প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ক্ষুব্ধ ত্রিপুরা রাবার অ্যাসোসিয়েশন!
রাবার বোঝাই গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনায়, পাঁচ দিন পরও পুলিশ প্রশাসনের ঘুম ভাঙ্গেনি! ত্রিপুরায় রাবার উৎপাদন শিল্প ক্রমশ সংকটে পড়ছে। দুষ্কৃতিকারীদের দৌরাত্ম্যে রাবার চাষীরা আতঙ্কে রয়েছেন। একের পর এক রাবার চাষীদের ওপর আক্রমণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে, কখনো বা রাবার বাগানে আগুন, আবার কখনো রাবারের মজুদঘরে চুর!
৩০ জানুয়ারি সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ কলাছড়া থেকে এক রাবার বোঝাই ট্রাক আমতলী থানা হয়ে বাইপাস ধরে খয়েরপুরের দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎ মহেন্দ্র কোম্পানির কাছে ৪-৫ জন দুষ্কৃতিকারী গাড়িটি থামিয়ে তল্লাশির নামে চালককে বিভ্রান্ত করে। তারা চালককে জানায়, গাড়িতে নাকি গাঁজা রয়েছে, তাই তল্লাশি চালাতে হবে। কিছু বোঝার আগেই তিন দুষ্কৃতী চালককে বাইকে বসিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়, আর বাকি সদস্যরা গাড়িটি কাঁঠালতলির দিকে নিয়ে যেতে শুরু করে। কিন্তু চালক বুদ্ধি করে চলন্ত বাইক থেকে লাফ দিয়ে চিৎকার শুরু করেন। তার আওয়াজ শুনে এলাকাবাসী ছুটে আসে এবং এক দুষ্কৃতীকে ধরে ফেলে। এরপর প্রায় আধঘণ্টা পর ছিনতাইকারীরা বাধ্য হয়ে রাবার বোঝাই ট্রাকটি ফেরত দেয়।
ঘটনার পরপরই আমতলী থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। চার-পাঁচজন দুষ্কৃতীর নাম ও ছবি পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, আজ পাঁচ দিন পার হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। ত্রিপুরা রাবার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কল্যাণ দেববর্মা সরস্বতী পুজোর দিন এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “আমতলী থানার পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে চায়নি। পরে মামলা নেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। দুষ্কৃতীদের নাম, পরিচয় ও ছবি দেওয়ার পরেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না?” সংগঠনের সাবরুম বিভাগের সম্পাদক শংকর সিনহা বলেন, “এভাবে যদি দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে আমরা কীভাবে ব্যবসা চালাব? পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় আমরা ক্ষুব্ধ।”
ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন, প্রশাসন যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারে, তাহলে তারা কীভাবে বহিরাজ্যে রাবার পাঠাবেন? ত্রিপুরা রাবার অ্যাসোসিয়েশন, প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার এবং ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, “যদি দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে তারা রাবার রপ্তানি বন্ধ করতে বাধ্য হবে।” বিগত কয়েক মাসে দুষ্কৃতীরা বিভিন্ন সময় জিএসটি আধিকারিক কিংবা পুলিশ পরিচয় দিয়ে গাড়ি থামিয়ে রাবার লুট করছে। এই সব ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ দানা বাঁধছে।
ত্রিপুরার রাবার শিল্প রাজ্যের অন্যতম প্রধান রাজস্ব আহরণের উৎস হলেও চাষিরা নিরাপদ নন। সরকার ও প্রশাসন যদি দ্রুত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না করে, তাহলে ত্রিপুরার রাবার ব্যবসায়ীরা ভয়াবহ সংকটে পড়বেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। ত্রিপুরার রাবার শিল্পের ভবিষ্যৎ এখন পুলিশের সক্রিয়তার ওপর নির্ভর করছে! প্রশাসন কি এবার দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে এটাই এখন দেখার!