৭১ তম অখিল ভারত সমবায় সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে আজ আগরতলার টাউনহলে বিকশিত ভারত নির্মাণে সমবায়ের ভূমিকা শীর্ষক এক আলোচনা চক্র অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা চক্রের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়। উদ্বোধনী ভাষণে অর্থমন্ত্রী শ্রী সিংহ রায় বলেন দেশকে শক্তিশালী করতে হলে গ্রামীণ অর্থনীতিকেই প্রথম শক্তিশালী করতে হবে। এই ক্ষেত্রে সমবায় সমিতিগুলির সবথেকে বড় ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন রাজ্যে বর্তমানে বিভিন্ন পেশা ভিত্তিক ৪ হাজার ২০৫টি সমবায় সমিতি রয়েছে। ২০১৮ সালের আগে রাজ্যের বেশিরভাগ সমবায় সমিতি গুলি মুখ থুবড়ে পড়েছিল। বিজেপি আই পি এফ টি সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে রাজ্যের সমবায় সমিতি এবং ল্যাম্প স গুলিকে পুনর্জীবিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি বলেন গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন এবং বিকাশের জন্য সমবায় ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করায় সবথেকে আগে দরকার। গরীব অংশের মানুষ যাতে জীবিকা অর্জনে সমবায় সমিতি থেকে আর্থিক সুবিধা পায় সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সমবায় গুলিকে সক্রিয় করা হয়েছে। তিনি বলেন বর্তমানে রাজ্যের সমবায় সমিতি গুলি লাভের মুখ দেখছে। অপর দিকে গ্রামীণ এলাকার অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষ সমবায় থেকে নানা সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের সার্বিক উন্নয়নে দেশের কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়নের দিকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। গ্রামীণ অর্থনৈতিক বিকাশে সমবায় সমিতি গুলিকে শক্তিশালী করার উপর শ্রী সিংহ রায় গুরুত্ব আরোপ করেন। আজকের আলোচনা চক্র অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সেক্টরের সমবায় সমিতি গুলিকে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য পুরস্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ জমাতিয়া বলেন রাজ্য সরকার, রাজ্য সমবায় ব্যাংক সমবায় সমিতি এবং গ্রামীণ এলাকার কৃষিজীবীদের নানাভাবে সাহায্য করছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে আগরতলা পুরো নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, পশ্চিম জেলা পরিষদের সভাপতি বলাই গোস্বামী সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
Year: 2024
ত্রিপুরার চাতক পাখিরা সপ্তমের জায়গায় পেলেন ৫%
ত্রিপুরার ইতিহাসে সেই জুট আমলই ছিল কর্মচারীদের জন্য একমাত্র সুষময়। কারণ জুট আমলেই ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রথম এবং শেষ পে কমিশন দিয়েছিল। তারপর থেকেই শুরু হয়ে যায় টানা বাম আমলের। বামপন্থীরা তাদের নীতিগত কারণে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বঞ্চনা অব্যাহত রাখে এবং পে-কমিশন দেয়ার কোন সদিচ্ছা তাদের মধ্যে দেখা যায়নি। উপরন্ত কেন্দ্রীয় বঞ্চনা বলে মিছিলের লাইন লম্বা করে পুরোটা সময় কাটিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের কাছে সেই বাম আমলে কর্মচারীদের পে কমিশন দেয়ার জন্য কখনো টাকাই চাওয়া হয়নি। আর ঠিক তাই ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারীরা পুরোটা বাম আমলেই তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়ে এসেছে।
২০১৮ সালে বিজেপি নামক রাজনৈতিক দলটি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে,পুরো কর্মচারী কূল কে মিথ্যে স্বপ্ন দেখিয়ে তাদের দলে নিয়েছিলয এবং বলেছিল তারা ক্ষমতায় আসলে ত্রিপুরাতে পূর্ণাঙ্গ সপ্তম পে কমিশন চালু করবে। তখন তারা হিসাব করে দেখিয়েছিল ত্রিপুরা রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা প্রকৃতপক্ষে কত টাকা করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ত্রিপুরার কর্মচারী সমাজ ভেবেছিল দীর্ঘ বহু বছর পর হয়তোবা তারা আবার প্রকৃত পে কমিশন পাবেন! হায়রে পোড়া কপাল, সেটা ছিল পুরুই একটা ফাঁদ, আর সেই ফাঁদে পা দিয়ে ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ তাদের পক্ষে মত দান করেন। ফলস্বরূপ ২০১৮ সালে বিজেপি নামক রাজনৈতিক দলটি ক্ষমতার আসনে বসেন।
ক্ষমতায় বসেই তারা তাদের প্রকৃত রূপে এসে যান এবং শুরু হয় কর্মচারীদের ওপর বিভিন্ন লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার প্রেক্ষাপট। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মাননীয় বিপ্লব কুমার দেব কর্মচারীদের উপর প্রয়োগ করেন এক দানবীয় আইন যার নাম “এজমা”, বন্ধ করে দেওয়া হয় কর্মচারীদের পেনশন নামক সুবিধা টুকুও, যা বাম আমলে, তাদের সংগ্রামের ফল বলে টিকিয়ে রেখেছিল। শুরু হয় কর্মচারী বঞ্চনার আরেক নতুন অধ্যায়ের।
২০১৮ সালে নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তে আসামের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরায় এসে বলেছিলেন “যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে, তাহলে প্রথম কেবিনেটেই সিদ্ধান্ত করে ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ সপ্তম পে কমিশন চালু করে দেয়া হবে। আর যদি না দেওয়া হয় তাহলে লোকসভা ইলেকশনে বা তারপরে কখনো বিজেপিকে আর ভোট দেবেন না”। আর এই নিয়ে “ঘুমা ঘুমা কে চালানো” একটি প্রবাদ ও নেট দুনিয়ায় খুব ভাইরাল হয়েছিল, যা আপামোর ত্রিপুরাবাসিরই জানা আছে।
যেখানে বলা হয়েছিল প্রথম কেবিনেটে ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারীদের সপ্তম পে কমিশন দেয়া হবে সেই জায়গায় দেখা গেল উল্টো একচিত্র। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিলেন যে ত্রিপুরা রাজ্যের মন্ত্রী এবং এম এল এ দের মাসিক পারিশ্রমিক বাবদ যে ভাতা তারা পেতেন তা বাড়িয়ে নিজেদের ইচ্ছামত প্রায় তিনগুণ করে দেওয়া হবে এবং কর্মচারীদের সপ্তম পে কমিশনের জায়গায় সামান্য কিছু বেতন বৃদ্ধি করে ক্ষান্ত হয়ে গেলেন। যা ছিল সপ্তম পে কমিশনের তুলনায় সামান্য কিছু ভিক্ষার সমতুল্য। উপরন্ত বছরে যে দুবার D.A দেয়া হতো তা ভুলেই গিয়েছিলেন কর্মচারী সমাজ।
এমতাবস্থায় বিজেপি সরকারের প্রায় শেষ লগ্নে ঘটলো এক নাটকীয় পরিবর্তন আবির্ভূত হল এক নতুন চেহারার “ডক্টর মানিক সাহা”। ত্রিপুরার ইতিহাসে এই প্রথম; পেশায় ডাক্তার, নিছক ভদ্রলোক, শিক্ষিত এবং বুদ্ধিমান মুখ্যমন্ত্রী। যিনি পরবর্তী নির্বাচনের প্রাক মুহুর্তে ঘোষণা করা হয়েছিল ত্রিপুরার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংখ্যার D.A, কিন্তু কমিয়ে আনা যায়নি কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের সঙ্গে পার্থক্য।
ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারী সমাজ তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন কিন্তু তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন তো হয়ইনি বরং মুষ্টিমেয় কিছু লোকের ভাগ্যের পরিবর্তন করে দিয়েছেন। কর্মচারী সমাজ যেখানে ছিলেন, আজও ঠিক সেখানেই আছেন বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে উলটো পিছিয়ে পড়েছে। যেমন ত্রিপুরা রাজ্যের নার্সদের পোশাক এবং পোশাক পরিস্কার রাখার জন্য মাসিক মাত্র ১৫০ টাকা ভাতা দেয়া হতো, যেখানে সপ্তম পে কমিশন অনুযায়ী এই ভাতার পরিমাণ মাসিক ১৮০০ টাকা, যা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ নার্সরা পাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত নার্সদের প্রাপ্য হ্যাজার্ড এলাউন্স, যা তারা বহুদিন ধরে দাবি করে আসছিল তা আজও তারা পায়নি। সপ্তম বেতন কমিশন অনুযায়ী নার্সদের নাম পরিবর্তন করে Nursing Officer করা হয়েছে এবং তাদেরকে গ্রুপ B কর্মচারী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এদিকে ত্রিপুরার ডাবল ইঞ্জিনের সরকার নার্সদের জন্য সপ্তম বেতন কমিশন থেকে শুধু নাম টুকু এনে ওদেরকে Nursing Officer বানিয়ে দিয়েছে। আর এতেই বর্তমানে নার্সদের নেতা হিসেবে পরিচয় দেওয়া কিছু নার্স, তাদের নবনির্মিত সংগঠনের সাফল্য হিসেবে প্রচার করছেন। অথচ ত্রিপুরা রাজ্যে প্রায় সব সরকারি পদেরই পদোন্নতি হয়েছে, একমাত্র নার্সদেরই কোন পদোন্নতি হয়নি এবং এ নিয়ে ওইসব স্বার্থান্বেষী সংগঠনগুলির কোন বক্তব্যও নেই, হাসপাতাল গুলিতে রোগী এবং নার্স এর অনুপাত নিয়েও এদের কোন হেলদোল নেই, ফলস্বরূপ সাধারণ রোগীরা তাদের পরিষেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত থাকছেন এবং সরকারি হাসপাতাল গুলিতে পরিষেবা দিন দিন তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। স্বাভাবিক কারণেই নার্সদের প্রতি সাধারণ মানুষের ঘৃণা ও ক্ষোভ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ত্রিপুরা রাজ্যে এই প্রথম একজন ডাক্তার মুখ্যমন্ত্রী পেয়ে নার্স সমাজ ভেবেছিল যে তাদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার হয়তো এবার সমাপ্তি হবে। সেই গুড়ে বালি ঢেলে দিয়ে, ডাক্তার পরিচালিত ত্রিপুরার ডাবল ইঞ্জিনের সরকার, নার্সদের একমাত্র ভাতা ১৫০ টাকা, তাও বন্ধ করে দিয়েছেন।
এদিকে ১৬ তম অর্থ কমিশন এর সময় চলে এসেছে, কিন্তু ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারীদের কিছু কিছু পদের গ্রেট পে এর পার্থক্য আজও বহাল রয়ে গেছে, কিছু কিছু পথ গ্রুপ B কর্মচারী হওয়ার কথা যা আজও গ্রুপ C ই রয়ে গেছে। কর্মচারী সমাজে কান পাতলেই শোনা যায় তাদের বিভিন্ন বঞ্চনার কথা। সরকার সদিচ্ছা নিয়ে যদি এই বঞ্চনা গুলি দূর না করে এবং সপ্তম বেতন কমিশন না দেন, তবে ১৬ তম অর্থ কমিশন ও তাদের টাকা কমিয়ে দেবেন এবং কর্মচারী সমাজের সপ্তম বেতন কমিশনার স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে।
উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের স্পেশাল প্যাকেজ চালু রয়েছে। তা সত্ত্বেও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যগুলির সরকারি কর্মচারীদের তুলনায়, ডাবল ইঞ্জিন পরিচালিত ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারীরা সবচেয়ে কম বেতন পাচ্ছেন। বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যে হারে বেড়ে চলেছে এতে করে রাজ্যের সরকারি কর্মচারী সমাজ তাদের আয়ের সাথে ব্যায়ের কোন সামঞ্জস্য রাখতে পারছেন না। এদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের বেতন ঠিকই বেড়ে চলেছে, কিন্তু রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের বেতন সেই তুলনায় বাড়ছে না। আর বাজার কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের বেতনের সমানুপাতিক হারে তার দামও বাড়িয়ে দিচ্ছে, ফলে ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারী সমাজ বাজারের সাথে তাদের সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে পারছে না।
এই বিজেপি পরিচালিত সরকারের আমলে কোন কর্মচারী সংগঠন আছে কিনা তা বোঝা যাচ্ছে না। ১৬ অর্থ কমিশনের পূর্বে যদি কর্মচারী সংগঠনগুলি সরকারের সাথে আলোচনা করে এই বঞ্চনার সূরাহা না করেন তবে এই বঞ্চনা আবারো আগামী পাঁচ বছরের জন্য স্থায়ী হয়ে যাবে।
বামফ্রন্ট আমলে শুধু শোনা যেত “কেন্দ্র দেয়না”! এখন সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, তবে সত্যিই কি কেন্দ্র দেয়না? না কি রাজ্য সরকারের সদিচ্ছার অভাব?
বিজেপি পরিচালিত সরকার, “তাদের প্রথম কেবিনেটে সপ্তম বেতন কমিশন দিয়ে দেবেন” এই স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। আর ক্ষমতায় এসেই তাদের মন্ত্রী, এম এল এ দের বেতন ভাতা, তাদের ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে নিয়েছেন, মাঝখান থেকে ফেঁসে গেছেন ত্রিপুরার সপ্তম বেতন কমিশনের আশায় বসে থাকা চাতক পাখিরা। তাদের D.A এর পার্থক্য যতই হওক না কেন, এখন তাদেরকে এই ৫% নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
ত্রিপুরার ইতিহাসে সেই জুট আমলই ছিল কর্মচারীদের জন্য একমাত্র সুষময়। কারণ জুট আমলেই ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রথম এবং শেষ পে কমিশন দিয়েছিল। তারপর থেকেই শুরু হয়ে যায় টানা বাম আমলের। বামপন্থীরা তাদের নীতিগত কারণে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বঞ্চনা অব্যাহত রাখে এবং পে-কমিশন দেয়ার কোন সদিচ্ছা তাদের মধ্যে দেখা যায়নি। উপরন্ত কেন্দ্রীয় বঞ্চনা বলে মিছিলের লাইন লম্বা করে পুরোটা সময় কাটিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু কোন অর্থ মন্ত্রকের কাছে সেই বাম আমলে কর্মচারীদের পে কমিশন দেয়ার জন্য কখনো টাকাই চাওয়া হয়নি। আর ঠিক তাই ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারীরা পুরোটা বাম আমলেই তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়ে এসেছে।
২০১৮ সালে বিজেপি নামক রাজনৈতিক দলটি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে,পুরো কর্মচারী কূল কে মিথ্যে স্বপ্ন দেখিয়ে তাদের দলে নিয়েছিলয এবং বলেছিল তারা ক্ষমতায় আসলে ত্রিপুরাতে পূর্ণাঙ্গ সপ্তম পে কমিশন চালু করবে। তখন তারা হিসাব করে দেখিয়েছিল ত্রিপুরা রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা প্রকৃতপক্ষে কত টাকা করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ত্রিপুরার কর্মচারী সমাজ ভেবেছিল দীর্ঘ বহু বছর পর হয়তোবা তারা আবার প্রকৃত পে কমিশন পাবেন! হায়রে পোড়া কপাল, সেটা ছিল পুরুই একটা ফাঁদ, আর সেই ফাঁদে পা দিয়ে ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ তাদের পক্ষে মত দান করেন। ফলস্বরূপ ২০১৮ সালে বিজেপি নামক রাজনৈতিক দলটি ক্ষমতার আসনে বসেন।
ক্ষমতায় বসেই তারা তাদের প্রকৃত রূপে এসে যান এবং শুরু হয় কর্মচারীদের ওপর বিভিন্ন লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার প্রেক্ষাপট। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মাননীয় বিপ্লব কুমার দেব কর্মচারীদের উপর প্রয়োগ করেন এক দানবীয় আইন যার নাম “এজমা”, বন্ধ করে দেওয়া হয় কর্মচারীদের পেনশন নামক সুবিধা টুকুও, যা বাম আমলে, তাদের সংগ্রামের ফল বলে টিকিয়ে রেখেছিল। শুরু হয় কর্মচারী বঞ্চনার আরেক নতুন অধ্যায়ের।
২০১৮ সালে নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তে আসামের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরায় এসে বলেছিলেন “যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে, তাহলে প্রথম কেবিনেটেই সিদ্ধান্ত করে ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ সপ্তম পে কমিশন চালু করে দেয়া হবে। আর যদি না দেওয়া হয় তাহলে লোকসভা ইলেকশনে বা তারপরে কখনো বিজেপিকে আর ভোট দেবেন না”। আর এই নিয়ে “ঘুমা ঘুমা কে চালানো” একটি প্রবাদ ও নেট দুনিয়ায় খুব ভাইরাল হয়েছিল, যা আপামোর ত্রিপুরাবাসিরই জানা আছে।
যেখানে বলা হয়েছিল প্রথম কেবিনেটে ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারীদের সপ্তম পে কমিশন দেয়া হবে সেই জায়গায় দেখা গেল উল্টো একচিত্র। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিলেন যে ত্রিপুরা রাজ্যের মন্ত্রী এবং এম এল এ দের মাসিক পারিশ্রমিক বাবদ যে ভাতা তারা পেতেন তা বাড়িয়ে নিজেদের ইচ্ছামত প্রায় তিনগুণ করে দেওয়া হবে এবং কর্মচারীদের সপ্তম পে কমিশনের জায়গায় সামান্য কিছু বেতন বৃদ্ধি করে ক্ষান্ত হয়ে গেলেন। যা ছিল সপ্তম পে কমিশনের তুলনায় সামান্য কিছু ভিক্ষার সমতুল্য। উপরন্ত বছরে যে দুবার D.A দেয়া হতো তা ভুলেই গিয়েছিলেন কর্মচারী সমাজ।
এমতাবস্থায় বিজেপি সরকারের প্রায় শেষ লগ্নে ঘটলো এক নাটকীয় পরিবর্তন আবির্ভূত হল এক নতুন চেহারার “ডক্টর মানিক সাহা”। ত্রিপুরার ইতিহাসে এই প্রথম; পেশায় ডাক্তার, নিছক ভদ্রলোক, শিক্ষিত এবং বুদ্ধিমান মুখ্যমন্ত্রী। যিনি পরবর্তী নির্বাচনের প্রাক মুহুর্তে ঘোষণা করা হয়েছিল ত্রিপুরার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংখ্যার D.A, কিন্তু কমিয়ে আনা যায়নি কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের সঙ্গে পার্থক্য।
ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারী সমাজ তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন কিন্তু তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন তো হয়ইনি বরং মুষ্টিমেয় কিছু লোকের ভাগ্যের পরিবর্তন করে দিয়েছেন। কর্মচারী সমাজ যেখানে ছিলেন, আজও ঠিক সেখানেই আছেন বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে উলটো পিছিয়ে পড়েছে। যেমন ত্রিপুরা রাজ্যের নার্সদের পোশাক এবং পোশাক পরিস্কার রাখার জন্য মাসিক মাত্র ১৫০ টাকা ভাতা দেয়া হতো, যেখানে সপ্তম পে কমিশন অনুযায়ী এই ভাতার পরিমাণ মাসিক ১৮০০ টাকা, যা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ নার্সরা পাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত নার্সদের প্রাপ্য হ্যাজার্ড এলাউন্স, যা তারা বহুদিন ধরে দাবি করে আসছিল তা আজও তারা পায়নি। সপ্তম বেতন কমিশন অনুযায়ী নার্সদের নাম পরিবর্তন করে Nursing Officer করা হয়েছে এবং তাদেরকে গ্রুপ B কর্মচারী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এদিকে ত্রিপুরার ডাবল ইঞ্জিনের সরকার নার্সদের জন্য সপ্তম বেতন কমিশন থেকে শুধু নাম টুকু এনে ওদেরকে Nursing Officer বানিয়ে দিয়েছে। আর এতেই বর্তমানে নার্সদের নেতা হিসেবে পরিচয় দেওয়া কিছু নার্স, তাদের নবনির্মিত সংগঠনের সাফল্য হিসেবে প্রচার করছেন। অথচ ত্রিপুরা রাজ্যে প্রায় সব সরকারি পদেরই পদোন্নতি হয়েছে, একমাত্র নার্সদেরই কোন পদোন্নতি হয়নি এবং এ নিয়ে ওইসব স্বার্থান্বেষী সংগঠনগুলির কোন বক্তব্যও নেই, হাসপাতাল গুলিতে রোগী এবং নার্স এর অনুপাত নিয়েও এদের কোন হেলদোল নেই, ফলস্বরূপ সাধারণ রোগীরা তাদের পরিষেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত থাকছেন এবং সরকারি হাসপাতাল গুলিতে পরিষেবা দিন দিন তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। স্বাভাবিক কারণেই নার্সদের প্রতি সাধারণ মানুষের ঘৃণা ও ক্ষোভ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ত্রিপুরা রাজ্যে এই প্রথম একজন ডাক্তার মুখ্যমন্ত্রী পেয়ে নার্স সমাজ ভেবেছিল যে তাদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার হয়তো এবার সমাপ্তি হবে। সেই গুড়ে বালি ঢেলে দিয়ে, ডাক্তার পরিচালিত ত্রিপুরার ডাবল ইঞ্জিনের সরকার, নার্সদের একমাত্র ভাতা ১৫০ টাকা, তাও বন্ধ করে দিয়েছেন।
এদিকে ১৬ তম অর্থ কমিশন এর সময় চলে এসেছে, কিন্তু ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারীদের কিছু কিছু পদের গ্রেট পে এর পার্থক্য আজও বহাল রয়ে গেছে, কিছু কিছু পথ গ্রুপ B কর্মচারী হওয়ার কথা যা আজও গ্রুপ C ই রয়ে গেছে। কর্মচারী সমাজে কান পাতলেই শোনা যায় তাদের বিভিন্ন বঞ্চনার কথা। সরকার সদিচ্ছা নিয়ে যদি এই বঞ্চনা গুলি দূর না করে এবং সপ্তম বেতন কমিশন না দেন, তবে ১৬ তম অর্থ কমিশন ও তাদের টাকা কমিয়ে দেবেন এবং কর্মচারী সমাজের সপ্তম বেতন কমিশনার স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে।
উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের স্পেশাল প্যাকেজ চালু রয়েছে। তা সত্ত্বেও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যগুলির সরকারি কর্মচারীদের তুলনায়, ডাবল ইঞ্জিন পরিচালিত ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারীরা সবচেয়ে কম বেতন পাচ্ছেন। বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যে হারে বেড়ে চলেছে এতে করে রাজ্যের সরকারি কর্মচারী সমাজ তাদের আয়ের সাথে ব্যায়ের কোন সামঞ্জস্য রাখতে পারছেন না। এদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের বেতন ঠিকই বেড়ে চলেছে, কিন্তু রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের বেতন সেই তুলনায় বাড়ছে না। আর বাজার কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের বেতনের সমানুপাতিক হারে তার দামও বাড়িয়ে দিচ্ছে, ফলে ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারী সমাজ বাজারের সাথে তাদের সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে পারছে না।
এই বিজেপি পরিচালিত সরকারের আমলে কোন কর্মচারী সংগঠন আছে কিনা তা বোঝা যাচ্ছে না। ১৬ অর্থ কমিশনের পূর্বে যদি কর্মচারী সংগঠনগুলি সরকারের সাথে আলোচনা করে এই বঞ্চনার সূরাহা না করেন তবে এই বঞ্চনা আবারো আগামী পাঁচ বছরের জন্য স্থায়ী হয়ে যাবে।
বামফ্রন্ট আমলে শুধু শোনা যেত “কেন্দ্র দেয়না”! এখন সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, তবে সত্যিই কি কেন্দ্র দেয়না? না কি রাজ্য সরকারের সদিচ্ছার অভাব?
বিজেপি পরিচালিত সরকার, “তাদের প্রথম কেবিনেটে সপ্তম বেতন কমিশন দিয়ে দেবেন” এই স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। আর ক্ষমতায় এসেই তাদের মন্ত্রী, এম এল এ দের বেতন ভাতা, তাদের ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে নিয়েছেন, মাঝখান থেকে ফেঁসে গেছেন ত্রিপুরার সপ্তম বেতন কমিশনের আশায় বসে থাকা চাতক পাখিরা। তাদের D.A এর পার্থক্য যতই হওক না কেন, এখন তাদেরকে এই ৫% নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
ত্রিপুরার ইতিহাসে সেই জুট আমলই ছিল কর্মচারীদের জন্য একমাত্র সুষময়। কারণ জুট আমলেই ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রথম এবং শেষ পে কমিশন দিয়েছিল। তারপর থেকেই শুরু হয়ে যায় টানা বাম আমলের। বামপন্থীরা তাদের নীতিগত কারণে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বঞ্চনা অব্যাহত রাখে এবং পে-কমিশন দেয়ার কোন সদিচ্ছা তাদের মধ্যে দেখা যায়নি। উপরন্ত কেন্দ্রীয় বঞ্চনা বলে মিছিলের লাইন লম্বা করে পুরোটা সময় কাটিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের কাছে সেই বাম আমলে কর্মচারীদের পে কমিশন দেয়ার জন্য কখনো টাকাই চাওয়া হয়নি। আর ঠিক তাই ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারীরা পুরোটা বাম আমলেই তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়ে এসেছে।
২০১৮ সালে বিজেপি নামক রাজনৈতিক দলটি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে,পুরো কর্মচারী কূল কে মিথ্যে স্বপ্ন দেখিয়ে তাদের দলে নিয়েছিলয এবং বলেছিল তারা ক্ষমতায় আসলে ত্রিপুরাতে পূর্ণাঙ্গ সপ্তম পে কমিশন চালু করবে। তখন তারা হিসাব করে দেখিয়েছিল ত্রিপুরা রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা প্রকৃতপক্ষে কত টাকা করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ত্রিপুরার কর্মচারী সমাজ ভেবেছিল দীর্ঘ বহু বছর পর হয়তোবা তারা আবার প্রকৃত পে কমিশন পাবেন! হায়রে পোড়া কপাল, সেটা ছিল পুরুই একটা ফাঁদ, আর সেই ফাঁদে পা দিয়ে ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ তাদের পক্ষে মত দান করেন। ফলস্বরূপ ২০১৮ সালে বিজেপি নামক রাজনৈতিক দলটি ক্ষমতার আসনে বসেন।
ক্ষমতায় বসেই তারা তাদের প্রকৃত রূপে এসে যান এবং শুরু হয় কর্মচারীদের ওপর বিভিন্ন লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার প্রেক্ষাপট। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মাননীয় বিপ্লব কুমার দেব কর্মচারীদের উপর প্রয়োগ করেন এক দানবীয় আইন যার নাম “এজমা”, বন্ধ করে দেওয়া হয় কর্মচারীদের পেনশন নামক সুবিধা টুকুও, যা বাম আমলে, তাদের সংগ্রামের ফল বলে টিকিয়ে রেখেছিল। শুরু হয় কর্মচারী বঞ্চনার আরেক নতুন অধ্যায়ের।
২০১৮ সালে নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তে আসামের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরায় এসে বলেছিলেন “যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে, তাহলে প্রথম কেবিনেটেই সিদ্ধান্ত করে ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ সপ্তম পে কমিশন চালু করে দেয়া হবে। আর যদি না দেওয়া হয় তাহলে লোকসভা ইলেকশনে বা তারপরে কখনো বিজেপিকে আর ভোট দেবেন না”। আর এই নিয়ে “ঘুমা ঘুমা কে চালানো” একটি প্রবাদ ও নেট দুনিয়ায় খুব ভাইরাল হয়েছিল, যা আপামোর ত্রিপুরাবাসিরই জানা আছে।
যেখানে বলা হয়েছিল প্রথম কেবিনেটে ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারীদের সপ্তম পে কমিশন দেয়া হবে সেই জায়গায় দেখা গেল উল্টো একচিত্র। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিলেন যে ত্রিপুরা রাজ্যের মন্ত্রী এবং এম এল এ দের মাসিক পারিশ্রমিক বাবদ যে ভাতা তারা পেতেন তা বাড়িয়ে নিজেদের ইচ্ছামত প্রায় তিনগুণ করে দেওয়া হবে এবং কর্মচারীদের সপ্তম পে কমিশনের জায়গায় সামান্য কিছু বেতন বৃদ্ধি করে ক্ষান্ত হয়ে গেলেন। যা ছিল সপ্তম পে কমিশনের তুলনায় সামান্য কিছু ভিক্ষার সমতুল্য। উপরন্ত বছরে যে দুবার D.A দেয়া হতো তা ভুলেই গিয়েছিলেন কর্মচারী সমাজ।
এমতাবস্থায় বিজেপি সরকারের প্রায় শেষ লগ্নে ঘটলো এক নাটকীয় পরিবর্তন আবির্ভূত হল এক নতুন চেহারার “ডক্টর মানিক সাহা”। ত্রিপুরার ইতিহাসে এই প্রথম; পেশায় ডাক্তার, নিছক ভদ্রলোক, শিক্ষিত এবং বুদ্ধিমান মুখ্যমন্ত্রী। যিনি পরবর্তী নির্বাচনের প্রাক মুহুর্তে ঘোষণা করা হয়েছিল ত্রিপুরার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংখ্যার D.A, কিন্তু কমিয়ে আনা যায়নি কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের সঙ্গে পার্থক্য।
ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারী সমাজ তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন কিন্তু তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন তো হয়ইনি বরং মুষ্টিমেয় কিছু লোকের ভাগ্যের পরিবর্তন করে দিয়েছেন। কর্মচারী সমাজ যেখানে ছিলেন, আজও ঠিক সেখানেই আছেন বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে উলটো পিছিয়ে পড়েছে। যেমন ত্রিপুরা রাজ্যের নার্সদের পোশাক এবং পোশাক পরিস্কার রাখার জন্য মাসিক মাত্র ১৫০ টাকা ভাতা দেয়া হতো, যেখানে সপ্তম পে কমিশন অনুযায়ী এই ভাতার পরিমাণ মাসিক ১৮০০ টাকা, যা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ নার্সরা পাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত নার্সদের প্রাপ্য হ্যাজার্ড এলাউন্স, যা তারা বহুদিন ধরে দাবি করে আসছিল তা আজও তারা পায়নি। সপ্তম বেতন কমিশন অনুযায়ী নার্সদের নাম পরিবর্তন করে Nursing Officer করা হয়েছে এবং তাদেরকে গ্রুপ B কর্মচারী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এদিকে ত্রিপুরার ডাবল ইঞ্জিনের সরকার নার্সদের জন্য সপ্তম বেতন কমিশন থেকে শুধু নাম টুকু এনে ওদেরকে Nursing Officer বানিয়ে দিয়েছে। আর এতেই বর্তমানে নার্সদের নেতা হিসেবে পরিচয় দেওয়া কিছু নার্স, তাদের নবনির্মিত সংগঠনের সাফল্য হিসেবে প্রচার করছেন। অথচ ত্রিপুরা রাজ্যে প্রায় সব সরকারি পদেরই পদোন্নতি হয়েছে, একমাত্র নার্সদেরই কোন পদোন্নতি হয়নি এবং এ নিয়ে ওইসব স্বার্থান্বেষী সংগঠনগুলির কোন বক্তব্যও নেই, হাসপাতাল গুলিতে রোগী এবং নার্স এর অনুপাত নিয়েও এদের কোন হেলদোল নেই, ফলস্বরূপ সাধারণ রোগীরা তাদের পরিষেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত থাকছেন এবং সরকারি হাসপাতাল গুলিতে পরিষেবা দিন দিন তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। স্বাভাবিক কারণেই নার্সদের প্রতি সাধারণ মানুষের ঘৃণা ও ক্ষোভ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ত্রিপুরা রাজ্যে এই প্রথম একজন ডাক্তার মুখ্যমন্ত্রী পেয়ে নার্স সমাজ ভেবেছিল যে তাদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার হয়তো এবার সমাপ্তি হবে। সেই গুড়ে বালি ঢেলে দিয়ে, ডাক্তার পরিচালিত ত্রিপুরার ডাবল ইঞ্জিনের সরকার, নার্সদের একমাত্র ভাতা ১৫০ টাকা, তাও বন্ধ করে দিয়েছেন।
এদিকে ১৬ তম অর্থ কমিশন এর সময় চলে এসেছে, কিন্তু ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারীদের কিছু কিছু পদের গ্রেট পে এর পার্থক্য আজও বহাল রয়ে গেছে, কিছু কিছু পথ গ্রুপ B কর্মচারী হওয়ার কথা যা আজও গ্রুপ C ই রয়ে গেছে। কর্মচারী সমাজে কান পাতলেই শোনা যায় তাদের বিভিন্ন বঞ্চনার কথা। সরকার সদিচ্ছা নিয়ে যদি এই বঞ্চনা গুলি দূর না করে এবং সপ্তম বেতন কমিশন না দেন, তবে ১৬ তম অর্থ কমিশন ও তাদের টাকা কমিয়ে দেবেন এবং কর্মচারী সমাজের সপ্তম বেতন কমিশনার স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে।
উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের স্পেশাল প্যাকেজ চালু রয়েছে। তা সত্ত্বেও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যগুলির সরকারি কর্মচারীদের তুলনায়, ডাবল ইঞ্জিন পরিচালিত ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারীরা সবচেয়ে কম বেতন পাচ্ছেন। বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যে হারে বেড়ে চলেছে এতে করে রাজ্যের সরকারি কর্মচারী সমাজ তাদের আয়ের সাথে ব্যায়ের কোন সামঞ্জস্য রাখতে পারছেন না। এদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের বেতন ঠিকই বেড়ে চলেছে, কিন্তু রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের বেতন সেই তুলনায় বাড়ছে না। আর বাজার কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের বেতনের সমানুপাতিক হারে তার দামও বাড়িয়ে দিচ্ছে, ফলে ত্রিপুরার সরকারি কর্মচারী সমাজ বাজারের সাথে তাদের সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে পারছে না।
এই বিজেপি পরিচালিত সরকারের আমলে কোন কর্মচারী সংগঠন আছে কিনা তা বোঝা যাচ্ছে না। ১৬ অর্থ কমিশনের পূর্বে যদি কর্মচারী সংগঠনগুলি সরকারের সাথে আলোচনা করে এই বঞ্চনার সূরাহা না করেন তবে এই বঞ্চনা আবারো আগামী পাঁচ বছরের জন্য স্থায়ী হয়ে যাবে।
বামফ্রন্ট আমলে শুধু শোনা যেত “কেন্দ্র দেয়না”! এখন সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, তবে সত্যিই কি কেন্দ্র দেয়না? না কি রাজ্য সরকারের সদিচ্ছার অভাব?
বিজেপি পরিচালিত সরকার, “তাদের প্রথম কেবিনেটে সপ্তম বেতন কমিশন দিয়ে দেবেন” এই স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। আর ক্ষমতায় এসেই তাদের মন্ত্রী, এম এল এ দের বেতন ভাতা, তাদের ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে নিয়েছেন, মাঝখান থেকে ফেঁসে গেছেন ত্রিপুরার সপ্তম বেতন কমিশনের আশায় বসে থাকা চাতক পাখিরা। তাদের D.A এর পার্থক্য যতই হওক না কেন, এখন তাদেরকে এই ৫% নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির
ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির, যা মা ত্রিপুরেশ্বরী বা ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির নামেও পরিচিত। ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির, ত্রিপুরার অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এটি ত্রিপুরার রাজকীয় ও ধর্মীয় ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত এবং ভারতের ৫১টি শক্তিপীঠের একটি। ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং সংস্কৃতি ত্রিপুরার জনজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। হিন্দু ধর্মের শক্তি উপাসনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে এই মন্দিরের আচার-অনুষ্ঠান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং বৈচিত্র্যময়। এখানে মা ত্রিপুরেশ্বরীকে প্রতিদিন নিয়মিতভাবে পূজা করা হয়, এবং তার উপাসনা প্রথাগুলি প্রাচীন এবং গভীরভাবে শাস্ত্রীয় রীতিনীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। প্রতিদিনের পূজার পাশাপাশি বিশেষ উৎসব, আচার-অনুষ্ঠান এবং যজ্ঞের আয়োজন করা হয়, যা ভক্তদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মন্দিরটি শুধু একটি ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, বরং ত্রিপুরার রাজনৈতিক এবং সামাজিক জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। এটি ত্রিপুরার মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক পরিচয়কে দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত করেছে। ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের সংস্কৃতি এবং আচার-অনুষ্ঠানগুলি ত্রিপুরার মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেবী ত্রিপুরেশ্বরীর প্রতি তাদের ভক্তি এবং শ্রদ্ধা ত্রিপুরার সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং এটি তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের একটি শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মাণিক্য রাজাদের শাসনামলে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এবং তাদের রাজত্বে দেবী ত্রিপুরেশ্বরীকে রাজ্যের রক্ষা দেবী হিসেবে পূজা করা হত।
ভৌগোলিক অবস্থান
ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত মনোরম। চারিদিকে সবুজ বন, পাহাড় এবং জলাশয়ের জল মন্দিরকে একটি আধ্যাত্মিক আবহ প্রদান করেছে। ত্রিপুরা রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। মন্দিরটি ত্রিপুরার গোমতী জেলার উদয়পুর শহরে, রাজধানী আগরতলা থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি একটি পাহাড়ের ওপর নির্মিত, যা ত্রিপুরার অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় স্থানগুলির মধ্যে একটি। মন্দিরটি একটি জলাশয়ের তীরে অবস্থিত, যা তার সৌন্দর্য ও পবিত্রতাকে আরও বৃদ্ধি করে। উদয়পুর শহরটি অতীতে ত্রিপুরার রাজকীয় রাজধানী ছিল এবং মাণিক্য রাজবংশের রাজাদের অন্যতম প্রধান আবাস ছিল। এই অঞ্চলটি প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ এবং তীর্থযাত্রীদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এজন্য ই ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির ভারতের ৫১টি শক্তিপীঠের মধ্যে, এবং ভারতের র্যটন কেন্দ্র গুলির মধ্যে অন্যতম। উদয়পুর শহর, যা “লেক সিটি” নামেও পরিচিত, ত্রিপুরার অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে, যার কেন্দ্রে রয়েছে এই পবিত্র মন্দির।
ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য
ত্রিপুরা রাজ্যের অন্যতম ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় নিদর্শন, ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির। মহারাজাধন্যমানিক্য ১৫০১ খ্রিস্টাব্দে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে, এই মন্দিরটি প্রথমে বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু পরে স্বপ্নাদেশে তৎকালীন চট্টগ্রাম থেকে কষ্টিপাথরে নির্মিত ত্রিপুরা সুন্দরী দেবীর বিগ্রহ এনে এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি ভারতের অন্যতম পবিত্র একান্ন শক্তিপীঠের অন্তর্ভুক্ত, যেখানে পুরাণ মতে দেবী সতীর ডান পা পড়েছিল।
মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় ধন্যমানিক্য বিষ্ণুর মন্দিরে কালী বিগ্রহ স্থাপনে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন, কিন্তু দৈববানীতে সে দ্বিধা দূর হয়। এই মন্দিরের নির্মাণশৈলী ত্রিপুরার নিজস্ব ধাঁচে গড়া হলেও এতে হিন্দু ও বৌদ্ধ স্থাপত্যের সমন্বয় রয়েছে। মন্দিরের চার কোণে প্রধান স্তম্ভ, উপরে বৌদ্ধধর্মের গম্বুজ, এবং তার উপর সপ্ত কলসী ও পিতলের ধ্বজ দণ্ড স্থাপিত। মন্দিরের মূল দরজা পশ্চিমমুখী, এবং একটি উত্তরমুখী দরজাও রয়েছে। মন্দিরের ভেতরের পরিমাপ ১৬x১৬ ফুট, দেয়ালের পুরুত্ব ৮ ফুট, আর উচ্চতা ৭৫ ফুট।
ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, এখানে যে কোনও ধর্ম বা সম্প্রদায়ের মানুষ পুজো দিতে পারেন, তাদের ধর্মীয় পরিচয় জানতে চাওয়া হয় না। এই মন্দিরটি শৈব ও শাক্ত মতের মিলনে গড়ে উঠলেও পরবর্তীতে তা ভক্তি ও সহনশীলতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি, শমসের গাজী এই মন্দির আক্রমণ করলেও, তিনি নিজেও এখানে পুজো দিয়েছিলেন বলে ‘গাজিনামা’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে।
বর্তমানে ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির রাজ্য সরকারের পরিচালনাধীন, এবং গোমতী জেলার জেলা প্রশাসক ও কালেক্টর মন্দিরের প্রধান সেবাইত। মন্দির পরিচালনার দায়িত্বে সরকারি কর্মকর্তা ও ত্রিপুরা মাতা সুন্দরি মন্দির ট্রাস্ট থাকায় এর প্রশাসনিক ব্যবস্থা সুসংহত।
মন্দিরের সংস্কৃতি ও আচার-অনুষ্ঠান
ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে প্রতিদিন ভক্তদের দ্বারা নিয়মিত পূজা-অর্চনা অনুষ্ঠিত হয়। সকালে এবং সন্ধ্যায় আরতির সময় ভক্তরা মন্দিরে এসে দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন। দেবী ত্রিপুরেশ্বরীর আরতির সময় মন্দির প্রাঙ্গণটি ধূপ, ফুল, এবং শঙ্খধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। প্রতিদিন দেবীর পূজার জন্য ফল, মিষ্টি, এবং ফুল নিবেদন করা হয়।
ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং সংস্কৃতি ত্রিপুরার জনজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। হিন্দু ধর্মের শক্তি উপাসনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে এই মন্দিরের আচার-অনুষ্ঠান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং বৈচিত্র্যময়। এখানে মা ত্রিপুরেশ্বরীকে প্রতিদিন নিয়মিতভাবে পূজা করা হয়, এবং তার উপাসনা প্রথাগুলি প্রাচীন এবং গভীরভাবে শাস্ত্রীয় রীতিনীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। প্রতিদিনের পূজার পাশাপাশি বিশেষ উৎসব, আচার-অনুষ্ঠান এবং যজ্ঞের আয়োজন করা হয়, যা ভক্তদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ই ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির ভারতের ৫১টি শক্তিপীঠের মধ্যে, এবং ভারতের র্যটন কেন্দ্র গুলির মধ্যে অন্যতম।
দৈনন্দিন পূজা ও আরতি
মন্দিরে প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় দেবী ত্রিপুরেশ্বরীর আরতি অনুষ্ঠিত হয়। আরতির সময় মন্দিরের চারপাশটি ধূপের সুগন্ধে এবং শঙ্খের ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। ভক্তরা দেবীর সামনে প্রদীপ, ধূপ, এবং ফুল নিবেদন করে তার আশীর্বাদ গ্রহণ করেন। আরতির সময় দেবীকে সেজে উঠানো হয়, এবং তাকে ফল, মিষ্টি, এবং অন্যান্য প্রসাদ নিবেদন করা হয়। প্রতিদিনের পূজার সময় মন্দিরের পুরোহিতরা শাস্ত্রীয় মন্ত্র পাঠ করে দেবীর প্রশস্তি গেয়ে থাকেন।
দৈনন্দিন পূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল “প্রসাদ” বিতরণ। পূজা শেষে ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়, যা প্রধানত “খিচুড়ি” ও অন্যান্য প্রসাদীয় খাবার হিসেবে দেওয়া হয়। মন্দিরের প্রসাদ ভক্তদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র এবং এটি দেবীর আশীর্বাদের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিশেষ উৎসব ও আচার
ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল “দীপাবলি”। দীপাবলি উৎসবটি হিন্দুদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং এই মন্দিরে দীপাবলির দিনটিকে বিশেষভাবে উদযাপন করা হয়। দীপাবলির সময় লক্ষাধিক ভক্ত মন্দিরে সমবেত হন এবং মায়ের কাছে প্রার্থনা করেন।
দীপাবলির দিন দেবী ত্রিপুরেশ্বরীর বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। ভক্তরা মন্দিরে এসে হাজার হাজার প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবীর আরাধনা করেন। মন্দিরের চারপাশে এবং উদয়পুর শহরে দীপাবলির সময় একটি বিশাল মেলার আয়োজন করা হয়, যা স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
দীপাবলি ছাড়াও, দুর্গাপূজার সময়ে “মহা অষ্টমী” উপলক্ষে বিশেষ পূজা এবং যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়। মহা অষ্টমীতে মায়ের কাছে ছাগল বলি দেওয়া হয়, যা এই মন্দিরের অন্যতম প্রাচীন রীতি। এই আচারটি শক্তি উপাসনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং এটি দেবীকে খুশি করার একটি বিশেষ আচার। যদিও আধুনিক সময়ে অনেক জায়গায় পশুবলি প্রথা বন্ধ হয়েছে, তবুও ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে এটি এখনও পালিত হয়।
পশুবলি ও অন্যান্য আচার-অনুষ্ঠান
মন্দিরের আরেকটি প্রাচীন আচার হল পশুবলি। মহা অষ্টমী এবং কালীপূজার সময় এই বলি দেওয়ার প্রথা চলে আসছে। মহিষ বা ছাগল বলির মাধ্যমে দেবীকে সন্তুষ্ট করার প্রচলন প্রাচীনকালের শক্তি উপাসনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। দেবীকে উৎসর্গ করা প্রাণীদের বলি দেওয়া হয় এবং এই আচারটি দেবীর কাছে প্রার্থনার একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, এই আচার মন্দিরে আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং দেবী ত্রিপুরেশ্বরীর কৃপা লাভ করা যায়।
মন্দিরে অন্যান্য সময়ে নানা ছোটখাটো উৎসব এবং পূজার আয়োজন করা হয়, যেমন কালীপূজা, রথযাত্রা এবং সরস্বতী পূজা। প্রতিটি উৎসবে দেবীর বিশেষ পূজা, যজ্ঞ, এবং ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে বিশেষ সময়ে দাতব্য কার্যক্রমেরও আয়োজন করা হয়। ভক্তরা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী মন্দিরে দান করেন, যা দরিদ্র ও অভাবীদের সাহায্যার্থে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের দান-পূজার মাধ্যমে মন্দিরে ভক্তদের সঙ্গে দেবীর সম্পর্ক আরও নিবিড় হয় এবং তা সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হয়ে ওঠে। ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির ভারতের ৫১ টি শক্তিপীঠের তীর্থযাত্রীদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও অন্যতম।
সাংস্কৃতিক গুরুত্ব ও ঐতিহ্য
ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি ত্রিপুরার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। মন্দিরের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান এবং উৎসবগুলি ত্রিপুরার জনজীবনের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। বিশেষত ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের দীপাবলি মেলা ত্রিপুরার স্থানীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
দীপাবলি মেলা ত্রিপুরার অন্যতম বড় উৎসব এবং এই মেলার সময় স্থানীয় হস্তশিল্প, শিল্পকর্ম এবং খাদ্যপণ্যগুলি প্রদর্শিত হয়। এছাড়া, এই সময় বিভিন্ন লোকনৃত্য, গান, এবং নাট্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়, যা ত্রিপুরার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে প্রতিফলিত করে।
ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের সঙ্গে জড়িত আচার এবং উৎসবগুলি স্থানীয় জনগণের জীবনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে এবং এটি ত্রিপুরার সাংস্কৃতিক পরিচয়ের একটি প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। মন্দিরের উৎসবগুলি শুধুমাত্র ধর্মীয় নয়, বরং সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে।
ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের রাজকীয় ইতিহাস
ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা এবং উন্নয়ন ত্রিপুরার রাজবংশের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। মাণিক্য রাজবংশের শাসকরা ত্রিপুরার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির তাদের রাজকীয় ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।
ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মহারাজা ধন্য মাণিক্য। ১৫০১ খ্রিস্টাব্দে তিনি এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। মাণিক্য রাজারা দেবী ত্রিপুরেশ্বরীকে তাদের রাজ্যের প্রধান দেবী হিসেবে পূজা করতেন এবং দেবীর আশীর্বাদ নিয়ে রাজ্য শাসন পরিচালনা করতেন। মাণিক্য রাজাদের বিশ্বাস ছিল যে দেবী ত্রিপুরেশ্বরী তাদের রক্ষা দেবী এবং তিনি রাজ্যের সুরক্ষা এবং সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবেন। রাজারা যখন যুদ্ধে যেতেন বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতেন, তারা প্রথমে মন্দিরে এসে দেবীর আশীর্বাদ গ্রহণ করতেন।
ধান্য মাণিক্য ছিলেন মাণিক্য রাজবংশের অন্যতম প্রভাবশালী এবং ধীমান শাসক। তার শাসনামলে ত্রিপুরার রাজ্য ও রাজনীতি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। মন্দির নির্মাণের পর থেকে, ধন্য মাণিক্য এবং তার পরবর্তী রাজারা মন্দিরে নিয়মিত পূজা অর্চনা করতেন এবং দেবী ত্রিপুরেশ্বরীর কাছে তাদের রাজ্যের সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করতেন। রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মন্দিরের গুরুত্ব বাড়তে থাকে এবং এটি ত্রিপুরার অন্যতম প্রধান ধর্মীয় কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
মন্দিরের স্থাপত্য
ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের স্থাপত্য শৈলী অত্যন্ত সরল কিন্তু গভীরভাবে আধ্যাত্মিক এবং ঐতিহ্যবাহী। মন্দিরটি একটি বর্গাকার গর্ভগৃহ নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে প্রধান দেবী মূর্তি প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। দেবী ত্রিপুরেশ্বরীর মূর্তি কালো পাথরে নির্মিত এবং প্রায় ৫ ফুট উচ্চ। দেবীকে সাধারণত চতুর্ভুজা রূপে পূজা করা হয়। তিনি লাল বস্ত্র পরিহিতা এবং গহনায় সজ্জিত অবস্থায় মূর্তিতে বিরাজমান।
মন্দিরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল “কুর্মমণ্ডপ” বা কচ্ছপের আকৃতির বেদি, যা মন্দিরের সামনে অবস্থিত। এই কচ্ছপ-আকৃতির বেদি মন্দিরের স্থাপত্যে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, কচ্ছপ হল ভগবান বিষ্ণুর দ্বিতীয় অবতার, এবং এটি স্থায়িত্ব ও শক্তির প্রতীক।
মন্দিরের চারপাশে একটি উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ রয়েছে, যেখানে ভক্তরা বসে প্রার্থনা করতে পারেন। মন্দিরের অভ্যন্তর এবং বহির্ভাগে বেশ কিছু প্রাচীন শৈলীর কারুকার্য দেখা যায়, যা মাণিক্য রাজাদের শাসনামলে ত্রিপুরার স্থাপত্যশিল্পের বিকাশকে প্রতিফলিত করে।
মন্দিরের শক্তিপীঠ হিসেবে গুরুত্ব
ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির হিন্দু ধর্মে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তিপীঠ। শক্তিপীঠগুলি সেই স্থানে অবস্থিত যেখানে দেবী সতীর শরীরের অংশগুলি পড়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে দেবী সতীর ডান পা পড়েছিল বলে ধর্মীয় কাহিনী রয়েছে। এটি হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান এবং প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত এখানে দেবীকে পূজা করতে আসেন।
শক্তিপীঠ হিসেবে ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের গুরুত্ব শুধু ত্রিপুরায় সীমাবদ্ধ নয়, এটি সমগ্র ভারতবর্ষের ভক্তদের জন্য একটি পবিত্র স্থান। দেবী ত্রিপুরেশ্বরীকে এখানে “শ্রীশ্রী ত্রিপুরাসুন্দরী” নামেও পূজা করা হয়, এবং তিনি মা দুর্গার এক রূপ হিসেবে পূজিত হন। শক্তিপীঠের মন্দিরগুলি সাধারণত হিন্দু দেবী উপাসনায় কেন্দ্রীভূত, এবং এখানে মা ত্রিপুরেশ্বরীর পূজার জন্য প্রতিদিন ভক্তদের ভিড় লেগে থাকে।
ত্রিপুরা সরকারের ভূমিকা
ত্রিপুরা সরকারের উদ্যোগে মন্দিরের উন্নয়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা হয়েছে, যা মন্দিরের ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় গুরুত্বকে সমুন্নত রাখতে সহায়ক। ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের ঐতিহ্য এবং গুরুত্ব বিবেচনা করে ত্রিপুরা সরকার মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। ত্রিপুরা সরকারের অধীনে মন্দিরের পরিচালনার জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি মন্দিরের দৈনন্দিন পরিচালনা, সংস্কার কার্যক্রম এবং ভক্তদের জন্য সুবিধার ব্যবস্থা করে।
মন্দিরের সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব সংরক্ষণে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রতি বছর দীপাবলি উপলক্ষে ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে বিশাল মেলার আয়োজন করা হয়, যা ত্রিপুরার অন্যতম প্রধান ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই মেলার সময় সরকার মন্দির এবং আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুবিধার ব্যবস্থা করে থাকে।
এছাড়া, মন্দিরের উন্নয়নে পর্যটনকে উৎসাহিত করতে ত্রিপুরা সরকার বিভিন্ন পর্যটন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। উদয়পুর এবং মন্দির চত্বরে ভক্তদের জন্য আধুনিক বিশ্রামাগার, পানীয় জলের ব্যবস্থা এবং শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। মন্দির পরিদর্শনে আগত ভক্তদের সুবিধার্থে নতুন অবকাঠামো এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হয়েছে।
ত্রিপুরা সরকার দেবী ত্রিপুরেশ্বরীর মন্দিরের ঐতিহ্য এবং ইতিহাস সংরক্ষণে গবেষণামূলক কাজেও সহায়তা প্রদান করছে। ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় গুরুত্ব নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা এবং প্রবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছে, যা মন্দিরের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সহায়ক।
উপসংহার
ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং আচার-অনুষ্ঠান ত্রিপুরার জনজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি কেবল একটি তীর্থস্থান নয়, বরং ত্রিপুরার রাজনীতি, সমাজ এবং সংস্কৃতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। মাণিক্য রাজাদের শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরটি ত্রিপুরার মানুষের মধ্যে আধ্যাত্মিকতার প্রতি গভীর বিশ্বাস এবং আস্থার প্রতীক।