সম্মানজনক সমঝোতার সন্ধানে আন্দোলনরত মথা নেত্রীত্ব!!
ত্রিপুরায় রোমান হরফ বিতর্ক ঘিরে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। একদিকে জনজাতি ছাত্র সংগঠনের লাগাতার আন্দোলন, অন্যদিকে রাজ্য সরকারের স্পষ্ট অবস্থান—এই দ্বৈরথের মাঝখানে রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়েছেন প্রদ্যুত কিশোর দেববর্মা। রাজ্যের জনজাতি ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবির প্রতি সমর্থন জানালেও, সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে তিনি সম্মানজনক সমঝোতার পথ খুঁজছেন বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে ত্রিপুরার বিভিন্ন এলাকায় রোমান হরফে ককবরক ভাষা চালুর দাবিতে তীব্র আন্দোলন চলছে। ত্রিপাক্ষিক চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে ছাত্রদের পথে নামিয়েছেন প্রদ্যুত, এমন অভিযোগ তুলেছে বিরোধী শিবির। অন্যদিকে, বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, রাজ্য সরকার রোমান হরফের দাবিতে নমনীয় নয়। বিজেপির জনজাতি মোর্চাও রোমান হরফের বদলে দেবনাগরি হরফের পক্ষে মত দিয়েছে।
রোমান হরফের দাবিতে শুক্রবার থেকে রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবরোধ শুরু করে জনজাতি ছাত্র সংগঠন টি.এস.এফ। ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও, এখনো বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলন অব্যাহত। তেলিয়ামুড়া থানার অন্তর্গত হাওয়াইবাড়িতে শনিবার সকালেও ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় ৪৫ কিলোমিটার জুড়ে ছোট-বড় যানবাহন, মালবাহী ট্রাক আটকে পড়ে। পেঁয়াজ, রসুন, তরমুজের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী ট্রাকগুলো আটকে থাকায়, ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। অনেকে রাস্তার ওপর বসেই রাত কাটিয়েছেন। দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকার ফলে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীরা সমস্যায় পড়েছেন। অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ মানুষ।
শনিবার আগরতলা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে মথার ছাত্র সংগঠন সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তারা কোনোভাবেই রোমান হরফের দাবিতে পিছু হটবে না। বরং আন্দোলন আরও তীব্র করবে। সোমবার রাজধানী আগরতলায় ফের বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে তারা। অন্যদিকে, সরকারের তরফ থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, এই মুহূর্তে রোমান হরফের দাবিতে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিকল্পনা নেই। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার নির্দেশে আগে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছিল এই বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য। তবে সেই কমিটির রিপোর্ট জমা পড়েছে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আন্দোলন এখন প্রদ্যুত কিশোর দেববর্মার জন্যও বড় সঙ্কট হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনজাতি ছাত্র সংগঠনের দাবি নিয়ে রাজ্য সরকারের কড়া অবস্থানের কারণে তিনি একদিকে চাপে রয়েছেন, অন্যদিকে রাজ্যের সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ায় আন্দোলনের প্রতি জনসমর্থন নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বিজেপি এই ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নেওয়ায়, দিল্লির সঙ্গেও প্রদ্যুতের সম্পর্ক নতুন পরীক্ষার মুখে। ফলে, একদিকে আন্দোলনকারীদের রোষ, অন্যদিকে প্রশাসনিক কড়াকড়ির বাস্তবতা—এই দুইয়ের মাঝে তিনি আপাতত একটি সম্মানজনক সমঝোতার পথ খুঁজছেন বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা। এই অবস্থায় পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, এখন সেদিকেই তাকিয়ে রাজ্যবাসী।