কুম্ভ মেলা ২০২৫ এর জন্য প্রস্তুত প্রয়াগরাজ
কুম্ভ মেলার উৎপত্তি হয়েছিল পৌরাণিক মুণি ভরদ্বাজের সময়ে । পুরাকালে প্রতি বছর মকর সংক্রান্তিতে আসমুদ্র হিমাচল-এর মুণিঋষিরা সমবেত হতেন ভরদ্বাজের আশ্রমে। ত্রিবেনী-সংগম করে সম্পূর্ণ মাঘ মাসে কল্পবাস করতেন অত্যন্ত নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে। প্রতিদিন তাঁরা স্নান অক্ষয়বট দর্শন, পুজার্চনা, ধ্যান-এ নিমগ্ন থাকতেন। আবার কখনও সকলে জ্ঞানভক্তি বৈরাগ্য আর ঈশ্বরতত্ব নিয়ে আলোচনা করতেন ঋষির আশ্রমে। এইভাবে তাদের পরমানন্দে একমাস কেটে যেতো- ভগবত গুণকীর্তনে।
ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে কুম্ভ মেলার অপরিসীম তাৎপর্য রয়েছে । কুম্ভ হিন্দুদের জন্য চারটি পবিত্র স্থানে অনুষ্ঠিত হয় – প্রয়াগরাজ, হরিদ্বার, উজ্জাইন এবং নাসিক। কুম্ভ শুধুমাত্র ধর্মীয় ঘটনা নয়, জ্যোতির্বিদ্যার ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত বলেও বিশ্বাস করা হয়। ২০২৫ সালে, মহাকুম্ভ ১৩ জানুয়ারী শুরু হবে এবং ২৬ ফেব্রুয়ারী শেষ হবে।
কুম্ভমেলা চার প্রকার।কুম্ভ, অর্ধকুম্ভ, পূর্ণকুম্ভ এবং মহাকুম্ভ। সময়, ধর্মীয় তাৎপর্য এবং জ্যোতির্বিদ্যাগত কারণে এগুলি ভিন্ন। লোকেরা প্রায়শই এই পদগুলিকে বিভ্রান্তিকর বলে মনে করে। আসুন তাদের মধ্যে পার্থক্য এবং গ্রহের গতিবিধির সাথে তাদের সংযোগ বিস্তারিতভাবে অন্বেষণ করি।
প্রতি ১২বছর পরপর কুম্ভ মেলা হয় এবং চারটি পবিত্র স্থানে পর্যায়ক্রমে উদযাপিত হয়। এটি ঘটে যখন সূর্য, চাঁদ এবং বৃহস্পতি নির্দিষ্ট জ্যোতির্বিদ্যাগত অবস্থানে থাকে। এই সময়কালে গঙ্গা,যমুনা,গোদাবরী এবং সঙ্গমের জল বিশেষভাবে পবিত্র বলে মনে করা হয়। অর্ধকুম্ভ মেলা প্রতি ৬ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়। এটি শুধুমাত্র ভারতের দুটি স্থানে সঞ্চালিত হয়- হরিদ্বার এবং প্রয়াগরাজ। “অর্ধ” শব্দের অর্থ অর্ধেক। অর্ধকুম্ভ দুটি কুম্ভ ইভেন্টের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়, তাই এটিকে কুম্ভ মেলা চক্রের মধ্যবর্তী পর্ব হিসাবে দেখা হয়।
পূর্ণকুম্ভ প্রতি ১২ বছরে একবার হয়। শুধুমাত্র প্রয়াগরাজেই অর্ধকুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তবে পূর্ণকুম্ভকে মহাকুম্ভও বলা হয়। ২০২৫ সালে, ১২ বছর পর, প্রয়াগরাজে পূর্ণকুম্ভ অনুষ্ঠিত হবে। এটি ধর্মীয় উদযাপনের সর্বোচ্চ স্তর হিসাবে বিবেচিত হয়।
মহাকুম্ভ মেলা প্রতি ১৪৪ বছরে একবার হয়। এটি শুধুমাত্র প্রয়াগরাজে আয়োজন করা হয়। মহাকুম্ভকে একটি অত্যন্ত বিরল এবং তাৎপর্যপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসাবে বিবেচনা করা হয় যা ১২টি পূর্ণকুম্ভের পরে ঘটে। মহাকুম্ভকে লক্ষ লক্ষ ভক্তের একটি বিশাল সমাবেশ এবং একটি ঐতিহাসিক ধর্মীয় উদযাপন হিসাবে দেখা হয়।
মহাকুম্ভ মেলা কোথায় হবে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় গ্রহের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে, বিশেষ করে গুরু বৃহস্পতি এবং সূর্য। এখান কীভাবে অবস্থান নির্ধারণ করা হয় বলছি।
হরিদ্বার: যখন গুরু বৃহস্পতি কুম্ভ রাশিতে থাকে এবং সূর্য মেষ রাশিতে থাকে, তখন হরিদ্বারে মহাকুম্ভ অনুষ্ঠিত হয়।
উজ্জয়িনী: সূর্য যখন মেষ রাশিতে থাকে এবং বৃহস্পতি সিংহ রাশিতে থাকে তখন উজ্জয়িনে কুম্ভ মেলা হয়।
নাসিক: যখন গুরু এবং সূর্য উভয়ই সিংহ রাশিতে অবস্থান করেন, তখন নাসিকে মহাকুম্ভ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রয়াগরাজ: বৃহস্পতি যখন বৃষ রাশিতে থাকে এবং গ্রহের রাজা শনি মকর রাশিতে থাকে তখন প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ অনুষ্ঠিত হয়।
মহাকুম্ভ বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় মেলা। টানা ৪৫ দিন ধরে চলে এই মেলা। এই মহাকুম্ভ হিন্দুদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লাখ লাখ পুণ্যার্থীরা অংশগ্রহন করবেন হিন্দুদের এই বিশেষ উৎসবে। এই সময়ে মোট ছয়টি রাজকীয় স্নান হবে। ইতিমধ্যে প্রয়াগরাজের এই মহা কুম্ভ মেলায় অংশগ্রহণ করতে সাধু সন্তরা, দেশ বিদেশের ভক্ত, মানুষ পৌঁছেছেন। মহাকুম্ভ মেলাকে কেন্দ্র করে প্রয়াগরাজে বিপূল ভক্ত সমাগম হতে চলেছে। প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ উপলক্ষে চালু করা হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি বলে খবর। জোরকদমে চলছে প্রস্তুতি পর্ব। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছেন খোদ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।