বিদেশি সংবাদ মাধ্যমের মূল্যায়ন: মহাকুম্ভ মেলা!
মহাকুম্ভ মেলা, বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ, বিদেশি মিডিয়ার বিশেষ আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। প্রতি বারো বছর অন্তর আয়োজিত এই মেলাটি হিন্দু ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান। এটি ভারতের প্রয়াগরাজে গঙ্গা, যমুনা এবং পৌরাণিক সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থলে অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৫ সালের মহাকুম্ভ নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলি বিস্তর আলোচনা করছে, বিশেষ করে এর বিশালতা, আধ্যাত্মিকতা এবং এর সাথে জড়িত সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে।
বিদেশি সংবাদমাধ্যম যেমন দ্য গার্ডিয়ান এবং বিবিসি, মহাকুম্ভের আধ্যাত্মিক তাৎপর্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। তারা উল্লেখ করছে যে এই উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা বিশ্বাস করেন, সঙ্গমে স্নান করলে পাপমোচন হয় এবং আত্মার মুক্তি মেলে। প্রায় ৪০ কোটি মানুষের সমাগম প্রত্যাশিত এই মেলায় আখড়া, সাধু, সন্ন্যাসী এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মিলন দৃশ্য বিশ্বের জন্য অভূতপূর্ব। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি হল মেলার বিশাল আয়োজন। রয়টার্স এবং এল জিরা জানিয়েছে, ভারত সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন এই মেলার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। কুম্ভ মেলা অ্যাপ, ড্রোন নজরদারি, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি রিস্টব্যান্ড, এবং আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা এই বিশাল জনসমাবেশে ব্যবস্থাপনা সহজ করছে।এছাড়া, দূষণ এড়াতে এবং পরিবেশবান্ধব মেলা আয়োজনের জন্য নেওয়া নানা পদক্ষেপকেও তারা ইতিবাচকভাবে তুলে ধরেছে।নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং ওয়াশিংটন পোস্ট এই মেলার রাজনৈতিক এবং সামাজিক গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করেছে। তারা উল্লেখ করছে যে, মেলাটি শুধু ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক প্রভাবেও সমৃদ্ধ। বিজেপি সরকারের অধীনে মহাকুম্ভ একটি বৃহত্তর প্রচারণা প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। এখানে নেতাদের উপস্থিতি এবং বিভিন্ন সামাজিক বার্তা প্রদান রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ানোর কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। মহাকুম্ভের ঐতিহাসিক গুরুত্বকেও বিদেশি সংবাদমাধ্যম গুরুত্ব দিয়েছে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এবং হিস্ট্রি চ্যানেল মহাকুম্ভের ইতিহাস এবং এর সাংস্কৃতিক প্রাসঙ্গিকতার ওপর ডকুমেন্টারি তৈরি করেছে। তারা দেখিয়েছে, কীভাবে এই উৎসব প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি কোটি কোটি মানুষের আধ্যাত্মিক জীবনের অংশ হয়ে আছে।
বিদেশি মিডিয়া মহাকুম্ভ মেলাকে শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং একটি সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ঘটনা হিসেবে দেখছে। এর বিশালতা, প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনা, এবং ঐতিহাসিক প্রাসঙ্গিকতা বিশ্ববাসীর জন্য বিশেষ আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে।