বাংলাদেশী পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা

বাংলাদেশী পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা!

ভারতের স্থল বন্দর গুলি দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যের আমদানি বন্ধ করে দিল ভারত সরকার!

সম্প্রতি ভারত সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যার প্রভাব সরাসরি পড়েছে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের অর্থনীতিতে। দেশের একাধিক স্থলবন্দর — বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে আসা প্রক্রিয়াজাত পণ্যের আমদানিতে কেন্দ্র নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এতে যেমন আমদানিকারক মহলে শোরগোল পড়েছে, তেমনি শিল্পমহলে এক ধরনের আশাবাদের সঞ্চার হয়েছে। এই নির্দেশিকা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে রেডিমেড গার্মেন্টস, ফল, কার্বনেটেড পানীয়, স্ন্যাকস, প্লাস্টিক ও পিভিসি সামগ্রী, কাঠের আসবাব, কটন ও সুতো-সহ একাধিক প্রক্রিয়াজাত পণ্যে বাংলাদেশ থেকে আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাব দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরে স্পষ্ট, যার মধ্যে ত্রিপুরার আখাউড়া স্থলবন্দর অন্যতম।

এই নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে সোমবার আগরতলা-আখাউড়া আন্তর্জাতিক স্থলবন্দরে ত্রিপুরা সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের উদ্যোগে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দপ্তরের অধিকর্তা শ্রী শৈলেশ যাদব, শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারক সংস্থার প্রতিনিধিরা, স্থানীয় শিল্পপতিরা, বিএসএফ ও কাস্টমস বিভাগের আধিকারিকগণ। বৈঠকের পর শৈলেশ যাদব জানান, “ভারত সরকারের নির্দেশিকা যাতে স্থলবন্দরগুলিতে সুষ্ঠুভাবে কার্যকর হয় এবং ত্রিপুরার বাজারে তার যথাযথ প্রতিফলন ঘটে, সে বিষয়ে একগুচ্ছ গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “এই নিষেধাজ্ঞা একদিকে যেমন দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করছে, তেমনি ত্রিপুরায় স্থানীয় শিল্প গড়ে তোলার জন্য একটি নতুন পথ উন্মুক্ত করছে।”

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একাধিক ত্রিপুরার শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী জানান, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে রাজ্যে নতুনভাবে খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ, কনফেকশনারি, প্লাস্টিক সামগ্রী এবং আসবাব তৈরির কারখানা গড়ে তোলার বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। একজন বর্ষীয়ান শিল্পপতি বলেন, “যতদিন বাংলাদেশ থেকে সস্তায় প্রক্রিয়াজাত পণ্য আসত, ততদিন আমাদের নিজস্ব শিল্প দাঁড়াতেই পারত না। এই নিষেধাজ্ঞা এক অর্থে আমাদের ঘরোয়া শিল্পকে রক্ষা করার এবং বিকশিত করার সুযোগ দিচ্ছে।” স্থানীয় বাজারে খাদ্যপণ্য, ভোজ্যতেল, গার্মেন্টসের কিছু ঘাটতি তৈরি হলেও ব্যবসায়ীদের মতে, সেই চাহিদা পূরণে ভারতের অভ্যন্তরীণ জোগান ব্যবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী। বরং আমদানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ত্রিপুরা ও উত্তর-পূর্ব ভারতে স্বনির্ভর শিল্পভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলার পথে সরকারকে এখনই অগ্রসর হতে হবে।

সারা দেশে এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তকে অর্থনীতিবিদ ও শিল্প বিশেষজ্ঞরা “সুরক্ষামূলক বাণিজ্যনীতি” (Protective Trade Policy) বলে উল্লেখ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘আত্মনির্ভর ভারত’ অভিযানের প্রেক্ষাপটে এ এক কৌশলগত পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে আমদানি-নির্ভরতাকে হ্রাস করে স্থানীয় উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সীমান্ত সংলগ্ন রাজ্যগুলিতে বেআইনি পণ্যের প্রবেশ, কর ফাঁকি ও বাজার ধ্বংসের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই উঠে আসছিল। কেন্দ্রের মতে, এই সিদ্ধান্ত দেশীয় শিল্পকে প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে এবং স্থানীয় বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে।

এই পরিস্থিতিতে ত্রিপুরা সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, রাজ্যে একটি নতুন ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিকাশ নীতি’ প্রণয়নের কাজ চলছে। সরকারের লক্ষ্য, নিষেধাজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় শিল্প হাব গড়ে তোলা এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রণোদনার মাধ্যমে শিল্পক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া। তবে এরই মাঝে যেহেতু কাঁচা মালের আমদানিতে খুব একটা বিধি নিষেধ নেই তাই ভারতবর্ষের শিল্পপতিরা এই সুযোগটাতে কাজে লাগিয়ে রাজ্যে শিল্প স্থাপনের দার উন্মোচন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, “আমরা বিনিয়োগকারীদের জন্য একধরনের ‘ফাস্ট ট্র্যাক ক্লিয়ারেন্স মেকানিজম’ চালু করার পরিকল্পনা নিচ্ছি, যাতে দ্রুত শিল্প স্থাপনে সহায়তা করা যায়।”

যেখানে একদিকে বাংলাদেশের কিছু ব্যবসায়ী সংস্থা ভারতের এই পদক্ষেপকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলে সমালোচনা করছে, সেখানে ভারতীয় বাণিজ্য জগতে এক নতুন আশাবাদের আবহ তৈরি হয়েছে। ত্রিপুরা সেই সম্ভাবনার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠতে পারে যদি সরকার এবং বেসরকারি শিল্পপতিরা সম্মিলিতভাবে পরিকল্পিত পথে এগিয়ে যান। এই মুহূর্তে আখাউড়া স্থলবন্দর যেন শুধু আমদানি-রপ্তানির ফটক নয়, বরং রাজ্যের শিল্প উন্নয়নের এক সম্ভাবনাময় প্রবেশদ্বার হয়ে উঠেছে। এখন দেখার, রাজ্য সরকার কতটা দ্রুততার সঙ্গে এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ত্রিপুরাকে আত্মনির্ভরতার মডেলে পরিণত করতে পারে।About Us