বন্যা

বন্যা ত্রাণ তহবিলের অনুদান ৩৪.৯৮ কোটি টাকা ছুঁয়েছে : মুখ্যমন্ত্রী

 বন্যা ত্রাণ তহবিলে শীঘ্রই বরাদ্দ দেবে কেন্দ্রীয় সরকার: বিধানসভার অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে জানাল মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির সময় মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে (সিএমআরএফ) ৩৪.৯৮ কোটি টাকা দান করা হয়েছে। শীঘ্রই কেন্দ্রীয় সরকারের ত্রাণ তহবিলের বরাদ্দ দেওয়া হবে।

শুক্রবার ত্রিপুরা বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানান মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। বন্যা-দুর্গত মানুষকে ত্রাণ বিতরণে ত্রিপুরা সরকারের পক্ষ থেকে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে ডাঃ সাহা বলেন, গত ১৯ থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ত্রিপুরায় ব্যাপক বন্যা, ভূমিধস এবং প্রচুর পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং অনেক আহত হয়েছেন। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের ১২টি নদীর মধ্যে জুরি নদী ছাড়া বাকি সব নদীই বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ৬টি নদী সমস্ত মাত্রা অতিক্রম করেছে। বন্যার কারণে রাজ্যের ৮টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দক্ষিণ ত্রিপুরা, গোমতী ও সিপাহিজলা জেলা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা জনিত কারণে প্রায় ১৭ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রায় ৮৮৯টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছিল এবং প্রায় ২ লাখ মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রায় ৩৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৫৮,৭৮০টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৩,২৫২ কোটি টাকা। ৩,০৮৩ কোটি টাকা পরিমাণের জল সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। গ্রামোন্নয়নে ৩,০০৯ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সড়ক ও সেতুতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১,৯০০ কোটি টাকা। মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ ১,৫৪৩ কোটি টাকা।

তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা জানান, বন্যার সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলি একযোগে নেমে কাজ করেছে। যার মধ্যে ছিল এসডিআরএফ এর ৩২টি টিম, এনডিআরএফ এর ১১টি টিম, আসাম রাইফেলস, ফায়ার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স, আপদা মিত্র এবং অন্যান্য সহযোগী টিম। বন্যার সময়ে দুর্গত মানুষের জন্য খাবার ও পানীয় জল বিতরণ করা হয়েছে। ওই পরিস্থিতিতে সবাই এগিয়ে আসেন। ৩টি হেলিকপ্টারে খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী এয়ারড্রপ করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং সর্বদলীয় বৈঠকও ডেকেছেন। পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে এবং অন্যান্য মন্ত্রীদের সাথে গোটা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন বলে বিধানসভাকে অবগত করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, গোটা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করে তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা তহবিল (এনডিআরএফ) থেকে বরাদ্দ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠির ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় প্রতিনিধি দল গত ২৮ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন করেন। পরে ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪-এ ক্ষয়ক্ষতি জনিত ৭,০৮১ কোটি টাকার অতিরিক্ত ত্রাণ প্যাকেজের জন্য একটি স্মারকলিপি পাঠানো হয়, যা কেন্দ্রীয় সরকার বর্তমানে পর্যালোচনা করছে। মুখ্যমন্ত্রী এই আর্থিক প্যাকেজ অনুমোদনের বিষয়ে আশা ব্যক্ত করেন। এসডিআরএফ থেকে ৪০ কোটি টাকা এবং এনডিআরএফ থেকে ২৫ কোটি টাকা বন্যা ত্রাণে রাজ্যের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়াও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাজ্য সরকার দপ্তর ভিত্তিক ৫৬৪ কোটি টাকার একটি তাৎক্ষণিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।

ডাঃ সাহা জানান, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন রাজ্য, সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে ৩৪.৯৮ কোটি টাকার অনুদান পাওয়া গেছে। এই তহবিল থেকে ত্রাণ কাজের জন্য রাজস্ব দপ্তরকে ১২ কোটি টাকা এবং পরে আরও ১৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের বন্যার ত্রাণ তহবিল বরাদ্দ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রায় ৫৩,৮৩০টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে বাড়ি মেরামতের জন্য ৫৮ কোটি টাকার অধিক দেওয়া হয়েছে এবং বই, জামাকাপড় ও বাসনপত্রের জন্য ৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

বিধানসভা

বিধানসভায় সহকারী অধ্যাপক সহ বিভিন্ন পদে নিয়োগের ঘোষণা

বিধানসভার অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান; বিভিন্ন কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীদের গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। এজন্য রাজ্যের কালেজগুলিতে অধ্যাপকের স্বল্পতা নিরসনের জন্য রাজ্য সরকার ২০০ জন সহকারী অধ্যাপক, ১২ জন পার্টটাইম শিক্ষক নিয়োগ সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এছাড়া আরও ২০১ জন সহকারী অধ্যাপক নিয়োগের জন্য ত্রিপুরা পাবলিক সার্ভিস কমিশনে (TPSC) প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

শুক্রবার ত্রিপুরা বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে অবহিত করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীও প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। তিনি বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যে বর্তমানে ৩১টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজ রয়েছে। তিনি জানান, এই সময়ে আমাদের ৩১টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে মোট ৭২,০০৯ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। আমাদের কাছে ৭৮৭ জন পিজিটি, এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, এসোসিয়েট প্রফেসর ও প্রফেসর রয়েছেন। সাধারণ ডিগ্রি কলেজগুলিতে ঘাটতি মেটাতে আমরা ২০১ জন এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর নিয়োগের জন্য টিপিএসসি (ত্রিপুরা পাবলিক সার্ভিস কমিশন) -এর কাছে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এছাড়াও রাজ্য সরকার সাধারণ ডিগ্রি কলেজগুলির জন্য আরও ২০০ জন সহকারী অধ্যাপক (এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর) নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য অর্থ দপ্তর ইতিমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে। এই সমস্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া মন্ত্রিসভার যাবতীয় নিয়ম অনুসরণ করে করা হবে এবং খুব শীঘ্রই প্রক্রিয়া শুরু হবে। ক্লাশ ব্যাহত না করে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ধারাবাহিকতা সুনিশ্চিত করার জন্য আমরা ৭১০ জন গেস্ট টিচার নিয়োগ করেছি। মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা আরো বলেন, ইউজিসি ২০২৩ নির্দেশিকা অনুসারে বর্তমানে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকগণ তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। রাজ্যের ৬টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে মাস্টার্স ডিগ্রি কোর্স শুরু হয়েছে। এজন্য ১২ জন পার্টটাইম শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে।

রাজ্যপাল

রাজ্যপাল তাঁর ভাষণের মধ্য দিয়ে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরেন!

রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নাল্লুর ভাষণের মধ্য দিয়ে শুরু হলো ত্রিপুরা বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন। অধিবেশনের প্রথম দিনের কর্মসূচি গুলি হলো প্রশ্নত্তোর পর্ব, রাজ্যপালের ভাষণের উপর ধন্যবাদ সূচক প্রস্তাব, অধক্ষ্য ,উপাধক্ষ, মুখ্যসচেতক সহ মন্ত্রী, বিধায়কদের বেতন ও পেনশন সংক্রান্ত বিল পেশ প্রমুখ পেশ। তাছাড়া প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করা হয়।উল্লেখ্য এই প্রথম প্রশ্নত্তোর পর্ব ডিজিটাল মাধ্যমে করা হয়।অধিবেশন চলবে ১৫জানুয়ারী পর্যন্ত। রাজ্যপাল তার ভাষনে বলেন,রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।

রাজ্যপাল বলেছেন, সাবকা সাবকা বিকাশ নীতি অনুসরণ করে রাজ্য সরকার নাগরিকদের নির্বিশেষে সকলের জন্য শিক্ষার স্বাস্থ্য ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধার মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য অবিরাম কাজ করে চলেছে। ত্রিপুরা বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনে তিনি বলেন সমাজের অন্তিম ব্যক্তির উন্নয়ন সাধন হচ্ছে ত্রিপুরার উন্নয়নের রুপরেখার মূল মন্ত্র। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গুলো সম্পর্কে তে গিয়ে তিনি জানান সম্প্রতি ত্রিপুরা সরকার ও ভারত সরকার ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা এবং অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স এর সাথে যে সমঝোতা পত্র স্বাক্ষর করেছে তাতে রাজ্য এখন শান্তিপূর্ণ রয়েছে। পিসি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন ধানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য ২০২৪ সালে ৯২হাজার ৫৮৮ হেক্টর জমিকে মুখ্যমন্ত্রী ইন্টিগ্রেটেড ক্রপ ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় নিয়ে আসা হয়। ছাড়া ২০২৪ -২৫ অর্থবছরে অতিরিক্ত ৬হাজার ৫০০ হেক্টর জমিকে জৈব চাষের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অন্যদিকে আগস্ট মাসের বন্যায় গ্রস্ত ১লক্ষ ৪৮হাজার ৩৭৯ কৃষককে ১০০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মহিলাদের সাক্ষরতা এবং মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় উৎসাহিত করতে মুখ্যমন্ত্রী কন্যা আত্মনির্ভর যোজনা নামে একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নয়নে লেম্বু ছড়ায় কেন্দ্রীয় সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের জন্য ১০০ দশমিক ৮৩ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। রাজ্যের যুবাদের কর্মসংস্থানের দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য ভালো কোম্পানিগুলিতে ইন্টার্নশীপের গুজব করে দেওয়ার জন্য ২০২৪ সালে চালু করা হয় প্রধানমন্ত্রী ইন্টার্নশিপ প্রকল্প। রাজ্যে স্বাস্থ্য শিক্ষার উন্নয়নে ২০২৪-২৫ স্ত্রীরোগ বিভাগে তিনটি পিজি আসন সৃষ্টি করা হয়েছে আরো তিনটি বিভাগের পিজি আসন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজ এবং ডক্টর বি আর আম্বেদকর টিচিং হাসপাতালে ২৩টি কেবিন, ২০টি আইসিইউ বেড, এবং ৩০ সজ্জা বিশিষ্ট ডায়ালিসিস চালু করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ্য শৈশব সুস্থ কৈশোর অভিযানের আওতায় ১১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৮৩ জন শিশু ও বয়সন্ধিকালীন কিশোর ও কিশোর কিশোরীরা উপকৃত হয়েছে। তাছাড়া সড়ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক গুলির জন্য সরকার ২হাজার ৮০০কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। প্রধানমন্ত্রী জল জীবন মিশনের অধীনে হর ঘর নল সে জল প্রকল্প চালু করা হয়েছে বলে তিনি জানান। তাছাড়া ত্রিপুরাকে লজিস্টিক হাব হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ চলছে বলে তিনি জানান।

ত্রিপুরা

ত্রিপুরা রাজ্যের সাত জায়গায় আচমকা হানা দিলো E.D

ত্রিপুরা রাজ্যের নেশা কারবারিদের সাথে সখ্যতা, মানব পাচারকারী এবং আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির অভিযোগে আগরতলা, উদয়পুর সহ  সাত জায়গায় E.D ছাপা মেরেছে। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মী অমল বৈদ্যের উদয়পুর পুলিশ লাইনস্থিত বাড়িতেও ইডি’র আধিকারিকরা হানা দেয়।

শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে অভিযান শুরু হয়। কলমচৌড়া থানার এক নেশা কারবারির বাড়িতে হানা দেয় ইডি। আগরতলার পাঁচটি জায়গায় এক যোগে অভিযান চালায় ইডির আধিকারিকরা৷ জানা গেছে; অপু রঞ্জন দাস, দেবব্রত দে, বিশু ত্রিপুরা, কামিনী দেববর্মা, তাপস দেবনাথ, এবং লিটন সাহার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। আড়াইশো সিআরপিএফ জওয়ানদের নিয়ে অভিযান চালায় ইডি। মাদক পাচারে জড়িত থাকার সন্দেহে এই অভিযান করে ইডি। সূত্রের খবর, তল্লাশির সময় ইডি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করেছে। এটি অনুমান করা হচ্ছে যে রাজ্য জুড়ে অন্যান্য ব্যক্তি এবং অবস্থানগুলিতে অভিযান করবে ইডির আধিকারিকরা। যদিও এখনও কাউকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি, সন্দেহের মধ্যে বিশিষ্ট এক রাজনৈতিক নেতাও জড়িত থাকার কথা জানা গেছে। গত রাতে, ইডি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের একটি শাখা থেকে আধিকারিকদের তলব করে, আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গভীর রাতে শাখা খুলতে বাধ্য করে। ইডি প্রধানের নেতৃত্বে গোটা অভিযান চলে আগরতলার এমবিবি ক্লাব এলাকা, নন্দননগর, নতুননগর, বক্সনগর সহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান হয়। প্রায় ২৫০ জন সি.আর.পি.এফ জওয়ানকে নিয়ে ব্যবসায়ীদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।

সীমান্ত

সীমান্ত নিরাপত্তায় পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক!

সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য পুলিশের মহা নির্দেশক অমিতাভ রঞ্জনের পৌরোহিত্যে বৃহস্পতিবার পুলিশ সদরদপ্তরে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মহানির্দেশক ক্রাইম অনুরাগ রাজ্যের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অপরাধ এবং পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে রাজ্যের আট জেলার পুলিশ সুপারগন নিজ নিজ জেলার সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। বৈঠকে ভারত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তের উপর বিশেষ নজরদারি করার জন্য গুরুত্ব আরোপ করা হয়। বেআইনি অনুপ্রবেশ এবং ক্রস বর্ডার ক্রাইম প্রতিরোধে পুলিশ কে সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেয়া হয়।

দুটি দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দফায় আট জেলার পুলিশ সুপারদের নিয়ে বৈঠক করেন পুলিশের মহানির্দেশক। দ্বিতীয় দফায় টিএসআর এর কমান্ডেন্ট এবং ডেপুটি কমান্ডেন্টদের নিয়ে বৈঠকে বসেন তিনি। আট জেলার পুলিশ সুপার দের কাছ থেকে জেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে খোঁজখবর করেন পুলিশের মহানির্দেশক। কোথায় দুর্বলতা রয়েছে তা খতিয়ে দেখে ব্যাবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার নির্দেশেই আট জেলার পুলিশ সুপার এবং টিএসআর এর কমান্ডেন্টদের নিয়ে বৈঠকে বসেন পুলিশের মহানির্দেশক। রাজ্যের সীমান্ত এলাকাগুলোর নিরাপত্তা এবং নজরদারি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তার কারণ হলো সীমান্ত এলাকাগুলো অতি স্পর্শকাতর জোন হিসেবে পরিচিত।রাজ্যে বৈরীরা মাথাচাড়া দিচ্ছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর। পাশাপাশি পাকিস্তানের আইএসআই বাহিনী এবং বাংলাদেশের মদত রয়েছে। এই অবস্থায় সীমান্ত এলাকাগুলোতে বিএসএফের নজরদারির পাশাপাশি পুলিশ ও টিএসআর বাহিনীকে সক্রিয় করতে চাইছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। হাসিনার বিদায়ের পর সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশজুড়ে মৌলবাদের দাপট ভয়াবহ আকার নিয়েছে। আইএসআই-এর মদতে সেখানে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বহু জঙ্গি সংগঠন। তারই অন্যতম আনসারুল্লা বাংলা টিম। এই টিমের জঙ্গিরা রাজ্যকে করিডোর করে দেশের অন্য রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে স্বরাষ্ট্র দপ্তর। সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের মাটিতে জেহাদের বিষ ছড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে আল কায়দার ছায়া সংগঠন। যদিও তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই জেহাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে ‘অপারেশন প্রঘাত’ শুরু করেছে পুলিশ। এই অভিযানে এখনও পর্যন্ত আসামে ১১ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে আগে থেকেই সতর্ক রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তর। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, গত মাসে বাংলা, কেরল ও অসমে অভিযান চালিয়ে আনসারুল্লা বাংলা টিমের ৮ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে অসম পুলিশের এসটিএফ। বড়দিনের আগে পাকড়াও করা হয় এই জঙ্গি সংগঠনের ২ সদস্যকে, যাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রচুর পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র, বিস্ফোরক ও বিস্ফোরক তৈরির সামগ্রী। অসমের ধুবড়ির বান্ধবপাড়া থেকে শাহিনুর ইসলাম নামে আরও এক জঙ্গি।প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, মুম্বই হামলার ধাঁচে দেশের নানা প্রান্তে নাশকতার ছক ছিল এই জঙ্গিদের। এমনকী বাংলায় গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা করেছিল আনসারুল্লা বাংলা টিম। চলছিল তার প্রশিক্ষণ। যদিও ভয়াবহ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই আনসারুল্লা শিকড় উপড়ে ফেলতে কোমর বেঁধে নামলেন তদন্তকারীরা।

বাংলাদেশি জঙ্গিদের টার্গেট এখন উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো! একাধিক জায়গায় সক্রিয় হয়েছে ৪০টিরও বেশি স্লিপার সেল। পুরোদমে কাজ করছে তাদের নেটওয়ার্ক। আসরে ধুলিয়ান ও জলঙ্গী মডিউলও। সীমান্ত পেরিয়ে নাশকতার বিজ বপন করছে বাংলাদেশের জঙ্গিনেতারা। ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরির কাজ চলছে এই সমস্ত স্লিপার সেলে। কাঁচামাল আসছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। এমনকী নিত্য নতুন বিস্ফোরক তৈরির জন্য রীতিমতো গবেষণাও চলছে।কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সব রাজ্যগুলোকে সতর্ক করেছে৷ এ অবস্থায় রাজ্য কতটা প্রস্তুত, জেলাগুলোর নিরাপত্তা কতটা আটেসাটো তা নিয়ে মুলত বৈঠক। রুটিন বৈঠক হলেও পুলিশের সাফল্য নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে খবর। আগামী দিনের পরিকল্পনা স্থির করা হয়েছে।