ADC নিজস্ব পুলিশ বাহিনী গঠন

ADC-র পুলিশ বাহিনী তৈরির নামে অস্ত্র ব্যবহারের ইঙ্গিত!

ক্ষমতা

এক চাঞ্চল্যকর ঘোষণায় ত্রিপুরা স্বশাসিত জেলা পরিষদ (ADC) প্রশাসন নিজস্ব পুলিশ বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এডিসির মুখ্য নির্বাহী সদস্য (সিইএম) পূর্ণচন্দ্র জমাতিয়া পরিষদের অধিবেশনে জানিয়েছেন, প্রথম পর্যায়ে এক ব্যাটালিয়ন, অর্থাৎ প্রায় ১২০০ জন সদস্য নিয়ে এই বাহিনী গঠিত হবে। তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ইতিমধ্যেই বিতর্কের ঝড় উঠেছে।

রাজ্যের অনুমতি ছাড়া নিজস্ব বাহিনী গঠন কি আইনসিদ্ধ?

প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞের মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা রাজ্য সরকারের দায়িত্ব এবং ADC-র নিজস্ব পুলিশ বাহিনী গঠনের কোনো আইনি অধিকার নেই। ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদ (ত্রিপুরা ট্রাইবাল এরিয়া অটোনমাস ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল – টিটিএএডিসি) ১৯৮৫ সালে গঠিত হলেও, এর প্রশাসনিক কাঠামোতে নিজস্ব পুলিশ বাহিনী গঠনের সুযোগ নেই। “ADC-র কার্যপরিধির মধ্যে পুলিশ বাহিনী গঠন করার বিধান নেই। এটি স্বরাষ্ট্র দফতরের অধীন এবং রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারে পড়ে।” তবে ADC-র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেই এই বাহিনী গঠন করা হবে। প্রশ্ন উঠছে, রাজ্য সরকারকে অবহিত না করেই কীভাবে এডিসি প্রশাসন এমন সিদ্ধান্ত নিল?

বিজেপির নীরবতা ঘিরে রহস্য!

যদিও বিজেপি সরকার এবং ত্রিপুরা প্রদেশ বিজেপি এডিসির এই সিদ্ধান্তের পক্ষপাতী নয়, কিন্তু এডিসির অধিবেশনে এই ঘোষণা নিয়ে বিজেপির এমডিসিরা কোনো আপত্তি জানাননি। এটা আরও বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে রাজনীতির মহলে। বিরোধীদের দাবি, বিজেপি সরকার দ্বিমুখী নীতি অনুসরণ করছে। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, রাজ্য সরকার এই সিদ্ধান্তে সম্মতি দেবে কি না। কারণ, ADC নিজস্ব পুলিশ বাহিনী গঠন করলেও, এর জন্য অর্থের প্রয়োজন হবে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে।

রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিঃ

বিশ্লেষকদের মতে, ADC-র নিজস্ব পুলিশ বাহিনী গঠনের ঘোষণা শুধু প্রশাসনিক নয়, রাজনৈতিক ইঙ্গিতবাহীও। তিপ্রা মথার শাসনে থাকা ADC কি স্বশাসনের আরও অধিকারের দিকে এগোতে চাইছে? রাজ্য সরকারের এই বিষয়ে কী অবস্থান নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে ত্রিপুরার ADC প্রশাসনের নিজস্ব পুলিশ বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত চরম বিতর্কিত ও আইনবিরুদ্ধ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া এমন বাহিনী গঠন করা হলে তা প্রশাসনিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। অনেকেই এটিকে ADC-র “গোপন এজেন্ডা” বলে অভিহিত করছেন, যা রাজ্য সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানোর শামিল। যদি রাজ্য সরকারের অর্থেই এই বাহিনী পরিচালিত হয়, তবে সেটি সম্পূর্ণ আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে, কারণ ADC-র নিজস্ব রাজস্ব তহবিল নেই। তাছাড়া, এই বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কীভাবে হবে, সেটাও বড় প্রশ্ন, কারণ একে সরকারিভাবে কোনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।

এখন সাধারণ মানুষের মনে আশঙ্কা, রাজ্য সরকারের বিপরীতে গিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা ডেকে আনতে পারে। আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, ADC-র অধিবেশনে বিজেপির এমডিসিরা এ নিয়ে কোনো আপত্তি জানাননি, যা রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এতে অনেকেই মনে করছেন, এটি হয়তো একটি গোপন রাজনৈতিক সমঝোতার অংশ, যা ভবিষ্যতে রাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। ত্রিপুরার জনগণও এডিসির এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভক্ত—কেউ মনে করছেন এটি উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলের ক্ষমতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা, আবার কেউ বলছেন এটি অযৌক্তিক ও বিপজ্জনক। এত বড় প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের আগে কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করায়, অনেকেই একে একতরফা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপ বলে মনে করছেন।

অস্ত্র ব্যবহারের ইঙ্গিত!

ADC-র নিজস্ব পুলিশ বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে— রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া বাহিনী গঠনের পেছনে কোনো গোপন উদ্দেশ্য থাকতে পারে, যা ভবিষ্যতে আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। অনেকেই সন্দেহ করছেন, ADC-র এই সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নয়, বরং রাজনৈতিক ক্ষমতা বাড়ানোর একটি কৌশল। প্রশাসনিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে—একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান কি রাজ্যের অনুমতি ছাড়াই বাহিনী গঠন করতে পারে? এডিসির নিজস্ব পুলিশ বাহিনী গঠনের উদ্যোগ কি বাস্তবায়িত হবে? রাজ্য সরকার কি তাতে অনুমোদন দেবে? নাকি এই সিদ্ধান্ত আইনি জটিলতায় আটকে যাবে? সেই প্রশ্নের উত্তর মিলবে আগামী দিনগুলিতেই।About Us

ধলাই জ্বালায় স্বাস্থ্য পরিষেবা

ধলাই জেলায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর বেহালদশায় ক্ষোভ পাহাড়ী এলাকায়!

রাজ্যে একের পর এক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ সরকারি ছাড়পত্র পেয়ে গজিয়ে উঠলেও পাহাড়ি এবং প্রত্যন্ত এলাকার সরকারি হাসপাতালগুলোর হাল বেহাল। চিকিৎসা পরিষেবা বলতে যেন শুধুই নামকাওয়াস্তে কিছু ব্যবস্থা। এদিকে রাজ্য সরকার এই পরিস্থিতিকেও উন্নয়নের জোয়ার বলে প্রচার করছে, যা সাধারণ মানুষের কাছে এক নির্মম রসিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

ধলাই জেলায় স্বাস্থ্য পরিষেবাঃ

ত্রিপুরার সবচেয়ে পশ্চাৎপদ জেলা হিসেবে চিহ্নিত ধলাই জেলার স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর চিত্র অত্যন্ত শোচনীয়। স্বাধীনতার এত বছর পরও এই জেলার একাধিক ব্লক এবং মহকুমায় স্বাস্থ্য পরিষেবার ন্যূনতম সুবিধাটুকুও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। ধলাই জেলার গন্ডাছড়া মহকুমার পরিস্থিতি সবচেয়ে সংকটজনক। সরকারি খতিয়ান অনুযায়ী এখানে একটি মহকুমা হাসপাতাল থাকলেও, নেই একজনও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ এবং কোন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ। ফলে এই অঞ্চলের মানুষকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য বহু দূর পাড়ি দিয়ে অন্যত্র যেতে হয়।

দিনে তিন ঘন্টা স্বাস্থ্য পরিষেবা!

গন্ডাছড়া মহকুমার দলপতি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অবস্থা আরও আশঙ্কাজনক। এলাকাটি ম্যালেরিয়া ও জলবাহিত রোগপ্রবণ হওয়ার পরও এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি দৈনিক মাত্র তিন ঘণ্টার জন্য খোলা থাকে। ফলে জরুরি চিকিৎসার অভাবে বহু রোগীকে হয়রানির শিকার হতে হয়। এছাড়া রইস্যাবাড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং জগবন্ধু পাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র কার্যত নামকাওয়াস্তে চলছে। চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় ওষুধের তীব্র সংকট রয়েছে সেখানে।

নেপালটিলা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রেঃ

উনকোটি ও ধলাই জেলার সীমানায় অবস্থিত নেপালটিলা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র দুটি জেলার মানুষের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালটিও চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং জীবনদায়ী ওষুধের অভাবে ধুঁকছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের কোনও উচ্চপদস্থ কর্তা বহুদিন ধরেই এই হাসপাতালের পরিদর্শনে আসেননি। ফলে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা পেতে হিমশিম খাচ্ছেন।

বিরাশি মাইল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রেঃ

আসাম-আগরতলা জাতীয় সড়কের পাশেই অবস্থিত বিরাশি মাইল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিশাল নতুন ভবন তৈরি হলেও চিকিৎসা পরিষেবা সেই মান্দাতা আমলের মতোই চলছে। আধুনিক পরিকাঠামো তৈরির পরও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, যন্ত্রপাতি এবং ওষুধের ঘাটতির কারণে হাসপাতালটি কার্যত অকেজো হয়ে রয়েছে।

পার্বত্য অঞ্চলের স্বাস্থ্য কাঠামো!

ধলাই জেলার আঠারোমুড়া, লংতরাই এবং শাখান পাহাড়ের কিছু অংশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো আরও সংকটপূর্ণ। কালাঝারি পাহাড়ের পরিস্থিতিও একইরকম। বাম আমল থেকে বর্তমান সরকারের আমলেও পাহাড়ি এলাকার স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নত করার কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবিঃ

এই পরিস্থিতিতে পিপলস মুভমেন্ট ফর ট্রাইবাল রাইটস নামে একটি সংগঠন রাজ্য সরকারের কাছে পাহাড়ি এলাকায় উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা নিশ্চিত করার দাবিতে সরব হয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যদি অবিলম্বে পাহাড়ি এলাকায় পর্যাপ্ত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ না করা হয়, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবে তারা।

সরকারের নীরবতাঃ

স্বাস্থ্য পরিষেবার এই চরম বেহাল দশার পরও রাজ্য সরকার কেন নীরব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। ধলাই ও আশেপাশের পাহাড়ি এলাকার মানুষের দাবি, সরকার শুধু বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোর উন্নয়নে মনোযোগ না দিয়ে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। সরকার কি এই দাবিগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেবে, নাকি প্রান্তিক মানুষের কষ্ট উপেক্ষা করেই উন্নয়নের ঢোল বাজিয়ে যাবে? সেই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে।About Us