বন্যা ত্রাণ তহবিলের অনুদান ৩৪.৯৮ কোটি টাকা ছুঁয়েছে : মুখ্যমন্ত্রী
বন্যা ত্রাণ তহবিলে শীঘ্রই বরাদ্দ দেবে কেন্দ্রীয় সরকার: বিধানসভার অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে জানাল মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির সময় মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে (সিএমআরএফ) ৩৪.৯৮ কোটি টাকা দান করা হয়েছে। শীঘ্রই কেন্দ্রীয় সরকারের ত্রাণ তহবিলের বরাদ্দ দেওয়া হবে।
শুক্রবার ত্রিপুরা বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানান মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। বন্যা-দুর্গত মানুষকে ত্রাণ বিতরণে ত্রিপুরা সরকারের পক্ষ থেকে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে ডাঃ সাহা বলেন, গত ১৯ থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ত্রিপুরায় ব্যাপক বন্যা, ভূমিধস এবং প্রচুর পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং অনেক আহত হয়েছেন। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের ১২টি নদীর মধ্যে জুরি নদী ছাড়া বাকি সব নদীই বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ৬টি নদী সমস্ত মাত্রা অতিক্রম করেছে। বন্যার কারণে রাজ্যের ৮টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দক্ষিণ ত্রিপুরা, গোমতী ও সিপাহিজলা জেলা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা জনিত কারণে প্রায় ১৭ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রায় ৮৮৯টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছিল এবং প্রায় ২ লাখ মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রায় ৩৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৫৮,৭৮০টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৩,২৫২ কোটি টাকা। ৩,০৮৩ কোটি টাকা পরিমাণের জল সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। গ্রামোন্নয়নে ৩,০০৯ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সড়ক ও সেতুতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১,৯০০ কোটি টাকা। মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ ১,৫৪৩ কোটি টাকা।
তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা জানান, বন্যার সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলি একযোগে নেমে কাজ করেছে। যার মধ্যে ছিল এসডিআরএফ এর ৩২টি টিম, এনডিআরএফ এর ১১টি টিম, আসাম রাইফেলস, ফায়ার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স, আপদা মিত্র এবং অন্যান্য সহযোগী টিম। বন্যার সময়ে দুর্গত মানুষের জন্য খাবার ও পানীয় জল বিতরণ করা হয়েছে। ওই পরিস্থিতিতে সবাই এগিয়ে আসেন। ৩টি হেলিকপ্টারে খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী এয়ারড্রপ করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং সর্বদলীয় বৈঠকও ডেকেছেন। পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে এবং অন্যান্য মন্ত্রীদের সাথে গোটা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন বলে বিধানসভাকে অবগত করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, গোটা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করে তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা তহবিল (এনডিআরএফ) থেকে বরাদ্দ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠির ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় প্রতিনিধি দল গত ২৮ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন করেন। পরে ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪-এ ক্ষয়ক্ষতি জনিত ৭,০৮১ কোটি টাকার অতিরিক্ত ত্রাণ প্যাকেজের জন্য একটি স্মারকলিপি পাঠানো হয়, যা কেন্দ্রীয় সরকার বর্তমানে পর্যালোচনা করছে। মুখ্যমন্ত্রী এই আর্থিক প্যাকেজ অনুমোদনের বিষয়ে আশা ব্যক্ত করেন। এসডিআরএফ থেকে ৪০ কোটি টাকা এবং এনডিআরএফ থেকে ২৫ কোটি টাকা বন্যা ত্রাণে রাজ্যের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়াও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাজ্য সরকার দপ্তর ভিত্তিক ৫৬৪ কোটি টাকার একটি তাৎক্ষণিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
ডাঃ সাহা জানান, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন রাজ্য, সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে ৩৪.৯৮ কোটি টাকার অনুদান পাওয়া গেছে। এই তহবিল থেকে ত্রাণ কাজের জন্য রাজস্ব দপ্তরকে ১২ কোটি টাকা এবং পরে আরও ১৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের বন্যার ত্রাণ তহবিল বরাদ্দ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রায় ৫৩,৮৩০টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে বাড়ি মেরামতের জন্য ৫৮ কোটি টাকার অধিক দেওয়া হয়েছে এবং বই, জামাকাপড় ও বাসনপত্রের জন্য ৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।