মাওবাদীদের পক্ষে সিপিআইএমের বিতর্কিত অবস্থান!
ছত্রিশগড়ের কাংকের জঙ্গলে নিরাপত্তা বাহিনীর সফল অভিযানে ২৭ জন কুখ্যাত মাওবাদীর মৃত্যুকে ঘিরে গোটা দেশে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক। এই অভিযানের বিরুদ্ধে সিপিআইএম পলিট ব্যুরো প্রকাশিত এক বিবৃতিকে ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং বর্তমান সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব। তিনি সিপিআইএম-এর বিবৃতিকে “রাষ্ট্রবিরোধী ও সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল” আখ্যা দিয়ে বলেন, “এই দল এখন কার্যত মাওবাদীদের মুখপাত্র হয়ে উঠেছে।”
বিপ্লব দেব বলেন, “এই বিবৃতি কমিউনিস্ট পার্টির আসল চেহারা সামনে এনে দিয়েছে। আমরা বহুদিন ধরেই বলে আসছি, এদের চিন্তাভাবনা রাষ্ট্রবিরোধী, সমাজবিরোধী এবং গণতন্ত্রবিরোধী। আজ ওরা নিজেরাই প্রমাণ করে দিল। ছত্রিশগড়ে যারা মারা গেছে, তারা কুখ্যাত মাওবাদী, যারা বহু নিরীহ মানুষ, পুলিশ ও আধাসেনার হত্যায় যুক্ত ছিল। তাদের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে সিপিআইএম প্রমাণ করেছে—ওদের হৃদয় ভারতের জন্য নয়, বরং চীন ও পাকিস্তানের প্রতি।” তিনি আরও বলেন, “সিপিআইএম চায় না দেশে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বজায় থাকুক। ওরা প্রতিটি সন্ত্রাসবাদী বা উগ্রপন্থীর পেছনে মানবাধিকারের খোলসে দাঁড়িয়ে থাকে, কিন্তু যারা সেই সন্ত্রাসবাদীদের হাতে নিহত হয়, তাদের অধিকার নিয়ে এদের কোনো মাথাব্যথা নেই। ছত্রিশগড়ের অভিযানে শহিদ হওয়া জওয়ানদের প্রতি একটিও শব্দ নেই ওই বিবৃতিতে। এটা কি ভারতীয় রাজনীতির ভাষা হতে পারে?”
বিপ্লব দেব এও উল্লেখ করেন, “অপারেশন সিন্দুর চলাকালেও আমরা দেখেছি, কিভাবে সিপিআইএম পশ্চিমবঙ্গে পাকিস্তানের স্বার্থে কথা বলেছে। তখনও তারা ভারত সরকারের অভিযানে প্রশ্ন তুলেছিল। আজ ছত্রিশগড়েও সেই একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। তারা বারবার প্রমাণ করছে, এদের ভাবাদর্শ, অবস্থান এবং রাজনীতি—সবই ভারতের বিপক্ষে, আর চীন-পাকিস্তানের পক্ষে।” তিনি আরও বলেন, “এই দলটির আর কোনো নৈতিক অধিকার নেই জনমতের অংশ হওয়ার। যারা মাওবাদীদের পাশে দাঁড়িয়ে, সেনাবাহিনীর সাফল্যকে ‘নরহত্যা’ বলে চিহ্নিত করে, তারা কখনই গণতান্ত্রিক কাঠামোয় জায়গা পেতে পারে না।”
ত্রিপুরার সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, “ত্রিপুরাবাসী, দেখুন কারা আপনাদের ধোঁকা দিয়েছে এত বছর। যারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, আর কাজে মাওবাদীদের রক্তরাজনীতিকে সমর্থন করে। সিপিআইএম মুখোশ পরে আছে, কিন্তু ছত্রিশগড়ের ঘটনায় সেই মুখোশ খুলে পড়ে গেছে। এই দল ভারতের স্বার্থ নয়, বরং শত্রু রাষ্ট্রের স্বার্থে কাজ করে।”
২১ মে ছত্রিশগড়ে সংঘটিত সংঘর্ষে ২৭ জন মাওবাদী নিহত হন, যাদের মধ্যে ছিলেন কুখ্যাত নেতা নম্বালা কেশব রাও। এই ঘটনার পরে সিপিআইএম এক বিবৃতিতে বলে, “এই হত্যাকাণ্ড গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পরিপন্থী। মাওবাদী সমস্যা সামাধানের একমাত্র উপায় সংলাপ, দমনপীড়ন নয়।” এই বিবৃতিকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছে দেশজুড়ে রাজনৈতিক তরজা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, সিপিআইএম-এর এই বিবৃতি ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের পর দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত স্পষ্ট অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার ‘জিরো টলারেন্স টু টেররিজম’ নীতি মেনে চলছে, সেখানে মাওবাদীদের মতো স্বীকৃত সন্ত্রাসবাদীদের পক্ষে বিবৃতি দেওয়া রাজনৈতিকভাবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্তও হতে পারে। ছত্রিশগড়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক ঝড় উঠেছে, তার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন সিপিআইএম-এর সেই বিতর্কিত বিবৃতি। বিপ্লব কুমার দেবের তীব্র ভাষায় আক্রমণ এবং সিপিআইএম-এর প্রতিক্রিয়ার পর, স্পষ্ট হচ্ছে ভারতের মূলধারার রাজনীতি আর মাওবাদী সহানুভূতিশীল রাজনীতির মধ্যে বিরাট ফারাক। এই বিতর্ক কতদূর গড়ায়, এখন সেটাই দেখার বিষয়।