—সব কিছুই সামাল দেওয়া কার্যত অসম্ভব। গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে কারা দপ্তরে কোনও স্থায়ী নিয়োগ হয়নি। ভোটের আগে ২৪৯ জন পুরুষ ওয়ার্ডেন নিয়োগের ঘোষণা হলেও বাস্তবে তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

স্থায়ী কর্মী না থাকায় অনেক কাজ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে চালানো হচ্ছে। এতে নজরদারির ঘাটতি দেখা দিচ্ছে, বাড়ছে দুর্নীতির সম্ভাবনা। জেলখানাগুলিতে নেশাজাতীয় দ্রব্য ঢুকছে, যা একাধিকবার ধরা পড়েছে। বন্দীদের ওপর নজরদারি রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। রাজ্য মানবাধিকার কমিশন বিভিন্ন সময়ে জেলখানাগুলি পরিদর্শন করেছে। তাদের রিপোর্টে উঠে এসেছে বন্দীদের গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে, শিশুরা মায়ের সঙ্গে জেলজীবন কাটাচ্ছে, অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য ও খাবার ব্যবস্থা, এবং অপ্রতুল কর্মীবল—এই সবই মানবাধিকার লঙ্ঘনের আওতায় পড়ে।

বিধানসভায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যের ১৩টি সক্রিয় সংশোধনাগারে মোট ২৩০৩ জন বন্দীর থাকার উপযুক্ত পরিকাঠামো রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে অনেক সংশোধনাগারেই তার চেয়ে বেশি সংখ্যক আসামীকে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে। ত্রিপুরার সংশোধনাগার ব্যবস্থায় যে ভয়াবহ পরিকাঠামোগত সংকট ও কর্মী সঙ্কট চলছে, তা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। শিশু, মহিলা বন্দী, বিচারাধীন বন্দী—সবাই একইভাবে দুর্বিষহ অবস্থায় রয়েছেন। দ্রুত নতুন জেল নির্মাণ, কর্মী নিয়োগ, স্বাস্থ্য ও মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা এবং আইনি নজরদারি না এলে রাজ্যের সংশোধনাগার ব্যবস্থা এক ভয়ঙ্কর সংকটের মুখোমুখি হবে—এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।About Us

আগ্নেয়াস্ত্র সহ পুলিশের জালে ধৃত কট্টর জঙ্গি

উত্তর ত্রিপুরায় ফের সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন, আগ্নেয়াস্ত্র সহ ধৃত কট্টর জঙ্গি নেতা!

উত্তর ত্রিপুরার আনন্দবাজার এলাকায় বড়সড় সাফল্য পুলিশের। আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ এক কট্টর জঙ্গি সংগঠনের নেতাকে গ্রেপ্তার করল জেলা পুলিশের একটি বিশেষ দল। গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী ভান্ডারিমার সেতুদুয়ার জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে তাকে পাকড়াও করা হয়। ধৃতের নাম অনিদা রিয়াং (৩৫), যিনি একসময় নিষিদ্ধ ঘোষিত এন.এল.এফ.টি (NLFT) জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। বর্তমানে সে ‘ত্রিপুরা ইউনাইটেড ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ (TUNF) নামে এক নতুন সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠনের নেতা।

বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, আনন্দবাজার থানার অধীনস্থ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের গহীন জঙ্গলে টংঘরের ভিতরে আত্মগোপন করেছিল অনিদা। দীর্ঘ পরিকল্পনা ও নজরদারির পর শনিবার রাতে পুলিশের বিশেষ বাহিনী অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় একটি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, একাধিক লাইভ কার্তুজ, এবং চাঁদা আদায়ের রশিদ বই।

ধৃত জঙ্গির বিরুদ্ধে আনন্দবাজার থানায় একাধিক গুরুতর মামলা রুজু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—পুলিশ ও সীমান্তরক্ষীকে হত্যার চেষ্টা, অপহরণ, ঠিকাদারদের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়, অস্ত্র আইন লঙ্ঘন, এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারা। ধৃতকে কড়া নিরাপত্তায় কাঞ্চনপুর মহকুমা আদালতে পেশ করে চারদিনের পুলিশি রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। এস.ডি.জে.এম আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে। বর্তমানে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরো গোপন তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, ওই এলাকায় আরও বেশ কয়েকজন জঙ্গির লুকিয়ে থাকার আশঙ্কা রয়েছে। তাই গোটা সীমান্ত অঞ্চলে জোর তল্লাশি ও নজরদারি চালানো হচ্ছে। এই ঘটনায় গোটা উত্তর ত্রিপুরা জেলাজুড়ে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, মাঝে মধ্যে কিছু জঙ্গি সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করলেও এখনো সীমান্তবর্তী গভীর জঙ্গলে সক্রিয় রয়েছে কট্টর জঙ্গি সংগঠনের নেতারা। পুলিশ ও গোয়েন্দা মহল মনে করছে, এই ঘটনার মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হলো যে জঙ্গিদের কার্যকলাপ এখনো পুরোপুরি নির্মূল হয়নি

উল্লেখ্য, ত্রিপুরার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গি কার্যকলাপের আখড়া হিসেবে পরিচিত। ফলে এই গ্রেফতার ভবিষ্যতে বড় কোনো হামলা রোখার দিকেও এক বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে প্রশাসন।About Us

গুজরাটে নিখোঁজ ত্রিপুরার যুবক কালাচান ত্রিপুরা

গুজরাটে নিখোঁজ কালাচান ত্রিপুরার পরিবার দ্বারে দ্বারে ঘুরছে সাহায্যের আশায়!

ত্রিপুরার দক্ষিণ প্রান্তের এক নিঃস্ব পরিবার আজ চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছে। কারণ, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য কালাচান ত্রিপুরা (২৩) প্রায় এক মাস আগে গুজরাটে কর্মক্ষেত্র থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছেন। আজও তার কোনো খোঁজ মেলেনি। পুলিশ ও প্রশাসনের নির্লিপ্ত ভূমিকার কারণে হতাশায় ভেঙে পড়েছেন পরিবার-পরিজন।

কালাচান ত্রিপুরা দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম মহকুমার বাসিন্দা। তিনি জীবিকার সন্ধানে গিয়েছিলেন গুজরাট রাজ্যের ভালসাদ জেলার উমরগাঁও অঞ্চলে, যেখানে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের সূত্রে জানা গেছে, ৬ মার্চ তিনি অসুস্থ বোধ করেন এবং সহকর্মীদের জানান যে তিনি বাড়ি ফিরতে চান। সেই অনুযায়ী রেলস্টেশনের দিকে রওনা দেন বলেই জানিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর থেকেই তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

৭ মার্চ থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে গুজরাটে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। সাব্রুম থানাতেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু সেখান থেকে জানানো হয়, ঘটনাটি তাদের আওতার বাইরে, তাই তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না। অপরদিকে গুজরাটের উমরগাঁও থানার সঙ্গে পরিবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো সদুত্তর মেলেনি।

পরিবারের সদস্যরা বলছেন, “আমরা এক মাস ধরে শুধু প্রতিশ্রুতি শুনে যাচ্ছি। কোনো পুলিশ আমাদের সাহায্য করছে না। রাজ্য সরকার কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কেউ পাশে এসে দাঁড়ায়নি।” এমনকি, এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল বা অরাজনৈতিক সংগঠনও তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। ফলে, একেবারে ভেঙে পড়েছেন কালাচানের বাবা-মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। দরিদ্র পরিবারটির পক্ষে গুজরাটে বারবার যাওয়া, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কিংবা আইনি সহায়তা নেওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যের প্রশাসন কীভাবে এতটা নির্লিপ্ত থাকতে পারে? একজন ত্রিপুরাবাসী যুবক কর্মস্থলে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরও কেন আজ পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট তদন্ত শুরু হয়নি? ত্রিপুরা সরকারের কাছে পরিবারের আকুতি—তাঁদের ছেলের সন্ধান যেন দ্রুত পাওয়া যায় এবং গুজরাট প্রশাসনের সঙ্গে রাজ্য সরকার যেন সরাসরি হস্তক্ষেপ করে। একমাত্র উপার্জনক্ষম যুবক নিখোঁজ—এই অবস্থায় পরিবারটির আর্থিক ও মানসিক দুঃস্থতা চরমে পৌঁছেছে।

ত্রিপুরার সাধারণ মানুষ এবং নাগরিক সমাজের কাছেও এই ঘটনা একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে—বাইরের রাজ্যে কর্মরত ত্রিপুরার যুবকদের নিরাপত্তা আদৌ রয়েছে কি? সমাজ সচেতন মহল মনে করছেন ত্রিপুরা সরকারের হস্তক্ষেপ ও ত্বরিত পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই কালাচান ত্রিপুরাকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব—এই আশাতেই এখনও চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় তার পরিবার।About Us

সিপিআই(এম)-এর নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা

সিপিআই(এম)-এর ২৪তম পার্টি কংগ্রেসে নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেলেন ত্রিপুরার নেতারাও!

ভারতের অন্যতম বৃহৎ বামপন্থী রাজনৈতিক দল সিপিআই(এম)-এর ২৪তম পার্টি কংগ্রেসে দলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। মাদুরাইয়ে অনুষ্ঠিত পার্টি কংগ্রেস শেষে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয় এই কংগ্রেসে গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক রদবদলের মধ্য দিয়ে মোট ৮৪ জন সদস্য নিয়ে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়েছে। পাশাপাশি, নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ১৮ সদস্যের নতুন পলিট ব্যুরো নির্বাচিত হয়েছে।

সিপিআই(এম)-এর এবারের পার্টি কংগ্রেস থেকে উঠে এল ত্রিপুরার জন্য এক ঐতিহাসিক ঘোষণা। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণকারী কমিটি—পলিট ব্যুরোতে এবার প্রথমবারের মতো স্থান পেলেন রাজ্যের এক জনজাতি মুখ। ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সম্পাদক ও বিরোধী দলনেতা জিতেন চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন দলের নতুন পলিট ব্যুরো সদস্য হিসেবে।

১৯৯৮ সাল থেকে পলিট ব্যুরোতে প্রতিনিধিত্ব করে এসেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। তবে এবার বয়স সংক্রান্ত নিয়মের কারণে তিনি সেই পদে না থাকলেও বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে থাকছেন। তাঁর পরিবর্তে দায়িত্ব নিচ্ছেন জিতেন চৌধুরী—এটি এক ঐতিহাসিক ক্ষণ, কারণ এই প্রথম কোনও জনজাতি নেতা পলিট ব্যুরোতে প্রতিনিধিত্ব করছেন ত্রিপুরার হয়ে। রাজ্যে আসন্ন ত্রিপুরা স্বশাসিত জেলা পরিষদ (ADC) নির্বাচনকে সামনে রেখে এই পরিবর্তনকে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সিপিআই(এম)-এর ইতিহাসে পলিট ব্যুরোতে ত্রিপুরা থেকে কখনোই একাধিক সদস্য ছিলেন না। এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবারও একজনকেই সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

ত্রিপুরা থেকে নতুন মুখঃ

শুধু পলিট ব্যুরো নয়, কেন্দ্রীয় কমিটিতেও জায়গা পেয়েছেন ত্রিপুরার আরও দুই পরিচিত নেতা—নরেশ জামাতিয়া ও রতন ভৌমিক। তাঁদের অন্তর্ভুক্তিকে ভবিষ্যতের দলীয় পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে যারা আছেনঃ

নতুন কমিটিতে রয়েছেন পিনারায়ি বিজয়ন, বি ভি রাঘবুলু, এম এ বেবি, তপন সেন, নীলোৎপল বসু, সেলিম, এ বিজয়ারাঘবন, অশোক ধাওয়ালে, রামচন্দ্র ডোম, এম ভি গোবিন্দন, সুপ্রকাশ তালুকদার, যোশেফ তরিগামী, কেকে শৈলজা, পি কে শ্রীমতি, পি রাজীব, পি সত্যধেবী, সি এস সুজাতা, দেবলিনা হেমব্রম, কে হেমলতা, এস পুন্যবতী, মারিয়াম ধাওয়ালে, এ আর সিন্ধু সহ অনেক প্রাক্তন এবং নতুন মুখ।

নতুন সংযোজনঃ

এইবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে উল্লেখযোগ্যভাবে যুক্ত হয়েছেন অনুরাগ সাক্সেনা, এইচ আই ভট্ট, প্রেমচাঁদ, সঞ্জয় চৌহান, কে প্রকাশ, টি পি রামাকৃষ্ণান, পুথালাথ দিনেশান, অজিত নাওয়ালে, বিনোদ নিকোল, সুরেশ পানিগ্রাহী, কনৈকা ঘোষ, মীনাক্ষী মুখার্জি, সমন পাঠক, নরেশ জামাতিয়া, রতন ভৌমিক, কৃষ্ণা রক্ষিত, কে বালভারতী, রমা দেবী, রাজেন্দ্র সিং নেগি সহ মোট ৩০ জন।

স্থায়ী ও বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্যরাঃ

স্থায়ী আমন্ত্রিত সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন সুদীপ দত্ত, বল সিং, জন ব্রিট্টাস, সুধান্বা দেশপাণ্ডে। বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে রয়েছেন মানিক সরকার, প্রকাশ কারাট, ব্রিন্দা কারাট, সুভাষিনী আলী, এস রামচন্দ্রন পিল্লাই, বিমন বসু এবং হান্নান মোল্লা।

পলিট ব্যুরো গঠনঃ

নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ১৮ জন সদস্যকে নিয়ে পলিট ব্যুরো গঠন করা হয়েছে, যা দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণকারী পরিষদ হিসেবে কাজ করবে। সিপিআই(এম) সূত্রে জানা গেছে, এই কংগ্রেসে গৃহীত সাংগঠনিক নীতিগুলির ভিত্তিতে আগামী দিনে দলের কর্মকৌশল ও রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা নির্ধারিত হবে।About Us

BJP জোট সরকারের ভিত নড়বড়ে

তিপ্রা মথার সুপ্রিমোর বক্তব্যে অস্বস্তিতে BJP!

রাজ্যের জোট সরকারের শরিক দল তিপ্রা মথার একাংশ নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে চাপে পড়েছে BJP। বিশেষ করে, তিপ্রা মথার সুপ্রিমো প্রদ্যোত বিক্রম দেববর্মা এবং দলের বিধায়ক ও এমডিসিদের (MDC) প্রকাশ্যে সরকারের বিরুদ্ধে করা মন্তব্যে ক্রমশ জটিল হচ্ছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি। তিপ্রা মথার অভিযোগ, BJP নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরও জনজাতিদের প্রতি অবহেলা করছে। এমনকি, বামফ্রন্টের ২৫ বছরের শাসনকালেও যা ঘটেনি, তার থেকেও বেশি বঞ্চনার শিকার হচ্ছে ত্রিপুরার জনজাতি সম্প্রদায়। সরকারি পরিষেবা থেকে শুরু করে পানীয় জল, রাস্তা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে চরম অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন দলের নেতারা।

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিপ্রা মথার এমডিসি ধীরেন্দ্র দেববর্মা দাবি করেন, “বর্তমান সরকার জনজাতি উন্নয়নের জন্য কোনো সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না। পানীয় জল থেকে শুরু করে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব ক্ষেত্রেই জনজাতিরা চরম বঞ্চনার শিকার। রিয়াং জনজাতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ কিছু প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, কিন্তু সেই অর্থও সঠিকভাবে ব্যয় করা হচ্ছে না।” তিনি আরও বলেন, “উনকোটি ও ধলাই জেলার সীমান্তবর্তী কংসরাম রিয়াং পাড়ার উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রের তরফে বিশেষ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছিল। রাজকান্দি বাজার থেকে কংসরাম পাড়া পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের জন্য প্রকল্পের অনুমোদন মিললেও বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেই। এইভাবে যদি অবহেলা চলতে থাকে, তাহলে তিপ্রা মথাকে বিকল্প ভাবতে হবে।”

শুধু ধীরেন্দ্র দেববর্মাই নন, তিপ্রা মথা পরিচালিত এডিসির (ADC) শিক্ষা দপ্তরের নির্বাহী সদস্য রবীন্দ্র দেববর্মাও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, “এডিসি থেকে প্রায় ৩৫১ জন সরকারি কর্মচারী অবসর নিয়েছেন, কিন্তু অর্থের অভাবে তাদের পেনশন ও বকেয়া পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি, এমন কর্মচারীও রয়েছেন যারা দুই বছর আগে অবসর নিয়েছেন, কিন্তু এখনও পর্যন্ত পেনশন পাননি। রাজ্য সরকারের অর্থ দপ্তরে একাধিকবার লিখিত অনুরোধ জানানো হলেও কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।”

সম্প্রতি ধলাই জেলার নেপালটিলা এলাকায় অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় তিপ্রা মথার সুপ্রিমো প্রদ্যোত বিক্রম দেববর্মা তীব্র ভাষায় রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেন। তিনি শুধু বিরোধী দল কংগ্রেস ও বামেদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাননি, বরং শরিক BJPকেও একহাত নেন। ককবরক ভাষাকে রোমান হরফে চালু করার দাবিতে চলমান ছাত্র আন্দোলনে তিপ্রা মথার ভূমিকা প্রসঙ্গেও তিনি কথা বলেন, যা BJP নেতৃত্বের মধ্যে নতুন করে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, তিপ্রা মথার এমন অবস্থান BJPর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। শরিক হয়েও দলটি যদি সরকারবিরোধী অবস্থানে যায়, তাহলে জোট সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।
বিশ্লেষকদের মতে, তিপ্রা মথার ক্রমাগত আক্রমণাত্মক অবস্থান ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, দলটি ভবিষ্যতে নতুন কৌশল নিতে পারে। যদি পরিস্থিতি এমনই চলতে থাকে, তাহলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তিপ্রা মথার অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। এই টানাপোড়েনের পরিণতি কী হবে, তা সময়ই বলবে। তবে আপাতত তিপ্রা মথার বক্তব্যে রাজ্যের BJP নেতৃত্ব যে প্রবল অস্বস্তিতে, তা স্পষ্ট।About Us

ক্রীড়াক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগ

ক্রীড়াক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে বাজারঘাট স্টেডিয়ামকে আধুনিকরণ করা হচ্ছে!

ক্রীড়াক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগ
ক্রীড়াক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগ

ক্রীড়াক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলতে উদ্যোগী হয়েছে ত্রিপুরা সরকার। রাজ্যের প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদদের জন্য আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার আগরতলার বাধারঘাটে দশরথ দেব স্পোর্টস কমপ্লেক্সে তিনটি অত্যাধুনিক ক্রীড়া স্থাপনার উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। উদ্বোধন করা হয় দেবভক্তি জমাতিয়া সিন্থেটিক অ্যাথলেটিক টার্ফ, স্বদেশপ্রিয় নন্দী সিন্থেটিক হকি গ্রাউন্ড এবং প্রতুল ভট্টাচার্য সিন্থেটিক টার্ফ ফুটবল গ্রাউন্ড। প্রয়াত তিন বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের স্মৃতিকে সম্মান জানিয়ে এই নামকরণ করা হয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা শৃঙ্খলাপরায়ণ এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠেন। তাদের অবদান রাজ্যের ক্রীড়াক্ষেত্রে অনস্বীকার্য। প্রয়াত দেবভক্তি জমাতিয়া, স্বদেশপ্রিয় নন্দী এবং প্রতুল ভট্টাচার্যের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই ক্রীড়া ক্ষেত্রগুলোর নামকরণ করা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “ত্রিপুরার ক্রীড়া ইতিহাসকে সংরক্ষণের জন্য সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে আমবাসায় নির্মিত ২০০ শয্যার যুব হোস্টেলের নামকরণ করা হয়েছে মধুসূদন সাহার নামে।”

মুখ্যমন্ত্রী প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদদের জন্য উন্নত সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, “সঠিক পরিকাঠামো ও সুযোগ পেলে রাজ্যের খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেদের প্রতিভা তুলে ধরতে সক্ষম হবেন। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলেন পদ্মশ্রী অলিম্পিয়ান জিমন্যাস্ট দীপা কর্মকার।” তিনি আরও বলেন, “যুব সমাজকে মাদকাসক্তির ছোবল থেকে রক্ষা করতে খেলাধুলার বিকল্প নেই। সুস্থ মন ও দেহ গঠনে ক্রীড়ার ভূমিকা অপরিসীম।” রাজ্যের ক্রীড়াক্ষেত্রকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সরকার একাধিক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আগরতলার ভোলাগিরিতে উন্নত ক্রীড়া পরিকাঠামো গড়ে তোলার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, রাজ্যের বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের অবদান স্মরণীয় রাখতে বিভিন্ন ক্রীড়া স্থাপনার নামকরণ তাঁদের নামে করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের মন্ত্রী টিংকু রায় বলেন, “রাজ্যের ক্রীড়া পরিকাঠামোকে বিশ্বমানের করে তুলতে সরকার নিরলস পরিশ্রম করছে। নতুন অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি পুরোনো পরিকাঠামোগুলিকে আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে।” উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক মীনা রাণী সরকার, ত্রিপুরা স্পোর্টস কাউন্সিলের পদাধিকারী সুকান্ত ঘোষ, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়, অধিকর্তা এস বি নাথ, পদ্মশ্রী অলিম্পিয়ান জিমন্যাস্ট দীপা কর্মকার সহ দপ্তরের অন্যান্য আধিকারিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। অনুষ্ঠানে রাজ্যের প্রয়াত ক্রীড়াবিদদের পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা জানান মুখ্যমন্ত্রী।

এই উদ্যোগের ফলে রাজ্যের ক্রীড়াপ্রেমী যুবসমাজ আধুনিক পরিকাঠামোর সুবিধা পাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উন্নত ক্রীড়া পরিকাঠামো রাজ্যের খেলোয়াড়দের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও বেশি সুযোগ এনে দেবে। ক্রীড়াক্ষেত্রে এই অগ্রগতি ভবিষ্যতে ত্রিপুরাকে দেশের অন্যতম ক্রীড়া কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।About Us

আগরতলা শহরে নতুন আরবান স্বাস্থ্য কেন্দ্র

রাজধানী আগরতলার প্রাণকেন্দ্রে আধুনিক স্বাস্থ্যসেবাযুক্ত নতুন ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর!

জনগণের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে অগ্রাধিকার দিয়ে রাজ্যের বর্তমান সরকার একাধিক উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এরই ধারাবাহিকতায়, রাজধানীর জ্যাকসন গেইট সংলগ্ন এলাকায় একটি আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা সম্বলিত ৫০ শয্যার নতুন আরবান স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।

নতুন এই হাসপাতালটির নির্মাণ সম্পন্ন হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও আগরতলা শহরে আগত অন্যান্য ব্যক্তিরাও স্বাস্থ্য পরিষেবার সুবিধা পাবেন। ফলে আইজিএম ও জিবি হাসপাতালের ওপর রোগীর চাপ কমবে। হাসপাতালটিতে থাকছে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ওপিডি, মাইনর অপারেশন থিয়েটার, লিফট সহ অন্যান্য অত্যাধুনিক সুবিধা। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে হাসপাতালের যাবতীয় নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে এবং এটি আগরতলা পুর নিগমের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, মুম্বাইয়ের নায়ার মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজের মতো পুর কর্পোরেশনের পরিচালনায় হাসপাতাল গড়ার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। সেই ভাবনা থেকেই আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার ও স্বাস্থ্য সচিব কিরণ গিত্যের সাথে আলোচনা করে হাসপাতালটির জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের শ্রম দপ্তরের অফিসটি নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হওয়ায় এই স্থানে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সুবিধার্থে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এই নতুন হাসপাতালটিতে।

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে একাধিক উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। জিবি হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতি ও রোটারি ক্লাবের ব্যবস্থাপনায় মাত্র ১০ টাকায় দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এছাড়াও বাজেটে একটি শেল্টার হাউজ নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, যা রোগীদের পরিবারের জন্য বিশেষ সহায়ক হবে।

এই শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র ও বিধায়ক দীপক মজুমদার, স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, আগরতলা স্মার্ট সিটি মিশনের আধিকারিক ড. শৈলেশ কুমার যাদব সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। নতুন এই হাসপাতালটি রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হতে চলেছে, যা আগরতলা শহরের জনগণের জন্য এক বড় উপহার।About Us

রোহিঙ্গা নাগরিকের অনুপ্রবেশ কৈলাসহরে

বাংলাদেশ থেকে দুই রোহিঙ্গা নাগরিক ভারতে প্রবেশের মুখে আটক!

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কৈলাসহর থানার পুলিশ দুইজন বাংলাদেশী নাগরিককে আটক করেছে। শহর এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনায় গোটা কৈলাসহরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। কৈলাসহর থানার ওসি সুকান্ত সেন চৌধুরী জানান, ৩রা এপ্রিল বৃহস্পতিবার ভোরবেলা দুই বাংলাদেশী  নাগরিক অবৈধভাবে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার হয়ে কৈলাসহরে প্রবেশ করে। তারা কৈলাসহর থেকে বহিরাজ্যে যাওয়ার উদ্দেশ্যে একটি অটোতে ওঠে। ধর্মনগরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার সময় কৈলাসহর শহরের কলেজের পাশে পুলিশ সন্দেহজনক অটোটি আটক করে তল্লাশি চালায়। এই তল্লাশিতে দুই বিদেশি নাগরিকসহ অটো চালককে গ্রেপ্তার করা হয়।

অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে পুলিশ ধৃতদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আইনে মামলা দায়ের করেছে। বর্তমানে ধৃত তিনজনকেই কৈলাসহর থানার হেফাজতে রাখা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আটককৃত দুই বিদেশি নাগরিক আদতে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা। এই আটকৃতদের কাছ থেকে তিনটি দামি মোবাইল ফোন ও কিছু নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া, যে অটো গাড়িটি তারা ব্যবহার করছিল সেটিও পুলিশ জব্দ করেছে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত দুইজন রোহিঙ্গা নাগরিক জানিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশের চট্টগ্রামের রিফিউজি ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসেছে। আটককৃতদের মধ্যে মোহাম্মদ তাসিন (১৮) ও মোহাম্মদ উসমান (১৯) নামে দুই রোহিঙ্গা নাগরিক রয়েছেন। এছাড়া, ধৃত অটো চালকের নাম আমিনুল হক (২৬), যার বাড়ি কৈলাসহরের বাবুরবাজার এলাকায়।

পুলিশ আরও জানিয়েছে, রোহিঙ্গা নাগরিকরা কীভাবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার হয়েছে, তাদের ভারতে আসার উদ্দেশ্য কী, এবং তারা কার মাধ্যমে এ দেশে প্রবেশ করেছে, এসব বিষয়ে জোরালো তদন্ত চলছে। বিকেলে ধৃতদের কৈলাসহর আদালতে হাজির করা হয়েছে। এভাবে শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে রোহিঙ্গা নাগরিক আটক হওয়ার ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসন আরও কঠোর নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।About Us

পশ্চিমবঙ্গে ১০৩২৩ এর প্রতিচ্ছবি

পশ্চিমবঙ্গের SSC নিয়োগ দুর্নীতিতে হাইকোর্টের রায়কেই প্রায় মান্যতা দিল সুপ্রিম কোর্টে!

পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা জগতে এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে, যা ত্রিপুরার ১০৩২৩ শিক্ষকের মামলার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্ট প্রায় ২৫,৭৫৩ শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর নিয়োগ বাতিল করেছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলেও, শীর্ষ আদালত হাইকোর্টের রায়কেই বহাল রেখেছে।

২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ওএমআর শিটের জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধ নিয়োগের অভিযোগ ওঠে। এই বিষয়ে তদন্তের জন্য কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআইকে দায়িত্ব দেয়। সিবিআই এই তদন্তে নেমে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়সহ একাধিক এসএসসি কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে, যার ফলে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

আদালতের নির্দেশনা ও পরবর্তী পদক্ষেপ অনুযায়ী;

  • প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও যারা চাকরি পেয়েছেন বা করছেন, তাদের ৪ সপ্তাহের মধ্যে বেতন ফেরত দিতে হবে।
  • ৬ সপ্তাহের মধ্যে জেলা শাসকদের সেই টাকা উদ্ধার করতে হবে।
  • নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত সমস্ত তদন্ত করবে সিবিআই, এবং প্রয়োজনে যেকোনো ব্যক্তিকে হেফাজতে নিতে পারবে।
  • অতিরিক্ত শূন্য পদ যারা তৈরি করেছিল, তাদেরও হেফাজতে নিতে পারবে সিবিআই।
  • সমস্ত ওএমআর শিট পুনরায় মূল্যায়ন করা হবে।
  • সবকটি ওএমআর শিটের কপি অনলাইনে আপলোড করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
  • নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে বলা হয়েছে এসএসসিকে।

এই দুর্নীতির ফলে অনেক যোগ্য প্রার্থী, যারা মেধার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিলেন, তাদেরও চাকরি হারাতে হয়েছে। এতে তারা ও তাদের পরিবার গভীর হতাশায় নিমজ্জিত। প্রশ্ন উঠছে, যারা মেধার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিলেন, তাদের চাকরি হারানোর জন্য দায়ী কে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন দুই-তৃতীয়াংশ চাকরিপ্রার্থী ও তাদের পরিবার। ত্রিপুরায় ১০৩২৩ শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের ঘটনা যেমন শিক্ষা ব্যবস্থায় গভীর প্রভাব ফেলেছিল, পশ্চিমবঙ্গের এই ঘটনা তেমনই শিক্ষাক্ষেত্রে ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার প্রশ্ন তুলে ধরেছে। উভয় ক্ষেত্রেই মেধাবী প্রার্থীদের প্রতি অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থীদের স্বার্থ রক্ষা এবং ভবিষ্যতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন শিক্ষাবিজ্ঞ, মহল।About Us