বাংলাদেশের বর্তমান সমাজ ১৯৭১ এর রাজাকারদের সুরে কথা বলছে!
এক সময় ভারতের অবদানেই স্বাধীন হয়েছিল বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৩ দিনের ঐতিহাসিক “অপারেশন মুক্তিযুদ্ধ”-এর মাধ্যমে পাকিস্তানি দমন-পীড়নের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান। সেই পূর্ব পাকিস্তানই আজ বাংলাদেশ নামে পরিচিত। কিন্তু আফসোসের বিষয়, সেই বাংলাদেশ এখন ভারতের মিত্র নয়, বরং শত্রুপন্থী পথে হাঁটছে—এমনটাই বলছে ত্রিপুরার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সম্প্রতি বাংলাদেশের তথাকথিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যেটি বৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি এবং যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিতর্কিত অর্থনীতিবিদ এবং অর্ধ নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুস, প্রকাশ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, বিহার, ওড়িষ্যা এবং আসামের কিছু অংশকে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে দাবি করে একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে! বাংলাদেশি নাগরিক মোঃ নাহিদুল ইসলাম সোশ্যাল মিডিয়ায় “বৃহত্তর বাংলাদেশ”-নামে এই মানচিত্রটি প্রকাশ করেন। ইসলাম লিখেছেন, “আমরাও সাহস করতে পারি।” এরপরেই আগুনে ঘি ঢালার মতো করে ইউনুস সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মাহফুজ আলম—যিনি এই সরকারের একজন ‘ডি-ফ্যাকো’ মন্ত্রী বলেই পরিচিত—সেই বিতর্কিত মানচিত্রটি নিজেই শেয়ার করেন। যদিও পরে ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে পোস্টটি মুছে ফেলতে বাধ্য হন তিনি।
বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, এই মানচিত্রটি বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়েছে, যা বর্তমানে রাজাকার-প্রভাবিত একটি ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ই এক সময়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক প্রাণকেন্দ্র ছিল, কিন্তু বর্তমানে এটি চরমপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় ভারতবিরোধী তৎপরতার জন্মস্থান হয়ে উঠেছে।
এই ইস্যুতে ভারতের তরফে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে“আমরা এই বিষয়ে কড়া প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সংশ্লিষ্ট পোস্ট সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে শুনেছি। আমরা সকল পক্ষকে মনে করিয়ে দিতে চাই—জনসম্মুখে মন্তব্য করার সময় দায়িত্বশীলতা বজায় রাখা উচিত।” এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ত্রিপুরার বিভিন্ন অংশে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। আগরতলা, বিলোনিয়া, ধর্মনগর, উদয়পুরের সাধারণ জনগণের মধ্যে এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বলেন, “যে দেশকে ভারত রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছিল, আজ তারাই ভারতের ভূখণ্ড দখলের স্বপ্ন দেখছে? এটা চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতা।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউনুস সরকারের কর্মকাণ্ডে স্পষ্ট চীন ও পাকিস্তানের প্রভাব রয়েছে। শেখ হাসিনার পতনের পর এই অবৈধ সরকার ক্ষমতায় এসে প্রথমেই পাকিস্তানপন্থী জামায়াতে ইসলামীর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এর ফলে মৌলবাদী চক্র আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।ভারত সবসময়ই বাংলাদেশকে তার বন্ধু প্রতিম প্রতিবেশী হিসেবে মান্যতা দিয়ে এসেছে। কিন্তু বর্তমানে পাকিস্তান এবং চীনের ষড়যন্ত্রে তাদের প্রকৃত বন্ধুকে হারানোর পথে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের এক শ্রেণীর মুক্তিযোদ্ধাদের মতে, পাকিস্তান ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের প্রতিশোধ নিতে এখন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করতে ব্যস্ত। তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী, “যেই রাজাকার বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে ছিল, তারাই আজ পাকিস্তান ও চীনের সমর্থনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে সরকার পতন ঘটিয়েছে এবং বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। এই রাজাকার বাহিনীই আজ ভারতের বিরুদ্ধে একের পর এক চক্রান্ত করে যাচ্ছে।” হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের (HBCUC) তথ্যমতে, ইউনুস সরকারের ক্ষমতায় আসার পর মাত্র ১৬ দিনের মধ্যে সংখ্যালঘু হিন্দুদের বিরুদ্ধে ২০০০-এর বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে। নিহত হয়েছেন অসংখ্য সংখ্যালঘু মানুষ, ৬৯টি মন্দির আক্রান্ত হয়েছে, নারী নিপীড়নের ঘটনাও ঘটেছে অগণিত। এমনকি কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ISKCON)-কে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যদিও হাইকোর্ট সেটি খারিজ করে দিয়েছে।
ভারতের প্রাক্তন বাংলাদেশে হাইকমিশনার বলেন, “বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। ভারতের পক্ষে এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। পাকিস্তান বাংলাদেশকে ঘাঁটি বানিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে সন্ত্রাস ছড়াতে পারে।” ভারত কখনো চায় না বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা কঠোর মনোভাব পোষণ করতে, কিন্তু ইউনুস সরকারের নেতৃত্বাধীন বর্তমান বাংলাদেশের অবৈধ সরকার ক্রমাগত ভারতের বিরুদ্ধে প্ররোচনামূলক মন্তব্য করে চলেছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে এক বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশ আর আগের বাংলাদেশ নেই। আজ এটি পরিণত হয়েছে এক সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে।”
তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে বাংলাদেশে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
ত্রিপুরার পক্ষে জানানো হয়েছে, “ত্রিপুরা ভারতের গর্ব। আমরা আমাদের ভূখণ্ড রক্ষার জন্য প্রতিটি নাগরিককে সাথে নিয়ে প্রস্তুত। ইউনুস সরকারের অপপ্রচার ও মিথ্যা মানচিত্র আমাদের মনোবল ভাঙতে পারবে না। ভারতীয় সেনা এবং কেন্দ্র সরকারও এই ষড়যন্ত্র নিয়ে সচেতন।” ভারত এক সময় মুক্তি দিয়েছিল বাংলাদেশকে। আজ সেই বাংলাদেশই শত্রুপক্ষের ছায়াতলে এসে ত্রিপুরার মতো শান্তিপূর্ণ রাজ্যকে হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু ভারত চুপ করে বসে থাকার দেশ নয়। ভারতের একতা, শক্তি এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রয়েছে প্রতিটি ভারতবাসীর। কারণ “১৩ দিনে যে দেশ বানিয়েছিল ভারত, চাইলে ১৩ মিনিটেই শেষ করতে ও পারে!” বিশ্লেষকদের মতে, এখন এটাই দেখার বিষয়—ভারত কত দিন তার ধৈর্য ধরে রাখতে পারে।