পর্যটন শিল্প

পর্যটন শিল্পকে ঢেলে সাজাতে দিল্লির দরবারে সুশান্ত!

ত্রিপুরার পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বড়সড় উদ্যোগ নিচ্ছে রাজ্য সরকার। পর্যটন ও পরিবহন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী সম্প্রতি দিল্লি সফরে গিয়ে কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রীসহ একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। আলোচনার মূল বিষয় ছিল রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর পরিকাঠামো উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, এবং ত্রিপুরাকে পর্যটন মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করা।

পর্যটনের ভবিষ্যৎঃ

ত্রিপুরার পর্যটন শিল্প এতদিন অবহেলিত ছিল। পূর্ববর্তী সরকার পর্যটনকে রাজস্ব বৃদ্ধির একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে ভাবেনি। অথচ, ত্রিপুরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর, যার মধ্যে রয়েছে নারিকেল কুঞ্জ, ডুম্বুর লেক, নীরমহল, ঊনকোটি, দেবতামুড়া, জাম্পুই পাহাড়ের মতো অনন্য স্থান। বর্তমান সরকার পর্যটনকে শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে। পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এই খাতকে শক্তিশালী করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতের সঙ্গে বৈঠকে তিনি রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর উন্নয়নের জন্য আরও ১৫০ কোটি টাকা অনুদানের দাবি জানান। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এই দাবিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে অনুদান মঞ্জুর করেছেন।

প্রসাদ প্রকল্পঃ

ত্রিপুরার অন্যতম প্রধান ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্র মাতাবাড়ি। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রসাদ প্রকল্পের আওতায় এই স্থানকে নবরূপে সাজানো হয়েছে। শীঘ্রই এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। নতুন পরিকাঠামো তৈরি হওয়ায় ভক্ত ও পর্যটকদের জন্য আরও সুবিধা বাড়বে। রাজ্য সরকার আশা করছে, মাতাবাড়ির উন্নয়নের ফলে তীর্থযাত্রীর সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে এবং রাজ্যের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

পরিকল্পনাঃ

নারিকেল কুঞ্জ ও ডুম্বুর লেককে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যটকদের জন্য রিসর্ট, বোটিং, ওয়াটার স্পোর্টস, ক্যাম্পিং-এর সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ঊনকোটি, যেখানে শিলাচিত্র ও মূর্তি খোদাই করা রয়েছে, এক অপূর্ব ঐতিহাসিক নিদর্শন। কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় এই স্থানকে বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদায় উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পর্যটন শিল্প শুধুমাত্র রাজস্ব বৃদ্ধি করবে না, এটি রাজ্যের তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করবে। হোটেল, রিসর্ট, পরিবহন, রেস্তোরাঁ, গাইড, হস্তশিল্প ও স্থানীয় শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে হাজারো মানুষের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ তৈরি হবে।

অবকাঠামোঃ

পর্যটন বিকাশের জন্য রেল ও বিমান যোগাযোগ উন্নত করা জরুরি। দিল্লিতে সুশান্ত চৌধুরী কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রামমোহন নাইডুর সঙ্গে বৈঠকে আগরতলা বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিকীকরণ, বিমান ভাড়া নিয়ন্ত্রণ, এবং নতুন বিমান পরিষেবা চালুর দাবি জানান। কৈলাসহর বিমানবন্দর পুনরায় চালু করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত এই বিমানবন্দর চালু হলে উত্তর ত্রিপুরায় পর্যটনের বিকাশ ঘটবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, শীঘ্রই তিনি কৈলাসহর বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসবেন।

দেশের জন্য মডেলঃ

পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীর এই উদ্যোগে ত্রিপুরার পর্যটন শিল্প নতুন দিগন্তের পথে এগোচ্ছে। নতুন পরিকল্পনা ও পরিকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলো দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হবে। রাজ্যের পর্যটন শিল্প আগামী দিনে গোটা দেশের জন্য মডেল হয়ে উঠতে পারে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।cropped 800X800

উন্নয়ন

৩৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ঊনকোটিতে!

রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করতে ত্রিপুরা সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই লক্ষ্যেই আগামীকাল, ৪ মার্চ, উনকোটি জেলার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এই কর্মসূচির আওতায় মোট ৩৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হবে, যার মাধ্যমে জেলার পরিকাঠামো উন্নয়ন ও নাগরিক পরিষেবার সম্প্রসারণ ঘটবে। উনকোটি জেলাকে আধুনিকীকরণের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে এই প্রকল্পগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

  • উনকোটি জেলায় যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করা হবে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো—
  •  প্রশাসনিক পরিকাঠামো: উন্নত প্রশাসনিক পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে জেলাশাসক (ডিএম) অফিসের নতুন ভবন, মহকুমা শাসক (এসডিএম) কার্যালয়, এবং জেলা পরিবহন দপ্তরের নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে।
  • স্বাস্থ্য পরিকাঠামো: জেলার স্বাস্থ্য পরিসেবাকে আরও উন্নত করতে একটি নতুন ভেটেরিনারি জেলা হাসপাতাল এবং একটি আধুনিক ডি-অ্যাডিকশন হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।
  • সমাজকল্যাণ ও শিশু সুরক্ষা: সমাজকল্যাণ দপ্তরের ডিআইএসই অফিস, সিডিপিও অফিস, এবং একটি চাইল্ড কেয়ার ইনস্টিটিউশন গড়ে তোলা হবে, যা শিশুদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করবে।
  • রাজস্ব ও ভূমি প্রশাসন: তিনটি তহশিল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে, যা ভূমি ও রাজস্ব সংক্রান্ত কাজের সুবিধা বাড়াবে।
  • শিক্ষা পরিকাঠামো: শিক্ষার উন্নয়নে জোর দিতে তিনটি নতুন স্কুল ভবন এবং একটি নার্স প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
  • পরিষ্কার পানীয়জল: প্রত্যন্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয়জল সরবরাহ নিশ্চিত করতে দুটি নতুন পানীয়জল প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
  • ব্যবসায়িক পরিকাঠামো: স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে একটি নতুন বাজার শেড উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী।

এই বিশাল কর্মসূচির মূল অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়েছে উনকোটি জেলার চণ্ডিপুর ব্লক প্রাঙ্গনে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহার সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের সমাজকল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা মন্ত্রী টিংকু রায়, স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, সচিব প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী, পরিবহন দপ্তরের সচিব চন্দ্র কুমার জমাতিয়া এবং সমাজকল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা তপন কুমার দাস সহ অন্যান্য শীর্ষ প্রশাসনিক আধিকারিকগণ।

ত্রিপুরা সরকার নাগরিক কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মৌলিক পরিষেবা বৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছে। এই ৩৪টি প্রকল্প জেলার জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং সামগ্রিকভাবে ত্রিপুরার উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করবে। ত্রিপুরা সরকার এই ধরণের জনমুখী উদ্যোগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জন্য আরও উন্নত পরিষেবা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রশাসনের এই উদ্যোগ আগামী দিনে উনকোটি জেলার সার্বিক অগ্রগতির পথ সুগম করবে এবং রাজ্যের উন্নয়নযাত্রাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।About Us

ত্রিপুরা সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি

বিজেপি ক্ষমতার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় বৎসর উদযাপন ত্রিপুরায়!

বর্তমান ত্রিপুরা সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে দুটি পৃথক রাজ্য-স্তরের কর্মসূচির আয়োজন করতে চলেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও রাজ্য সরকার। এই অনুষ্ঠানে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। রবিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা এ কথা জানান। তিনি বলেন, “২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখ ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছিল, যেখানে ভারতীয় জনতা পার্টি ফের ক্ষমতায় ফিরে আসে। এটি আমাদের জন্য এক আবেগঘন মুহূর্ত ছিল।” মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, অনেকেই তখন দাবি করেছিলেন যে বিজেপি এবার আর ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না। কিন্তু মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বিজেপির প্রতি আস্থা রেখেছে।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগামী ৮ মার্চ সরকারের পক্ষ থেকে আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে একটি রাজ্য-স্তরের অনুষ্ঠান টি অনুষ্ঠিত হবে। এই কর্মসূচিতে রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হবে। এছাড়া, বিজেপির পক্ষ থেকেও পৃথকভাবে আরেকটি বিশাল কর্মসূচি আয়োজন করা হবে, যেখানে বহু সংখ্যক বিজেপি কর্মী অংশগ্রহণ করবেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাথে যোগাযোগ করছি এবং তারা এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন এবং আমাদের সরকারের কাজ ও কৃতিত্ব নিয়ে সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হবে।” উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে প্রথমবার বিজেপি ত্রিপুরার ক্ষমতায় আসে এবং ২০২৩ সালের নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় ফিরে আসে। ফলে ত্রিপুরায় বিজেপির শাসনের এনিয়ে‌ সাত বছর পূর্ণ হয়েছে।

এদিন, ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজ সংক্রান্ত অভিযোগ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মানিক সাহা বলেন, তিনি ইতোমধ্যেই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন এবং তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে, তবে আইন অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ত্রিপুরা সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে বিজেপি শিবিরে উৎসবের আবহ বিরাজ করছে। রাজ্যব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সরকারের কার্যক্রম তুলে ধরার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই বর্ষপূর্তি উদযাপনকে কেন্দ্র করে বিজেপি রাজ্যের জনসংযোগ আরও শক্তিশালী করতে চাইছে। আগামী ৮ মার্চের অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপস্থিতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।About Us

ব্যাংকগুলি সরকারি প্রকল্পে ঋণ প্রদান করছে না

ঋণ প্রদানে তালবাহানার অভিযোগ বিভিন্ন ব্যাংকগুলি বিরুদ্ধে!

রাজ্যের বেকার যুবক-যুবতীদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে ব্যাংকগুলিকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়। আগরতলা টাউন হলে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জাতীয় স্তরের তুলনায় ত্রিপুরায় ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদানের হার অত্যন্ত কম। ফলে বেকার যুবক-যুবতীরা সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেলেও, ব্যাংক থেকে সহজে ঋণ না পাওয়ার কারণে তারা উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারছেন না। অর্থমন্ত্রী ব্যাংকগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় আরও সহজ শর্তে ঋণ মঞ্জুর করে।

রাজ্যের বিভিন্ন ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা কেন্দ্র সরকারের মুদ্রা লোন প্রকল্পের আওতায় ঋণ প্রদানে নানা তালবাহানা করছে। ফলে নতুন উদ্যোক্তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। একইভাবে, স্বাবলম্বন প্রকল্প-সহ অন্যান্য সরকারি ঋণ প্রকল্পের ক্ষেত্রেও ব্যাংকগুলোর গড়িমসি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজ্য সরকার বারবার ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে এই বিষয়টি তুলে ধরেছে। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা নিজেও ব্যাংকারদের সঙ্গে বৈঠকে জানিয়েছেন, বেকারদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে ঋণপ্রদান প্রক্রিয়া সহজ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি, যারা ঋণ নিয়ে নতুন শিল্প গড়ছেন, তাদের সময়মতো ঋণ পরিশোধের পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।

মহিলাদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে, স্বসহায়ক দলের মহিলাদের আর্থিকভাবে সশক্ত করতে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক (PNB)। ব্যাংকটির বিভিন্ন শাখা ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন স্বসহায়ক দলের সদস্যাদের ঋণ মঞ্জুর করেছে। এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় তাঁদের হাতে ঋণের চেক তুলে দেন। তিনি বলেন, অন্যান্য ব্যাংকগুলোকেও এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা উচিত এবং আরও বেশি সংখ্যক মহিলাকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া উচিত।

অর্থমন্ত্রী স্পষ্ট করেন যে, রাজ্যের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য ব্যাংকগুলির আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া জরুরি। তিনি বলেন, “জাতীয় স্তরের ব্যাংকগুলোর তুলনায় আমাদের রাজ্যের ব্যাংকগুলি অনেক কম ঋণ প্রদান করছে। তাই আমি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন আরও বেশি ঋণ প্রদানের জন্য এগিয়ে আসে এবং সরকারি প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করে।” রাজ্যের অর্থনীতি ও যুবকদের ভবিষ্যৎ উন্নতির জন্য ব্যাংকগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ঋণপ্রদান প্রক্রিয়াকে সহজ ও স্বচ্ছ করার জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী। এখন দেখার বিষয়, ব্যাংকগুলি এই আহ্বানে কতটা সাড়া দেয়।About Us

শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বীরচন্দ্র লাইব্রেরী

শিক্ষার্থীদের জন্য সেন্ট্রাল লাইব্রেরী সপ্তাহে ৭ দিন!

শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও পেশাগত উন্নতির কথা মাথায় রেখে ত্রিপুরা সরকার উচ্চশিক্ষা দফতরের নির্দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বীর চন্দ্র স্টেট সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর ক্যারিয়ার গাইডেন্স সেকশনের পাঠাগার কক্ষ এখন থেকে সপ্তাহের সাত দিন খোলা থাকবে। ফলে পড়ুয়ারা, গবেষকরা এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতিপ্রার্থীরা যেকোনো দিন লাইব্রেরীর এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।

আগে লাইব্রেরীর ক্যারিয়ার গাইডেন্স সেকশন সপ্তাহে ছয় দিন খোলা থাকত এবং সোমবার এটি বন্ধ থাকত। কিন্তু নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই সেকশনটি এখন সোমবারেও খোলা থাকবে। তবে লাইব্রেরীর অন্যান্য পরিষেবা বিভাগগুলোর ক্ষেত্রে সোমবারের ছুটি বহাল থাকবে। অর্থাৎ, শুধুমাত্র ক্যারিয়ার গাইডেন্স সেকশনের পাঠাগার কক্ষই সপ্তাহের প্রতিদিন খোলা থাকবে, অন্য পরিষেবাগুলি আগের নিয়ম অনুযায়ী সোমবার বন্ধ থাকবে। বীর চন্দ্র স্টেট সেন্ট্রাল লাইব্রেরী ত্রিপুরার অন্যতম প্রধান গণগ্রন্থাগার, যেখানে রয়েছে বিশালসংখ্যক বই, গবেষণা সামগ্রী এবং ডিজিটাল সংস্থান। শিক্ষার্থী ও গবেষকদের সুবিধার জন্য এখানে রয়েছে—

বিভিন্ন বিষয়ের বই ও গবেষণা সামগ্রী: লাইব্রেরীতে বিভিন্ন বিষয়ের উপর হাজার হাজার বই, পত্রিকা ও গবেষণা সামগ্রী সংরক্ষিত আছে, যা শিক্ষার্থীদের একাডেমিক গবেষণা ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  • ডিজিটাল লাইব্রেরী সুবিধা: অনলাইন রিসোর্স ও ই-বুক সুবিধার মাধ্যমে পাঠকেরা যেকোনো সময় প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন।
  • ক্যারিয়ার গাইডেন্স সেকশন: এই সেকশনে রয়েছে ক্যারিয়ার সম্পর্কিত বই, সরকারি ও বেসরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি সামগ্রী এবং পরামর্শদাতা পরিষেবা, যা তাদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সাহায্য করে।
  • শান্তিপূর্ণ পাঠাগার কক্ষ: গবেষকদের জন্য নির্দিষ্ট গবেষণা কক্ষ ও নিরিবিলি পাঠাগার কক্ষ রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা নিরবিচারে পড়াশোনা করতে পারেন।
  • ইন্টারনেট ও কম্পিউটার সুবিধা: আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় লাইব্রেরীতে ইন্টারনেট ও কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও প্রজেক্ট তৈরিতে সহায়তা করে।
  • সাপ্তাহিক সেমিনার ও কর্মশালা: লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে নিয়মিতভাবে ক্যারিয়ার ও শিক্ষামূলক সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

ত্রিপুরা সরকারের উচ্চশিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই নতুন নিয়মের ফলে—

✔️ শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন লাইব্রেরী ব্যবহার করতে পারবেন, যা তাদের একাডেমিক উন্নতিতে সহায়ক হবে।
✔️ যারা কর্মরত অবস্থায় পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের সময় অনুযায়ী লাইব্রেরীর সুবিধা নিতে পারবেন।
✔️ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতিপ্রার্থীরা আরও বেশি সময় লাইব্রেরীর রিসোর্স ব্যবহার করতে পারবেন।
✔️ গবেষক ও শিক্ষকদের জন্য গবেষণা সামগ্রী ও ডিজিটাল রিসোর্স ব্যবহার করার সুযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে।

ত্রিপুরা সরকারের উচ্চশিক্ষা দফতরের অতিরিক্ত সচিব স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, পরিবর্তিত সময়সূচি অবিলম্বে কার্যকর হবে। শিক্ষার্থীরা সপ্তাহের প্রতিদিন লাইব্রেরীর ক্যারিয়ার গাইডেন্স সেকশনের পাঠাগার কক্ষ ব্যবহার করতে পারবেন। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে শিক্ষার্থী ও গবেষক মহল। তাদের মতে, লাইব্রেরীর এই গুরুত্বপূর্ণ অংশ সপ্তাহে সাত দিন খোলা থাকার ফলে অনেকেই উপকৃত হবেন, বিশেষত যারা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বা গবেষণার কাজে যুক্ত রয়েছেন।About Us

ভুয়া ঔষধ বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

নজরদারির গাফিলতিতে ত্রিপুরার বাজারে ভুয়া ঔষধ।

ত্রিপুরায় ভুয়া ঔষধের আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে। ঔষধের গুণমান নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার কিউআর কোড বাধ্যতামূলক করলেও, রাজ্যে এই নিয়ম কার্যকর হয়নি। ঔষধ বিক্রেতাদের সচেতনতার অভাব, প্রশাসনের গাফিলতি ও ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের নিষ্ক্রিয়তার কারণে সাধারণ মানুষ ভুয়া ঔষধ সনাক্ত করতে পারছেন না। ফলে এই ঔষধ সেবনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যঝুঁকি বহুগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ত্রিপুরার ঔষধ বাজারে ভুয়া ও অনুমোদনহীন ঔষধের ছড়াছড়ি নিয়ে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, ঔষধের গুণমান নিশ্চিত করতে প্রতিটি প্যাকেটে কিউআর কোড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে রাজ্যে এই নিয়মের কার্যকর প্রয়োগের কোনও লক্ষণ নেই। ঔষধ নিয়ন্ত্রণ বিভাগও (ড্রাগ কন্ট্রোল) এই বিষয়ে কোন নজরদারি চালাচ্ছে না, যার ফলে সাধারণ মানুষ নকল ঔষধের শিকার হচ্ছেন।

নির্দেশিকা

ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভুয়া ঔষধ প্রতিরোধে কিউআর কোড স্ক্যানিং ব্যবস্থা চালু করেছে। এই কোড স্ক্যান করলেই ঔষধের উৎপাদক সংস্থা, ব্যাচ নম্বর, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ উত্তীর্ণের সময়সহ যাবতীয় তথ্য জানা যাবে। এর ফলে সহজেই ভুয়া ঔষধ চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। কিন্তু ত্রিপুরার অধিকাংশ ঔষধের দোকানে এখনও কিউআর কোড স্ক্যানিং ব্যবস্থা চালু হয়নি। বিক্রেতাদের একাংশ কিউআর কোডের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল নন। সাধারণ জনগণের মধ্যেও এই বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। ফলে তাঁরা যাচাই না করেই ঔষধ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন, যা তাঁদের স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রিপোর্ট

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে বাজারে থাকা প্রায় ৩ শতাংশ ঔষধ ভুয়া, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। বিভিন্ন রাজ্যে একাধিকবার ভুয়া ঔষধের কারবার ধরা পড়েছে, এবং ত্রিপুরাও এই তালিকায় নতুন নয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ত্রিপুরার মতো ছোট রাজ্যেও অনুমোদনহীন ঔষধের ব্যবসা চলছে গোপনে। বাজারে এমন কিছু ঔষধ পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলো কেন্দ্রীয় অনুমোদনপ্রাপ্ত নয় এবং কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। এর ফলে রোগীরা ঔষধ গ্রহণের পর উপযুক্ত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়ছেন।

গাফিলতিঃ

ত্রিপুরার ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগ রাজ্যে ভুয়া ঔষধ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। অনুমোদনহীন ঔষধের বিক্রি বাড়লেও ঔ অভিযান চালানো হচ্ছে না। ফলে ভুয়া ঔষধের ব্যবসা রমরমিয়ে চলেছে এবং সাধারণ মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, রাজ্যের অনেক ঔষধ দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ ও অনুমোদনহীন ঔষধ বিক্রি হচ্ছে, যা ক্রেতাদের অজান্তেই স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া ব্যবস্থা না নেওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

পরামর্শ

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ত্রিপুরায় দ্রুত কিউআর কোড ব্যবস্থা বাস্তবায়ন না হলে সাধারণ মানুষ আরও বেশি ভুয়া ঔষধের ফাঁদে পড়বেন। তাই এই সমস্যা সমাধানে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে –

✅ সরকারকে কিউআর কোড ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
✅ সংবাদমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে জনগণকে ঔষধের বৈধতা যাচাইয়ের পদ্ধতি সম্পর্কে জানানো প্রয়োজন।
✅ ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগকে আরও সক্রিয় হতে হবে এবং নিয়মিত অভিযান চালাতে হবে।
✅ অনুমোদনহীন ঔষধ বিক্রির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রশ্নচিহ্নঃ

রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর ও ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের নিষ্ক্রিয়তায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা থাকলেও তা কার্যকর করতে রাজ্যের অনীহা কেন? প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজ্যের প্রশাসন যদি দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ত্রিপুরার বাজারে ভুয়া ঔষধের রমরমা চলতেই থাকবে। এতে সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে।

শেষ কথা

ত্রিপুরায় ভুয়া ঔষধের ছড়িয়ে পড়া শুধুমাত্র স্বাস্থ্য সংকট নয়, এটি প্রশাসনিক ব্যর্থতারও পরিচায়ক। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের সঙ্গে কোনওরকম আপস করা যায় না। তাই সরকার, প্রশাসন এবং ঔষধ নিয়ন্ত্রণ বিভাগকে একযোগে কাজ করতে হবে। নয়তো পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।About Us

মহিলা স্বশক্তিকরণ

মহিলা ও পন সংক্রান্ত মামলা নির্মূলের আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর!

ত্রিপুরা রাজ্যের মহিলাদের স্বনির্ভরতা ও সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বর্তমান সরকার। রাজ্যে পণ সংক্রান্ত মামলাগুলিকে সম্পূর্ণ নির্মূল করার লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। শুক্রবার আগরতলার ৩৩ নং পুর ওয়ার্ডের মহিলা স্বশক্তিকরণ কমিটির উদ্যোগে ‘স্বাবলম্বী নারী, স্বাবলম্বী ত্রিপুরা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা একথা জানান।

সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ত্রিপুরায় পণ সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। তবে আমরা কোনো ঝুঁকি নিতে চাই না। আমরা চাই, রাজ্যে এই ধরনের মামলাগুলির সংখ্যা শূন্যে নেমে আসুক। কোনো নারী যাতে এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন না হন, সেজন্য সরকার নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে।” তিনি জানান, পণপ্রথা প্রতিরোধের জন্য প্রশাসনিক স্তরে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ৮ জন ডেপুটি কালেক্টরকে ডিস্ট্রিক্ট ডাউরি প্রহিবিশন অফিসার এবং মহকুমা শাসকদের ডাউরি প্রহিবিশন অফিসার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “নারীরা সমাজের চালিকাশক্তি। ঘরের মধ্যে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, সমাজেও তাঁদের সমানভাবে নেতৃত্ব দিতে হবে। মহিলাদের স্বশক্তিকরণের ওপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর উদ্যোগেই তিন তালাক প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে, যা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মা-বোনেদের জন্য এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।” তিনি বলেন, “আগের সরকার শুধুমাত্র মিছিল-মিটিংয়ে  নারীদের ব্যবহার করত, কিন্তু আমাদের সরকার মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে তারা স্বাবলম্বী হচ্ছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস পাচ্ছেন।” মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, “শুধুমাত্র পুরুষদের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। বর্তমানে তারা পাইলট, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, মহাকাশচারী থেকে শুরু করে ট্রেন চালানো এবং গাড়ি চালানোর মতো কাজেও নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আজ তাঁরা আর কোনো ক্ষেত্রেই পিছিয়ে নেই, বরং পুরুষদের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে চলেছেন।”

ত্রিপুরা রাজ্য সরকার ২০২২ সালে ত্রিপুরা স্টেট পলিসি ফর এমপাওয়ারমেন্ট অফ ওমেন চালু করেছে, যার মাধ্যমে মহিলাদের কল্যাণে একাধিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ও আরবান লোক্যাল বডির নির্বাচনে মহিলাদের ৫০% এর বেশি আসন সংরক্ষিত করা হয়েছে। এছাড়া, টিএসআর বাহিনীতেও ৩৩% সংরক্ষণ নিশ্চিত করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে নারী শক্তিকে এগিয়ে নিতে রাজ্য সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, “অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে অনেক মেয়েকে স্কুল ছাড়তে হয়। তাই রাজ্য সরকার ছাত্রীদের জন্য সমস্ত ধরণের ফি মুকুবের ব্যবস্থা করেছে।” তাছাড়া, গন্ডাতুইসায় একটি নতুন ৫০ বেডের ছাত্রী হোস্টেল স্থাপন করা হয়েছে। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় নারী শক্তি পরিচালিত পুলিশ স্টেশন গড়ে তোলা হয়েছে। আগে মহিলারা প্রশাসনিক কাজে ভয় পেতেন, কিন্তু এখন তারা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন এবং নির্ভয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দেশে এমএনরেগা প্রকল্পের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও আর্থিক স্বনির্ভরতা নিশ্চিত হয়েছে। আগে এই প্রকল্পের মাধ্যমে মহিলাদের মজুরির অর্থ মধ্যস্থতাকারীদের হাতে চলে যেত, কিন্তু বর্তমানে প্রত্যেক শ্রমিকের মজুরি সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আগে মহিলারা রাজনৈতিক চাপের কারণে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য হতেন। কিন্তু এখন তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সরকারি প্রকল্পগুলির সুবিধা গ্রহণ করছেন।”

মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন যে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়। তিনি বলেন, “আমাদের সরকার নারীদের অধিকার রক্ষা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। শুধু ভাষণে নয়, বাস্তব কাজের মাধ্যমেই আমরা মহিলাদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি।”

এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ সভাপতি তথা সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, ডেপুটি মেয়র মনিকা দাস দত্ত, পুর কর্পোরেটর অভিজিত মল্লিক, সদর আরবান জেলার সভাপতি অসীম ভট্টাচার্য, বড়দোয়ালি মন্ডলের সভাপতি শ্যামল কুমার দেব, মার্কফেডের ভাইস চেয়ারম্যান সঞ্জয় সাহা সহ অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ। মহিলাদের স্বনির্ভরতা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ত্রিপুরা সরকার যেভাবে কাজ করছে, তা রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার নেতৃত্বে ত্রিপুরা মহিলাদের জন্য এক নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।About Us

উন্নয়নমূলক কাজে রাজনীতি নয়

উন্নয়নের প্রশ্নে সমালোচনার সম্মুখীন কমিউনিস্ট!

সাধারণ মানুষের স্বার্থে উন্নয়নমূলক কাজকে রাজনীতির হাতিয়ার না করার আহ্বান জানালেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। তিনি বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে চলেছে। ইতিমধ্যেই উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে জিএসডিপি (গ্রস স্টেট ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) ও মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে ত্রিপুরা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছেছে, যা সরকারের উন্নয়নমূলক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। শুক্রবার আগরতলার ৩৯ নং পুর ওয়ার্ডের উদ্যোগে আয়োজিত এক মেগা রক্তদান শিবিরের উদ্বোধনকালে মুখ্যমন্ত্রী একথা বলেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি রাজ্যের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে ফের একবার কমিউনিস্ট শাসনের তীব্র সমালোচনা করেন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রক্তদান শুধুমাত্র মানবিক দায়িত্ব নয়, এটি স্বাস্থ্যের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, দাতার শরীরে কোনো অসুখ আছে কি না। তেমনই সমাজের মধ্যেও যদি অস্বচ্ছতা থাকে, তাহলে সেটাও সমাজ গ্রহণ করবে না। একসময় ত্রিপুরায় সর্বত্র অস্বচ্ছতা বিরাজ করছিল। যার ফলে জনগণ সেই পুরনো শাসনব্যবস্থাকে পরিত্যাগ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সর্বদা স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন, আর বর্তমান সরকার সেই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই কাজ করছে।”

তিনি আরও বলেন, রক্তের চাহিদা বাজার থেকে মেটানো সম্ভব নয়, বরং তা স্বেচ্ছা রক্তদানের মাধ্যমেই পূরণ করা যায়। হাসপাতালগুলোর অপারেশনের সময় রক্তের প্রয়োজন হয়, তাই এই ধরনের কর্মসূচি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ত্রিপুরাবাসীর মানবিকতা ও সহযোগিতার মনোভাবের প্রশংসা করে বলেন, কোভিড মহামারির সময় এবং সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতিতেও সাধারণ মানুষ প্রশাসনের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। মাত্র ৩-৪ দিনের মধ্যে সরকার দুর্যোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ত্রিপুরা বর্তমানে উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম সেরা পারফর্মিং রাজ্য হিসেবে উঠে এসেছে। তিনি বলেন, “ত্রিপুরা উত্তর-পূর্ব ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয়ের রাজ্য। অথচ এটি সারা দেশের মধ্যে তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য। তার পরও আমরা একাগ্রতার অভাব দেখাইনি। একসময় এই রাজ্যে শুধু ‘জিন্দাবাদ’ স্লোগান তোলা হতো, কিন্তু বাস্তব উন্নয়ন তেমন কিছুই হয়নি।”

কমিউনিস্ট শাসনের কঠোর সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কমিউনিস্টরা রাজ্যে চাকরির সুযোগ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে গেছে। তারা রাস্তাঘাট, ড্রেন সংস্কার থেকে শুরু করে উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করেছিল। ঋণের বোঝা রেখে গিয়েছিল তারা, যা বর্তমান সরকারকে পরিশোধ করতে হচ্ছে। গত অর্থবছরে রাজ্যের বাজেট ছিল ২৭,৮০০ কোটি টাকা, যা এবার আরও বাড়তে পারে। আমাদের নিজস্ব উৎস থেকে মাত্র ৩,৭০০ কোটি টাকা আসে, তার মধ্যে ২৫% আমরা এডিসিকে দিতে বাধ্য। তবুও ডাবল ইঞ্জিন সরকারের সুবিধার কারণে উন্নয়নমূলক কাজ জোরদার করা সম্ভব হয়েছে। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।”

এদিকে, রাজধানীর লেইক চৌমুহনী বাজারে সম্প্রতি পরিচালিত উচ্ছেদ অভিযান প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। সরকার যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা জনগণের কল্যাণের জন্যই।”

এই রক্তদান শিবিরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র ও বিধায়ক দীপক মজুমদার, বিধায়িকা মীনা রানী সরকার, ৩৯ নং পুর ওয়ার্ডের কর্পোরেটর অলক রায়সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। মুখ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যের মাধ্যমে পরিষ্কার বার্তা দিলেন যে, রাজ্যের উন্নয়নের পথে বাধা নয়, বরং সহযোগিতা করাই সকলের উচিত। আগামীতেও উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।About Us

তিপ্রা চুক্তি নির্বাচনী চাল

তিপ্রা চুক্তি নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ!

কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন মন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মন বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়ে বলেছেন, তিপ্রা মথা, কেন্দ্র এবং ত্রিপুরা সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিপাক্ষিক চুক্তি (তিপ্রা চুক্তি) ছিল নিছকই একটি নির্বাচনী চাল, যার মাধ্যমে রাজ্যের আদিবাসীদের প্রতারিত করা হয়েছে।

তিপ্রা চুক্তির প্রথম বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে শ্রী রায় বর্মন অভিযোগ করেন, বিজেপি রাজনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তিপ্রা মথার প্রতিষ্ঠাতা প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মাকে ব্যবহার করেছে এবং পরে তাঁর দলকে রাজ্য সরকারের অংশ করে নিলেও চুক্তির প্রতিশ্রুতিগুলি বাস্তবায়নের কোনও উদ্যোগ নেয়নি। তিনি জানান, ২ মার্চ ২০২৪ তারিখে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি ছয় মাসের মধ্যে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও, এক বছর কেটে গেলেও কোনও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। “আসলে কী বাস্তবায়িত হওয়ার কথা ছিল, সেটাই কেউ জানে না। কারণ এই চুক্তির মধ্যে কোনও স্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই,” – মন্তব্য করেন কংগ্রেস নেতা।

সুদীপ রায় বর্মন বলেন, বিজেপির প্রকৃত উদ্দেশ্য আদিবাসীদের ক্ষমতায়ন নয়। তিনি উত্তর-পূর্বের ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত এলাকায় উন্নয়নের অভাব এবং ১২৫তম সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, বিজেপি চাইলে সহজেই বিলটি পাশ করাতে পারত, কিন্তু তা করেনি। তিনি রাজ্য সরকারকে ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদের (টিটিএএডিসি) অধীনে ভিলেজ কমিটি নির্বাচনের বারবার বিলম্বের জন্য দায়ী করেন। যদিও ত্রিপুরা হাইকোর্টে সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হবে, কিন্তু এ নিয়ে এখনও কোনও অগ্রগতি হয়নি। “যখন জনস্বার্থের বদলে রাজনৈতিক স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, তখন টিটিএএডিসি এলাকার মানুষের দুর্দশা স্পষ্ট হয়ে ওঠে,” – বলেন রায় বর্মন।

তিনি দাবি করেন, ভিলেজ কমিটির নির্বাচন ১২৫তম সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ হওয়ার পরই হওয়া উচিত, যাতে আদিবাসী এলাকায় উন্নয়নের জন্য যথাযথ তহবিলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়। “সংবিধান সংশোধন হলে ভিলেজ কমিটিগুলো সরাসরি কেন্দ্রীয় তহবিল পাবে, যেমনটি বর্তমানে পঞ্চায়েত রাজ ও পৌরসভাগুলি ৭৩তম ও ৭৪তম সংশোধনী আইনের মাধ্যমে পেয়ে থাকে,” – তিনি ব্যাখ্যা করেন। শ্রী রায় বর্মন আরও অভিযোগ করেন, বিজেপি সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে ১২৫তম সংশোধনী বিল পাশ করতে দেরি করছে, কারণ এতে স্বশাসিত জেলা পরিষদগুলোর ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, যা মূলত খ্রিস্টান আদিবাসীদের অধীন।

“এই মানসিকতার কারণেই আদিবাসীদের সাংবিধানিক অধিকার দিতে দেরি করা হচ্ছে,” – বলেন কংগ্রেস নেতা। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে দ্রুত ১২৫তম সংবিধান সংশোধনী পাশ করার আহ্বান জানান এবং বলেন, কংগ্রেস দল সরাসরি তহবিলপ্রাপ্তির দাবিকে সমর্থন করে। “জেলা পরিষদ এলাকাগুলোর বাসিন্দারা জিএসটি’র মাধ্যমে পরোক্ষ কর দেন, তাই তাদেরও কর রাজস্বের ন্যায্য অংশ পাওয়ার অধিকার রয়েছে,” – বলেন সুদীপ রায় বর্মন। তিনি বলেন, বিজেপি একদিকে আদিবাসী ও তিপ্রা মথার নেতৃত্বকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে, অন্যদিকে কংগ্রেস সবসময় ত্রিপুরার আদিবাসীদের অধিকার ও ক্ষমতায়নের জন্য লড়াই করবে।About Us

পঞ্চায়েতস্তরে দুর্নীতি

পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ি থেকে উদ্ধার সরকারি সিমেন্ট!

রাজ্যের পঞ্চায়েত স্তরে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন কিছু নয়। তবে এবার সেই দুর্নীতির আঁচ এসে পড়েছে জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মার নির্বাচনী ক্ষেত্র কৃষ্ণপুরে। চাঞ্চল্যকর ঘটনা, মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের এক প্রভাবশালী বিজেপি নেতা নির্মল সরকারের বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয়েছে ২৮ বস্তা সরকারি সিমেন্ট! অভিযোগ উঠেছে, সরকারি প্রকল্পের কাজে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ এই সিমেন্ট তিনি নিজের স্বার্থে ব্যবহার করার জন্য বাড়িতে মজুত রেখেছিলেন।

সূত্রের খবর, মধ্য কৃষ্ণপুর পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামী তথা বিজেপির খোয়াই জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল সরকারের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে ২৮ বস্তা সরকারি সিমেন্ট। স্থানীয় বাসিন্দারা এবং বিজেপির একাংশই এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হন এবং ব্লকের আধিকারিকদের খবর দেন। পরে ব্লকের কর্মীরা এসে নির্মল সরকারের বাড়ি থেকে সিমেন্ট উদ্ধার করেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকার একটি সরকারি ড্রেন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ ছিল এই সিমেন্ট। কিন্তু অভিযোগ, ড্রেনের কাজ সম্পন্ন না করেই নির্মল সরকার ঐ সিমেন্ট নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। এ নিয়ে বিজেপির স্থানীয় কর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভ ছড়িয়েছে।

এই ঘটনার পর বিজেপির স্থানীয় একাংশ নেতারা সরাসরি নির্মল সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তাঁদের বক্তব্য, নির্মল সরকার দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি নির্মাণসামগ্রী লুটপাট করছেন। সরকারি ইট, রড ও সিমেন্ট ব্যবহার করে নিজের বাড়ি তৈরি করারও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, জমি দখলের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন তিনি।

তবে এত বড় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরও নির্মল সরকারের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। কেন এখনও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো না, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিজেপির কর্মীদের একাংশও এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের বক্তব্য, যাঁর বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাঁকে কীভাবে খোয়াই জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব দেওয়া হলো? কাদের অনুমোদনে তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হলেন?

এই ঘটনার পর বিরোধী দলগুলিও সরব হয়েছে। সিপিআইএম এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, বিজেপির আমলে পঞ্চায়েত স্তর থেকে শুরু করে রাজ্য স্তর পর্যন্ত দুর্নীতি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বিরোধীদের বক্তব্য, ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ার কারণেই নির্মল সরকারের বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

এখন প্রশ্ন একটাই—নির্মল সরকারের বাড়ি থেকে সরকারি সিমেন্ট উদ্ধারের পরও কেন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো না? প্রশাসনের নীরবতা কি তাঁকে আড়াল করার প্রচেষ্টা? বিজেপির একাংশও যখন দুর্নীতির অভিযোগ তুলছে, তখন কি দল এই বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেবে? না কি সবকিছু ধামাচাপা পড়ে যাবে? এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন ও দল কী সিদ্ধান্ত নেয়। কৃষ্ণপুরের সাধারণ মানুষের একটাই দাবি—যেই দুর্নীতি করুক না কেন, তার বিরুদ্ধে অবিলম্বে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক।About Us