বামেদের সমালোচনায় বীরজিত
বামেদের সাথে কংগ্রেসের মধুচন্দ্রিমার অবসান এবার কি অবশ্যম্ভাবী? রাজ্যের প্রাক্তন মূখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এবং বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী সহ সি.পি.আই.এম দলের তীব্র সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস বিধায়ক বিরজিত সিনহা। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ও বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী, দুজনেই সম্প্রতি কৈলাসহরে দলের সম্মেলনে প্রকাশ্যে বীরজিতের ভুমিকা নিয়ে সরব হয়েছিলেন৷ তাদের বক্তব্য ছিল সিপিএমের ভোটে জয়ী হয়েও বীরজিত সিপিএমের সমালোচনায় মেতে উঠেছে।
কংগ্রেসের সাথে আসন রফার কারনেই সিপিএম সিটিং বিধায়ককে টিকিট দেয় নি৷ গত ১৭ ডিসেম্বর কৈলাসহর মহকুমা কমিটির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলের প্রকাশ্য জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী কংগ্রেস দল এবং বিধায়ক বিরজিত সিনহাকে নিয়ে আক্রমনাত্মক বক্তব্য রেখেছিলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এবার সাংবাদিক সম্মেলন করে বিরজিত সিনহা এর পাল্টা জবাব দিলেন। বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেছিলেন , ২০২৩ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস এবং সি.পি.আই.এম দলের মধ্যে জোট না হলে এবং সি.পি.আই.এম দলের কর্মী সমর্থকরা ভোট না দিলে বিরজিত জিততে পারতেন না এবং বিধায়কও হতে পারতেন না। এর উত্তরে সাংবাদিক সম্মেলনে বিধায়ক বিরজিত সিনহা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলেন যে, জোট না হলেও জিততাম। কৈলাসহর কেন্দ্র থেকে ছয়বার ভোটে জয়ী হয়েছেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন পাঁচবারই সি.পি.আই.এম দলের প্রার্থীকে হারিয়ে ভোটে জিতেছেন। এই পাঁচবারের মধ্যে একবার এক সি.পি.আই.এম দলের মন্ত্রীকে এবং সি.পি.আই.এম দলের হিন্দু নেতাকে এবং দুইবার সি.পি.আই.এমের সংখ্যালঘু নেতাকে ভোটে হারিয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। ২০২৩ সালের ভোটে হারের কোনো সুযোগ ছিলো না। তাছাড়া রাজ্যে ২০১৮সালে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠার পর ২০১৯সালের লোকসভা ভোটে ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্যে একমাত্র কৈলাসহর আসনেই কংগ্রেস প্রার্থী প্রায় দুই হাজার ভোটে লিড নিয়েছিলো। ২০১৯ সালে কংগ্রেস সি.পি.আই.এম জোট ছিলো না। ২০২৩ সালে জোট হয়েছে। কংগ্রেসের ভোট বেড়েছে। তবে জোট না হলেও জিততেন বলে জানান তিনি । জিতেনবাবু কৈলাসহরে যেভাবে বীরজিতের বিরুদ্ধে কটুক্তি করেছেন তার তীব্র নিন্দা এবং ধিক্কার জানান। বিরজিত সিনহা জানান, জিতেনবাবু সতেরো ডিসেম্বর কৈলাসহরের দলীয় সভায় প্রাক্তন মূখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে মঞ্চে রেখে দীর্ঘ সময় বক্তব্য রাখার কারনে মানিক সরকার পরবর্তী সময়ে বক্তব্য রাখতে রাজি ছিলেন না। কারন, বেশির ভাগ দলীয় কর্মী সমর্থকরাই চলে গিয়েছিল।ফাঁকা মাঠে মানিকবাবু বক্তব্য রাখতে চান নি বলে জানান বীরজিত সিনহা। জিতেনবাবুর অহংকার হয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি । উনি একজন জনজাতি নেতা। ২০২৩সালের বিধানসভা ভোটে জনজাতি সংরক্ষিত আসনে না দাঁড়িয়ে সাব্রুমে সাধারণ আসনে দাঁড়িয়ে দুইশো থেকে আড়াইশো ভোটে জিতেছেন। তিনি আরও বলেন, প্রদ্যোত কিশোর ২০২৩ সালের বিধানসভা ভোটে সাব্রুম আসনে দলীয় প্রার্থী দিতো তাহলে জিতেনবাবু কত হাজার ভোটে হারতেন তা রাজ্যের সবাই জানে। সুতরাং বলতে হয় বলেছেন। সম্প্রতি আগরতলায় সাংবাদিক সম্মেলন করে কংগ্রেসকে বিশ্বাসঘাতক বলায় পরবর্তী সময়ে সি.পি.আই.এম দলকে পরগাছা অর্থাৎ স্বর্নলতা বলেছিলেন বীরজিত। সি.পি.আই.এম দল দেশের কোথাও নেই। শুধু কেরলে আছে তাও লোকসভায় নেই, সামনে ওরা জিরো হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন বীরজিত। ২০২৩সালে রাজ্যের বিধানসভা ভোটে সি.পি.আই.এম দল ৪৭টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ২৪শতাংশ ভোট পেয়েছিলো। আর, কংগ্রেস দল ১৩টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ৩৯শতাংশ ভোট পেয়েছে। কংগ্রেসই বিজেপি দলের সাথে সমানে সমানে লড়াই করে। অন্যদিকে সারা রাজ্যে বিজেপি চল্লিশ শতাংশ ভোট পেয়েছে। পরবর্তী সময়ে জোট শরিক আই.পি.এফ.টি দলের এক শতাংশ ভোট যোগ করে একচল্লিশ শতাংশ হয়েছে।জিতেনবাবু তার বক্তব্যে উনার নিজের পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়াও বিধায়ক বিরজিত সিনহা বলেন, সুধীর রঞ্জন মজুমদার রাজ্যের প্রাক্তন মূখ্যমন্ত্রী ছিলেন এবং রাজ্যসভার ছয় বছরের সাংসদ ছিলেন। উনার বাড়িতে বাম আমলে মাত্র দুজন পুলিশ দেওয়া হতো। সুধীরবাবুকে কোন সুযোগ সুবিধা দিতে রাজি ছিলো না তৎকালীন সি.পি.আই.এম সরকার। একটি করনিক পর্যন্ত দিতে চায়নি। সেইসময় কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে বিধানসভার স্পীকারকে বার বার বলার পর জানিয়ে দেওয়া হয়েছিলো যে, কিছুই দেওয়া হবে না। আর, এখন প্রাক্তন মূখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বিলাসবহুল গাড়ি চড়েন। দ্বিতল বিশিষ্ট ডুপ্লেক্সে থাকেন। গাড়ির তেল কে দেয়? গাড়ির ড্রাইভারের বেতন কে দেয়? প্রশ্ন তুলেন তিনি।
২০২৪সালের আগস্ট মাসে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কৈলাসহর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত শ্রীনাথপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে কংগ্রেস এবং সি.পি.আই.এম দলের মধ্যে কোনো জোট হয়নি বলেও তিনি জানান। পঞ্চায়েত ভোটের ফল ত্রিশংকু হবার পর পরবর্তী সময়ে কংগ্রেস দল থেকে প্রধান এবং সি.পি.আই.এম দল থেকে উপপ্রধান হয়েছিল। সাম্প্রতিক কালে জিতেন চৌধুরী শ্রীনাথপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় দলীয় সভায় এসে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কংগ্রেস, বিজেপি এবং তিপ্রা মোথাকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন এবং কুৎসা করে গেছেন। অথচ এর কিছুদিন পর জিতেন বাবুর নির্দেশ পেয়ে সি.পি.আই.এম দলের পঞ্চায়েত সদস্যরা কংগ্রেস দলের প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা দেয় এবং বিজেপি দলের সাথে মিলে পঞ্চায়েত গঠন করে। এটা কি ধরনের নীতি হলো? এমনটাই প্রশ্ন বীরজিতের। কৈলাসহর শহরে এসে দলীয় মহকুমা কমিটির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্য জনসভায় যেভাবে কংগ্রেস দলের বিরুদ্ধে সমালোচনা এবং বিষোদগার করেছেন ঠিক সেইভাবে সাহস থাকলে আশারাম বাড়ি, রামচন্দ্রঘাটে কিংবা খোয়াইতে গিয়ে এভাবে প্রকাশ্য জনসভা করে দেখান বলে চেলেঞ্জ ছুড়ে দেন। কিছুদিন পূর্বে ধর্মনগরে তো প্রকাশ্য জনসভা করার সুযোগই পায়নি এবং অনুমতিও আদায় করতে পারে নি। জিতেনবাবু বলছেন সি.পি.আই.এম দলের জন্য কংগ্রেস পঞ্চায়েত ভোটে ভালো ফল করেছে। অথচ, সি.পি.আই.এম দল পঞ্চায়েত ভোটে কৈলাসহরে ৯৯শতাংশ আসনে প্রার্থীই দিতে পারে নি। সি.পি.আই.এম দলের দশজন বিধায়ক তাদের এলাকায় পঞ্চায়েত ভোটে নমিনেশন জমা দিতে পারেনি। কারন উনারা একেবারেই জনভিত্তি হারিয়ে ফেলেছেন। আগামী দিনে জিরো হয়ে যাবে সিপিএম।এমনটাই বলেন তিনি।