বাংলাদেশ বিজয় দিবসে এলবার্ট এক্কা পার্কে অপমানিত হলেন শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা। শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করার কোনো সুযোগ পেলেন না তিনি। সেনাবাহিনীর তরফে তাঁকে এলবার্ট একা পার্কের শহীদ স্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করার জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অপমানিত মন্ত্রী বিকালের অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতেও রাজ্যে বিজয় দিবস পালিত হয়। অস্বীকার করার উপায় নেই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে এই দেশের বীর সেনাদের অবদান ছিলো। মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনারা ঝাঁপিয়ে পড়ার কারণেই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। সোমবার মুক্তিযুদ্ধে যেসব বীর সেনানীরা শহীদ হয়েছেন তাদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। প্রতিবারের মতো এবারও অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নাল্লু। এর আগে প্রস্তুতি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো এলবার্ট এক্কা পার্কে বিজয় দিবসের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে প্রথমেই পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন রাজ্যপাল। রাজ্যপাল শ্রদ্ধা জানানোর পরেই রাজ্য মন্ত্রিসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য কিংবা সেনাবাহিনীর আধিকারিকরা একেক করে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। জেলাশাসক অফিসের প্রস্তুতি বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো সেই সিদ্ধান্ত মানেনি সেনাবাহিনীর আধিকারিকরা। দেখা গেছে, রাজ্যপাল এলবার্ট এক্কা পার্কে পৌঁছানোর আগেই সেনাবাহিনীর এক আধিকারিক আনুষ্ঠানিক ভাবে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এরপর রাজ্যপাল এসে পৌঁছালে তিনি শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জওয়ানদের স্মৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেছেন। এরপর রাজ্যপাল সাইকেল র্যালিতে অংশগ্রহণকারীদের সাথে মিলিত হন। সেইসময় ছিলেন রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা। কিন্তু তাকে শহীদ স্তম্ভে গিয়ে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করতে সেনাবাহিনীর তরফে বলা হয়নি। অথচ সেইসময় অতিরিক্ত জেলাশাসক সজল বিশ্বাস, মহকুমা শাসক সহ প্রশাসনের আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনেই এই ঘটনা ঘটে। স্বাভাবিক ভাবেই দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে উপস্থিত সকলের।
Category: cরাজ্য ও রাজনীতির খবর
বিনিয়োগকারীদের রাজ্যে টানতে মুম্বাই ছুটে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী
উত্তর পূর্বের রাজ্য ত্রিপুরায় বিভিন্ন প্রকল্প স্থাপনের বিষয়ে এগিয়ে আসার জন্য বিনিয়োগকারীদের অনুরোধ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এজন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সমস্ত প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন তিনি। সোমবার মুম্বাইয়ের কোলাবায় তাজমহল প্যালেস হোটেলে উত্তর-পূর্ব বাণিজ্য ও বিনিয়োগ রোড শোতে বক্তব্য রাখার সময় এবিষয়ে গুরুত্ব তুলে ধরেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, মুম্বাইয়ে রোড শো আয়োজন করায় আমি এই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ও কেন্দ্রীয় ডোনার মন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। উত্তর পূর্বাঞ্চলে ব্যবসায়িক সম্ভাবনা ও বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি করতে কেন্দ্রীয় ডোনার মন্ত্রক বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির বিকাশে বরাবরই গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উত্তর পূর্বাঞ্চলকে অষ্টলক্ষী হিসেবে তুলে ধরেছেন তিনি। এই অঞ্চলের উন্নয়নে অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি ঘোষণা করেছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলেরই একটি রাজ্য ত্রিপুরা, যেটা বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম সীমান্ত বেষ্টিত রয়েছে। পূর্বাংশে রয়েছে আসাম ও মিজোরাম রাজ্য। এটা দেশের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে জনসংখ্যার দিক দিয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য। ত্রিপুরার রয়েছে ঐতিহ্যবাহী কৃষ্টি সংস্কৃতি। ত্রিপুরা দেশের মধ্যে এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলে অন্যতম শান্তিপূর্ণ রাজ্য। এখানে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল মজুত রয়েছে, যা একে উদ্বৃত্ত শক্তির জোগান দেয়। ত্রিপুরার অর্থনীতি প্রাথমিকভাবে কৃষি এবং সংশ্লিষ্ট শিল্পের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়। মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ২০২৪ সালে রাজ্যের আনুমানিক মাথাপিছু আয় সর্বোচ্চ ১.৭৭ লক্ষ টাকা, যা ২০২৩ সালে ১.৫৭ লক্ষ টাকা ছিল। ত্রিপুরার জিএসডিপি ৮.৯% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা উত্তর পূর্বাঞ্চলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জিএসডিপি বৃদ্ধির হার। আমরা রাজ্যের সামর্থ্য ও সম্পদকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে একটি বিনিয়োগকারী বান্ধব পরিবেশ তৈরি করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সারা রাজ্যে শিল্প ও মৌলিক পরিকাঠামো উন্নয়নে প্রয়াস জারি রেখেছে রাজ্য সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হিরা মডেল দিয়েছেন আমাদের। এজন্য যোগাযোগ ক্ষেত্রেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। হাইওয়ে, ইন্টারনেট, রেলওয়ে এবং এয়ারওয়েতে প্রভূত উন্নতি হয়েছে রাজ্যে। মহারাজা বীর বিক্রম (এমবিবি) বিমানবন্দরকে আপগ্রেড করা হয়েছে, যা এটিকে এই অঞ্চলের দ্বিতীয় ব্যস্ততম ও আকর্ষণীয় বিমানবন্দরে পরিণত করেছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় রাজ্য সরকার দক্ষিণ জেলার প্রান্তিক শহর সাব্রুমে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ) গড়ে তুলেছে, যা ইতিমধ্যেই বিনিয়োগকারীদের আকর্ষন বাড়িয়েছে। রাবার, বাঁশ, প্রাকৃতিক গ্যাস, কৃষিজাত পণ্য, আগর, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চা, হস্তশিল্প এবং পর্যটনের মতো দেশীয় সম্পদ ব্যবহার করে শিল্পের জন্য প্রচুর সুযোগ রয়েছে ত্রিপুরায়। আমাদের উত্তর জেলায় ২,০০০ হেক্টর জুড়ে ৫ মিলিয়নেরও বেশি আগর গাছ রয়েছে। আমরা বোধজংনগরে একটি রাবার পার্ক স্থাপন করেছি। আর একটি দক্ষিণ জেলায় পরিকল্পনা করা হয়েছে। ত্রিপুরায় ২১ প্রজাতির বাঁশ রয়েছে এবং একটি ব্যাম্বো পলিসি চালু করা হয়েছে। এর পাশাপাশি উদ্যান জাতীয় ফসলের জন্য যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে ত্রিপুরার। যেমন কুইন আনারস, যাকে রাজ্য ফল হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং এটি জিআই ট্যাগ পেয়েছে। পর্যটন ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে রাজ্যে। আর পর্যটন শিল্পে ক্রমশ বিভিন্ন বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে যাচ্ছে ত্রিপুরা। পর্যটকের সংখ্যা এখন দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে ত্রিপুরায়। ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও অন্যতম শক্তিশালী রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে ত্রিপুরা। এখানে ই-অফিস এবং ই-ক্যাবিনেটের মতো অসাধারণ উদ্যোগ চালু করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ডোনার মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য এম সিন্ধিয়া, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা, ডোনার মন্ত্রকের সচিব চঞ্চল কুমার, যুগ্ম সচিব মোনালিসা দাস সহ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ। এর পাশাপাশি এই সামিটে অংশগ্রহণ করেন বিশিষ্ট উদ্যোগপতি, শিল্পপতি সহ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রতিনিধিগণ।
ত্রিপুরা রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতি সশক্তিকরনে প্রাণী সম্পদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রাণীপালনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ তথা সামাজিক- অর্থনৈতিক উন্নতিতে স্ব-সহায়ক গোষ্ঠী বা এসএইচজি গ্রুপগুলোর সক্রিয় অংশ গ্রহন অত্যন্ত জরুরী। প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মাধ্যমে রাজ্যের জিএসডিপি বৃদ্ধি পেতে পারে। প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের ব্যবস্থাপনায় বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাভবনে আয়োজিত এ-হেল্প প্রোগ্রামের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রকল্প রূপায়ণ করছেন। রাজ্য সরকারও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত দিশায় কাজ করছে। এ- হেল্প প্রকল্পের মাধ্যমে এখন দূরদূরান্তে থাকা পশুপাখিরাও স্বাস্থ্য পরিষেবায় পশু সখীদের মাধ্যমে উপকৃত হবে। আর এই বিষয়কে বিবেচনায় রেখে ২০২১ এর ২লা সেপ্টেম্বর গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের মধ্যস্থতায় পশুপালন ও দুগ্ধশিল্প দপ্তর এবং রাষ্ট্রীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশন এর মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদন করে কেন্দ্রীয় সরকার। এই চুক্তি অনুযায়ী, বিভিন্ন স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর সদস্যরা যারা পশুসখী হিসেবে নিয়োজিত, তারা প্রাণী স্বাস্থ্যের প্রাথমিক পরিষেবা প্রদানে এক্রিডিটেড এজেন্ট ফর হেল্থ এন্ড এক্সটেনশন অফ লাইভস্টক প্রোডাকশন এর স্বীকৃত প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের পশু চিকিৎসা পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ত্রিপুরায় বর্তমানে একটি ভেটেরিনারি কলেজ রয়েছে। সেখানে ফ্যাকাল্টির কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে এই সমস্যা সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে এই দপ্তরের কর্মীরা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি পশু স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। এ – হেল্প এর অধীনে স্বীকৃত প্রতিনিধি হিসাবে পশুপালন কর্মীদের অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে রাজ্যের পশু স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে আরো উন্নত করবে।
ডাঃ সাহা বলেন, এই প্রকল্পের অধীনে ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের (টিআরএলএম) সাথে যুক্ত পশুপালন কর্মীরা স্বীকৃত এ-হেল্প প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হবেন। রাজ্যের প্রানী সম্পদ বিকাশ দপ্তর ন্যাশনাল ডায়েরি ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট বোর্ড এর সহায়তায় এই সমস্ত নির্বাচিত পশু-সখীদের ১৬ দিনের বিশেষ প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করবে। প্রশিক্ষন পরবর্তীকালে সমস্ত প্রশিক্ষন প্রাপ্ত পশু-সখীদের মাধ্যমে প্রাথমিক প্রাণী পরিষেবা একেবারে গ্রামীন স্তরের প্রাণী পালকদের ঘরে পৌঁছে দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি সঠিক প্রাণী স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানে কৃত্রিম প্রজনন টিকাকরনের মত পরিষেবাগুলি স্থানীয় পশু চিকিৎসকদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে করা হবে। স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের পাশাপাশি গ্রামের গবাদি পশুপাখীর পরিসংখ্যা নথিভুক্ত করা, পশুপাখীর জন্ম মৃত্যুর হিসাব রাখাও এ-হেল্প পশু সখীদের কাজে আসবে। এই প্রকল্পে পশু সখীরা গ্রামের প্রাণী পালকদের বিজ্ঞান সম্মত প্রাণী পরিচর্যা ও অন্যান্য প্রাণী পালক বিষয়ক তথ্য সরবরাহ করবে। এদিন অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণী সম্পদ বিকাশ মন্ত্রী সুধাংশু দাস, সচিব দীপা ডি নায়ার সহ দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ।
পাগল কুকুরের কামড়ে গুরতর আহত হলেন প্রায় পনেরো জন। এদের মধ্যে দশ জনের আঘাত গুরুতর বলে জানিয়েছেন ধর্মনগরে জেলা হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক। তিনি জানান গত কয়দিনে কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে বিভিন্ন বয়ষের ব্যক্তিরা হাসপাতালে আসছেন। আজ যারা এসেছেন তাদের মধ্যে দশজনের অবস্থা খুবই খারাপ। এদিকে পাগল কুকুরের দাপটে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে ধর্মনগর শহর জুড়ে। পাগল কুকুরের কামড়ে আহত পুলিশ আধিকারিক সুলেমান রিয়ান জানান,তাদের কাছে খবর আসে একটি কুকুর রাস্তায় যাকে তাকে কামড় দিচ্ছে। সেই খবর পাওয়ার পর তারা যখন ছুটে যায় রাজবাড়ি এলাকায়,তখন কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকেও কামড় দিয়ে দেয় পাগল কুকুরটি। এদিনই পুর পরিষদের এক মহিলা সাফাই কর্মীকে পাগল কুকুর কামড় দেয়। পরে তাকে দমকল কর্মীরা ছুটে গিয়ে উদ্ধার করে ধর্মনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাছাড়াও আরও কয়জন পথচারী পাগল কুকুরের আক্রমনের শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল গত কয়দিন ধরে পাগল কুকুরটি নির্বিচারে যাকে তাকে কামড়ে চললেও এ বিষয়ে প্রশাসনকে তেমন ব্যবস্থা গ্রহনের খবর নেই।ফলে স্থানীয় জনমনে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সহ আতঙ্ক বিরাজ করছে।
নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করাই হচ্ছে গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষায় বদ্ধপরিকর। নাগরিকদের মানবাধিকার যাতে কোনওভাবে লঙ্ঘিত না হয় রাজ্য সরকার সে বিষয়ে সচেষ্ট রয়েছে। আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা একথা বলেন। ত্রিপুরা মানবাধিকার কমিশনের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এবছর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের মুল ভাবনা হল ‘আওয়ার রাইট, আওয়ার ফিউচার, রাইট নাউ’।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের সভ্যতা, সংস্কৃতি পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। একে ধবংস করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে বিভেদকামী একটি শক্তি এখনও সচেষ্ট রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ মন্ত্রে সকলকে চলার কথা বলেছেন। আর এই ভাবনা নিয়ে চললেই মানবাধিকার দিবস পালন ফলপ্রসু হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৩ সালে মানবাধিকার সুরক্ষা আইন লাগু হলেও বিগত রাজ্য সরকার মানবাধিকার কমিশন গঠন করার জন্য কোনও সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশের পর ২০১৬ সালে ত্রিপুরা মানবাধিকার কমিশন গঠিত হয়। কিন্তু এই কমিশন জনগণের আশা আকাঙ্খা পূরণে কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি। নতুনভাবে গঠিত বর্তমান কমিশন অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি করছে এবং জনগণের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী নেতৃত্বে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ সহ বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে এবং ক্ষতিগ্রস্থদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সারা দেশে তিনটি নতুন ফৌজদারি আইন প্রণীত হয়েছে। গত ১ জুলাই ২০২৪ থেকে এই আইনগুলি কার্যকর হয়েছে। এই আইনগুলি হল- ভারতীয় ন্যায় সংহিতা-২০২৩, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা-২০২৩ এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম-২০২৩। এই তিনটি আইন প্রণয়নের মুখ্য উদ্দেশ্য হল দেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের মাধ্যমে নারী, শিশু সহ সকল স্তরের জনগণের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করা।এই নতুন তিনটি ফৌজদারি আইনের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলি হল ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ১৭৩ ধারা মূলে যেকোন নাগরিক যে কোনও স্থান থেকে এফআইআর দায়ের করতে পারবেন। এই আইনে পুলিশকে বেআইনীভাবে অর্জিত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। নতুন আইনে চার্জশীট দাখিলের ৬০ দিনের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া শুরু নিশ্চিত করা এবং বিচার শেষ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে রায় ঘোষণার সংস্থানও রয়েছে।
অনুষ্ঠানে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন বলেন, দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নাগরিকদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই সমান অধিকার প্রদানের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হলে মানবাধিকার কমিশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন ঝর্ণা দেববর্মা বলেন, জনগণের মৌলিক অধিকারকে অগ্রাধিকার দিয়েই দেশ ক্রমশঃ এগিয়ে চলছে। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা হিউম্যান রাইটস কমিশনের চেয়ারম্যান জাস্টিস স্বপন চন্দ্র দাস বলেন, নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলো সুরক্ষিত থাকায় আমাদের দেশের গণতন্ত্র মজবুত রয়েছে। স্বাগত বক্তব্যে ত্রিপুরা মানবাধিকার কমিশনের সচিব রতন বিশ্বাস বলেন, প্রতিবছর ১০ ডিসেম্বর মর্যাদার সঙ্গে রাজ্যে মানবাধিকার দিবস পালন করা হয়। মানবাধিকার দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে এবছর বিভিন্ন ইভেন্ট যেমন বসে আকোঁ প্রতিযোগিতা, প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরার এডভোকেট জেনারেল শক্তিময় চক্রবর্তী এবং লোকাযুক্ত বি কে কিলিকদার।
স্বাস্থ্য দপ্তরে ২৪১টি এলডিসি পদ সৃষ্টি ও পূরণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী একথা জানান। পর্যটনমন্ত্রী জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্বাস্থ্য দপ্তরের অধীনে বিভিন্ন বিভাগে ১৬১টি টেকনিক্যাল পদ সৃষ্টি ও পূরণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই পদগুলির মধ্যে রয়েছে ফিজিও থেরাপিস্ট ৮টি, অডিওমেটি টেকনিশিয়ান ৩১টি, ডেন্টাল টেকনিশিয়ান ৪টি, ইসিজি টেকনিশিয়ান ১৪টি, কম্পিউটার টেকনিশিয়ান ৪টি, রেডিওগ্রাফার ২৯টি, জুনিয়র স্টোর কিপার ৯টি, প্রোস্টেটিক এন্ড অর্থোটিক টেকনিশিয়ান ১টি, স্পিচ থেরাপিস্ট ২টি, ক্যাটালগার ১টি, ড্রেসার ৬টি, রিহাবিলিটেশন অ্যাসিস্টেন্ট ১টি, অ্যাসিস্টেন্ট ৭টি, ওয়ার্ড মাস্টার ৩টি, অপথালমিক অ্যাসিস্টেন্ট ১৯টি, প্লাস্টার টেকনিশিয়ান ৬টি, কার্পেন্টার ১টি, লাইব্রেরী অ্যাসিস্টেন্ট ১টি, জুনিয়র লাইব্রেরিয়ান ১টি, মাল্টি রিহাবিলিটেশন ওয়ার্কার ১টি, অডিও ভিজ্যুয়াল টেকনিশিয়ান ২টি, ফটোগ্রাফিক টেকনিশিয়ান ১টি, টিএমটি টেকনিশিয়ান ২টি, ইকোকার্ডিওগ্রাফি টেকনিশিয়ান ১টি, পিএফটি টেকনিশিয়ান ২টি, ডকুমেন্টিস্ট ১টি, সাইক্রিয়াটিক সোস্যাল ওয়ার্কার ২টি এবং ফিজিও টেকনিশিয়ান ১টি।
পর্যটনমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে আরও জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের অধীনে ৯৬টি বিভিন্ন ক্যাটাগরির টেকনিক্যাল পদ সৃষ্টি ও পূরণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই পদগুলি হচ্ছে এক্সটেনশন অফিসার ৬টি, ফিল্ড অ্যাসিস্টেন্ট ৩৮টি, সিনিয়ার ইনস্ট্রাক্টর (ইঞ্জিনিয়ারিং) ২৫টি, সিনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (নন ইঞ্জিনিয়ারিং) ১৭টি, স্টোর কিপার ৪টি এবং ড্রাইভারের ৬টি পদ। পর্যটনমন্ত্রী জানান, ৬০৬৭টি স্পেশাল এগজিকিউটিভ পদে লোক নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। স্পেশাল এগজিকিউটিভ পদের জন্য সাম্মানিক ১১ হাজার টাকা ধার্য্য ছিল। আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই পদের সাম্মানিক বাড়িয়ে ১৩ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যাবোধে সমৃদ্ধ হওয়ার শিক্ষা নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের মেধা ও মননের বিকাশের প্রকৃত সময় হচ্ছে ছাত্রজীবন। এক্ষেত্রে শিক্ষক শিক্ষিকাদের ভূমিকাও অপরিসীম। আজ নরসিংগড়স্থিত ত্রিপুরা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’র নবনির্মিত অডিটোরিয়ামের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা একথা বলেন। এ উপলক্ষ্যে ত্রিপুরা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে এক রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। রক্তদান শিবিরে মুখ্যমন্ত্রী রক্তদাতাদের উৎসাহিত করেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি প্রতিষ্ঠানটি পূর্বে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হিসেবে পরিচিত ছিল। কেন্দ্রীয় ডোনার মন্ত্রকের আর্থিক সহায়তায় পর্যায়ক্রমে টিআইটি’র অডিটোরিয়াম ও পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে। যেকোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অডিটোরিয়াম বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স করার ক্ষেত্রে একটি সহায়ক মঞ্চ হিসেবে কাজ করে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রায় সময় বলেন, যাদের কাছে জ্ঞান থাকবে পুরো পৃথিবী তাদের হাতের মুঠোয় থাকবে। দেশের বিভিন্ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের সাথে মতবিনিময় করেন। তাদের মতামতকে অগ্রাধিকার দেবার চেষ্টা করেন। দেশকে উন্নয়নের দিশায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়ার আহ্বান জানান। তরুণ প্রজন্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন কর্মসূচিও গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজোর ১৯টি আইটিআই’র আধুনিকীকরণ ও আপগ্রেডশনের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই টাটা টেকনোলজিস লিমিটেডের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির ফলে রাজ্যে বিনিয়োগের পাশাপাশি উন্নতমানের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে আইটিআই থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানও আগামীদিনে বৃদ্ধি পাবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রাজ্যে শান্তির পরিবেশ আছে বলেই বিনিয়োগকারীরা রাজ্যে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হচ্ছেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (টিআইটি)-এর শ্রীবৃদ্ধি কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার ত্রিপুরা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (টিআইটি)’র সম্পর্কে সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পরিকাঠামো জাতীয় স্তরের পরিকাঠামো সমতুল্য। প্রতিষ্ঠানের ড্রোন টেকনোলজি সেন্টারটিকে আরও উন্নত করার উপরও তিনি গুরুত্ব-আরোপ করেন। অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক নয়ন সরকার, উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা অনিমেষ দেববর্মা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিজয় কুমার উপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সহ অতিথিগণ ইনস্টিটিউটের ‘মনন’ নামক প্রচার পুস্তিকার আবরণ উন্মোচন করেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে এআইসিটিই আইডিয়া ল্যাবে টিআইটি’র শিক্ষার্থীদের তৈরী স্মারক মুখ্যমন্ত্রী সহ অতিথিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
বিনিয়োগের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে খুব সহসাই রাজ্যে আসবে রিলায়েন্স গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের একটি টিম। আর জনজাতি অংশের জনগণের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি রাজনৈতিক উত্থানে কাজ করছে ভারতীয় জনতা পার্টি। রাজ্যের ঐক্য, সংহতি রক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। সোমবার এডিসির সদর কার্যালয় খুমুলুঙে আয়োজিত জনজাতি একতা সন্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। ভারতীয় জনতা পার্টির মান্দাই ও টাকারজলা মন্ডলের যৌথ উদ্যোগে এই একতা সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, সম্প্রতি আমি মুম্বাই গিয়ে রিলায়েন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুকেশ আম্বানির সাথে দেখা করেছি, ত্রিপুরায় আসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। কারণ আমাদের রাজ্যে পর্যটন শিল্প এবং বাঁশ ভিত্তিক শিল্প সহ প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। আমি তাঁর সাথে প্রায় ৪৫ মিনিট আলোচনা করেছি। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেন যে খুব শীঘ্রই একটি টিম রাজ্য সফরে আসবে। এছাড়াও আমরা রাজ্যের আইটিআইগুলিকে আপগ্রেড করার জন্য টাটা গ্রুপের সাথে একটি মৌ স্বাক্ষর করেছি। এই আইটিআইগুলি বছরের পর বছর ধরে অবহেলিত ছিল। কিন্তু এখন টাটা গ্রুপ এসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আধুনিকীকরণের জন্য প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজকের সম্মেলনে বিপুল সংখ্যায় মানুষের উপস্থিতি দেখে তিনি আপ্লুত, অভিভূত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপর আস্থা রয়েছে মানুষের। আগে ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের চারদিকে শুধু উগ্রবাদ ছিল। তারা মূলস্রোত থেকে চলে গিয়ে অন্যদিকে ধাবিত হয়েছে। এতে নিজেদের জীবন যেমন নষ্ট হয়েছে তেমনি পরিবারের জীবনও নষ্ট হয়েছে। সেই সঙ্গে গোটা অঞ্চলের ক্ষতি হয়েছে। সেই জায়গায় ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব গ্রহণের পর ধীরে ধীরে উত্তর পূর্বাঞ্চলের পরিবর্তন হয়েছে। শান্তি শৃঙ্খলা সম্প্রীতি ছাড়া কোনকিছু সম্ভব নয়। আর সেটা প্রধানমন্ত্রী বুঝেছেন। এজন্য অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি চালু করেছেন তিনি। প্রায় ১১/১২টির মতো চুক্তি হয়েছে এই অঞ্চলে। ২০২৪ এর ৪ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে এটিটিএফ ও এনএলএফটির সঙ্গে অনুষ্ঠিত চুক্তির সময়ে আমি সহ কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহও ছিলেন। আর প্রধানমন্ত্রীর মার্গ দর্শনে সেখানে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরমধ্য দিয়ে ত্রিপুরা এখন সন্ত্রাসবাদ মুক্ত রাজ্যে পরিণত হয়েছে। সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের হিরা মডেল দিয়েছেন। এবার কেন্দ্রীয় সরকার চুরাইবাড়ি থেকে চন্দ্রপুর পর্যন্ত চার লেনের জাতীয় সড়কের জন্য মঞ্জুরি দিয়েছে। সারা দেশের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী ইন্টারনেট ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রী আমাদের দিয়েছেন। এখন ত্রিপুরা থেকে অত্যাধুনিক মানের এক্সপ্রেস ট্রেন পরিষেবা পাওয়া যায়। এয়ারওয়েজের ক্ষেত্রেও প্রভূত উন্নতি হয়েছে রাজ্যে। এসবই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর হিরা মডেলের জন্য। আমরা জানি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে সিঙ্গারবিল এয়ারপোর্ট তৈরি করেছিলেন মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুর। এতদিন তাঁকে সম্মান দেওয়ার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আগের সরকার কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের সরকার আসার পর আধুনিক ত্রিপুরার রূপকার হিসেবে মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুরের নামে এয়ারপোর্টের নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়া ১৯ আগস্ট মহারাজার জন্মদিনকে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা আরো বলেন, এডিসির নাম তিপ্রা টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল করার জন্য রাজ্য মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে। এর পাশাপাশি ১৯টি জনজাতি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এডিসিতে যাতে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন এজন্য এডিসির আসন সংখ্যা ২৮টি থেকে বেরিয়ে ৫০টি করতে রাজ্য মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্তক্রমে দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে। জনজাতি অধ্যুষিত ১২টি ব্লককে এসপিরেশন্যাল ব্লক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এরমানে এসব এলাকার উন্নয়নে বাজেটের ৮/১০ শতাংশ অধিক বরাদ্দ ব্যয় করা হয়। ব্রু রিয়াং শরনার্থীদের দীর্ঘ ২৩ বছরের সমস্যা সমাধান করার জন্য শুধু কুম্ভীরাশ্রু আমরা দেখেছি। কিন্তু কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন তারাও তো আমাদেরই লোক। তাই তাদের জন্য কিছু করতে হবে। এরপর ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি ভারত সরকার, ত্রিপুরা সরকার, মিজোরাম সরকার ও ব্রু শরনার্থীদের মধ্যে একটা ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বিভিন্ন জায়গায় তাদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে এবং তাদের জন্য ৫০০ কোটি টাকার অধিক রাখা হয়েছে। এর নাম হচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টি। এর নাম হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৯ সাল থেকে পরপর ৭ জনকে পদ্মভূষণ সম্মান দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সকলেই জনজাতি সম্প্রদায়ের। কারণ ভারতীয় জনতা পার্টি সম্মান দিতে জানে। ত্রিপুরার মতো ছোট রাজ্য থেকে নিয়ে তেলেঙ্গানা রাজ্যের মতো বড় রাজ্যে রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে রাজ পরিবারের যিষ্ণু দেববর্মাকে। আর সেটা একমাত্র সম্ভব হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের কারণে। রাজ্যের জনজাতিদের ককবরক ভাষাকে মর্যাদা দেওয়ার লক্ষ্যে বড়মুড়া পাহাড়ের নাম হাথাইকথর রেখেছি আমরা। এরআগে ৩৫ বছরে কেউ রাখে নি। আমরা কংগ্রেসকে দেখেছি, সিপিএমকে দেখেছি। জনজাতিদের যত দাবিয়ে রাখা যায়, অসম্মান করা যায় সেটা করেছে তারা। কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকার জনজাতিদের সার্বিক কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করছে। এদিন সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, প্রাক্তন সাংসদ রেবতি ত্রিপুরা, ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক বিপিন দেববর্মা, এডিসি সদস্য বিদ্যুৎ দেববর্মা, এডিসি সদস্য সঞ্জীব রিয়াং সহ দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্ব।
রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নান্নু আজ সকালে আগরতলার নন্দননগরস্থিত ভারতীয় খাদ্য নিগমের ডিভিশনাল অফিস পরিদর্শন করেন। রাজ্যপাল সেখানে গিয়ে পৌঁছালে এফসিআই’এর ডিভিশনাল ম্যানেজার চন্দ্রাভান রাজ্যপালকে স্বাগত জানান। রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নান্নু ডিভিশনাল অফিসের কনফারেন্স হলে এফসিআই’র আধিকারিকদের সাথে বৈঠক করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেন। এফসিআই কর্তৃপক্ষ রাজ্যপালকে জানান, রাজ্যে তাদের ৮টি খাদ্য গোদাম রয়েছে। বৈঠকে খাদ্য গোদামগুলিতে খাদ্যশস্য মজুতের বিষয়েও রাজ্যপালকে অবহিত করা হয়।
বৈঠকের পর রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নান্নু এফসিআই’র গোদাম কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবরেটরি, ওয়েট ব্রিজ প্রভৃতি পরিদর্শন করেন। পরে সংবাদমাধ্যমকে রাজ্যপাল জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতীয় খাদ্য নিগমের বিভিন্ন নীতি নির্দেশিকা পরিবর্তন করে সময়োপযোগী করেছেন। বিভিন্ন রাজ্যে রাজ্য সরকার এখন স্থানীয়ভাবে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতে পারছে। তাতে পরিবহণ ব্যয় অনেকটাই কমেছে। রাজভবন থেকে এই সংবাদ জানানো হয়েছে।
যে সমস্ত পর্যটন কেন্দ্র গুলিতে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলোতে আগামী দিনে ট্যুরিজম প্রমো ফেস্ট আরো বড় আকারে আয়োজন করা হবে । কারণ রাজ্যের পর্যটন দপ্তর রাজ্য পর্যটনকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এ কারণেই চলছে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র গুলির পরিকাঠামোগত ব্যাপক মান উন্নয়নের কাজ । আজ ট্যুরিজম প্রমো ফেস্টের দ্বিতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানের সূচনা করে এ কথা বলেছেন পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী । রুদ্রসাগরের রাজঘাটে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রমো ফেস্ট এর দ্বিতীয় পর্বের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান । তিনি বলেছেন আগামী দু বছরের মধ্যে রাজ্যের পর্যটন ক্ষেত্রের ব্যাপক উন্নয়ন। কারণ এই ক্ষেত্রটি থেকেই এবং ব্যাপক মুনাফা অর্জন করা ও বেকার সমস্যার সমাধানের সম্ভাবনা রয়েছে । পর্যটনমন্ত্রী ছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ছিলেন সিপাহীজলা জেলা জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুপ্রিয়া দাস দত্ত, বিধায়ক তফাজ্জল হোসেন ,বিন্দু দেবনাথ, কেশর বর্মন প্রমূখ , পর্যটন দপ্তরের সচিব , সিপাহীজলা জেলার জেলাশাসক পুলিশ সুপার সহ বিশিষ্টরা । সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠিত হয়েছে বিখ্যাত সংগীত শিল্পী নীহারিকা নাথের সংগীত পরিবেশনা । ছিল স্থানীয় ও রাজ্যের খ্যাতনামা শিল্পীদের পরিবেশনায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । পর্যটনমন্ত্রী উপস্থিতিতে নীড়মহল অভ্যন্তরে পুনরায় চালু হয় লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো । তাছাড়া এই প্রমো ফেস্ট উপলক্ষে রুদ্রসাগরের রাজঘাটে অনুষ্ঠিত হয়েছে ফুড ফেস্টিবল , ক্যানভাস পেন্টিং সহ বিভিন্ন গ্রামীন খেলা । এগুলোতে বিজয়ী পুরস্কার বিতরণ করেন অতিথিরা ।