জনসংযোগে বিজেপির শীর্ষ নেতারা

কেন্দ্রের নির্দেশে রাজ্যে শুরু বিজেপির জনসংযোগ অভিযান!

বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রের কড়া নির্দেশে রাজ্যে শুরু হয়েছে দলীয় জনসংযোগ কর্মসূচি এবং “গ্রাম চলো অভিযান”। সোমবার থেকে শুরু হয়েছে এই কর্মসূচি, যা আগামী কয়েক দিন জুড়ে চলবে। রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সাংসদ, মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা এই কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।

সোমবার বামুটিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত গান্ধীগ্রামে গ্রাম চলো অভিযানে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহা। তিনি সেখানে গ্রামসভায় অংশগ্রহণ করেন, স্থানীয় মানুষের সাথে মতবিনিময় করেন এবং স্বচ্ছ ভারত অভিযান ও একটি অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অন্যদিকে, প্রতাপগড় বিধানসভা কেন্দ্রে জনসংযোগ কর্মসূচিতে অংশ নেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি ও আগরতলার সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য।

এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা, তাদের সমস্যা শুনে তার সমাধানের চেষ্টা করা এবং সংগঠনের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সংযোগকে আরও মজবুত করা। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে স্পষ্ট বার্তা—এই জনসংযোগ কার্যক্রমকে ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যেতে হবে। তবে, বিরোধীদের অভিযোগ—ভোটের মুখে পড়লেই বিজেপি জনসংযোগের কথা মনে রাখে, কিন্তু সারা বছর মানুষের পাশে থাকে না। বিশেষ করে ২০১৮ সালে দলের মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করা পৃষ্ঠা প্রমুখদের অনেকেই আজ উপেক্ষিত। একসময়ে যাঁদের কাঁধে ভর করে দল ক্ষমতায় এসেছিল, সেই পৃষ্ঠা প্রমুখদের অনেকেই আজ অভিমানে দল ছেড়েছেন বা নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। সাত বছরে শাসনকালে তাঁদের খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি কেউ।

এছাড়াও, তৃণমূল স্তরের মণ্ডল কমিটিগুলির বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন দলেরই এক শ্রেণীর নেতৃত্ব। তাদের অভিযোগ, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রকল্প থেকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নামে অনেক মণ্ডল নেতা সরাসরি কমিশন নিচ্ছেন। তবু আজ পর্যন্ত দলের তরফে এদের বিরুদ্ধে কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে, সাত বছরের শাসনে দলবিরোধী হাওয়া ক্রমশ জোরালো হচ্ছে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় ফেরা এবং পরবর্তী সময়ে দুটি লোকসভা আসন ধরে রাখার সাফল্য দলের আত্মবিশ্বাস বাড়ালেও, সংগঠনের ভিত যে দুর্বল হয়ে পড়েছে তা মেনে নিচ্ছেন অনেকেই।

নিন্দুকদের কথায়, “যে সংগঠন একদিন গড়েছিলেন পৃষ্ঠা প্রমুখরা, সেই সংগঠন আজ তলানিতে। বিজেপি যেন এখন এক তাসের ঘর, যেকোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে।” এই প্রেক্ষিতেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জোর দিচ্ছে ‘জনসংযোগ’ নামক রাজনৈতিক অস্ত্রে। গৃহে গৃহে গিয়ে জনমত সংগ্রহ, সমস্যার বাস্তব চিত্র জানা ও তার সমাধানে মনোনিবেশ করাকেই পাখির চোখ করছে দল।

এখন দেখার বিষয়, প্রতিষ্ঠা দিবস ঘিরে শুরু হওয়া এই জনসংযোগ কর্মসূচি সত্যিই তৃণমূল স্তরে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে পারে কিনা, নাকি আবারও ভোটের পর সব শান্ত হয়ে পড়বে—যেমনটা অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা। এদিকে দলের অন্দরে এখন কার্যত ব্যস্ততার চূড়ান্ত পর্যায়। জনসংযোগ কর্মসূচিকে সফল করতে প্রতিটি মণ্ডলে পরিকল্পনা মোতাবেক রূপরেখা তৈরি হচ্ছে। বিজেপির সংগঠনিক শক্তি কতটা পুনর্জীবিত হয়, তা স্পষ্ট হবে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই।About Us

সংশোধনাগারগুলিতে পরিকাঠামোগত সংকট

সংশোধনাগারগুলিতে অমানবিক পরিস্থিতি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রবল!

ত্রিপুরা রাজ্যের সংশোধনাগারগুলি এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে, কোনো সংশোধনাগারে অনুমোদিত সংখ্যার চেয়ে বেশি বন্দী রাখা যাবে না। তবুও বাস্তব পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। রাজ্যের ১৪টি সংশোধনাগারের মধ্যে ১টি (সাব্রুম) বন্ধ, বাকি ১৩টি সংশোধনাগারে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি বন্দী থাকছেন। পরিকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, কর্মী সংকট এবং নজরদারির অভাবে কারাগারগুলিতে তৈরি হয়েছে ভয়ঙ্কর অব্যবস্থা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিস্থিতি।

বিশালগড়ের প্রভুরামপুরে অবস্থিত কেন্দ্রীয় মহিলা সংশোধনাগারে ২৫ জন বন্দীর থাকার অনুমোদন রয়েছে। অথচ সেখানে এখন রাখা হচ্ছে ১১৩ জন মহিলা বন্দীকে। জায়গার অভাবে গাদাগাদি করে দিন কাটাচ্ছেন বন্দীরা। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, বন্দীদের সঙ্গে থাকা প্রায় ৩০ জন শিশুও এই পরিবেশে দুর্দশা সহ্য করছে, যদিও তারা কোনো অপরাধে জড়িত নয়। ত্রিপুরার অন্যান্য জেল ও সাবজেলগুলিতেও একই ধরনের অবস্থা:

  • খোয়াই সাবজেল: ধারণক্ষমতা ১২১ জন, বর্তমানে ১২২ জন বন্দী।
  • সোনামুড়া সাবজেল: ধারণক্ষমতা ১২৫ জন, বর্তমানে ১৭০ জন বন্দী।
  • বিলোনিয়া সাবজেল: ধারণক্ষমতা ৮৫ জন, রাখা হয়েছে ৯০ জন।
  • কৈলাসহর, কমলপুর, উদয়পুর সহ আরও বেশ কিছু জেলেও অনুমোদনের চেয়ে বেশি বন্দী রাখা হচ্ছে বলে খবর।

বেশিরভাগ জেলখানাই মান্ধাতার আমলের পুরনো ভবন। বহু জায়গায় প্লাস্টার খসে পড়ছে, দেয়ালে ফাটল, বাথরুম-জল ব্যবস্থা অকেজো। একমাত্র সাবরুমের জেলখানাটি সংস্কার করা হয়েছে, বাকি কোথাও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। এই পরিকাঠামো বন্দীদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে পুরনো জেল ভবন থেকে বিচারাধীন বন্দীদের পালানোর ঘটনা ঘটেছে। যদিও বিধানসভায় জানানো হয়েছে, জেল প্রাঙ্গনের ভিতর থেকে পালানোর কোনও রেকর্ড নেই, কিন্তু আদালতে আনা-নেওয়ার সময় বন্দী পালিয়েছে, যা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড়সড় ব্যর্থতা।

ত্রিপুরার ১৩টি সক্রিয় সংশোধনাগারে মাত্র ৩০১ জন কর্মী, যার মধ্যে পুরুষ ওয়ার্ডেন ২৮৭ জন এবং মহিলা ওয়ার্ডেন মাত্র ১৪ জন। এই সামান্য সংখ্যক মহিলা কর্মী দিয়ে গোটা রাজ্যে বন্দিনীদের নিরাপত্তা, চিকিৎসা, মনোভাব উন্নয়ন—সব কিছুই সামাল দেওয়া কার্যত অসম্ভব। গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে কারা দপ্তরে কোনও স্থায়ী নিয়োগ হয়নি। ভোটের আগে ২৪৯ জন পুরুষ ওয়ার্ডেন নিয়োগের ঘোষণা হলেও বাস্তবে তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

স্থায়ী কর্মী না থাকায় অনেক কাজ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে চালানো হচ্ছে। এতে নজরদারির ঘাটতি দেখা দিচ্ছে, বাড়ছে দুর্নীতির সম্ভাবনা। জেলখানাগুলিতে নেশাজাতীয় দ্রব্য ঢুকছে, যা একাধিকবার ধরা পড়েছে। বন্দীদের ওপর নজরদারি রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। রাজ্য মানবাধিকার কমিশন বিভিন্ন সময়ে জেলখানাগুলি পরিদর্শন করেছে। তাদের রিপোর্টে উঠে এসেছে বন্দীদের গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে, শিশুরা মায়ের সঙ্গে জেলজীবন কাটাচ্ছে, অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য ও খাবার ব্যবস্থা, এবং অপ্রতুল কর্মীবল—এই সবই মানবাধিকার লঙ্ঘনের আওতায় পড়ে।

বিধানসভায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যের ১৩টি সক্রিয় সংশোধনাগারে মোট ২৩০৩ জন বন্দীর থাকার উপযুক্ত পরিকাঠামো রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে অনেক সংশোধনাগারেই তার চেয়ে বেশি সংখ্যক আসামীকে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে। ত্রিপুরার সংশোধনাগার ব্যবস্থায় যে ভয়াবহ পরিকাঠামোগত সংকট ও কর্মী সঙ্কট চলছে, তা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। শিশু, মহিলা বন্দী, বিচারাধীন বন্দী—সবাই একইভাবে দুর্বিষহ অবস্থায় রয়েছেন। দ্রুত নতুন জেল নির্মাণ, কর্মী নিয়োগ, স্বাস্থ্য ও মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা এবং আইনি নজরদারি না এলে রাজ্যের সংশোধনাগার ব্যবস্থা এক ভয়ঙ্কর সংকটের মুখোমুখি হবে—এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।About Us

আগ্নেয়াস্ত্র সহ পুলিশের জালে ধৃত কট্টর জঙ্গি

উত্তর ত্রিপুরায় ফের সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন, আগ্নেয়াস্ত্র সহ ধৃত কট্টর জঙ্গি নেতা!

উত্তর ত্রিপুরার আনন্দবাজার এলাকায় বড়সড় সাফল্য পুলিশের। আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ এক কট্টর জঙ্গি সংগঠনের নেতাকে গ্রেপ্তার করল জেলা পুলিশের একটি বিশেষ দল। গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী ভান্ডারিমার সেতুদুয়ার জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে তাকে পাকড়াও করা হয়। ধৃতের নাম অনিদা রিয়াং (৩৫), যিনি একসময় নিষিদ্ধ ঘোষিত এন.এল.এফ.টি (NLFT) জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। বর্তমানে সে ‘ত্রিপুরা ইউনাইটেড ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ (TUNF) নামে এক নতুন সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠনের নেতা।

বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, আনন্দবাজার থানার অধীনস্থ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের গহীন জঙ্গলে টংঘরের ভিতরে আত্মগোপন করেছিল অনিদা। দীর্ঘ পরিকল্পনা ও নজরদারির পর শনিবার রাতে পুলিশের বিশেষ বাহিনী অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় একটি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, একাধিক লাইভ কার্তুজ, এবং চাঁদা আদায়ের রশিদ বই।

ধৃত জঙ্গির বিরুদ্ধে আনন্দবাজার থানায় একাধিক গুরুতর মামলা রুজু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—পুলিশ ও সীমান্তরক্ষীকে হত্যার চেষ্টা, অপহরণ, ঠিকাদারদের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়, অস্ত্র আইন লঙ্ঘন, এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারা। ধৃতকে কড়া নিরাপত্তায় কাঞ্চনপুর মহকুমা আদালতে পেশ করে চারদিনের পুলিশি রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। এস.ডি.জে.এম আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে। বর্তমানে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরো গোপন তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, ওই এলাকায় আরও বেশ কয়েকজন জঙ্গির লুকিয়ে থাকার আশঙ্কা রয়েছে। তাই গোটা সীমান্ত অঞ্চলে জোর তল্লাশি ও নজরদারি চালানো হচ্ছে। এই ঘটনায় গোটা উত্তর ত্রিপুরা জেলাজুড়ে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, মাঝে মধ্যে কিছু জঙ্গি সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করলেও এখনো সীমান্তবর্তী গভীর জঙ্গলে সক্রিয় রয়েছে কট্টর জঙ্গি সংগঠনের নেতারা। পুলিশ ও গোয়েন্দা মহল মনে করছে, এই ঘটনার মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হলো যে জঙ্গিদের কার্যকলাপ এখনো পুরোপুরি নির্মূল হয়নি

উল্লেখ্য, ত্রিপুরার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গি কার্যকলাপের আখড়া হিসেবে পরিচিত। ফলে এই গ্রেফতার ভবিষ্যতে বড় কোনো হামলা রোখার দিকেও এক বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে প্রশাসন।About Us

গুজরাটে নিখোঁজ ত্রিপুরার যুবক কালাচান ত্রিপুরা

গুজরাটে নিখোঁজ কালাচান ত্রিপুরার পরিবার দ্বারে দ্বারে ঘুরছে সাহায্যের আশায়!

ত্রিপুরার দক্ষিণ প্রান্তের এক নিঃস্ব পরিবার আজ চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছে। কারণ, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য কালাচান ত্রিপুরা (২৩) প্রায় এক মাস আগে গুজরাটে কর্মক্ষেত্র থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছেন। আজও তার কোনো খোঁজ মেলেনি। পুলিশ ও প্রশাসনের নির্লিপ্ত ভূমিকার কারণে হতাশায় ভেঙে পড়েছেন পরিবার-পরিজন।

কালাচান ত্রিপুরা দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম মহকুমার বাসিন্দা। তিনি জীবিকার সন্ধানে গিয়েছিলেন গুজরাট রাজ্যের ভালসাদ জেলার উমরগাঁও অঞ্চলে, যেখানে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের সূত্রে জানা গেছে, ৬ মার্চ তিনি অসুস্থ বোধ করেন এবং সহকর্মীদের জানান যে তিনি বাড়ি ফিরতে চান। সেই অনুযায়ী রেলস্টেশনের দিকে রওনা দেন বলেই জানিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর থেকেই তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

৭ মার্চ থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে গুজরাটে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। সাব্রুম থানাতেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু সেখান থেকে জানানো হয়, ঘটনাটি তাদের আওতার বাইরে, তাই তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না। অপরদিকে গুজরাটের উমরগাঁও থানার সঙ্গে পরিবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো সদুত্তর মেলেনি।

পরিবারের সদস্যরা বলছেন, “আমরা এক মাস ধরে শুধু প্রতিশ্রুতি শুনে যাচ্ছি। কোনো পুলিশ আমাদের সাহায্য করছে না। রাজ্য সরকার কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কেউ পাশে এসে দাঁড়ায়নি।” এমনকি, এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল বা অরাজনৈতিক সংগঠনও তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। ফলে, একেবারে ভেঙে পড়েছেন কালাচানের বাবা-মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। দরিদ্র পরিবারটির পক্ষে গুজরাটে বারবার যাওয়া, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কিংবা আইনি সহায়তা নেওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যের প্রশাসন কীভাবে এতটা নির্লিপ্ত থাকতে পারে? একজন ত্রিপুরাবাসী যুবক কর্মস্থলে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরও কেন আজ পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট তদন্ত শুরু হয়নি? ত্রিপুরা সরকারের কাছে পরিবারের আকুতি—তাঁদের ছেলের সন্ধান যেন দ্রুত পাওয়া যায় এবং গুজরাট প্রশাসনের সঙ্গে রাজ্য সরকার যেন সরাসরি হস্তক্ষেপ করে। একমাত্র উপার্জনক্ষম যুবক নিখোঁজ—এই অবস্থায় পরিবারটির আর্থিক ও মানসিক দুঃস্থতা চরমে পৌঁছেছে।

ত্রিপুরার সাধারণ মানুষ এবং নাগরিক সমাজের কাছেও এই ঘটনা একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে—বাইরের রাজ্যে কর্মরত ত্রিপুরার যুবকদের নিরাপত্তা আদৌ রয়েছে কি? সমাজ সচেতন মহল মনে করছেন ত্রিপুরা সরকারের হস্তক্ষেপ ও ত্বরিত পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই কালাচান ত্রিপুরাকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব—এই আশাতেই এখনও চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় তার পরিবার।About Us

BJP জোট সরকারের ভিত নড়বড়ে

তিপ্রা মথার সুপ্রিমোর বক্তব্যে অস্বস্তিতে BJP!

রাজ্যের জোট সরকারের শরিক দল তিপ্রা মথার একাংশ নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে চাপে পড়েছে BJP। বিশেষ করে, তিপ্রা মথার সুপ্রিমো প্রদ্যোত বিক্রম দেববর্মা এবং দলের বিধায়ক ও এমডিসিদের (MDC) প্রকাশ্যে সরকারের বিরুদ্ধে করা মন্তব্যে ক্রমশ জটিল হচ্ছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি। তিপ্রা মথার অভিযোগ, BJP নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরও জনজাতিদের প্রতি অবহেলা করছে। এমনকি, বামফ্রন্টের ২৫ বছরের শাসনকালেও যা ঘটেনি, তার থেকেও বেশি বঞ্চনার শিকার হচ্ছে ত্রিপুরার জনজাতি সম্প্রদায়। সরকারি পরিষেবা থেকে শুরু করে পানীয় জল, রাস্তা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে চরম অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন দলের নেতারা।

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিপ্রা মথার এমডিসি ধীরেন্দ্র দেববর্মা দাবি করেন, “বর্তমান সরকার জনজাতি উন্নয়নের জন্য কোনো সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না। পানীয় জল থেকে শুরু করে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব ক্ষেত্রেই জনজাতিরা চরম বঞ্চনার শিকার। রিয়াং জনজাতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ কিছু প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, কিন্তু সেই অর্থও সঠিকভাবে ব্যয় করা হচ্ছে না।” তিনি আরও বলেন, “উনকোটি ও ধলাই জেলার সীমান্তবর্তী কংসরাম রিয়াং পাড়ার উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রের তরফে বিশেষ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছিল। রাজকান্দি বাজার থেকে কংসরাম পাড়া পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের জন্য প্রকল্পের অনুমোদন মিললেও বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেই। এইভাবে যদি অবহেলা চলতে থাকে, তাহলে তিপ্রা মথাকে বিকল্প ভাবতে হবে।”

শুধু ধীরেন্দ্র দেববর্মাই নন, তিপ্রা মথা পরিচালিত এডিসির (ADC) শিক্ষা দপ্তরের নির্বাহী সদস্য রবীন্দ্র দেববর্মাও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, “এডিসি থেকে প্রায় ৩৫১ জন সরকারি কর্মচারী অবসর নিয়েছেন, কিন্তু অর্থের অভাবে তাদের পেনশন ও বকেয়া পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি, এমন কর্মচারীও রয়েছেন যারা দুই বছর আগে অবসর নিয়েছেন, কিন্তু এখনও পর্যন্ত পেনশন পাননি। রাজ্য সরকারের অর্থ দপ্তরে একাধিকবার লিখিত অনুরোধ জানানো হলেও কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।”

সম্প্রতি ধলাই জেলার নেপালটিলা এলাকায় অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় তিপ্রা মথার সুপ্রিমো প্রদ্যোত বিক্রম দেববর্মা তীব্র ভাষায় রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেন। তিনি শুধু বিরোধী দল কংগ্রেস ও বামেদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাননি, বরং শরিক BJPকেও একহাত নেন। ককবরক ভাষাকে রোমান হরফে চালু করার দাবিতে চলমান ছাত্র আন্দোলনে তিপ্রা মথার ভূমিকা প্রসঙ্গেও তিনি কথা বলেন, যা BJP নেতৃত্বের মধ্যে নতুন করে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, তিপ্রা মথার এমন অবস্থান BJPর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। শরিক হয়েও দলটি যদি সরকারবিরোধী অবস্থানে যায়, তাহলে জোট সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।
বিশ্লেষকদের মতে, তিপ্রা মথার ক্রমাগত আক্রমণাত্মক অবস্থান ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, দলটি ভবিষ্যতে নতুন কৌশল নিতে পারে। যদি পরিস্থিতি এমনই চলতে থাকে, তাহলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তিপ্রা মথার অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। এই টানাপোড়েনের পরিণতি কী হবে, তা সময়ই বলবে। তবে আপাতত তিপ্রা মথার বক্তব্যে রাজ্যের BJP নেতৃত্ব যে প্রবল অস্বস্তিতে, তা স্পষ্ট।About Us

আগরতলা শহরে নতুন আরবান স্বাস্থ্য কেন্দ্র

রাজধানী আগরতলার প্রাণকেন্দ্রে আধুনিক স্বাস্থ্যসেবাযুক্ত নতুন ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর!

জনগণের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে অগ্রাধিকার দিয়ে রাজ্যের বর্তমান সরকার একাধিক উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এরই ধারাবাহিকতায়, রাজধানীর জ্যাকসন গেইট সংলগ্ন এলাকায় একটি আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা সম্বলিত ৫০ শয্যার নতুন আরবান স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।

নতুন এই হাসপাতালটির নির্মাণ সম্পন্ন হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও আগরতলা শহরে আগত অন্যান্য ব্যক্তিরাও স্বাস্থ্য পরিষেবার সুবিধা পাবেন। ফলে আইজিএম ও জিবি হাসপাতালের ওপর রোগীর চাপ কমবে। হাসপাতালটিতে থাকছে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ওপিডি, মাইনর অপারেশন থিয়েটার, লিফট সহ অন্যান্য অত্যাধুনিক সুবিধা। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে হাসপাতালের যাবতীয় নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে এবং এটি আগরতলা পুর নিগমের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, মুম্বাইয়ের নায়ার মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজের মতো পুর কর্পোরেশনের পরিচালনায় হাসপাতাল গড়ার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। সেই ভাবনা থেকেই আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার ও স্বাস্থ্য সচিব কিরণ গিত্যের সাথে আলোচনা করে হাসপাতালটির জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের শ্রম দপ্তরের অফিসটি নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হওয়ায় এই স্থানে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সুবিধার্থে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এই নতুন হাসপাতালটিতে।

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে একাধিক উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। জিবি হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতি ও রোটারি ক্লাবের ব্যবস্থাপনায় মাত্র ১০ টাকায় দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এছাড়াও বাজেটে একটি শেল্টার হাউজ নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, যা রোগীদের পরিবারের জন্য বিশেষ সহায়ক হবে।

এই শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র ও বিধায়ক দীপক মজুমদার, স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, আগরতলা স্মার্ট সিটি মিশনের আধিকারিক ড. শৈলেশ কুমার যাদব সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। নতুন এই হাসপাতালটি রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হতে চলেছে, যা আগরতলা শহরের জনগণের জন্য এক বড় উপহার।About Us

ত্রিপুরা বিজেপি কি পারবে সংঘ পরিবারের দীক্ষায় দীক্ষিত হতে

ত্রিপুরা বিজেপির নতুন সভাপতি নির্বাচন ঘিরে টানটান উত্তেজনা!!

আগামী দিনে ত্রিপুরা প্রদেশ বিজেপির নতুন সভাপতি কে হবেন, তা নিয়ে জোর জল্পনা চলছে দলের অভ্যন্তরে ও রাজনৈতিক মহলে। বর্তমান সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকেই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নতুন সভাপতির নাম চূড়ান্ত করতে দফায় দফায় বৈঠক চলছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোন নির্দিষ্ট নাম ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। ফলে রাজ্যের বিজেপি শিবিরে দেখা দিয়েছে চরম অস্থিরতা এবং তা নিয়ে দলীয় কর্মীদের মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট ভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে।

সূত্রের খবর, প্রদেশ বিজেপির সভাপতি পদের জন্য দুটি প্রধান নাম উঠে এসেছে। প্রথমজন হলেন রাজ্যের বর্তমান মন্ত্রী টিঙ্কু রায় এবং দ্বিতীয়জন হলেন বিধায়ক ভগবান দাস। উভয়েরই দলীয় অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং তারা সংগঠনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত। তবে, এখানেই শেষ নয়। বর্তমান সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য্যও পুনরায় সভাপতি হওয়ার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে বিকল্প কোনো নাম প্রস্তাব করেননি, বরং নিজের অবস্থান ধরে রাখতে নানা কৌশল অবলম্বন করে চলেছেন।

একটি বিশেষ সূত্র জানিয়েছে, বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব ত্রিপুরা প্রদেশ কমিটির সভাপতি নির্বাচনে একটি বড় চমক দেখাতে পারে। আলোচনায় থাকা দুই নামের বাইরে তৃতীয় কেউ এই পদ পেতে পারেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, যার নাম এখনো প্রকাশ্যেই আসেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এক্ষেত্রে সংঘ পরিবারের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। সংঘ পরিবারের মতাদর্শ ও রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা হতে পারে দলের শীর্ষ মহলের।

এই পরিস্থিতিতে আগামী ৩রা এপ্রিল ত্রিপুরা সফরে আসতে পারেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সদস্য জুয়েল ওরাম। তিনি বিজেপির সাংগঠনিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার দায়িত্বে রয়েছেন তাই তার এই সফরকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, তিনি রাজ্য সফর শেষে দিল্লি ফিরে গেলেই প্রদেশ সভাপতি পদের নতুন নাম ঘোষণা করা হতে পারে।

নতুন সভাপতি নির্বাচনকে ঘিরে রাজ্য বিজেপির ভেতরে একাধিক গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। একদিকে কংগ্রেস থেকে আসা নেতাদের একটি অংশ আলাদা অবস্থানে রয়েছে, অন্যদিকে দীর্ঘদিনের পুরানো বিজেপি নেতারা সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চাইছেন। তবে সংঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ নেতারাও নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চাইছেন। এই কোন্দল এখন আর দলের ভেতরে সীমাবদ্ধ নেই, সাধারণ মানুষের মধ্যে তা নিয়ে চলছে প্রকাশ্যে আলোচনা।

এই দলীয় অস্থিরতার ফলে বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামো বেশ কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা বিরোধী দলগুলোর জন্য স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কংগ্রেস ও সিপিআইএম ইতিমধ্যেই নিজেদের শক্তি পুনর্গঠনের কাজে লেগে পড়েছে। যদি বিজেপি দ্রুত সভাপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করতে পারে, তাহলে আগামী দিনে এই দ্বন্দ্বের খেসারত দিতে হতে পারে শাসক দলকে। ত্রিপুরা বিজেপির নতুন সভাপতি নির্বাচন শুধু দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, বরং এটি রাজ্যের ভবিষ্যৎ ও রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এখন দেখার বিষয়, সর্বভারতীয় নেতৃত্ব কাকে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয় এবং তিনি কিভাবে বিজেপির বর্তমান শক্তিকে অক্ষুন্ন রেখে সংঘ পরিবারের সাংগঠনিক শ্রীবৃদ্ধি করে।About Us

চাকরি

চাকরি সংক্রান্ত দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য আপডেট পেতে চোখ রাখুন “Straightlines News– কর্মবার্তা” ডেস্কে

 

তিপ্রামথা আন্দোলন

সম্মানজনক সমঝোতার সন্ধানে আন্দোলনরত মথা নেত্রীত্ব!!

ত্রিপুরায় রোমান হরফ বিতর্ক ঘিরে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। একদিকে জনজাতি ছাত্র সংগঠনের লাগাতার আন্দোলন, অন্যদিকে রাজ্য সরকারের স্পষ্ট অবস্থান—এই দ্বৈরথের মাঝখানে রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়েছেন প্রদ্যুত কিশোর দেববর্মা। রাজ্যের জনজাতি ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবির প্রতি সমর্থন জানালেও, সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে তিনি সম্মানজনক সমঝোতার পথ খুঁজছেন বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে ত্রিপুরার বিভিন্ন এলাকায় রোমান হরফে ককবরক ভাষা চালুর দাবিতে তীব্র আন্দোলন চলছে। ত্রিপাক্ষিক চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে ছাত্রদের পথে নামিয়েছেন প্রদ্যুত, এমন অভিযোগ তুলেছে বিরোধী শিবির। অন্যদিকে, বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, রাজ্য সরকার রোমান হরফের দাবিতে নমনীয় নয়। বিজেপির জনজাতি মোর্চাও রোমান হরফের বদলে দেবনাগরি হরফের পক্ষে মত দিয়েছে।

রোমান হরফের দাবিতে শুক্রবার থেকে রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবরোধ শুরু করে জনজাতি ছাত্র সংগঠন টি.এস.এফ। ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও, এখনো বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলন অব্যাহত। তেলিয়ামুড়া থানার অন্তর্গত হাওয়াইবাড়িতে শনিবার সকালেও ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় ৪৫ কিলোমিটার জুড়ে ছোট-বড় যানবাহন, মালবাহী ট্রাক আটকে পড়ে। পেঁয়াজ, রসুন, তরমুজের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী ট্রাকগুলো আটকে থাকায়, ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। অনেকে রাস্তার ওপর বসেই রাত কাটিয়েছেন। দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকার ফলে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীরা সমস্যায় পড়েছেন। অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ মানুষ।

শনিবার আগরতলা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে মথার ছাত্র সংগঠন সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তারা কোনোভাবেই রোমান হরফের দাবিতে পিছু হটবে না। বরং আন্দোলন আরও তীব্র করবে। সোমবার রাজধানী আগরতলায় ফের বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে তারা। অন্যদিকে, সরকারের তরফ থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, এই মুহূর্তে রোমান হরফের দাবিতে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিকল্পনা নেই। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার নির্দেশে আগে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছিল এই বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য। তবে সেই কমিটির রিপোর্ট জমা পড়েছে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আন্দোলন এখন প্রদ্যুত কিশোর দেববর্মার জন্যও বড় সঙ্কট হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনজাতি ছাত্র সংগঠনের দাবি নিয়ে রাজ্য সরকারের কড়া অবস্থানের কারণে তিনি একদিকে চাপে রয়েছেন, অন্যদিকে রাজ্যের সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ায় আন্দোলনের প্রতি জনসমর্থন নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বিজেপি এই ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নেওয়ায়, দিল্লির সঙ্গেও প্রদ্যুতের সম্পর্ক নতুন পরীক্ষার মুখে। ফলে, একদিকে আন্দোলনকারীদের রোষ, অন্যদিকে প্রশাসনিক কড়াকড়ির বাস্তবতা—এই দুইয়ের মাঝে তিনি আপাতত একটি সম্মানজনক সমঝোতার পথ খুঁজছেন বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা। এই অবস্থায় পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, এখন সেদিকেই তাকিয়ে রাজ্যবাসী।About Us

ত্রিপুরা বাজেট 2025-26

২০২৫-২৬ অর্থবছরের ত্রিপুরা রাজ্যের বাজেট সারাংশ!!

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৩২,৪২৩.৪৪ কোটি টাকার বাজেট শুক্রবার পেশ করেছেন ত্রিপুরার অর্থমন্ত্রী প্রনজিত সিংহ রায়। এই বাজেট ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় ১৬.৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এবারের বাজেটে মূলধনী ব্যয় ৭,৯০৩.২৬ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ১৯.১৪ শতাংশ বেশি। বাজেট ঘাটতি নির্ধারিত হয়েছে ৪২৯.৫৬ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, এবারের বাজেট অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির উপর জোর দিচ্ছে এবং নারীর ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, বাজেটে কোনো নতুন করের প্রস্তাব করা হয়নি। সমস্ত শ্রেণির মানুষের কথা মাথায় রেখে বাজেট তৈরি করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যঃ

২০২৫-২৬ অর্থবছরে কৃষি ও সংশ্লিষ্ট খাতের জন্য ১,৮৮৫.৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা ২০২৪-২৫ সালের বাজেটের তুলনায় ৯.৪৯% বেশি। শিক্ষা খাতে ৬,১৬৬.১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১১.৯৪% বেশি। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ১,৯৪৮.৬৯ কোটি টাকা, যা ২০২৪-২৫ সালের তুলনায় ১২.৮৯% বেশি।

নতুন প্রকল্পঃ

  • ‘মুখ্যমন্ত্রী শস্য শ্যামলা যোজনা’: উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসলের প্রচারের জন্য এই নতুন প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এর জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
  • ‘বিজ্ঞান বিষয় ও ইংরেজি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’: প্রতিটি সাব-ডিভিশনে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ১০০ জন শিক্ষার্থীর জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সদর মহকুমায় বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি থাকায় সেখানে তিনটি কেন্দ্র স্থাপিত হবে। এর জন্য ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
  • নতুন ডিগ্রি কলেজ: আমবাসা, কাকড়াবন ও করবুকে নতুন ডিগ্রি কলেজ স্থাপন করা হবে বলে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন।
  • ‘ত্রিপুরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা কেন্দ্র’: প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য মানসম্মত প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্দেশ্যে রাজ্যের তিনটি স্থানে এই কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এর জন্য ১.৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
  • ওয়াকফ সম্পত্তির উন্নয়ন ও সংখ্যালঘু উন্নয়ন: ওয়াকফ সম্পত্তির উন্নয়নে ১.২০ কোটি টাকা, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রামগুলির উন্নয়নে ৫ কোটি টাকা এবং সংখ্যালঘু ব্লকগুলির আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
  • সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য স্টাইপেন্ড: সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের স্টাইপেন্ড প্রদানের জন্য ৯.৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

নারী ও সমাজ কল্যাণঃ

  • ‘মুখ্যমন্ত্রী কন্যা বিবাহ যোজনা’: অন্ত্যোদয় পরিবারের একজন কন্যা সন্তানের বিয়ের জন্য রাজ্য সরকার ৫০,০০০ টাকা ব্যয় করবে। মহকুমা পর্যায়ে গণবিবাহ অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রকল্পের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
  • ‘মুখ্যমন্ত্রী বালিকা সমৃদ্ধি যোজনা’: অন্ত্যোদয় পরিবারের নবজাতক কন্যা সন্তানের জন্য ৫০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করা হবে, যা মেয়েটির ১৮ বছর বয়সের পর নগদ করতে পারবে। এই প্রকল্পের জন্য ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
  • ‘মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্প’: মানসিক প্রতিবন্ধীদের মাসিক ৫,০০০ টাকা পেনশন দেওয়া হবে। যাঁরা ইতিমধ্যেই প্রতিবন্ধী পেনশন হিসেবে ২,০০০ টাকা পাচ্ছেন, তাঁরা প্রতি মাসে অতিরিক্ত ৩,০০০ টাকা পাবেন। এই প্রকল্পের জন্য ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
  • ‘মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী শিশুদের বিনোদন কেন্দ্র’: মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য একটি বিশেষ বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এর জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পঃ

  • ‘ভারত মাতা ক্যান্টিন কাম নাইট শেল্টার’: রাজ্যের অন্যান্য স্থান থেকে আগরতলায় আসা মানুষদের জন্য রাতে থাকার ও ভর্তুকিযুক্ত খাবারের ব্যবস্থা করতে ‘ভারত মাতা ক্যান্টিন কাম নাইট শেল্টার’ স্থাপন করা হবে। এর জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
  • ‘আরএম পরিবারের জীবিকা উন্নয়ন প্রকল্প’: দরিদ্র আরএম পরিবারের জীবিকা উন্নীত করার জন্য নতুন প্রকল্প চালু করা হবে। এর জন্য প্রাথমিকভাবে ১.৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
  • ‘কম্পিউটার-ভিত্তিক পরীক্ষার কেন্দ্র’: হাপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা গ্রাউন্ডে একটি কম্পিউটার-ভিত্তিক পরীক্ষার কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, যাতে পরীক্ষার্থীদের অনলাইন পরীক্ষার জন্য রাজ্যের বাইরে যেতে না হয়। এর জন্য ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী প্রনজিত সিংহ রায় বলেছেন, এই বাজেট রাজ্যের সার্বিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, নারী ও সংখ্যালঘু উন্নয়নসহ প্রতিটি খাতে এই বাজেট নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে তিনি আশাবাদী।About Us