বিহার নির্বাচনের পূর্বে প্রধানমন্ত্রী মোদির হাতে লন্ঠন!
ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে রাজ কাপুর এক অবিস্মরণীয় নাম। অভিনয়, পরিচালনা ও প্রযোজনার মাধ্যমে ভারতীয় সিনেমাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া এই কিংবদন্তির জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে কাপুর পরিবার এক বিশেষ উদ্যোগ নিল। জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Narendra Modi) সঙ্গে দেখা করতে দিল্লিতে হাজির হয়েছিলেন কাপুর পরিবারের প্রবীণ ও নবীন প্রজন্মের সদস্যরা। সেই বিশেষ সাক্ষাৎ শুধুমাত্র সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎই ছিল না, বরং কাপুর পরিবার প্রধানমন্ত্রীকে উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছিল এক ঐতিহ্যবাহী বস্তু— রাজ কাপুরের ব্যবহার করা বিখ্যাত লণ্ঠন।
সংগ্রহশালায় আইকনিক’ লণ্ঠন!
কাপুর পরিবারের অন্যতম বর্তমান মুখ রণবীর কাপুর প্রধানমন্ত্রী মোদির হাতে তুলে দেন সেই লণ্ঠন, যা ১৯৬০ সালের বিখ্যাত হিন্দি ছবি ‘জিস দেশ মে গঙ্গা বহেতি হ্যায়’-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে ব্যবহৃত হয়েছিল। এই সিনেমায় রাজ কাপুরের অভিনয় ছিল মনে রাখার মতো। তার চরিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এই লণ্ঠন আজও সিনেপ্রেমীদের কাছে এক আবেগের প্রতীক। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে কাপুর পরিবার সেই লণ্ঠনটিকে সংরক্ষণ করে রেখেছিল, কিন্তু এবার সেটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হলো। প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালায় এটি সংরক্ষিত থাকবে এবং ১লা মার্চ থেকে দর্শনার্থীরা সেটি দেখতে পাবেন।
ভারতীয় সিনেমার ‘শো ম্যান’!
ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে রাজ কাপুর এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রগুলি কেবল বিনোদনের মাধ্যম ছিল না, বরং সমাজের বাস্তবতা, মানবিকতা এবং আবেগের প্রতিচ্ছবি ছিল। ‘শ্রী ৪২০’, ‘আওয়ারা’, ‘মেরা নাম জোকার’, ‘সঙ্গম’, ‘ববি’ সহ বহু কালজয়ী সিনেমা ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। শুধু ভারতেই নয়, সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন, মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতেও রাজ কাপুরের সিনেমা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। তাঁর চলচ্চিত্রের গান আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালার তরফে জানানো হয়েছে, রাজ কাপুরের এই লণ্ঠন শুধুমাত্র একটি সিনেমার স্মারক নয়, এটি ভারতীয় সংস্কৃতির এক মূল্যবান প্রতীক। বিবৃতিতে বলা হয়েছে—
“এই লণ্ঠন ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের প্রতিচিহ্ন। এটি রাজ কাপুরের অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যিনি ভারতীয় সিনেমাকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে গিয়েছিলেন। কাপুর পরিবারের এই উপহার শুধু একটি স্মৃতিচিহ্ন নয়, বরং ভারতীয় সংস্কৃতির অতীত ও বর্তমানের সংযোগস্থাপন করে।”
রাজ কাপুরের উত্তরাধিকারী!
কাপুর পরিবার ভারতীয় চলচ্চিত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে রেখেছে। পৃথ্বীরাজ কাপুর থেকে শুরু করে রাজ কাপুর, তারপর ঋষি কাপুর, রণধীর কাপুর, করিশ্মা কাপুর, কারিনা কাপুর, রণবীর কাপুর পর্যন্ত এই পরিবার একাধিক প্রজন্ম ধরে বলিউডকে সমৃদ্ধ করেছে। কাপুরদের এই উত্তরাধিকার আজও সমানভাবে বহন করে চলেছে বর্তমান প্রজন্ম। রণবীর কাপুর বর্তমানে বলিউডের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় অভিনেতা। তাঁর ‘রকস্টার’, ‘বরফি’, ‘সঞ্জু’, ‘তু ঝুঠি ম্যায় মক্কার’ সহ একাধিক ছবির মাধ্যমে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অন্যদিকে, কাপুর পরিবারের আরেক সন্তান, আদর জৈনও চলচ্চিত্রে নিজের পরিচিতি গড়ে তুলছেন। কাপুর পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও এখনও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সক্রিয় রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রতিক্রিয়া!
রাজ কাপুরের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে কাপুর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আপ্লুত হয়েছিলেন। তিনি নিজেও সামাজিক মাধ্যমে লিখেছিলেন— “রাজ কাপুর শুধু ভারতীয় চলচ্চিত্রের একজন মহান অভিনেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক প্রকৃত শিল্পী, যিনি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। কাপুর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে ও তাঁদের থেকে এই মূল্যবান স্মারক গ্রহণ করে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।”
সিনেপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণ!
প্রধানমন্ত্রীর সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত রাজ কাপুরের এই লণ্ঠন নিঃসন্দেহে ভারতীয় সিনেমার প্রেমীদের জন্য এক বিশেষ আকর্ষণ হতে চলেছে। ১লা মার্চ থেকে জনসাধারণ এটি সরাসরি দেখতে পারবে। সিনেমাপ্রেমীরা হয়তো এই ঐতিহাসিক স্মারক দেখতে ভিড় জমাবেন সংগ্রহশালায়। রাজ কাপুরের লিগ্যাসি শুধু সিনেমার পর্দায় সীমাবদ্ধ নেই, তাঁর অবদান ভারতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে উঠেছে। কাপুর পরিবার যে উত্তরাধিকারকে আজও সম্মান ও শ্রদ্ধার সঙ্গে বহন করে চলেছে, তা এই বিশেষ উপহারের মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো।