গণবন্টন ব্যবস্থা

গণবন্টন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে মন্ত্রী সুশান্তের প্রয়াস!

রাজ্যের খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক দপ্তরের বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী কার্যক্রম সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকারকে অবগত করতে দিল্লি সফরে গেলেন রাজ্যের খাদ্য ও জনসংভরণ দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। এদিন তিনি কেন্দ্রীয় খাদ্য ও গণবন্টন, উপভোক্তা বিষয়ক এবং নতুন ও পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি দপ্তরের ক্যাবিনেট মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশির সাথে বৈঠক করেন।

সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী রাজ্যে গণবন্টন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এবং সার্বজনীন করার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি জানান, বর্তমান রাজ্য সরকার খাদ্য ও জনসংভরণ দপ্তরের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কল্যাণে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর ফলে রাজ্যের বাসিন্দারা আরও সহজে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পাচ্ছেন।

রাজ্যের ইতিহাসে এই প্রথম উৎসব উপলক্ষে বিনামূল্যে রেশন ভোক্তাদের এক কেজি চিনি, ৫০০ গ্রাম ময়দা এবং ৫০০ গ্রাম সুজি প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি, এই প্রথমবার রেশন দোকানের মাধ্যমে ভোজ্য তেলও বিতরণ করা হচ্ছে। এতে করে সাধারণ মানুষের মধ্যে গণবন্টন ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে এবং মানুষ ভর্তুকি মূল্যে খাদ্যসামগ্রী পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মোতাবেক রাজ্যের গরিব মানুষের জন্য বিনামূল্যে চাল প্রদান অব্যাহত রয়েছে। এতে দুঃস্থ পরিবারগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে।

রাজ্য সরকার নতুন উদ্যোগ হিসেবে স্ব-সহায়ক দলগুলোর উৎপাদিত পণ্য গণবন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে বাজারজাত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে স্থানীয় উৎপাদকরা সরাসরি উপকৃত হবেন এবং স্বনির্ভরতার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারবেন।

বৈঠকে মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী রাজ্যের খাদ্য ও গণবন্টন ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতার আহ্বান জানান। তিনি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দের আবেদন করেন এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা করেন।

মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীর এই প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন কেন্দ্রীয় খাদ্য ও জনসংভরণ মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি। তিনি রাজ্যের গণবন্টন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানান এবং ভবিষ্যতে কেন্দ্রের তরফ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দেন। রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ রাজ্যের জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্ব-সহায়ক দলগুলোর আর্থিক উন্নয়নের পথ সুগম করবে বলে মনে করা হচ্ছে।About Us

বাজেট 2025-26

পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের শেষ বাজেট ২০২৫-২৬!

আগামী ২১ মার্চ থেকে শুরু হতে চলেছে ত্রিপুরা বিধানসভার বাজেট অধিবেশন, যা চলবে কমপক্ষে পাঁচ দিন। এই অধিবেশনের প্রথম দিনেই ২০২৫-২৬ অর্থবছরের আর্থিক পরিকল্পনা প্রস্তাব পেশ করবেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়। এটি হবে তাঁর তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ আর্থিক পরিকল্পনা প্রস্তাব, এবং পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের মেয়াদকালের শেষ বাজেট। ফলে, এই আর্থিক পরিকল্পনা প্রস্তাব ঘিরে রাজ্যবাসীর প্রত্যাশা অনেকটাই বেড়ে গেছে।

বাজেট ইঙ্গিত!

বাজেট অধিবেশন শুরুর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী জানান, এবারের আর্থিক পরিকল্পনা প্রস্তাব হবে সম্পূর্ণ জনমুখী। তিনি বলেন, বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজ্যের রাজস্ব আদায় ও জনসেবার ভারসাম্য বজায় রেখে বাজেটের আকার ক্রমশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরেও সেই ধারা বজায় রাখা হবে এবং গত বছরের তুলনায় আর্থিক পরিকল্পনা প্রস্তাবের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে।

গুরুত্বঃ

অর্থমন্ত্রী স্পষ্ট করেছেন যে, এবারের আর্থিক পরিকল্পনা প্রস্তাবে কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা। তাই, মূলধনী ব্যয় বৃদ্ধির ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে, যা আগের প্রস্তাবেও গুরুত্ব পেয়েছিল এবং এবারের প্রস্তাবেও তা অব্যাহত থাকবে।

প্রতিফলনঃ

অর্থমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার একটি জনমুখী বাজেট পেশ করেছে, যেখানে মধ্যবিত্ত শ্রেণির করছাড়ের বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের ক্ষেত্রে কর ছাড়ের সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা কমাবে। কেন্দ্রীয় আর্থিক পরিকল্পনা প্রস্তাবের এই দৃষ্টান্তকে অনুসরণ করেই ত্রিপুরার প্রস্তাবেও সাধারণ মানুষের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

রাজস্বঃ

অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, বিজেপি সরকারের শাসনকালে ত্রিপুরার সম্পদ এবং রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে জাতীয় গড় অনুসারে কর আদায়ের নিরিখে ত্রিপুরা তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এটি রাজ্যের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নতির প্রতিফলন বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী।

বিনিয়োগঃ

অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, এবারের আর্থিক পরিকল্পনা প্রস্তাবে শিল্প বিনিয়োগকে আকর্ষণীয় করার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা থাকবে। নতুন শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে যাতে সুবিধা হয়, তার জন্য প্রস্তাবে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প (MSME) খাতকে উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ তহবিলের ব্যবস্থাও থাকতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন।

কর্মসংস্থানঃ

রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান চাহিদা হলো কর্মসংস্থান বৃদ্ধি। এই আর্থিক পরিকল্পনা প্রস্তাবে চাকরিপ্রার্থীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা, তা নিয়ে আগ্রহ রয়েছে। নির্বাচনের আগে বিজেপির দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকার কতটা জনমুখী বাজেট পেশ করতে পারে, সেটাই দেখার বিষয়।

সম্ভাবনাঃ

যেহেতু এটি পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের মেয়াদকালের শেষ বাজেট, তাই বিশেষ কিছু বড় ঘোষণা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, আর্থিক পরিকল্পনা প্রস্তাবে কী কী নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় এবং তা কতটা কার্যকর হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। উল্লেখযোগ্য বিজেপির ঘোষণা অনুযায়ী কর্মচারীদের পে কমিশনের ব্যাপারে মুখ খোলেন নি অর্থমন্ত্রী। এখন বাজেট অধিবেশন শুরুর অপেক্ষায় রাজ্যবাসী এবং আর্থিক পরিকল্পনা প্রস্তাবের প্রতিটি দিক গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে তবেই বোঝা যাবে, এই প্রস্তাব কতটা জনমুখী এবং রাজ্যের উন্নয়নে কতটা কার্যকরী হতে চলেছে।About Us

তিপ্রা মথায় আভ্যন্তরীণ অসন্তোষ

সুপ্রিমোর দ্বৈত ভূমিকায় বিভাজিত তিপ্রা মথা!

রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক দল তিপ্রা মথার অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। দলের অভ্যন্তরে অসন্তোষ ও বিভেদের বাতাবরণ এতটাই গভীর যে, একাধিক বিধায়ক এবং হেভিওয়েট নেতা এখন দলের সুপ্রিমোর সাথে মঞ্চ শেয়ার করতেও অনিচ্ছুক। এই অসন্তোষের সূত্রপাত বেশ কিছুদিন আগেই হয়েছিল, তবে সম্প্রতি তা নতুন মাত্রা পেয়েছে।

সম্প্রতি রাজধানী আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে অনুষ্ঠিত তিপ্রা মথার যুব সংগঠনের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এই অসন্তোষের চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দলের বেশ কয়েকজন বিধায়ক এবং প্রবীণ নেতা এই কর্মসূচি থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। বিশেষ করে দলের এক মহিলা বিধায়কসহ একাধিক নেতা এখন সুপ্রিমোর নেতৃত্ব নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলছেন।

তবে তিপ্রা মথার অভ্যন্তরীণ সংকট নতুন নয়। ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই এই অসন্তোষ দানা বাঁধতে শুরু করেছিল। মূলত প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি নিয়েই দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়। দলের সর্বমোট ৪২টি আসনে প্রার্থী ঘোষণার সময় সুপ্রিমোর একক সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হয়েছিল, যা অনেক প্রবীণ নেতারই পছন্দ হয়নি। তাঁদের অভিযোগ ছিল, দীর্ঘদিন দলের জন্য কাজ করা বহু যোগ্য নেতাকে উপেক্ষা করে একক সিদ্ধান্তে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছিল।

বিধানসভা নির্বাচনের পর বিজেপির সঙ্গে তিপ্রা মথার রাজনৈতিক মধুচন্দ্রিমা শুরু হয়। যদিও এই জোট নিয়েও দলীয় অন্দরে বিরোধিতা ছিল। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিতর্ক আরও বাড়ে, যখন দলের প্রবীণ নেতাদের উপেক্ষা করে বহিরাগত এক ব্যক্তিকে বিজেপির পদ্ম চিহ্নে প্রার্থী করা হয়। অনেকেই অভিযোগ তোলেন, এই প্রার্থী মনোনয়নের জন্য দলের মূল দাবিগুলোকেই বিসর্জন দিতে হয়েছিল। তখন থেকেই দলের মধ্যে চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছিল, যা এখন প্রকাশ্যে আসছে।

দলের আরও একাংশের অভিযোগ, দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে “তিপ্রাসা চুক্তি” নিয়ে আলোচনায় এক নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দলের বেশিরভাগ প্রবীণ নেতাকে এই আলোচনার বাইরে রাখা হয়েছে। এতে অনেকেই মনে করছেন, সুপ্রিমো নিজেই একটি বিশেষ গোষ্ঠীর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে একতরফা নীতি অনুসরণ করছেন।

দলের একাধিক নেতা প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলছেন, যদি বিজেপির বিরুদ্ধে এতটাই ক্ষোভ থাকে, তাহলে কেন তিপ্রা মথা এখনো বিজেপির সঙ্গে সরকারে রয়েছে? কেন দলের সুপ্রিমো সমস্ত পদ থেকে পদত্যাগ করে আন্দোলনের পথ বেছে নিচ্ছেন না? এই বিষয়ে দলের এক বিধায়ক স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “বিজেপির বিরুদ্ধে যদি সত্যিই এত ক্ষোভ থাকে, তাহলে বিজেপির সঙ্গে সরকারে থাকার কোনো অর্থ নেই। সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে আন্দোলনে নেমে পড়ুন।”

বর্তমান পরিস্থিতিতে তিপ্রা মথা একটি গভীর রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। প্রবীণ ও অভিজ্ঞ নেতাদের উপেক্ষা করে যুব সংগঠনের উপর নির্ভর করে রাজনীতির চাল চেলে যাচ্ছেন সুপ্রিমো, এমন অভিযোগ দলের ভেতরেই উঠেছে। একদিকে বিজেপির সঙ্গে সরকারে থাকা, অন্যদিকে বিজেপির বিরোধিতা করা—এই দ্বৈত ভূমিকা আদৌ দলের জন্য কতটা লাভজনক হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তিপ্রা মথার এই ভাঙন ভবিষ্যতে রাজ্যের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। দল কি আদৌ ঐক্যবদ্ধ থাকবে, নাকি আরও বড় ভাঙনের দিকে এগোবে—সেটাই এখন দেখার বিষয়।About Us